তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৬
আমেনা আক্তার
পুরো ভার্সিটি তন্নতন্ন করে খোঁজার পরেও রুদ্ররা নূরকে কোথাও খুঁজে পেলো না। নূর কে অনেকবার ফোন ও করেছে তারা কিন্তু নূর নিজের ফোন ও ধরছে না। সকলের অনেক বেশি চিন্তা হচ্ছে নূরের জন্য তাই সকলে মিলে নূরের বাড়ি আসার সিদ্ধান্ত নেই। রুদ্র, রাজ, হৃদিতা, আরশাদ, আব্রাহাম এখন নূরের বাড়ির দরজার সামনে একাধারে কলিং বেল বাজিয়ে চলেছে। তাদের দেখে মনে হবে এখন যদি নূর দরজা না খুলে তাহলে ওদের ট্রেন ছুটে যাবে।
দরজাটি খুলতেই নূর রাজের গালে একটি চর মেরে বলল।
শয়তান আমি কি মরে গেছি এভাবে কলিং বেল বাজাচ্ছিস কেনো দরজা খোলার সময় তো দিবি।
রাজের গালে থাপ্পড় পরেছে কারণ এতক্ষণ অধৈর্য হয়ে কলিং বেল ও বাজাচ্ছিল।নূরের কথা শেষ হতেই হৃদিতা ওকে জাপটে ধরে বলল।
তোর কি হয়েছে জান, তুই ভার্সিটি থেকে এভাবে চলে আসলি কেনো?
হৃদিতার কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ভিতরে যেতে যেতে বলল।
কি হবে আবার, আমার ভালো লাগছিল না তাই চলে এসেছি।
নূরের কথায় রুদ্র বলল।
তুই মিথ্যা কথা বলছিস, অবশ্যই তোর কিছু হয়েছে।নাহলে তুই আমাদের না বলে কখনো আসতি না।আর দ্বিতীয়ত তুই দরজা খুলতেই রাজ কে থাপ্পড় মারতি না।
রুদ্রের কথার সাথে তাল মিলিয়ে রাজ বলল।
ঠিকই বলেছিস এই হারামিতে আমার গাল লাল করে ফেলেছে মেরে।
ভাইয়ার শরীর একটু অসুস্থ হয়ে পরেছিল,তাই আমি তোদের বলে আসতে পারিনি।তোরা তো জানিস আমি ভাইয়াকে নিয়ে কতটা কঠোর। ভাইয়ার কথা যখন আসে আমার কিছুই মনে থাকে না।
নূরের কথা সকলে খুব সহজে বিশ্বাস করে নিলো। কারণ ওরা ভালোভাবেই জানে নূরের ভাইয়ের কোনো সমস্যার কথা শুনলে ও সব ছেড়েছুড়ে চলে আসে।নূর ও মিথ্যা কথা বলছে না। কেননা আদিত্য রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই নূরের মোবাইলে ওর বাড়ির কাজের লোক ফোন করে জানায় নিলয়ের শরীর অসুস্থ।
নূর আদিত্যের করা ব্যবহারের কথা ওর বন্ধুদের জানাতে চাইছে না। নূর চাই ও একা এই বিষয় সামলাতে।তাই নূর ওদের কিছু জানায়নি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রাত এখন ১টা বাজে পুরো শহর পারি দিয়েছে ঘুমের রাজ্যে।রাস্তা ঘাটে দেখা মানুষের ছায়া অবধি দেখা যাচ্ছে না।না শোনা যাচ্ছে কোনো কোলাহল পুরো রাস্তায় ছেয়ে আছে শুনশান নিরবতা। অবশ্য মাঝে মধ্যে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে।পুরো শহর যখন নিদ্রায় শায়িত আছে। তখন জেগে আছে আয়নার চোখ।ও অনেক চেষ্টা করার পরেও কিছুতেই ওর দুটো চোখে ঘুম আসছে না।এটি অবশ্য নতুন না মাঝে মাঝেই আয়নার সাথে এইরকম হয়।বেশি তখন হয় যখন পুরোনো বিষাক্ত স্মৃতিগুলো মাথা চারা দিয়ে উঠে।
আয়না নিজেকে শান্ত করার জন্য বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। এবং কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। অনুভব করার চেষ্টা করে এই শান্ত পরিবেশ কে। আয়নার কাছে রাত অনেক প্রিয় কারণ এই রাতেই তো মানুষ তাদের প্রিয় মানুষদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারে। সকাল হতেই তো আবার মানুষ ফিরে যায় নিজের যান্ত্রিক জীবনে। যেখানে আপন মানুষগুলোর জন্য সময় থাকে না। কিন্তু মানুষ সেই আপন মানুষগুলোর জন্যই কাজ করে।
আয়না বোধহয় জানেনা,ও যেমন আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ কে দেখে চলেছে।তোমনি আয়নাকেও পলকহীন ভাবে কেউ গাছের আড়াল থেকে দেখছে।
আব্রাহাম রোজ রাতে আয়নার বাড়ির সামনের গাছের পিছনে লুকিয়ে থাকে উদ্দেশ্যে হলো প্রিয়শিকে এক নজর দেখা। এখন তো আয়না আব্রাহামের ছায়াও দেখতে পছন্দ করে না। অবশ্য এটা আব্রাহামের করা ভুলের জন্য।তাই আব্রাহাম সব সময় আয়নাকে দূর থেকেই লুকিয়ে দেখে। আব্রাহাম যত পারে আয়নার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু যখন নিজের আবেগের কাছে হেরে যায় তখন আব্রাহাম চলে যায় আয়নার সাথে একটু কথা বলার আশায়।
আচ্ছা যখন আব্রাহাম আয়না কে বকতো ওর ভালোবাসা গ্রহণ করতো না।ওকে বারবার ফিরিয়ে দিতো তখন আয়নার ও তো খুব কষ্ট হতো। আব্রাহাম কয়েক সময় ভাবে আয়না ওর সাথে যা করছে একদম ঠিকই ও এই সকল কিছুর যোগ্য আয়নাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি, ওর আরও পাওয়া উচিত।ওর আরো এই ভালোবাসার আগুনে জ্বলে দগ্ধ হতে হবে তখন হয়তো নিজের করা ভুল কিছুটা হলেও মোচন হবে। হয়তোবা ও অনুভব করতে পারবে আয়নাকে দেওয়া কষ্টগুলো। কিন্তু এই কষ্টগুলো যে অনেক কষ্টকর শ্বাস আটকে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়।
আব্রাহাম এভাবে প্রিয়সির দিকে তাকিয়ে পুরো রাত পার করে দিতে চায়। কিন্তু হায় আব্রাহামের ভাগ্য কি এতটাই ভালো?তাই তো আব্রাহামের তাকিয়ে থাকার মধ্যেই আয়না রুমের মধ্যে চলে গেল। আব্রাহাম আয়নার যাওয়ার পানে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
_
মহিমার পেটের বাচ্চা নড়াচড়া করছে। মহিমা নিজের পেটের উপর হাত দিয়ে নিজের বাচ্চাকে একটু ছুঁয়ে অনুভব করার চেষ্টা করছে।যখনি ওর বাচ্চা নড়াচড়া করে তখনি মহিমা এখন এই কাজটি করে। নিজের বাচ্চাকে অনুভব করা কি কম সুখের ব্যাপার।এই একটি বাচ্চা জন্ম দিতে একটি মায়ের কত কষ্ট করতে হয় তা কেবল একজন মা জানে।
কিন্তু এই কষ্টের মাঝেই লুকিয়ে থাকে এক আকাশ পরিমাণ আনন্দ। সন্তান কে নয় মাস গর্ভে ধারণ করে অপেক্ষা করে তার ছোট ছোট দুটি হাত স্পর্শ করার।চোখ ভরে তার সন্তান কে দেখার। নিজের সন্তানের ছোট ছোট ঠোঁট দিয়ে উচ্চারিত মা ডাক শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে সকল মায়ের মন।
মহিমা নিজের পেটে হাত বুলাতে বুলাতে চলে যায় রেহানা বেগমের রুমে। মহিমা বেগম বসে বসে কাঁথা সেলাই করছেন। রেহানা বেগম কিছুদিন যাবত কাঁথা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছেন। কাঁথা সেলাই করে রেহানা বেগম অনলাইনে বিক্রি করেন।
মহিমা রেহানা বেগমের কাছে এসে রেহানা বেগমের পাশে বসলো। এবং রেহানা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলল।
মা জানো বাবু আজকাল আগের থেকে বেশি নড়াচড়া করে।
মহিমার কথা শুনে হাসে রেহানা বেগম। মহিমা আজকাল একটু সময় পর পরই এসে এই সকল কথা বলতে থাকে উনার কাছে।এতে রেহানা বেগম বিরক্ত হোন না। মহিমা কে দেখে রেহানা বেগমের মনে পরে যায়,ওনার প্রথম প্রেগন্যান্সির কথা। কারণ সকল মেয়েরাই প্রথম মা হওয়ার সময় অনেক বেশি আনন্দে থাকে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তানের সময় আনন্দে থাকে না এমন না। কিন্তু প্রথম বাচ্চার সময় মেয়েরা যতটা বাচ্চা নিয়ে আনন্দিত হয়। তা প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা হয়তো কারো কাছে নেই।
মহিমা রেহানা বেগমের কাঁধে মাথা রেখে বলল।
মা বাবু কবে দুনিয়াতে আসবে,
রেহানা বেগম মুচকি হেসে বলল।
যেদিন আল্লাহর ইচ্ছে হবে তাকে দুনিয়াতে পাঠানোর সেদিন আসবে।
আমি অপেক্ষা করছিতো ওর দুনিয়াতে আসার।
এটা সকল মায়েরাই করে,
রেহানা বেগমের কথা শুনে মহিমা আর কিছু বলে না।আর রেহানা বেগম কাঁথা ও সুই সুতা একপাশে সরিয়ে মহিমার মাথা নিজের কুলের উপর রাখে এবং মমতাময় হাত বুলিয়ে দেয় ওর মাথায়।
অনেক কষ্টে দিন অতিক্রম করছে শামসুজ্জামান। ওনার বাড়ির ভিতরে এখন অশান্তি লেগেই থাকে। শামসুজ্জামান বাড়িতে এক মুহুর্তের জন্যও শান্তি পান না। অবশ্য পাবেন বা কি করে যার স্ত্রী এমন চরিত্রহীন হয়।তার কপালে আর যাই জুটুক শান্তি জুটে না। যেমন শামসুজ্জামানের কপালে জুটছে না। শামসুজ্জামান নিজের স্ত্রী কে একশবার সাবধান করার পরেও ওনার স্ত্রী শুধরাচ্ছে না।
শামসুজ্জামান এখন প্রায় প্রতিদিন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে। প্রায় আধমরা করে ফেলে মেরে তবুও মনে শান্তি পায়না শামসুজ্জামান মনে হয় যেনো আবার ওনার দ্বিতীয় স্ত্রী ওনার অনুপস্থিতিতে অন্য লোকের সাথে রাত কাটিয়েছে। শামসুজ্জামান সারাক্ষণ এখন তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে সন্দেহ করে। ওনার এখন খুব মনে পরে রেহানা বেগম ও নিজের সন্তানদের কথা। মনে পড়বেই বা না কেনো যখন রেহানা বেগম ছিল তখন তো সুখের কেনো কমতি ছিল না। মানুষ বলে না সুখে থাকতে ভূতে কিলায় তাই হয়েছে শামসুজ্জামানের সাথে।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৫
বেশি সুখ শামসুজ্জামানের সহ্য হয়নি তাই তো উনি এমন পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু এখন উনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।উনি উনার দ্বিতীয় স্ত্রী কে তালাক দিয়ে রেহানা বেগম ও নিজের সন্তানদের খুঁজে বের করবেন। এবং দরকার পরলে রেহানা বেগমের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন যে কোনো মূল্যে।