তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৯

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৯
আমেনা আক্তার

রুদ্র হঠাৎ সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
তোমার মাথায় এটা কি?
সিরাত প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় রুদ্রের দিকে। রুদ্র তখনি আবার বলল।
তুমি নড়ো না,আমি দেখছি কথাটি বলেই রুদ্র খাট থেকে নেমে পরে। এবং সিরাতের কাছে এসে ওর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে। সিরাতের মাথা থেকে কিছু একটা ছাড়ানোর নাটক করতে থাকে।সিরাতের কাছ থেকে মিষ্টি একটি ঘ্রাণ আসছে।যা রুদ্রের নাকে এসে বারি খাচ্ছে।এর আগে রুদ্র কখনো সিরাতের কাছ থেকে এমন মিষ্টি ঘ্রাণ পায়নি। কারণ আজ পর্যন্ত রুদ্র সিরাতের এত কাছে আসেনি।রুদ্রের মন চাইছে না সিরাতের কাছ থেকে দূরে যেতে। এভাবেই সিরাতের চুলে হাত বুলাতে চাইছে রুদ্র।

সিরাত রুদ্রের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর কর্মকাণ্ড গুলো দেখছে। রুদ্র সিরাতের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে তার চোখ যায় সিরাতের দিকে।সিরাতের চোখের দিকে রুদ্র তাকাতেই ওর চোখ যেনো সিরাতের উপরেই থেমে যায়। রুদ্র ও সিরাত একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে এক পলকে। দুজনের মধ্যেই অন্য রকম অনুভুতি হচ্ছে। এতক্ষণ সিরাত রুদ্রের দিকে জহুরি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও এখন সিরাতের দৃষ্টি শান্ত ও শিতল হয়ে পরেছে।মনে হচ্ছে ওকে রুদ্রের দিকে কেউ চুম্বকের মতো টানছে।
দুজন দুজনের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ রুদ্র ও সিরাত দু’জনেরই ধ্যান ভাঙ্গে। এবং রুদ্র সাথে সিরাতের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। রুদ্র সিরাতকে কিছু না বলে ওর হাতে থাকা নকল টিকটিকিটা দূরে ছুড়ে মেরে হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
রুদ্র কিছুই বুঝতে পারছে না আজ কাল ওর সাথে কি হচ্ছে।আগে তো রুদ্রের ভিতরে এমন কোনো অনুভুতি সৃষ্টি হয়নি।অথচ রুদ্রের মতে ও সোফিয়াকে ভালোবাসে।তাহলে এখন সিরাতের জন্য ওর অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার কারণ কি।না ও কিছুই ভাবতে পারছে না। সব কেমন যেনো ঘোলাটে মনে হচ্ছে রুদ্রের।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দুই বন্ধু একজোট হয়ে একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে। দুনিয়ার সকল চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ওরা মগ্ন এখন নেশার ঘরে। দুজনকে আটকানোর মতো ও তাদের সামনে কেউ নেই এখন।তাই এই সুযোগে এক বন্ধু নিজের ভালোবাসা যন্ত্রণা পুরছে আরেকজন পুরছে নিজের নতুন অনুভূতি কে বুঝার ধমানোর প্রচেষ্টা। আব্রাহাম আজ পর্যন্ত এত বেশি ড্রিংক ও কখনো করেনি।যদি দুই একবার ড্রিংক করেও থাকে তাহলেও ওটা শুধু বন্ধুদের সাথে মজা করে অল্প একটু আধটু করা হয়েছে। কিন্তু আজ যেনো আব্রাহাম ও নেশার সাগরে ডুবে যেতে চাইছে।
আব্রাহাম যে আর সহ্য করতে পারছে না প্রিয়সির অবহেলা। আব্রাহাম আজ আবার গিয়েছিল আয়নার সাথে দেখা করতে আয়নার কাছে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে। কিন্তু ওর প্রিয়সির মান ভাঙ্গানো কি এত সহজ না ওর প্রিয়সি যেনো ওর দেওয়া কষ্টগুলো পেয়ে পাথর বনে গিয়েছে। সবসময়ের মতো আজও আয়না আব্রাহমকে প্রত্যাখ্যান করেছে।আজ আবার আব্রাহামের মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছে।কি করবে আব্রাহাম কিভাবে ক্ষমা চাইলে আয়না ওকে মাফ করবে।কিছুই বুঝতে পারছে না আব্রাহাম।

আরেকদিকে রুদ্র যে নিজের নতুন জাগ্রত অনুভূতির জন্য নিজেই বিরক্ত।ওর চোখ কেনো সিরাতকে বারবার দেখতে চাইবে।সিরাত আর ওর বিয়ে হওয়া সত্তেও তো ওদের মাঝে ও রকম কোনো সম্পর্ক স্থাপন হয়নি।তাহলে এই অনুভূতি গুলো কেনো হচ্ছে। নিজের সাথে যুদ্ধ করছে রুদ্র এক অদৃশ্য যুদ্ধ।যেই যুদ্ধে রুদ্র যেই কোনো ভাবে জয় হতে চায়।
দুই বন্ধু পুরো দমে মাতাল হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে।রাত বাজে এখন
১ টা আব্রাহামের মা ড্রইংরুমে বসে এখনো আব্রাহামের জন্য অপেক্ষা করছে। আব্রাহামের মা এখন খুবই চিন্তিত হয়ে বসে আছে কারণ আব্রাহাম এর আগে অনেক বার বাড়িতে লেট করে ফিরলেও আব্রাহাম অন্তত ওর মাকে একবার হলেও ফোন করে জানিয়েছে। কিন্তু আজ আব্রাহাম ওর মাকে কিছুই বলেনি।তাই চিন্তাই খারাপ অবস্থা আব্রাহামের মায়ের।তার উপর উনি আব্রাহামের মোবাইলে কয়েকবার ফোন ও দিয়েছে কিন্তু আব্রাহাম একবারের জন্যও ফোন রিসিভ করে নি।এতে যেনো দিগুন চিন্তা বেড়ে গিয়েছে উনার।

আব্রাহাম নেশায় টলতে টলতে ওদের বাড়িতে প্রবেশ করল। আব্রাহামের মা এতক্ষণ দরজার দিকেই তাকিয়ে ছিল। ছেলেকে দেখে সোফা থেকে উঠে আব্রাহামের কাছে গেল আব্রাহামের মা।
আব্রাহাম অধিক পরিমাণে নেশা করার জন্য ঢলে পড়ে যাচ্ছে। আব্রাহামর মা ছেলের অবস্থা দেখে আব্রাহাম যেয়ে ধরলেন। আব্রাহামের মায়ের বিশ্বাস হচ্ছে না আব্রাহাম এত ড্রিংক করে বাসায় ফিরেছে। আব্রাহাম তো কখনো এমন করে না। তাহলে আজ এমন কি হয়ে গেল আব্রাহাম এই অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে।
আব্রাহাম কে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ওর মা। উনার একার পক্ষে সম্ভব না আব্রাহাম কে একা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা।তাই আব্রাহামের মা আব্রাহাম কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে উনি নিজের রুমে চলে গেলেন।রুমে গিয়ে আব্রাহামের বাবাকে ঘুমাতে দেখে আব্রাহামের মা কান্না করতে করতে আব্রাহামের বাবাকে জাগাতে লাগলেন।
আব্রাহামের বাবা স্ত্রী কান্না জড়িত কণ্ঠ শুনে ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলেন। এবং বললেন।

কি হয়েছে তুমি এত রাতে কান্না করছ কেনো ?
আব্রাহামের মা কান্না করতে করতে বললেন।
এসে দেখেন আমার ছেলে কি অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে।ওর এই অবস্থা আমার সহ্য হচ্ছে না।
কোথায় আব্রাহাম?আর কি হয়েছে ওর। তুমি এভাবে কান্না করছো কেনো।
ড্রয়িং রুমে,
স্ত্রী কথা শুনে আব্রাহামের বাবা দেড়ি না করে ড্রয়িং রুমে চলে যায়। এবং দেখে আব্রাহাম মাতাল হয়ে সোফায় পরে আছে। আব্রাহামের বাবা ও আব্রাহাম কে এই অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায়। সাথে উনার প্রচুর রাগ উঠে।উনি রাগ মিশ্রিত গলায় বলল।
ওর এত বড় সাহস ও এত রাতে বাড়িতে নেশা করে ফিরেছে। আবার ওর জন্য তুমি কান্না করছো।
স্বামীর কথা শুনে আব্রাহামের মা বললেন।
ওর নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে, নাহলে আপনিও তো আব্রাহাম কে ভালোভাবে চিনেন ও কখনো এত নেশা করে না। ওকে উপরে নিয়ে চলুন।

আব্রাহামের মায়ের কথা শুনে ওর বাবা আর কিছু না বলে আব্রাহাম কে উপরে নিয়ে যায় ওর রুমে। এবং আব্রাহাম কে ওর বাবা বিছানায় সুইয়ে দেয়। আব্রাহামের মা আব্রাহামের জন্য কিচেন থেকে কিছু লেবুর রস নিয়ে আসে। আব্রাহাম কে সেই লেবুর রস গুলো খাইয়ে দেওয়া হয়।যেনো ওর নেশা কিছুটা হলেও হালকা হয়।
আব্রাহাম কে লেবুর রস খাওয়ানোর কিছু সময় বাধেয় আব্রাহাম নড়ে চড়ে উঠে। এতক্ষণ ও বেহুঁশের মতো পরে ছিল এখন বিরবির করে কি যেনো বলছে। আব্রাহামের মা আব্রাহামের কাছে বসে ওকে জিজ্ঞেস করলো ও কেনো এত নেশা করেছে। আব্রাহামের বাবা ও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম ওর মায়ের প্রশ্নে পিটপিট করে ওর মায়ের দিকে তাকায়। আব্রাহাম ওর মাকে দেখে জাপটে ধরে হাউমাউ কেঁদে উঠলো।

আব্রাহামের বাবা মা দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেল ছেলের এই অবস্থা দেখে। আব্রাহাম কে উনারা আজ অনেক বছর ধরে কাঁদতে দেখেনি।বলতে গেলে আব্রাহামের বুঝ হবার পর থেকে ও কখনো যত কষ্টই হোক না কখনো কারও সামনে নিজের অশ্রু বিসর্জন দেয়নি আব্রাহাম। তাই আজ ছেলেকে এভাবে কাঁদতে দেখে আব্রাহামের বাবা মায়ের কলিজায় যেনো পাথর দিয়ে বারি দেওয়ার মতো যন্ত্রণা হচ্ছে। উনারা বিচলিত হয়ে পরলেন আব্রাহামের মা অধৈর্য গলায় জিজ্ঞেস করলেন।

তোর কি হয়েছে বাবা, তুই এভাবে কাদছিস কেনো?
আব্রাহাম ওর মায়ের কথায় কাঁদতে কাঁদতে বলল।
আমি মরে যাচ্ছি মা,আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।
কি বলছিস তুই, এমন কথা তুই মুখ থেকে বের করছিস কেনো। আম্মু আব্বু আছি না তোর কাছে।
আব্রাহামের মায়ের কথা শেষ হতেই, আব্রাহামের বাবা আব্রাহামের পাশে বসে অধৈর্য গলায় বলল।
আমাদের বল বাবা তোর কি হয়েছে,আমরা সব ঠিক করে দিবো। তোর কিছুই হবে না।
ও আমাকে মাফ করছে না বাবা,ওর অবহেলা আমাকে ভিতর থেকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।আমি মরে যাচ্ছি যানো তোমরা।ও যখন আমার দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকায় তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে।ওকে একটু বলো না আমাকে মাফ করে দিতে। আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর কখনো ওকে কষ্ট দিবো না।আমি সত্যি বলছি প্লিজ তোমরা ওকে বুঝাও।

কথাগুলো বলে আবার কেঁদে উঠলো আব্রাহাম। আব্রাহামের কথা শুনে আব্রাহামের বাবা মায়ের বুক যেনো কেঁপে উঠলো। আব্রাহামের বাবা মা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে আব্রাহাম অবশ্যই কেনো মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে। এবং তার জন্যই ওনাদের ছেলে এত কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু কে ওই মেয়ে আর কেনো বা আব্রাহাম সেই মেয়েকে ক্ষমা করতে বলতে বলছে। আব্রাহাম তার কোন ভুলের মাফ চাইছে।কি করেছে ও।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৩৮

আব্রাহাম যাই করুক না কেনো ওর ভুলের জন্য যে ও ভিশন কষ্ট পাচ্ছে তা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে আব্রাহামের বাবা মা।আজ পর্যন্ত ছেলের কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেননি ওনারা।আজ ছেলের এই অবস্থা যেই মেয়ের জন্য হয়েছে।সেই মেয়েকে যেই কোনো মূল্যে এনে দিবেন ওনারা।
আব্রাহামের মা আব্রাহাম কে জিজ্ঞেস করলেন।
কে সেই মেয়ে বাবা?

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪০