তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ২০
আমেনা আক্তার
ম্যানেজার এসে বলল। সূর্যধারি গ্রামে রুদ্র স্যারের একা যাওয়ার কথা থাকলেও। রুদ্রের সিরাত কে সাথে নিয়ে যেতে হবে। কারন ডিলাররা সিরাতের ডিজাইন খুব পছন্দ করেছে।তাই উনারা চান যেনো সিরাত রুদ্রের সাথে গিয়ে তাদের সাথে ডিল সাইন করে। কথাটি শুনা মাত্রই রুদ্র ও সিরাত একসাথে বলে উঠলো।
অসম্ভব আমি ওর সাথে কোথাও যাবো না।
স্যার আমাদের জন্য ডিলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।এই ডিল হাত থেকে বেড়িয়ে গেলে আমাদের বিরাট বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।আমি ক্লাইন্টদের বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা কিছুতেই মানতে চাইছে না।সিরাতকে সাথে নিয়ে না গেলে উনারা ডিল সাইন করবে না।
ম্যানেজারের কথায় রুদ্র ও সিরাত একজন আরেকজনের দিকে ভষ্ম করে দেওয়ার চোখে তাকায়।সিরাত চলে যায় নিজের কাজে রুদ্র ও কিছু না বলে নিজের কাজ করতে থাকে।
রুদ্র পাঞ্চিং ব্যাগে একটির পর একটি পাঞ্চ মেরে চলেছে। রুদ্রের শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। তবুও রুদ্র কিছুর তোয়াক্কা না করে একের পর এক আঘাত করে যাচ্ছে পাঞ্চিং ব্যাগে।যেনো কারো ক্ষোভ এই ব্যাগের উপর উঠাচ্ছে।রুদ্রের অবস্থা দেখে আরশাদ তার হাতে থাকা বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে দিতে বলল।
ভাই আজকে আবার কি হয়েছে তোর? তুই কার রাগ ঝারছিস এই বেচারার উপর।
আরশাদের কথা শুনে আব্রাহাম মুচকি হেসে বলল।
নিশ্চয়ই সিরাতের সাথে কিছু হয়েছে।
আব্রাহামের কথার সাথে তাল মিলিয়ে হৃদিতা বলল।
হ্যা ও ছাড়া তো আর কেউ হবে না, এখন রুদ্রের সকল টেনশনের কারণ তো একমাত্র সিরাত।
রুদ্র তার বন্ধুদের কথা শুনে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল।
ওই মেয়ের নাম আমার সামনে নিবি না।আস্ত একটি বজ্জাদ মেয়ে আমাকে কিভাবে ফাঁসাবে সেই চিন্তায় ওর মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রুদ্রের কথা শুনে নূর ব্লু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।
তোর সাথে আবার কি করেছে সিরাত।
নূরের কথার প্রতি উত্তরে রুদ্র বলল।
ও কিছু করেনি,যা করার আমাদের ইন্ডাস্ট্রির নতুন ক্লাইন্ট করেছে।
রুদ্রের কথা শুনে রাজ বলল।
ক্লাইন্ট আবার কি করেছে তোর সাথে।
আমার কাল ডিল সাইন করাতে সূর্যধারী গ্রামে যেতে হবে।
হুম এটা তো আমরা জানি,
এটি তোরা জানিস, কিন্তু এটা জানিস না ক্লাইন্টরা সিরাত কে সাথে নিয়ে যেতে বলেছে।
রুদ্রের কথা শুনে সকলে একসাথে বলে উঠলো।
কি?সিরাত ও তোর একসাথে যেতে হবে।
হুম,
রুদ্রের কথা শুনে আরশাদ হাসতে হাসতে বলল।
ওরা দুজন যদি একসাথে যাই তাহলে আমি নিশ্চিত ওদের মধ্যে কেনো একজন আর ফিরে আসবে না। কারন একজন আরেকজনের মার্ডার করে ফেলবে।
রাজ কথাটি বলতেই সকলে একসাথে হেসে উঠলো। তখনি রুদ্র সকলের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি সিরিয়াস,ওই মেয়ের সাথে একা যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
রুদ্রের কথা শুনে হৃদিতা ব্লু কুঁচকে বলল।
তাহলে তুই কি করতে চাস?
রুদ্র হৃদিতার কথার প্রতি উত্তরে কিছু না বলে নূরের সামনে এসে বসে পড়লো। রুদ্র নিজের চেহারা কিছুটা ইনোসেন্ট ভাব এনে বলল।
তুই আমার শেষ ভরসা দোস্ত, তুই যদি আমাদের সাথে যাস তাহলে।
রুদ্র আর কিছু বলার আগেই নূর রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল।
আমার সামনে থেকে সর শয়তান, তুই আর কাওকে পাসনি দেখে এখন আমাকে মাখন মাখতে এসেছিস।
চল না বান্ধবী,
না যাবো না, তুই কি চাস তোরা দুজন ওইখানে ঝগড়া কর আর আমি তোদের মাঝখানে থেকে চ্যাপ্টা হয়ে যায়।
তাহলে তুই যাবি না,
না,
আচ্ছা যাস না,আমি ভেবেছিলাম ডিল সাইন হয়ে গেলে তার খুশিতে তোদের ট্যুরে নিয়ে যাবো। কিন্তু তোরা যখন চাইছিস না ডিল সাইন হোক তাহলে আমি তোদের কোথাও নিয়েও যাবো না।
রুদ্রের কথাটি যেনো ঠিক যায়গায় গিয়ে লাগলো।
নূররা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। কারণ এখানে সকলে ভ্রমন প্রিয় নূর রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল।
আচ্ছা তুই তখন এতো জোড় করছিস তাহলে আমি যাবো তোর সাথে। কিন্তু তুই সিরাতের সাথে ঝগড়া করতে পারবি না।
রুদ্র মুখ ভার করে বলল।
আমি ওর সাথে না,ও আমার সাথে ঝগড়া করে।
রাজিবের মাথা যেনো ক্রোধে ফেটে যাচ্ছে। সে ক্রোধে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।রাগ যেনো তার মাথা চারা দিয়ে উঠতে চাইছে বারবার। নিজেকে সংযত করতে চেয়েও করতে পারছে না। কাজের থেকে এসে বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই যদি কেনো পুরুষের মা বউয়ের ঝগড়া শুনতে হয় তাহলে কার না মাথা খারাপ হবে। এখন যেনো এটি নিত্যদিনের রুটিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজিব আর সহ্য করতে না পেরে জোড়ে চিল্লায়ে বলল।
অনেক হয়েছে চুপ করো দুজনে।
রাজিবের মা ও স্ত্রী এতক্ষণ তাদের ঝগড়ায় এতটাই মশগুল ছিল রাজিব এখন বাড়িতে এসে তাদের ঝগড়া শুনছে বুঝতেই পারেনি তারা দুজন। ছেলেকে দেখে রাজিবের মা রাজিবের কাছে গিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলল।
এ তুই কোন মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিস বাবা।ও আমার একটি কথাও শুনে না ঘরের একটি কাজ ও করতে চাই না।কিছু বললেই ঝাড়ি মেরে কথা বলে। সারাক্ষণ নিজের সাজসজ্জা ও ছেলেদের সাথে মোবাইলে কথা বলতে থাকে।ও জানিস আজ কি করেছে ,আমি ওকে শুধু এক কাপ চা বানিয়ে দিতে বলেছিলাম, কিন্তু ও বলল, ওর যদি চা বানাতে হয় তাহলে ওই চা নাকি আমার শরীরে ডালবে।
রাজিব মায়ের কথা শুনে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলল।
মা কি সত্যি কথা বলছে,
জান ওই সময় আমি হাতে নেইলপলিশ দিয়েছিলাম,আর তুমিতো জানো আমার কাজ করতে একটুও ভালোলাগে না।
কথাটি বলার সাথে সাথে রাজিব কষে একটা চড় মারলো তার দ্বিতীয় স্ত্রীর গালে। এবং রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল।
তোর জন্য আমার জীবনটা জাহান্নাম হয়ে গেছে। তুই যেদিন থেকে আমার জীবনে এসেছিস সেদিন থেকে আমার বাড়িতে অশান্তির পর অশান্তি হচ্ছে।তোর মতো নোংরা মেয়েকে আমার বাড়িতে যায়গা দেওয়াই ভুল হয়েছে।
রাজিবের কথা শুনে রাজিবের দ্বিতীয় স্ত্রী দ্বিগুণ ক্রোধে বলল।
এই তুই নষ্টা মেয়ে কাকে বলিস।যখন আমার সাথে বউ রেখে প্রেম করেছিস তখন মনে ছিল না আমি নষ্টা মেয়ে। যখন তোর বউ প্রেগন্যান্ট হলো তখন আমার কাছে আসতি ও অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতি তখন মনে পরেনি আমি নষ্টা মেয়ে।আমি যদি নষ্টা মেয়ে হয়ে থাকি তাহলে তুই আমার থেকেও বড় নষ্টা পুরুষ।
রাজিব তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কথা শুনে যেনো তার ভিতরের ক্রোধ আরো বেড়ে গেল।সে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে রুমের ভিতর নিয়ে গিয়ে নিজের মন মতো করে মারলো। এতদিনের জমানো রাগ একেবারে অসুল করে নিয়েছে।
রাজিব তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেরে রুম থেকে বেড়িয়ে বসার ঘরে এসে বসে তার মায়ের কাছে। রাজিবের মা এতক্ষণ খুব খুশি মনে রাজিবের স্ত্রীর আর্তনাদ শুনছিলো। কারণ এতদিন তাকে অনেক জ্বালিয়েছে রাজিবের দ্বিতীয় স্ত্রী।তাই রাজিবের দ্বিতীয় স্ত্রীকে মার খেতে দেখে উনি খুব শান্তি পান। যেমন শান্তি পেতেন রাজিব যখন মহিমা কে বকতো তিনি তো ইচ্ছে করেই মহিমার একেক দোষ ধরে রাজিবের মুখে বকা শুনাতো মহিমা কে।
রাজিব তার মায়ের কাছে এসে বসলো এবং বলল।
মা আমি মহিমাকে ছেড়ে অনেক বড় ভুল করেছি।মহিমা আমার জন্য একদম ঠিক ছিল।
হ্যাঁ তুই ঠিকই বলেছিস মহিমা কে যা বলতাম ও চুপচাপ আমার সকল কথা শুনতো। আমি ও তুই ওকে যতই বকতাম ও প্রতিউত্তর করতো না। আমার কথা শোন বাবা তুই মহিমা কে ফিরিয়ে নিয়ে আস ওর পেটে আমাদের বাড়ির সন্তান।তোর সন্তান ওর পেটে।
আমিও এই কথা ভেবেছি কিন্তু আমি তো মহিমা কে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েছি।
এই সকল ডিভোর্স পেপারে কিছু হয়না, মহিমা এখন গর্ভবতী তুই ডিভোর্স পাঠালেও তোদের ডিভোর্স এখনো হয়নি। তুই ওকে গিয়ে নিয়ে আয়।দেখবি তুই ওই বাড়িতে যাওয়ার পরেই মহিমা তোর পায়ে লুটিয়ে পড়েছে।তোর কাছে ক্ষমা চাইবে এই বাড়িতে ফিরে আসার জন্য তোর কাছে ভিক্ষা চাইবে।ওর পেটে এখন তোর বাচ্চা।ও এখন নিরুপায় দেখবি তুই ওই বাড়িতে যাওয়ার সাথে সাথে ওরা পা ধরে নিজের মেয়েকে তোকে দিয়ে দিবে।
মায়ের কথা শুনে রাজিব একটি হাসি দেয়।কালই গিয়ে মহিমা কে নিয়ে আসবে তার জীবন আগের মতো সুখ শান্তিতে ভরে যাবে।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ১৯
সিরাত নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ব্যাগের নিয়ে নিচ্ছে। রেহানা বেগম খাবারের জন্য ডাক দিতেই সিরাত হাতের কাজ বাদ দিয়ে খাবারের উদ্দেশ্যে চলে যায় মাকে জানাতে হবে কাল সে অফিসের কাজে যাবে সিরাত জানেনা মা কিরকম রিয়েক্ট করবে কথাটি শুনে…