তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৫

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৫
আমেনা আক্তার

মেয়েটির গালে থাপ্পড়টি পরতেই মেয়েটি অবাক হয়ে তাকায় সিরাতের দিকে। মেয়েটি সিরাতকে জানেনা চিনেনা তার মধ্যে সিরাত ওকে থাপ্পড় মেরে দিলো। সত্যি মেয়েটির জন্য বিষয়টি অবাক করার মতো। মেয়েটি কপট রাগ দেখিয়ে বলল।
এই তুমি আমাকে চিনো, তুমি আমাকে থাপ্পড় মারলে কেনো? তুমি জানো আমি তোমার সাথে কি করতে পারি।কোন সাহসে তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছ।
সোফিয়ার কথা শেষ হতেই সিরাত বলল।
কি করতে পারো?

অনেক কিছু, তোমার পিছনে যেই ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে।ও আমার বয়ফ্রেন্ড আমার এক কথাই রুদ্র তোমার এমন অবস্থা করবে তুমি কখনো আর আমার গায়ে হাত তোলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না।
সিরাত সোফিয়ার কথায় মুচকি হেসে বলল।
তুমি যাকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বলে দাবি করছো। শুধু মাত্র তুমি ওর অতীত। এবং এখন ওর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র আমি। তুমি ওর শুধু মাত্র প্রাক্তন প্রেমিকা।আর আমি হলাম ওর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ স্ত্রী।তাই বুঝে শুনে কথা বলো আমার সাথে।কারণ এমন না হয়ে যায় তুমি আমার অবস্থা খারাপ করতে গিয়ে তোমার নিজের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সিরাতের কথা শুনে সোফিয়া বিশ্বাস করতে চাই না।তাই ও বলল।
অসম্ভব, রুদ্র আমাকে ছেড়ে কখনো অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে তো দূরের কথা। বিয়ে করার কথা ভাবতেও পারে না। রুদ্র অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতে শুধু মাত্র আমি। সেইখানে রুদ্র অন্য কাওকে জায়গা দিতে পারে না।
কথাগুলো বলে সোফিয়া রুদ্রের কাছে গিয়ে বলতে লাগলো।
রুদ্র দেখেছ,এই মেয়ে কি সব মিথ্যা কথা বলছে।আর তুমি কিছু বলছো না।এই মেয়েকে তুমি..
সিরাত সত্য কথা বলছে সোফিয়া,

রুদ্রের একটি কথায় চুপ হয়ে গেল সোফিয়া। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে রুদ্রের পানে তাকিয়ে থেকে বলল।
তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না রুদ্র।আমি তোমার সাথে এই কদিন ঠিক ভাবে কথা বলিনি। তোমাকে ইগনোর করেছি।তাই তুমি আমার সাথে এই মজাটা করছো। আমি তোমার কাছে মাফ চাইছি।আমি আর এইরকম টা কখনো করবো না। এখন আর তোমাকে ইগনোর করব না। তোমার সব কথা শুনবো।আমি আর ছেলে বন্ধুদের সাথেও কখনো কথা বলবো না। তবুও প্লিজ আমার সাথে এত বাজে মজা করো না।
সোফিয়ার কথা শুনে রুদ্র তাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য ওর কাঁধে নিজের হাত রাখতে নিয়েও আবার হাত সরিয়ে ফেলে।রুদ্রের অন্য নারীকে স্পর্শ করার আগেই ওর হাত থেমে গেছে কোথাও যেনো বাধা পাচ্ছে রুদ্র।ও যখনি সোফিয়ার কাঁধে হাত রাখতে চাইলো। তখনি নিজের কাছে প্রচুর খারাপ লাগা অনুভূতি সৃষ্টি হলো।তাই রুদ্র সোফিয়ার কাঁধে হাত রাখতে পারলো না। সোফিয়া রুদ্রের হাত এভাবে গুটিয়ে নিতে দেখে রুদ্রকে বলল।
কি হলো রুদ্র? তুমি নিজের হাত এভাবে গুটিয়ে নিলো কেনো।আমিতো তোমারি আমাকে ছোঁয়ার পূর্ণ অধিকার আছে তোমার।

না আমার অধিকার নেই, কারণ আমি এখন অন্য কারও স্বামী।আমি বা তুমি এটা মানি আর না মানি এই সত্য সত্যই থাকবে।তাই এখন এটায় ভালো হবে তুমি আমার থেকে দূরে থাকো।
রুদ্রের কথা শেষ হতেই সিরাত সোফিয়ার উদ্দেশ্যে বলল।
তোমার নাটক শেষ, এখন সত্যটা যেনে গিয়েছ না। এখন আসতে পারো।আর হ্যাঁ আমার স্বামী থেকে দূরে থাকবে।নাহলে আমি তোমার সাথে কি করতে পারি তুমি তা দেখবে।
সিরাতের কথা শুনে সোফিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সেখান থেকে চলে যায়। সোফিয়া চলে যেতেই সিরাত রুদ্রের কাছে এসে দাঁড়ায়।এবং রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল।
তুমি বেপরোয়া, তুমি অভদ্র, তুমি জঙ্গলি, এই সকল কিছু তোমার ভিতরের বৈশিষ্ট্য কিন্তু এতে আমার কেনো সমস্যা নেই। তুমি মানুষ আর মানুষ বলতেই ভুল। তুমিও জীবনে অনেক ভুল করতে পারো। তখন আমি একজন স্ত্রী হিসেবে তোমাকে সঠিক পথ দেখাবো যেনো তুমি সেই পথ অনুসারে চলতে পারো। কিন্তু ওই ভুল যদি কোনো দ্বিতীয় নারী হয় তাহলে।

কথাটি বলেই সিরাত রুদ্রের আরো কাছে চলে আসে এবং রুদ্রের চোখে চোখ রেখে বলল।
যদি সেই ভুল কোনো দ্বিতীয় নারী হয়। তাহলে আমি তোমাকে সঠিক পথ দেখাব না। তুমি যেনো আর ওই পথই না চলতে পারো তাই তোমার পা কেটে ফেলবো। এবং সেই পা দরজার সামনে ঝুলিয়ে রাখবো যেনো ওই পা দেখে তোমার বারবার মনে পরে তোমাকে এই শাস্তি কেনো দেওয়া হয়েছে। এবং পা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই ভুল আর দ্বিতীয় বার না করো।
কথাগুলো বলে থামে সিরাত। এবং রুদ্র থেকে কিছুটা দূরে সরে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
আমি সাইরার সাথে দেখা করতে এসেছি।ও কোথায় আছে বলতে পারবে।
সিরাতের কথায় সকলের ধ্যান ভাঙ্গে। ওরা সকলে এতক্ষণ ধরে সিরাতের কথা শ্রবণ করছিল।ওরা ভাবতেও পারেনি সিরাত এতটা কঠোর হতে পারে। ঠিক রুদ্রের বন্ধুদের মতোই রুদ্রের অবস্থা। রুদ্র সিরাত থেকে এমন কঠোর বাক্য ব্যবহার করতে পারে। হৃদিতা সিরাতকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
সাইরা স্টেজের দিকে আছে তুমি ওকে ওখানেই পেয়ে যাবে।
হৃদিতার কথা অনুযায়ী সিরাত চলে যায় সাইরা কে খুঁজতে।

নূর আদিত্যের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো আদিত্য এখনো একই ভঙ্গিতে বসে আছে। নূর আদিত্যর কাছে গিয়ে বলল।
দরজা আটকিয়েছে কে?আমি বাহিরে যাবো দরজা খুলে দাও।
নূরের কথায় আদিত্য ভাব অলসহীন ভাবে বললো।
আমি কি জানি? তুমি যেখানে আছো আমিও সেখানেই আছি।
আদিত্যর কথা শুনে নূরের মাথায় যেনো আগুন ধরে গেল।ও আদিত্যর দিকে এক আঙ্গুল তাক করে বললো।
আমার সাথে একদম নাটক করবে না।আমি ভালোভাবে জানি এই সকল কিছু তুমি…
নূর আর কিছু বলার আগেই আদিত্য নিজের জায়গা থেকে উঠে।একদম নূরের কাছে চলে যায় এবং এক হাত দিয়ে নূরের কোমর জড়িয়ে ধরে। আরেক হাত দিয়ে বন্দুক চেপে ধরলো নূরের ঠোঁটে এবং বলল।

