তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৯

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৯
আমেনা আক্তার

আয়না আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইছে।আর তৈরি হচ্ছে বান্ধবীদের সাথে মেলায় যাওয়ার জন্য। আয়নার মেলায় যেতে অনেক ভালোলাগে। কিন্তু মেলায় থাকা ভিড় অনেক বিরক্ত লাগে।তাই সব সময় রাজ কে সাথে নিয়ে মেলায় যায় আয়না যাতে মেলাতে থাকা খারাপ মানুষদের খারাপ স্পর্শ থেকে বাঁচতে পারে।আজ শুনেছে বেশি ভিড় থাকবে না।তাই আজ বান্ধবীদের সাথে মেলায় যাচ্ছে।আজ ভাইকে তো আর সাথে নিয়ে যাবে না ভাইকে সাথে নিয়ে গেলে বান্ধবীরা মেলায় জিনিসপত্র কম দেখে ওর ভাইকে বেশি দেখে ।তাই আজ আয়না শুধু বান্ধবীদের সাথে যাবে মেলায়।

ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক লাগিয়ে। চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়ে হিজাবটি সুন্দর ভাবে মাথায় বেঁধে নিলো আয়না। মুচকি হেসে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে থমকে গেল আয়না। এইভাবে তো ও এক সময় আব্রাহামের জন্য সাজতে চাইতো।আয়না চাইতো নিজের স্বপ্নের পুরুষের সাথে বিয়ে হওয়ার পর। প্রতিদিন শাড়ি পরে এই সাজে আব্রাহামের সামনে নিজেকে ফুটিয়ে ফুলবে। কিন্তু ভাগ্য, ভাগ্য কি সবার সকল আশা পূর্ণ করে।করে না তাই আয়না বাধ্য হয়ে নিজের প্রিয় স্বপ্ন গুলোর থেকে আব্রাহামের নাম কেটে দিয়েছে।যে ওর ভালোবাসার মূল্য দিতে যানে না তাকেও আয়না মূল্য দিবে না। এখন শুধু নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চায় আয়না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাগুলো ভেবে নিজের পার্স ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।বাড়ি থেকে বের হয়ে একটি রিক্সায় চড়ে বসে আয়না। রিক্সা চলছে আয়না এদিক সেদিক তাকিয়ে রাস্তায় ঘটা বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু আয়না জানেনা ওকে কেউ ফলো করছে। যখন আয়না বাড়ি থেকে বের হয়েছে তখন থেকে। হুম আয়নাকে ফলো করছে আব্রাহাম।অন্য একটি রিক্সায় চড়ে যেনো আয়না ওকে দেখলেও না চিনে তাই নিজেকে ভালোভাবে আবৃত করে এসেছে। যখন আয়না বাড়ি থেকে বের হয়েছে তখন কিছুক্ষণ আব্রাহাম পলকহীন ভাবে তাকিয়ে ছিল আয়নার দিকে। কিন্তু ও যে তাকাতেও পারবে না আয়নার এইভাবে।দিকে কারণ আয়না এখনো ওর জন্য হালাল হয়নি। আয়নার কাছে ও যে পরপুরুষ। শুধু ভাইয়ের বন্ধু হওয়ার উসিলায় যে আয়নাকে দেখার অনুমতি ওর নেই। তবুও যে অবাধ্য মন মানতে চায় না। নিজের অনুভূতির কাছে বারবার হেরে যেতে হয় ওকে।

আয়নার রিক্সা এসে থামলো মেলার সামনে। মেলায় প্রবেশ করার মূল গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়নার বান্ধবীরা।আয়না নিজের বান্ধবীদের দেখে হাসি মুখে এগিয়ে গেল তাদের দিকে। আয়নার বান্ধবীরা বোধহয় আয়নাকে একা দেখে এতটা খুশি হয়নি।তাই আয়না ওদের সামনে যাওয়ার পরেও আয়নার পিছনে কাওকে খুঁজতে লাগলো।আয়না নিজের বান্ধবীদের কাওকে খুঁজতে দেখে বলল।
এই তোরা কাকে খুজছিস?
তোর ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আসিস নি।
নাহ,
আয়নার ছোট্ট উত্তরটি শুনে আয়নার বান্ধবীরা একসাথে চেঁচিয়ে বলল।
কেনো?

