তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৩
আমেনা আক্তার
আজ মির্জা বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। সকাল হতেই সকলে কাজে লেগে পরেছে। কিন্তু সকাল সকাল রুদ্র গায়ের হয়ে আছে ওদের বাড়ি থেকে। সকালে উঠে রুদ্র কোথায় গিয়েছে কেউ যানে না। রুবেল মির্জা রুদ্রকে অনেকবার ফোনও করেছে কিন্তু কোথাও রুদ্রের কোনো খবর নেই। এদিকে রেহানা বেগম ,সাইরা ও মহিমা ও ওদের বাড়িতে এসে পরেছে। কাল রুবেল মির্জা নিজে গিয়ে বলে এসেছে রেহানা বেগম কে আজ তাদের বাড়িতে আসার কথা।ও আজ রেহানা মির্জা রুদ্র ও সিরাত কে সাথে করে নিয়ে যাবেন।
সিরাত ও রুদ্রের বিয়েটি অস্বাভাবিক ভাবে হওয়ার কারনে এতদিন উনি ওদের দুজনকে বাড়িতে নিতে পারেনি। অবশ্য সিরাত প্রায় যেয়ে ওর বোন ও মায়ের সাথে দেখা করে আসে। রেহানা বেগম এই বাড়িতে আসার পর থেকে ওনার মন কিছুটা ব্যাকুল হয়ে আছে। কারণ এখানে আসার পর রুবেল মির্জা ও সাহানারা মির্জা ওনার সাথে ঠিকঠাক ভাবে কথা বললেও সালেহা মির্জা ও রুদ্রের চাচি কেনো যেনো রেহানা বেগম দেখলেই মুখ বাঁকিয়ে রাখছেন। আবার কথায় কথায় ওনার কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলছেন। এইসবে ও এতটা সমস্যা নেই রেহানা বেগমের সমস্যা হওয়ার কারণ সকাল হতেই রুদ্রের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি।এখন রেহানা বেগমের মাঝে শংকা তৈরি হচ্ছে। আবার নাকি কাল সিরাতকে শপিং মলে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল রুদ্র তাও নিয়ে যায়নি।
তাই রেহানা বেগমের মনে ভয় হচ্ছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ওনার, ও ওনার বড়ো মেয়ের মতো সিরাতের কপাল ও যেনো পুড়া না হয়।সিরাতের খাটের উপর বসে আছে রেহানা বেগম। মহিমা একটু জার্নি করলেও এখন ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই সে খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে।ওর পাশে বসেই সাইরা সিরাতের রুমের এক এক জিনিস দেখতে ব্যস্ত হয়ে আছে।সিরাত বাইরে কাজে ব্যস্ত তাই মা বোনদের সময় দিতে পারছে না।সিরাত নিজের সকল কাজ সম্পন্ন করে নিজের রুমে ফিরে এসে মায়ের সামনে বসে।সিরাত কিছু বলার আগেই রেহানা বেগম বলে উঠলেন।
আমি কি তোকে এখানে থাকতে বলে ভুল করে ফেলেছি?
রেহানা বেগমের কথা শুনে সাইরা চোখ বড়বড় করে রেহানা বেগমকে দিকে তাকায়। মহিমা ও নিজের চোখ খুলে মায়ের দিকে তাকায়।আর সিরাত ভ্রু কুঁচকে রেহানা বেগম কে জিজ্ঞেস করলো।
হঠাৎ এই প্রশ্নের কারণ?