হুসসসস আমার একটুও পছন্দ না কেউ আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে ।আমার মাথা গরম হয়ে যায়।আর আমার মাথা গরম করা আর তোর জীবনকে জাহান্নামে পরিবর্তন করা একই কথা। অবশ্য আমার জীবনের সাথে জড়িত হওয়ার পরেই তোর জীবন ইতি পূর্বে জাহান্নামে পরিনত হয়ে গিয়েছে।
কথাগুলো বলে আদিত্য নূরের চেহারার চারদিকে বন্দুকটি দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল।
এত সেজেছিস কেনো কাকে দেখাতে এভাবে সেজেছিস তুই।আর তোর ঠোঁটে এই লিপস্টিক কার জন্য দিয়েছিস বল।
আদিত্যর কথা শুনে নূরের জান যায় যায় অবস্থা। এমনিতেও নিজেকে যতই সাহস দেখাক না কেনো কেউ ।এমন পরিস্থিতিতে যেই কারও ভয় পাওয়ার কথা।তোমনি নূর ও অনেক ভয় পেয়ে আছে কিন্তু ভয়ের জন্য কিছু বলতেও পারছে না।

আদিত্য আবার বলে উঠলো।
তোর সকল কিছুর উপর এখন শুধু মাত্র আমার অধিকার। তুই আমার নামে রেজিষ্ট্রেট হয়ে গিয়েছিস। তোর শ্বাস প্রশ্বাসে শুধু মাত্র আমার অধিকার। আদিত্য কখনো কাওকে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে দেয় না।
তুই হলি আমার অধিকার। আমার হালাল অধিকার তুই।তোর সকল কিছুর সাথে এখন আমি সম্পৃক্ত। মাথার এই টিপ,তোর ঠোঁটের লিপস্টিক,তোর চোখের কাজল,এই সব কিছু শুধু আর শুধু মাত্র আমার জন্য দিবি।তোর গায়ের এই শাড়ি শুধু আমার জন্য গায়ে জড়াবি। কিন্তু আমি বাদে যদি তোর এই ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়া (বন্দুকটি ঠোঁটের উপর চেপে ধরে বলল আদিত্য)চোখে কাজল দেওয়া, কপালে টিপ পড়া আর কেউ দেখে বা আর কারও জন্য তুই সাজিস তাহলে আমি ওই ব্যাক্তির চোখ তো উঠাবই সাথে তোকেও জানে মেরে দিবো।
কথাগুলো বলে আদিত্য বন্দুকটি সরিয়ে নূরের গালে হাত দিয়ে বলল।

বুঝেছ না সোনা,আমি কি বলেছি। আমার কিন্তু একদম সহ্য হয়না কেউ আমার কেনো কিছুতে নজর দেওক।আমি তার জীবন নিতেও তাহলে দ্বিধা বোধ করি না।আর এখানে তো তুমি পুরোটাই আমার। আমার স্ত্রী তোমার এই সাজ সজ্জার জন্য কারও জীবন ও চলে যেতে পারে।তাইতো আমি তোমাকে সাবধান করছি।আর হ্যা আমার একদম না পছন্দ কেউ আবার কথার অবাধ্য হউক। আমার কথার অবাধ্য যারা হয় তাদের জন্য আমি কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করি।আমি আশা করছি সেই শাস্তি তুমি তোমার নিজের জীবনে ডেকে আনবে না।এই নাও রুমাল তোমার চেহারার এই সকল কিছু এখন পরিষ্কার করে তারপর বাহিরে যাবে তুমি।
আদিত্য নূরকে তার হাতে থাকা রুমাল ধরতে না দেখে ধমকিয়ে বলল।
ধরো,

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৪

নূর নিজের কাঁপা কাঁপা হাতে রুমাল টি ধরে নিজের সকল সাজ সজ্জা এক এক করে মুছতে শুরু করলো। নূরের সাজ সজ্জা পরিষ্কার করা শেষ হতেই আদিত্য প্রস্থান করলো সেই রুম থেকে।
এদিকে নূর এখনো একই জায়গায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ও যেনো বুঝতে পারছে না আসলে ওর সাথে এতক্ষণ কি হয়েছে। নূর আদিত্য থেকে এই রকম ব্যবহার কখনো আশা করেনি নূর ও মনে করেছিল আদিত্য ওর মতোই বিয়েটা মানবে না। কিন্তু এ আদিত্যর কথা শুনে এখন অন্য কিছু মনে হচ্ছে।ইতি মধ্যে আদিত্য নূরের উপর নিজের অধিকার খাটানো ও শুরু করে দিয়েছে আর সেটিও খুব ভয়ংকর ভাবে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৬