তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৮

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৮
আমেনা আক্তার

সিরাত ক্লান্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে এসেছে। হসপিটালে তার কম ছুটাছুটি করতে হয়নি। যখন হসপিটালে রুবেল মির্জার পরিবার পৌঁছায় নি তখন সিরাত রুবেল মির্জার পরিবারের সকল দায়িত্ব তাঁকেই পূর্ণ করতে হয়েছে। হসপিটালের ফর্মালিটিজ পূর্ণ করতে সিরাত বেশি সমস্যা পোহাতে হয়নি কারণ রুদ্র আগেই তাদের সকল ডিটেইলস পাঠিয়ে দিয়েছিল।
সিরাত বাড়ির ডোরবেল চাপতেই কিছুক্ষণের মাঝে সাইরা দরজা খুলে দেয়।সিরাত কে এই অবস্থায় দেখে সাইরা আঁতকে উঠে।

আপু তোর এই অবস্থা কিভাবে হলো তুই ঠিক আছিস তো?
সাইরার আতঙ্কিত কন্ঠ শুনে মহিমা ও রেহানা বেগম রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে। সিরাতের শরীরে এখানো রক্ত লেগে আছে। রেহানা বেগম দৌড়ে সিরাতের কাছে এসে বলল।
তোর কি হয়েছে মা তোর শরীরে এত রক্ত কি করে আসলো?
মা শান্ত হও আগে আমাকে একটু বসতে তো দাও আমি অনেক কান্ত এখন।বসে ধীরে সুস্থে তোমার কথার জবাব দিচ্ছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সিরাত এসে বসে ড্রয়িং রুমের সোফায়। ততক্ষণে মহিমা তার জন্য পানি নিয়ে এসেছে। এখন তিনজনের চোখই সিরাতের দিকে আবদ্ধ।সিরাত পানি পান করে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল।
আমার কিছুই হয়নি আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি।
সিরাতের কথায় সকলের প্রাণে প্রাণ আসলো যেনো। মহিমা সিরাত কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো।
তাহলে তোর জামাতে যেই রক্ত লেগে আছে তা কোথা থেকে আসল।
আমার অফিসের বসের এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাঁকেই হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম।
সিরাতের কথা শুনে সাইরা বলল।

তোমার অফিসের বস তো রুদ্র ভাইয়ার বাবা উনার এক্সিডেন্ট হয়েছে।
সাইরার কথা শুনে সিরাত তার দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
আমি তো তোকে বলিনি, রুদ্রের বাবা আমার অফিসের বস তাহলে তুই কিভাবে জানলি?
সিরাতের প্রশ্ন শুনে সাইরা ভয়ে একটি ঢোক গিলল। কারন এই কথা যে রাজ তাকে বলেছে তা এখন সিরাতকে কিভাবে বলবে।
সাইরা কিছু বলার আগেই রেহানা বেগম বললেন।
এই সকল কথা ছাড়,উনি এখন কেমন আছেন তা বল?
এখন উনি ভালো আছেন আল্লাহর রহমতে।
আচ্ছা আমরা আজ তাহলে উনার সাথে দেখা করে আসবো। আমাদের ও তো একটি দায়িত্ব আছে। এমনিতেও রুদ্র ছেলেটা কত ভালো।

মায়ের কথায় সিরাত ব্লু কুঁচকে বলল।
তোমার রুদ্রকে কোনদিক দিয়ে ভালো মনে হয়?
তোর চোখে কি আজ পর্যন্ত কাওকে ভালো লেগেছে যে আজ লাগবে।
আচ্ছা যাই হোক আজ আর স্যারের সাথে দেখা করতে যেতে পারবো না।আমি এখন ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাবো। অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে তার মধ্যে আবার স্যারের শরীর অসুস্থ।
কথাটি বলেই সিরাত নিজের রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। রেহানা বেগম ও আর কিছু বলেন না কারণ তিনি জানেন সিরাতকে কিছু বলেও এখন লাভ নেই।

কেটে গেছে একটি দিন। রুদ্র আর তার সকল বন্ধুরা কাল থেকে হসপিটালেই আছে কেউ বাড়ি ফিরে যায়নি। কেননা এই অবস্থায় নিজের প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে একা ছেড়ে যেতে মন সাঁই দেয়নি।তাই সকলে কাটিয়েছে একটি নির্ঘুম রাত।আসলে সকলে বললে ভুল হবে হৃদিতা ও নূরের জন্য কেবিন ভাড়া করেছিল যাতে ওরা দুজন ঘুমাতে পারে।নূর ও হৃদিতা ও বিনা বাক্য রাজি হয়ে যায়। কারন যখনি এমন পরিস্থিতি আসে রুদ্র, আরশাদ,রাজ আব্রাহাম মিলে ঠেলে তাদের ঘুমানোর জন্য পাঠিয়ে দেয়।আর সাহানারা মির্জা সারারাত স্বামীর পাশেই ছিল। রুদ্র ও সাহানারা মির্জা কে বাড়ি যাওয়ার জন্য জোড় করেননি। কেননা সাহানারা মির্জা তার স্বামী কে এই পরিস্থিতিতে রেখে কোথাও যাবে না।
সিরাত তার মাকে সাথে নিয়ে বের হয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সাইরা ও মহিমা বাড়িতেই রেখে এসেছে। মহিমার শরীর এখন বেশি ভাগই খারাপ থাকে আর মহিমার এখন জার্নি করাও নিষেধ কিছুদিন পরেই মহিমার প্রেগন্যান্সির আট মাস পূর্ণ হবে।

সিরাত তার মাকে নিয়ে হসপিটালে প্রবেশ করে। রুবেল মির্জাকে রাখা কেবিনের দিকে যেতেই দেখতে পায় কেবিনের বাইরে হৃদিতা,নূর, আব্রাহাম, আরশাদ,রাজ ও রুদ্র বসে আছে।
আন্কেল এখন কেমন আছেন?
সিরাতের প্রশ্নে সকলে চোখ তুলে তার দিকে তাকায়। এতক্ষণ কেউ সিরাতকে খেয়াল করেনি।সিরাতের পাশে রেহানা বেগম কে দেখে সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠল। হৃদিতা রেহানা বেগম কে জাপটে ধরে বলল।
কেমন আছেন আন্টি?
আলহামদুলিল্লাহ,আমি তো ভালো আছি,কিন্তু এখন রুদ্রের বাবা কেমন আছেন?
জ্বী আন্টি আন্কেল ও এখন আল্লাহর রহমতে আগের থেকে অনেকটা সুস্থ আছেন।
হৃদিতার কথা শেষ হতেই, আরশাদ রেহানা বেগমের হাতে টিফিন বক্স রেহানা বেগমের হাতে দেখে জিজ্ঞেস করল।
আন্টি এই বক্সের ভিতর কি আছে?

আরশাদের কথায় রেহানা বেগম হাসি মুখে উত্তরে বলল।
এটাতে আমি তোমাদের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছি।সিরাত আমাকে কাল রাতেই বলেছিল তোমরা সকলে হসপিটালে থাকবে তাই ভোর সকালে উঠে আমি রান্না করেছি তোমাদের জন্য। হসপিটালের খাবার তো আবার সকলে পছন্দ করে না তাই।
রেহানা বেগমের কথা শুনে রাজ বলে উঠলো।
আন্টি আপনি একদম ঠিক বলেছেন ও একদম ঠিক কাজ করেছেন।আমরা হসপিটালের খাবার পছন্দ করি না।কাল থেকে শুধু রুটি কিনে খেয়ে থাকতে হচ্ছে। আশেপাশে ভালো কেনো দোকান বা রেস্টুরেন্ট নেই। পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে আমার।

রেহানা বেগম ও সকলে রাজের কথা শুনে হেসে উঠলো।সকলে এটা ভালোভাবে জানে রাজ খুব খাবার প্রিয় মানুষ। এতক্ষণ যে রাজ খাবার ছাড়া থেকেছে তাই আশ্চর্যকর বিষয়।
রুদ্র সিরাত ও রেহানা বেগম কে নিয়ে রুবেল মির্জার কেবিনে প্রবেশ করে রেহানা বেগমের পরিচয় করিয়ে দেয় রুদ্রের বাবা মায়ের সাথে। সাহানারা রেহানা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল।
আপনার মেয়েটা খুবই ভালো,ওইখানে এত মানুষ থাকা সত্ত্বেও উনাকে সিরাত হসপিটালে নিয়ে এসেছে যদি ও না থাকতো তাহলে কি হতো কথাটি ভাবতেই আমার বুক কেঁপে উঠে।
যা হয়নি তা ভেবে মন খারাপ করবেন না।যা এখন আপনার কাছে আছে তাকে সামলে রাখুন।
রেহানা বেগম ও সাহানারা মির্জা সমান তালে গল্প করে যাচ্ছে। রুদ্র ও সিরাত চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু রুবেল মির্জাকে বেশ কিছুক্ষণ যাবত চিন্তিত দেখাচ্ছে। সাহানারা মির্জা রুবেল মির্জা কে প্রশ্ন করলেন।
আপনাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো। ডাক্তার না আপনাকে কেনো প্রকার চিন্তা করতে না করেছে।
সাহানারা মির্জার কথার প্রতি উত্তরে

রুবেল মির্জা বলল।
চিন্তা করব না কিভাবে, কিছুদিন হলো নতুন ডিল সাইন করেছি এখন আমি বিছানায় পরে থাকলে সেই সকল কিছু কে সামলাবে।
রুবেল মির্জার কথা শুনে সিরাত বলল।
আপনার এমন দামড়া একটি ছেলে থাকতে আপনার আবার কিসের চিন্তা। রুদ্র আছে তো আপনার সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার জন্য।
কথাটি বলেই সিরাত মুচকি হাসি দিয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো সিরাতের হাসি দেখে রুদ্রের ভিতরে যেনো দাঊ দাঊ করে আগুন জ্বলে উঠলো।যেই ছেলে অফিসের নাম শুনলেও নাম সিঁটকায়। শুধু মাত্র সিরাতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কিছুদিনের জন্য অফিসে যেতে রাজি হয়েছে।সেই ছেলে নাকি সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিবে।সিরাত কে এতদিন খাটানোর সোধ যেনো একেবারে উসুল করে নিলো সিরাত।

সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে রুদ্রের বাবা মায়ের ধারণা রুদ্র কখনো তার বাবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিবে না।তাই রুবেল মির্জা হতাশা জনক শ্বাস ছেড়ে বলল।
রুদ্র কখনো কোম্পানির দায়িত্ব নিবে না।
রুবেল মির্জার কথা শুনে সিরাত সাথে সাথে বলল।
কেনো আন্কেল রুদ্রের কি এই যোগ্যতা নেই যে ও আপনার পরে কোম্পানির সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিবে। ওকে কি আপনার এতোই অযোগ্য মনে হয়।
সিরাতের কথাটি যেনো ভালোভাবে রুদ্রের গায়ে এসে লাগলো। এখন তার আত্মসম্মানের বিষয় যদি রুদ্র দায়িত্ব নিতে না করে দেয় সিরাত জিতে যাবে। কিন্তু রুদ্র সিরাতকে কিছুতেই জিততে দিবে না।
রুবেল মির্জা কিছু বলার আগেই রুদ্র বলে উঠলো।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৭

আমি অফিসে যাবো এবং বাবা যেই পর্যন্ত সুস্থ না হয় অফিসের সকল দায়িত্ব আমি নিবো।
রুদ্রের কথাটি বলার সাথে সাথে যেনো কেবিনের ভিতরে বড় ধরনের বিষ্ফোরণ ঘটলো। রুদ্রের বাবা মা অবিশ্বাস্য চাওনিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে।নূর, আব্রাহাম, হৃদিতা, আরশাদ ও রাজ এই মাত্র কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করেছিল রুদ্রের কথা শুনে সকলে থ মেরে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়।
অতঃপর হৃদিতা রুদ্রের কাছে এসে আশ্চর্যকর একটি কান্ড ঘটিয়ে বসলো..

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৯