রেহানা বেগম সিরাতের কথায় অধৈর্য হয়ে বলল।
তোর যদি কখনো মনে হয় তুই আর এই সম্পর্কে থাকতে পারছিস না বা রুদ্র তোর সাথে কোনো বাজে আচরণ করছে তোকে স্ত্রীর মর্যাদা দিচ্ছে না।ও যদি কখনো তোর গায়ের রং নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বা অন্য কোনো মেয়ের দিকে ওর ঝোঁক থাকে। তাহলে তুই আমার কাছে চলে আসিস মা। জোরপূর্বক কোনো সম্পর্কে তোর থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। কখনো নিজের আত্মসম্মান কারও জন্য বিসর্জন দিবি না।এটি মনে রাখিস মা সবসময় তোর জন্য আছি।তোর যখনি মনে হবে তুই এখানে থাকতে পারছিস না। তখন শুধু একবার আমাকে বলবি আমি তোকে নিয়ে যাবো এখান থেকে।
সিরাত মায়ের সম্পূর্ণ কথা ধৈর্য ধরে শুনে।সিরাত তার মাকে কিছু বলবে তার আগেই রুমে সাহানারা মির্জা প্রবেশ করে। এবং মা ও মেয়েকে একসাথে দেখে বলল।
এখানে চার মা মেয়ে মিলে আমাকে একা রেখে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে দেখি। তোমরা আমার কথা মনে হয় সকলে ভুলে গিয়েছ।
সাহানারা মির্জার কথা শুনে রেহানা বেগম হাসি মুখে বলল।
আপনার কথা কি আমরা ভুলতে পারি। আমার মেয়ের আগে তো আমি আপনার সাথে দেখা করেছি।আপনি এখন কাজে ব্যস্ত তাই আর ডাকি নি।
আমি শয়তানি করছিলাম,আমি জানি আপনি আমাকে কতটা সম্মান করেন। এবং আমি আমার শাশুড়ির করা আচরণের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।
কথাটি বলেই সাহানারা মির্জা সিরাত কাছে গিয়ে ওনার হাতে থাকা একটি সুন্দর শাড়ি সিরাত কে দিয়ে বলল।
তুমি আজ এইটা পরো কাল তো তোমাদের শপিং মলে যাওয়া হয়নি। তাই আজকের জন্য কিছু আনাও হয়নি।আর এত কম সময়ে আমরাও কিছু যোগার করতে পারিনি।তাই আজ তুমি এই শাড়িটা পরো।এইটা আমার নতুন শাড়ি তোমাকে খুব মানাবে আর সাথে কিছু গয়না ও আছে তোমাকে অনেক মিষ্টি লাগবে এগুলো পরলে।
তার কোনো প্রয়োজন নেই,
সাহানারা মির্জা কথাটি শেষ করতেই পিছন থেকে বলে উঠলো কথাটি রুদ্র।
রুদ্রের আওয়াজ শুনে সকলে দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো। কিছু শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ও। রুদ্র শপিং ব্যাগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে প্রথমে রেহানা বেগম ও সাইরা মহিমার সাথে কুশল বিনিময় করে।সিরাতকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
তোমার জন্য এই শপিং ব্যাগের ভিতরে লেহেঙ্গা ও গয়না আছে। তার সাথে ম্যাচিং করা হিজাব। ভুলেও হিজাব ছাড়া রেডি হয়ে নিচে যাবে না।আর বেশি সাজার প্রয়োজন নেই। তুমি এমনেই ঠিক আছো।
কথাটি বলেই রুদ্র রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুদ্র কথা এতক্ষণ সিরাত চুপ করে শুনছিলো। রুদ্র চলে যেতেই সিরাত শপিং মল খুলে দেখতে পায়। রুদ্র ওর জন্য একটি নীল রঙের লেহেঙ্গা সাথে ম্যাচিং হিজাব ও কিছু স্বর্ণের গহনা এনেছে। সাহানারা মির্জা এই সকল কিছু দেখে অনেক খুশি হয়েছেন। সাহানারা মির্জা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছেন রুদ্র আস্তে আস্তে সিরাতকে মেনে নিচ্ছে। কিন্তু রেহানা বেগম যেনো এখনো সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। ওনার মনে এখনো দ্বিধা আছে।
সকল আত্মীয়র সমাগম আজ রুদ্রের বাড়িতে। আত্মীয়রা আসা শুরু করে দিয়েছে।এখন পুরো বাড়ি আত্মীয় স্বজন দিয়ে ভরপুর। রুবেল মির্জা ও রুদ্র দরজার সামনে দাড়িয়ে সকলে স্বাগতম জানাচ্ছে। রুদ্র সিরাতের সাথে ম্যাচ করে নীল রঙের একটি আধুনিক ডিজাইনের পাঞ্জাবি পরেছে। রুদ্রের সকল বন্ধুরাও ইতিমধ্যে অনুষ্ঠানে এসে পরেছে।রাজ নিজের সাথে আয়নাকে ও নিয়ে এসেছে। আয়না এই পর্যন্ত সিরাতকে দেখেনি। কিন্তু এখনো নূর আসে নি।ওর না আসার সম্ভাবনা বেশি কেননা নূর নিলয়ের জন্য কিছু জরুরী ঔষধ আনতে যাবে।যেই ঔষধ আনবে তা এখানে পাওয়া যায় না আর ঔষধ যে শেষ হয়ে গিয়েছে তাও নূর আগে দেখে নি তাই জরুরি ভাবে এখন ঔষধ আনতে যাচ্ছে।
বউভাত অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। সকলে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে বউ দেখার অপেক্ষায়। সালেহা মির্জা সাহানারা মির্জার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন।
কত সময় হয়ে গিয়েছে বউ নিচে নামবে কখন ।ও কি কোনো রাজ রানী যে সকলকে এমন ভাবে অপেক্ষা করাচ্ছে।
সালেহা মির্জার কথা শেষ হতেই সাহানারা মির্জা বলে উঠলেন।
ওই দেখেন সিরাত নামছে,
সাহানারা মির্জার কথা শুনে সকলে সিঁড়ির দিকে তাকায়। রুদ্র,রাজ, আরশাদ ও আব্রাহামের দৃষ্টি যেনো থমকে যায় ওদের দিকে তাকিয়ে। শুধু সিরাত একা নামছে না।সিরাতের সাথে আয়না, হৃদিতা ও সাইরা ও নামছে সবার মুখেই হাসি লেগে আছে। রুদ্র যেনো চোখ সরাতেই পারছে না।সিরাত কে যে ওর এনে দেওয়া লেহেঙ্গায় এতটা সুন্দর লাগবে ও কখনো ভাবেনি।তার উপর রুদ্র সিরাত কে আজ প্রথম বার কাজল কালো চোখে দেখেছে। তার উপর সিরাত নুড কালারের লিপস্টিক দিয়েছে।সিরাত খুব সামান্য সাজার পরেও রুদ্রের কাছে সিরাতকে কোনো পরীর থেকে কম লাগছে না।ঠিক একই অবস্থা রাজ, আব্রাহাম ও আরশাদের ওরা হা করে তাকিয়ে আছে নিজেদের প্রিয়তমার দিকে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে চোখ সরালেই বোধহয় ওদের প্রিয়তমা কে কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে।
সিরাত সিঁড়ি দিয়ে নামতেই রুদ্র আগে বেড়ে তার হাত বাড়িয়ে দেয় সিরাতের উদ্দেশ্যে।সিরাত বিনা সংকোচে রুদ্রের হাত ধরে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত স্থানে বসে। অনুষ্ঠান ঠিক ঠাকই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা সাহানারা মির্জাকে বলে উঠলেন।
কি গো সাহানারা তুমি তোমার রুদ্রের জন্য এ কেমন বউ নিয়ে এসেছ। বউয়ের গায়ের রং দেখি কতটা কালো।দেখতে একদম কুৎসিত লাগছে।
মহিলাটির কথার সাথে তাল মিলিয়ে আরেকজন মহিলা বলে উঠলেন।
হ্যাঁ আপা ঠিকই বলেছে, তোমার এত সুন্দর ছেলের জন্য যে তুমি এমন একটি বউ আনবে আমরা কখনো ভাবিনি।
মহিলা গুলোর কথার সাথে আরও কিছু মহিলা তাল মিলালো।সিরাত ও ওর মায়ের এখন খুব অপমানিত বোধ হচ্ছে। কিন্তু মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে সালেহা মির্জা।কারণ এই সকল কিছু তো উনার কথা মতোই হচ্ছে। সালেহা মির্জা তো এই সকল কিছুর অপেক্ষায় করছিলেন এতো সবে মাত্র শুরু। সালেহা মির্জা যখনি এই সকল কথা ভাবছিল। তখনি রুদ্র মহিলা গুলোর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
আপনারা একদম ঠিক বলেছেন,আমার মতো ছেলের সাথে কি সিরাতের মতো মেয়েকে মানায়।আমার মনের কথাগুলো আমার বাবা মা না বুঝতে পারলেও আপনারা বুঝতে পেরেছেন তাই আমি আপনাদের উপর কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি জানতে চাই কে কে আমার সাথে একমত। যে আমি আরো ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করি তারা এক পাশে এসে দাঁড়ান। তাদের জন্য আমার কাছে কিছু উপহার আছে।
রুদ্রের কথা মহিলা গুলো খুব খুশি হলো।সাথে সালেহা মির্জাও খুশি হয়েছে।এটা ভেবে যাক তাহলে নাতি ওনার পক্ষেই আছে। মহিলা গুলোর সাথে আরো কিছু মানুষ এক সাইডে দাঁড়িয়ে পরলো। তখনি রুদ্র জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে গার্ড কে ডেকে আনলো।কেউ বুঝতে পারছেনা রুদ্র গার্ড কে কেনো ডেকেছে।তখনি রুদ্র বলে উঠলো।
ওনাদের সকল কে এখনি আমার বাড়ি থেকে বাইরে বের করো।আমি চাই না আমার বাড়িতে এমন কোনো ব্যক্তিরা থাকুক যারা আমার স্ত্রীকে নিচু চোখে দেখে।আমার স্ত্রীর গায়ের রংয়ের জন্য ওকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে।আমি আর এক মুহূর্তের জন্যও ওদের চোখের সামনে দেখতে চাই না।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪২
নূর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে গাড়ির জন্য। অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করার পরেও একটি গাড়িও পাচ্ছে না।একটি সিএনজি পেলেও তো হতো। নূরের অপেক্ষার মাঝেই ওর সামনে একটি প্রাইভেট কার এসে থামে। এবং তার থেকে আরিফ বের হয়ে আসে আরিফ কে দেখে নূর নিজের ভ্রু কুঁচকে ফেলে। আরিফ গাড়ি থেকে নেমেই ভদ্র ছেলেদের মতো মাথা নিচু করে নূরের উদ্দেশ্যে বলল…