কারণ তোরা মেলার জিনিস কম আমার ভাইকে বেশি দেখিস, এমনিতেও আমার ভাইয়ের উপর লাইন মেরে এখন কিছু করতে পারবি না। আমার ভাই বুক হয়ে গেছে। ভাইয়া আমার জন্য ভাবি খুঁজে নিয়েছে।তাই তোদের জন্য এটাই ভালো হবে আমার ভাইয়ের পিছু ছেড়ে দে।
আয়নার কথা শুনে ওর বান্ধবীদের মন খারাপ হয়ে গেল। আয়না ওদের বিশেষ পাত্তা না দিয়ে সকলের সাথে মেলায় প্রবেশ করলো।আজ মোটামুটি ভিড় আছে মেলায় কিন্তু এতটাও না যে এক জনের শরীরের উপর আরেকজনের ঢলে পরতে হবে। শান্তি মতো আজ মেলায় ঘুরা যাবে।
আয়না মেলার এক একটি দোকান থেকে নিজের পছন্দের জিনিস নেওয়ার চেষ্টা করছে। ঘুরে ঘুরে দেখছে নিজের জন্য কি নেওয়া যায়। শুধু কি নিজের জন্য ওর বাবা মা আর ভাইয়ার জন্যও তো কিছু নিতে হবে যেই জিনিস দেখে তাদের মুখে হাসি ফুটবে। কথাটি ভেবে আগে আয়না নিজের পরিবারের মানুষের জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র বাছাই করছে। আয়নার সাথে ওর বান্ধবীরাও নিজেদের জন্য কেনাকাটা করছে।
দূর থেকে আয়নার সকল গতি বেগ লক্ষ্য করছে আব্রাহাম। মুচকি হেসে আব্রাহাম আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। আর দেখছে আয়নার আশেপাশে কোনো ছেলে ঘুরঘুর করে কিনা।অথবা কোনো ছেলে মেলার সুযোগ নিয়ে আয়নাকে খারাপ ভাবে স্পর্শ করতে চাইছে কিনা।বলতে গেলে আব্রাহাম এখন আয়াতের বডিগার্ডের দায়িত্ব পালন করছে।

কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে আরশাদ, রুদ্র, নূর, হৃদিতা ও রাজ।আজ অনেকদিন পর ওরা ভার্সিটিতে পা রেখেছে।তাই ক্যাম্পাসে বসে ওরা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে এখন।রাজ ওদের মাঝে আব্রাহাম কে না দেখতে পেয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলল।
আব্রাহাম কোথায় ও এখনো আসছে না কেনো?
মূলত এখানে উপস্থিত রাজ ছাড়া সকলেই যানে আব্রাহাম কোথায় গেছে। কিন্তু রাজ কে কি করে বলবে আব্রাহাম ওর বোনের পিছু পিছু মেলায় গিয়েছে তাই আরশাদ বলল।
ওর কিছু জরুরী কাজ আছে ও পরে আসবে,
আরশাদের কথায় রাজ ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এবং বলল।
এমন কি জরুরী কাজ যেটার সম্পর্কে তোরা জানিস আমি জানিনা।

রাজের কথা শুনে আরশাদ কিছু বলবে তার আগেই নূর স্পষ্ট ভাবে জবাবে বলল।
আব্রাহাম নিজের প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে গিয়েছে।যাকে ও প্রচুর ভালোবাসে।
নূরের কথা শুনে রাজ হতভম্ব হয়ে তাকায় নূরের দিকে। নূর কি এটা শয়তানি করে বলছে।নাকি ও সিরিয়াস,নূরের চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না ও শয়তানি করছে। নূরের বাকি বন্ধুরাও ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।রাজ দাঁতে দাঁত চেপে নূরের উদ্দেশ্যে বলল।
কি বলছিস এই সব,
নূর ভাব অলসহীন ভাবে উত্তরে বলল।

ঠিকই বলেছি আমি,রাজ একদিন না একদিন এই কথা জানবেই তাহলে আজ কেনো না।ওকে যত দেড়ি করে বলা হবে বিষয়টিতে তত বেশি কম্পিটিশন বাড়বে। আব্রাহাম মাথা মোটা ও নিজের বন্ধুত্বের জন্য নিজের ভালোবাসা বলিদান দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা তো ওর মতো মাথা মোটা না।ওর কথা শুনে অনেক চুপ থেকেছি। এখন আর না ও রাজ কে কিছু বলুক আর না বলুক কিন্তু আমাদের অবশ্যই বলা উচিত।
রাজ নূরের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। রাজ নূরকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
কি বলছিস তুই,কি জানানোর কথা বলছিস আমাকে।আর আব্রাহামের প্রিয়তমা মানে,কে ওর প্রিয়তমা।আর আব্রাহাম নিজের ভালোবাসা বলিদান বা কেনো দিবে।তোরা সব কিছু জানিস কিন্তু আমি কিছু জানিনা।
রাজের কথার প্রতি উত্তরে নূর কিছু বলবে তার আগেই পিছন থেকে নূরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
ম্যাম ভাই আপনার সাথে কথা বলতে চায়।ভাই আপনার মোবাইলে অনেক বার ফোন দিয়েছে কিন্তু আপনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরিফের কথা শুনে নূর আরিফের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিজের কানে চেপে ধরলো।
তখনি ওপাশ থেকে শুনা গেল আদিত্যর হুংকারিত কন্ঠ।
ফোন কোথায় থাকে তোমার? এতগুলো ফোন দেওয়ায় পরেও রিসিভ করোনি কেনো।
ফোন ভুল করে বাসায় রেখে এসেছি,
আদিত্য নূরের কথা শুনে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল।
এমন ভুল যেনো দ্বিতীয় বার না হয়,আর আজ বাইরে ঘুরা ফেরা করার দরকার নেই।আজ আনন্দ মেলায় গন্ডগোল হবে। এবং শহরেও কিছু জায়গায় ও গন্ডগোল হবে।তাই তুমি মেলা থেকে দূরে থাকবে ভুলেও সেখানে যাওয়ার কেনো প্রয়োজন নেই। আমার গাড়ি ভার্সিটির বাইরেই থাকবে ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে।
ঠিক আছে,

