তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩১
আমেনা আক্তার
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে আয়না।বলতে গেলে কাল রাতে ওর ঘুমিই হয়নি।পুরো রাত বিছানার এপাস ওপাস করে কাটিয়ে দিয়েছে।এত ভয়ানক স্বপ্ন তাও নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে দেখলে কেই বা ঘুমাতে পারে।তেমনি আয়নার ও ঘুম হয়নি সারারাত সকাল হওয়ার অপেক্ষা করে গিয়েছে। সকাল হলেই আব্রাহামের বাড়িতে যেয়ে চোখ জুড়ে ওকে দেখে আসবে।
আয়নার মা আয়নাকে এত সকালে হলরুমে দেখে যেনো ভুত দেখার মতো চমকে গেল। আয়নার সামনে এসে বলল।
তুই এত সকালে এখানে কি করছিস?
মা এটা আমাদের বাড়ি,আমি কি সকালে উঠে অন্য কারও বাড়িতে থাকবো।
আয়নার কথা শুনে ওর মা থতমত খেয়ে যায় এবং বলল।
আমি এটি বলিনি, অন্যদিন তো তোকে মেরেও উঠানো যায় না ঘুম থেকে।আর আজ তুই নিজে নিজেই উঠে গিয়েছিস।
হ্যাঁ আজ উঠে গিয়েছি, কারণ আজ আমি আব্রাহাম ভাইয়ের বাড়িতে যাবো।মেহের ভাবি অনেকদিন ধরেই আমাকে বলছে ওনার সাথে দেখা করার কথা তাই আজ যেয়ে ভাবির সাথে দেখা করে আসবো।
আয়নার কোথায় ওর মা বলল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
তোকে না বলেছি উনারা বড়লোক মানুষ উনাদের বাড়িতে বেশি যাবি না।
উফ মা তুমি সবসময় আমার সাথে এইরকম টা করো। ভাইয়া যখন যাই তখন কিছু বলো না।আর আমি গেলেই তুমি আমাকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে থাকো।
আয়নার কোথায় ওর মা আয়নার কাছে এসে গালে হাত দিয়ে বলল।
দেখ মা,ও হচ্ছে ছেলে মানুষ। ওকে কেউ কিছু বললে ওর এতটা গায়ে লাগবে না।আর আব্রাহামরা অনেক বড়লোক ওদের বাড়ি আমাদের বেশি যাওয়া ঠিক না।ওই বাড়িতে তোকে কখনো কেউ কিছু বললে তখন তুই কষ্ট পাবি।আমি জানি ওই বাড়ির লোকেরা অনেক ভালো তবুও আমি চাইনা ওনাদের কেনো ব্যবহারে তোকে কষ্ট দিক। তুই এই দুনিয়াটা যতটা সহজ ভাবিস এই দুনিয়া ততটাই কঠিন।
আয়না নিজের মায়ের সকল কথা নিরবে শ্রবণ করে। মায়ের কথা শেষ হতেই আয়না তার মাকে বলল।
কিন্তু মা ওখানে আমাকে কে কি বলবে,ওই বাড়ির সকলে তো আমাকে স্নেহ করে।
আয়নার কথা শুনে ওর মা বললো।
মানুষের মন বদলাতে সময় লাগে না মা। আকাশের রংয়ের থেকেও দ্রুত মানুষের মন বদলায়।থাক বাদদে এই সকল কথা তুই যাবি তো যা কিন্তু ওখানে গিয়ে বেশি বাঁদরামি করবি না। চুপচাপ শান্ত ও ভদ্র হয়ে থাকবি।
মায়ের কথায় আয়না মাথা নাড়ে।
আয়না তৈরি হয়ে বের হয়ে পরেছে আব্রাম দের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার পরেও একটি রিকশাও পাচ্ছে না।আর যেগুলো আসছে সেগুলোর ভিতরে আগে থেকেই যাত্রী আছে।তাই এখানে দাঁড়িয়ে খালি রিকশার অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিছুক্ষণের মাঝেই আয়না রিকশা পেয়ে যায়। রিকশা চলতে থাকে আয়নার প্রিয় মানুষটির বাড়ির উদ্দেশ্যে।
আয়না যতটা উৎসাহ নিয়ে আব্রাহামের বাড়িতে এসেছিল ঠিক ততটাই নিরাশ হয়ে আছে এখন। কারণ মেহেরের ছোট বোন এসেছে আব্রাহামের বাড়িতে।মেহেরের ছোট বোনের নাম শেহের।শেহের অনেক বেশি মর্ডান একটি মেয়ে।ও নিজেকে সবসময় পরিপাটি রাখতে পছন্দ করে মানুষের সামনে নিজের সর্বোচ্চ তুলে ধরার চেষ্টা করে।অন্য মানুষ কে কিভাবে ওর উপর আকৃষ্ট হবে সেই বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় শেহের।এই সব কিছু নিয়ে আয়নার কোনো সমস্যা নেই।ওর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শেহের ও আব্রাহাম কে পছন্দ করে।তাই যখনি শেহের এই বাড়িতে আসে তখনি আব্রাহামের সাথে চিপকে থাকার চেষ্টা করে।যা আয়নার ধৈর্যের বাইরে।
শেহের ও এইটা ভালোভাবে জানে আয়না আব্রাহাম কে ভালোবাসে।তাই শেহের ও আয়না কে একদম সহ্য করতে পারে না। শেহের সব সময় চেষ্টা করে আব্রাহাম ও এই বাড়ির লোকদের চোখে কিভাবে আয়নাকে খারাপ বানাবে।আয়না হলরুমে এসে বসে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শেহের কে পর্যবেক্ষণ করছে ঠিক একই কাজ করছে শেহের। আব্রাহাম মা তখন উপস্থিত হয় হলরুমে আয়নাকে বসে থাকতে দেখে তিনি হাসি মুখে এগিয়ে এসে আয়নার উদ্দেশ্যে বলল।
আয়না তুই কখন আসলি,আর কেমন আছিস।এত দিন পর তোর আমাদের কথা মনে পড়লো।
আয়না আব্রাহামের মায়ের কাছে গিয়ে বলল।
কি করবো বলো কিছুদিন পর আমার h.s.c পরীক্ষা শুরু হবে।তাই আমাকে আম্মু কোথাও বের হতে দেয় না।
হুম বুঝেছি আয়না অনেক ব্যস্ত তাই আমাদের সাথে দেখা করার সুযোগ পর্যন্ত পায় না।
মেহের কথাগুলো বলে হলরুমে আয়নার সামনে এসে দাড়ালো।আয়না মেহেরের কথাগুলো শুনে মুচকি হেঁসে মেহেরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।ওর উচু পেট জাপটে ধরে বলল।
তোমাদের জন্য আমি মায়ের বকা শুনেও এখানে আসি।আর তোমরা আমাকে এত কথা বলো। এখন থেকে আমি তোমাদের আর সাথে কথা বলব না। শুধু মাত্র তোমার পেটের ভিতরে যে বসে আছে তার সাথে কথা বলব।
কথাগুলো বলেই আয়না নিজের কান মেহেরের পেটের সাথে চেপে ধরে বলল।
আমি শুধু তোমার বেবির সাথে কথা বলবো।
আয়াতের সকলের সাথে এত ভাব দেখে জ্বলছে শেহের।ওর কিছুতেই ভালোলাগছে না আয়নার সাথে সকলের এত ভালো সম্পর্ক দেখে।ওর মনে হচ্ছে আয়না সকলের সাথে ভাব জমিয়ে ওর থেকে আব্রাহাম কে কেড়ে নিবে।
এর মধ্যে আব্রাহামের মা বলে উঠলো।
কয়টা বাজে এখনো ছেলেটা ঘুম থেকে উঠে নি।কাল কত রাত করে বাড়ি ফিরেছে।যাই ওকে ডাক দিয়ে আসি।আয়না তুই বস আমি আব্রাহাম কে ডাক দিয়ে আসছি।
আয়না আব্রাহামের মায়ের কথায় মাথা নাড়ে।যাকে দেখার জন্য আয়নার এই বাড়িতে আসা তাকে যদি না দেখতে পারে তাহলে তো ওর এখানে আসায় বৃথা হয়ে যাবে। মনের ভিতরের ব্যাকুলতা কমবে না আয়নার মন শান্ত করতে যে আব্রাহাম কে ওর প্রচুর প্রয়োজন। আব্রাহামের মা চলে যায় আব্রাহাম কে ডাকতে। মেহের ও আয়নাকে বলল।
তুমি একটু বসো আমি আসছি,
কথাটি বলেই মেহের কিচেনের উদ্দেশ্যে চলে যায় । মেহের নিশ্চয়ই ওর জন্য কিছু খাবার আনতে যাচ্ছে। কিন্তু এই সময় তো মেহেরের বেশি হাটা চলা করা ঠিক না।তাই আয়না মেহেরের পিছু পিছু যায় ওকে কিছু আনার জন্য না করার জন্য। কিন্তু আয়নার যাওয়ার আগেই মেহের কিচেনে চলে এসেছে।আয়না মেহের কে পিছন থেকে কিছু বলবে তার আগেই ও দেখতে পায় সামনে একটি বঁটি ধার করানো। মেহের যেই দিকে পা দিতে যাচ্ছে সেখানে পানি দিয়ে ছড়ানো ছিটানো।আয়না মেহের কে আটকানোর জন্য দৌড় দেয়। কিন্তু আয়না কিছু বলার বা করার আগেই মেহের সেই পানির উপর পা দিয়ে দেয়।
আয়না কিছু বুঝে উঠতে পারে না। এখন যদি মেহের নিচে পরে তাহলে সোজা বঁটির উপর পড়বে। কিন্তু আয়না যেই দুরুত্ব দাঁড়িয়ে আছে মেহের থেকে আয়না চাইলেও মেহের কে পরা থেকে আটকাতে পারবে না। কিচেনের এক সাইডে কার্পেট বিছানো।আয়না আর কিছু না ভেবে দৌড়ে এসে মেহের কে কার্পেটের উপর ধাক্কা মারে।
মেহের নিচে পরতেই ও মাগো বলে একটি চিৎকার করে উঠল। মেহেরের আর্তনাদ শুনে যেই কারও শরীর কাটা দিয়ে উঠবে।মেহেরের চিৎকার শুনে আব্রাহাম ও ওর মা নিচে নেমে আসে ও শেহের এসে বোনের পাশে বসে আহাজারি করছে। আয়নার শরীর এখনো কাঁপছে।কি থেকে কি হয়ে গেল ও ভেবে পাচ্ছে না। কার্পেট রক্তে লাল হয়ে গেছে। আব্রাহাম এসে ওর ভাবির এই অবস্থা দেখে পাশে বসে পরে তখনি শেহের আয়নার দিকে হাত তাক করে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
ও আপুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে,আমি নিজের চোখে দেখেছি।ও ইচ্ছে করে করেছে সব কিছু ও আপুকে মারতে চায়।
শেহেরের কথা শুনে আব্রাহাম আয়নার দিকে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে মেহের কে কুলে তুলে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
মেহেরের অপারেশন চলছে।ওর অবস্থা খুবই খারাপ ব্লাড ভেঙেছে অনেক।মেহেরের অবস্থার কথা অবগত হওয়ার পরেই মেহেরের স্বামী ও শ্বশুর ছুটে আসে হসপিটালে। মেহেরের স্বামী মিহির চোখ বন্ধ করে বসে আছে। ওর এখন খুব ভয় করছে নিজের প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয় যেনো ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।ওর এখন নিজেকে সবচেয়ে দুর্বল ব্যাক্তি মনে হচ্ছে যে নিজের স্ত্রীর এমন করুন অবস্থাতে কিছুই করতে পাচ্ছে না। নিজের ভালোবাসার মানুষ আজ মৃতুর সাথে লড়াই করছে কিন্তু ওর এখানে বসে থেকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কেনো উপায় নেই। ডাক্তার অপারেশন রুম থেকে বের হতেই সকলে তাকে ঘিরে ধরে। এবং মিহির ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বলল।
মেহের এখন কেমন আছে, ও আর আমাদের বাচ্চা দুজনে সুস্থ আছে।ওর বেশি ক্ষতি হয়নি তো।
প্লিজ মি.মিহির শান্ত হন আমরা পুরো চেষ্টা করছি উনাকে ও আপনাদের বাচ্চাকে সুস্থ করে তুলবার। আপনি প্লিজ শান্ত হয়ে বসুন।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩০
ডাক্তারের কথায় কেনো আশ্বাস পেল না মিহির ও পরাজিত সৈনিকের মতো বসে পড়লো। ডাক্তার কিছু ওষুধের নাম লিখে দিয়ে এগুলো আনতে বলল। আব্রাহাম ডাক্তারের কথা অনুযায়ী দ্রুত পায়ে চলে যায় ঔষধ আনার উদ্দেশ্যে। আব্রাহাম হসপিটাল থেকে বের হতেই দেখতে পায় আয়না হসপিটালের দিকে আসছে।আয়না ও আব্রাহাম কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। আয়নার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে কান্না করতে করতে। মেহের কে যখন আব্রাহাম হসপিটালে নিয়ে আসছিল তখন আয়না পাথর বনে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল ও তখনি যেনো বিশ্বাস করতে পাচ্ছিল না কি ঘটেছে।যখন আয়না সকল ঘটনা ভালোভাবে বুঝতে পারে সেই পর্যন্ত আব্রাহাম মেহের কে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেছে।আয়না আব্রাহামের কাছে এসে মেহেরের কথা জিজ্ঞেস করার আগেই আব্রাহামের শক্ত পোক্ত হাতের চর পরে আয়নার গালে আয়না অবাক হয়ে তাকায় আব্রাহামের দিকে।তখনি আব্রাহাম আয়নাকে উদ্দেশ্যে করে বলল….