কথাটি বলতেই আদিত্য ফোন কেটে দিলো। তখনি হৃদিতা দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো।
দুলাভাই এমন কি রোমান্টিক কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছে যার জন্য তার সেক্রেটারি কে এখানে পাঠাতে হলো।
এমন কোনো কথা বলার জন্য আমাকে ও ফোন করেনি যা শুনে তুই মজা পাবি। কোথায় যানো মেলা হচ্ছে সেই মেলা থেকে দূরে থাকতে সেখানে নাকি গন্ডগোল হবে।
নূরের কথা শুনে রাজ অস্থির হয়ে বলল।
কোন মেলার কথা বলেছে,
আনন্দ মেলা,

নূরের কথা শুনে সকলের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কারণ আয়না ও আব্রাহাম তো ওই মেলাতেই আছে।রাজ সময় ব্যয় না করে আয়নার মোবাইলে ফোন লাগায়। কিন্তু আয়না মোবাইল রিসিভ করছে না।
রাজের অবস্থা দেখে নূর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
রাজ এমন করছে কেনো।
কারণ আয়না ওর বান্ধবীদের সাথে আনন্দ মেলায় গিয়েছে।
এর মধ্যেই রাজ আরো অস্থির হয়ে বলল।
আয়না ফোন তুলছে না,
রাজের কথা শুনে আরশাদ বলল।
আব্রাহাম ও মেলাতেই আছে,আমি ওকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।

আরশাদের কথা শুনে রাজ কিছুটা অস্থির হলেও এখন ওর অন্য কিছু ভাবতে মন চাইছে না। আরশাদ ফোন করে আব্রাহামের ফোনে। আব্রাহাম এতক্ষণ ধরে আয়নার পিছু পিছুই ঘুরছে। কিন্তু আয়না একবারের জন্যও আব্রাহাম কে দেখতে পায় নি। আব্রাহাম অদৃশ্য ভাবে আয়না কে রক্ষা করে যাচ্ছে খারাপ মানুষ থেকে।আয়না এখন একটি দোকানে দাঁড়িয়ে কিছু কেনাকাটা করছে। তখনি আব্রাহামের ফোনটি বেজে উঠল। আব্রাহাম ফোন রিসিভ করে কিন্তু আওয়াজের জন্য কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আব্রাহাম একটি সাইডে চলে যায় তখনি আরশাদ আব্রাহাম কে উদ্দেশ্য করে বলল।

ভাই শোন মেলায় আজ গন্ডগোল হবে যত দ্রুত সম্ভব তুই আয়নাকে নিয়ে মেলা থেকে বেড়িয়ে যা।
আরশাদের কথা শুনে আব্রাহাম কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই মেলার মূল গেইট দিয়ে প্রবেশ করে গাড়ি ভর্তি কিছু গুন্ডা তাদের সকলের হাতে অস্ত্র ও লাঠি। আব্রাহাম ওদের দেখে দ্রুত আয়নাকে রক্ষা করতে ওই দোকানে চলে যায়। কিন্তু আয়না দোকানে নেই। কোথায় গিয়েছে আয়না। আয়নাকে না পেয়ে আব্রাহামের কলিজা কেঁপে উঠল।

হসপিটালে হৈচৈ পড়ে গেছে। ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে ঢুকার পর আর বের হওয়ার নাম নিচ্ছে না। রুদ্ররা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ওদের সকলের চোখে অশ্রু চিকচিক করছে।আপন জন হারানোর ভয় যেনো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ওদের।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এখন ওদের আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই যে করার নেই।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৪৮

এরমধ্যে দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ আহাজারি করতে করতে প্রবেশ করছে হসপিটালে। তাদের কলিজা মনে হয় ছিঁড়ে যাচ্ছে। মানুষগুলোর আর্তনাদ শুনে যেই কেউ বলতে পারবে হয়তো ওনাদের আপন মানুষের বিরাট বড়ো কোনো ক্ষতি হয়ে গেছে। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।কে হসপিটালে ভর্তি কার অপারেশন চলছে। কাকে হারানোর ভয় রুদ্র ও তার বন্ধুদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কোনো একজন কে কি হারিয়ে ফেলবে ওরা।কেউ কি চিরতরে চলে যাবে ওদের কাছ থেকে। ওদের বন্ধুত্ব কি এখানেই নিঃশেষ হয়ে যাবে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫০