তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৪(২)
আমেনা আক্তার
হৃদিতা বধূ রুপে কেবিনে প্রবেশ করতেই সকলে হতবাক হয়ে তাকায় হৃদিতার দিকে। হৃদিতা কেবিনে ঢুকেছিল তখন আরশাদ পানি পান করছিল। কিন্তু হৃদিতা কে দেখে আরশাদের মুখের সব পানি বের হয়ে পরে আব্রাহামের উপর। হৃদিতা কে দেখে সকলে যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে ওর সাথে আসা কাজীকে দেখে।
হৃদিতা এগিয়ে যায় আরশাদের দিকে। এবং ভনিতা বিহীন আরশাদ কে জিজ্ঞেস করলো।
বিয়ে করবি আমাকে,
আরশাদ হা করে তাকিয়ে আছে হৃদিতার দিকে।হৃদিতার কথায় আরশাদের মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।ও হা করে হৃদিতার দিকেই তাকিয়েই আছে। আরশাদের মনে হচ্ছে ও এখন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে।তাই হৃদিতার কথা বোধহয় ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাই নি।
আরশাদের মাঝে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া না দেখে হৃদিতা এক প্রকার চেঁচিয়ে বলল।
বিয়ে করবি আমাকে, এখন এই মুহূর্তে। এখন যদি আমাকে তুই বিয়ে না করিস তাহলে জীবনে আর আমাকে পাওয়ার কথা ভুলে যা।
কথাগুলো বলে থামে হৃদিতা,হৃদিতার চেঁচিয়ে বলা কথাগুলো শুনে এতক্ষণের শান্ত পরিবেশ যেনো মুহুর্তের মধ্যে অশান্ত হয়ে গেল। সকলে তাকিয়ে আছে হৃদিতার দিকে।আর হৃদিতা আরশাদের দিকে। হৃদিতা কাজী কে কিছুক্ষণের জন্য বাহিরে যেতে বলল। কাজী বাহিরে যেতেই হৃদিতা আরশাদের দিকে এগিয়ে আসলো। নূর আরশাদের সামনে বসে ছিল হৃদিতা নূরকে সরে যেতে বলল। নূর ও বিনা বাক্যে উঠে পরলো সেখান থেকে। নূর উঠতেই হৃদিতা বসে পরলো সেখানে এবং আরশাদের চোখে চোখ রেখে বলল।
আমি খুন করে এসেছি,
হৃদিতার মুখ থেকে বাক্যটি বের হতেই সকলের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো যেনো কিন্তু হৃদিতার চেহারা স্বাভাবিক।হৃদিতা আবার বলল।
আমি শিহাবের উপর এসিড নিক্ষেপ করে এসেছি। এবং খুব নির্দয়ভাবে ওর উপর এসিড মেরেছি যেনো ওর বাঁচার কোনো প্রকার কোনো রাস্তা না থাকে। এতক্ষণে হয়তো ও মরে গিয়েছে। ওকে খুন করার পরেই আমি তোর জন্য বধূ সেজেছি। এখন তুই কি একজন খুনিকে বিয়ে করবি।এটা জানার পরেও আমি একজন খুনি আমাকে গ্রহণ করবি।
হৃদিতার কথা শুনে রুদ্র হৃদিতা কে কিছু বলতে চাইলো। রুদ্র বলল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
তুই,
তখনি হৃদিতা রুদ্র কে নিজের হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দিল। এবং সকলের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি এখন তোদের কোনো জ্ঞান শুনতে চাইছি না।আমি শুধু জানতে চাই আমাকে বিয়ে করবে না কি করবে না।
হৃদিতার কথা যদি আরশাদ খুব শান্ত স্বরে বলে উঠলো।
যদি না করি তাহলে,
আরশাদের কথা শুনে হৃদিতা আরশাদের আরেকটু কাছে এসে ওর চোখে চোখ রেখে একটি হাসি দিয়ে বলল।
তাহলে, তাহলে বেশি কিছু না, আমার হাতে দ্বিতীয় খুন তুই হবি ব্যস, এটুকুই। তোকে খুন করে আমি জেলে যাবো। তুই পাবি আমাকে প্রত্যাখ্যান করার শাস্তি আর আমি পাবো নিজের ভালোবাসাকে নিজের হাতে খুন করার শাস্তি।
হৃদিতার কথা শুনে আরশাদ মুচকি হেসে বলল।
তোর হাতে খুন হলে যদি তুই শান্তি পাস তাহলে আমার তোর হাতে খুন হতেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপাতত আমি তোর সাথে বাঁচতে চাইছি। তুই খুনি হ বা অন্য কিছু এতে আমার কিছু আসে যায় না।আমি শুধু জানি তুই আমার।যদি তুই আমায় ছেড়ে অন্য কারও হওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে আমার তোর জন্য ভয়ঙ্কর হতে হবে।তাই তুই যখন আমার এতে চাস। তাহলে আমিও তোকে এখন এই মুহূর্তে বিয়ে করতে রাজি আছি।
আরশাদের কথা শুনে কাজী কে ভিতরে ডাকা হয়।কাজী বিয়ে পরানো শুরু করার আগেই হৃদিতা কাজী কে বললো।
এখন না,
হৃদিতার কথা শুনে সকলে বিভ্রান্ত হয়ে তাকায় ওর দিকে। এখন আবার কাজীকে বিয়ে পড়াতে না করলো কেনো হৃদিতা। সকলে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তখনি হৃদিতা নিজের ফোন বের করে কল লাগায় কারও নাম্বারে। ভিডিও কলের মধ্যে হৃদিতার বাবা মাকে দেখা যাচ্ছে।হৃদিতার বাবা মা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদিতা কে বধূ রুপে দেখে ওনাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে। ওনারা কিছু বলার আগেই হৃদিতা বলল।
আব্বু আম্মু আমি আরশাদ কে ভালোবাসি ওকে বিয়ে করতে চাই।
হৃদিতার কথা শুনে ওর বাবার চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। হৃদিতা নিজের বাবা মায়ের অবস্থা দেখে আবার বলল।
এটা ঠিক যে আমি আরশাদ কে ভালোবাসি, কিন্তু তেমনি এটাও সঠিক যে আমি তোমাদের ও প্রচুর ভালোবাসি। ওর প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মেছে মাত্র কিছু বছর ধরে কিন্তু তোমাদের আমি ভালোবাসি আমার জন্মের পর থেকে। তোমাদের প্রতি আমার ভালোবাসা চাইলেও আমি কখনো ঠিক ভাবে প্রকাশ করতে পারবো না।তাই আমি চাইনা আমার জীবনের নতুন এক সূচনা আমি তোমাদের মনে কষ্ট দিয়ে করি।আমি তোমাদের অনুমতি বিহীন ওকে বিয়ে করব না এটা যেমন সত্য। তেমনি আরেকটি সত্য হলো ওকে ছাড়া আমি কখনো কাওকে বিয়ে করব না।যেমনি আমার তোমাদের ছাড়া জীবনে নতুন সূচনা করা অসম্ভব। তেমনি অন্য কারও সঙ্গে আমার জীবনের নতুন সূচনা করা সম্ভব নয়। তোমরা যদি বলো তাহলে এখনি এখান থেকে তোমাদের কাছে চলে আসব কিন্তু তোমাদের ও আমাকে বিয়ে করানোর স্বপ্ন নিজেদের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে হবে।আমি ওর নই তো কখনো অন্য কারো ও হবো না। এখন সিদ্ধান্ত তোমাদের হাতে তোমরা যদি চাও তাহলে এই বিয়ে হবে নয়তো না।
হৃদিতার কথা শুনে ওর বাবা মা গভীর চিন্তায় পরে যায়।হৃদিতার বাবা হৃদিতার বন্ধুদের খুব একটা পছন্দ করে না।তাই হৃদিতা কে বারবার মানা করে ওদের সাথে মিশতে।আর এখন কিনা হৃদিতা ওদের মধ্যে একজন কে বিয়ে করার কথা বলছেন। কথাটি ভেবে হৃদিতার বাবার মনে ক্রোধ সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে অনেক ভালোলাগাও কাজ করছে কেননা হৃদিতা ওনাদের অনুমতি ছাড়া এই বিয়ে করবে না। যেখানে আজ কালের ছেলেমেয়েরা নিজের বাবা মাকে এতটা গুরুত্ব দেয় না। সেখানে ওনার মেয়ে ওনার অনুমতি চাইছে বিয়ের জন্য।উনি যদি মানা করে দেয় তাহলে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে ছাড়তে পর্যন্ত রাজি ও।
হৃদিতার বাবা যখন গভীর চিন্তায় ব্যস্ত তখনি রুদ্র মাথা চুলকে ওর বন্ধুদের কানে কানে বলল।
হৃদিতা কি ওর মা বাবার কাছে অনুমতি চাইছে নাকি ওনাদের ব্লাকমেইল করছে ঠিক বুঝতে পারলাম না।
রুদ্রের কথা শুনে রাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল।
এখন তোর কিছু বুঝার প্রয়োজন ও নেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে যা হচ্ছে তা শুধু দেখতে থাক।
হৃদিতার বাবা অনেক চিন্তা ভাবনার পর বিয়েতে সম্মতি প্রকাশ করলেন। তারপর আরশাদের বাবা মাকে ফোন করা হয় ও ওনাদের সম্মতি নেওয়া হয়। আরশাদের বাবা মা আগে থেকেই হৃদিতার সম্পর্কে জানার ফলে আরশাদের কষ্ট করতে হয়নি তাদের রাজি করাতে। অবশ্য মোবাইলের মাধ্যমে হৃদিতার বাবা আরশাদের বাবা মায়ের সাথে কথা বলে তারপর বিয়ের জন্য পুরোপুরি সম্মতি প্রকাশ করেছেন।
অবশেষে তিন কবুল বলার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে হৃদিতা ও আরশাদের বিয়ে।
সকলে ভিশন খুশি হয়েছে ওদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার ফলে পুরো হসপিটালে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। আব্রাহাম আরশাদ কে টিটকারী কেটে বলল।
কিরে বিয়ে তো হয়ে গিয়েছে এখন তুই বাসর কি এখানেই করবি,
আরশাদ রাজের কথা শুনে হেসে বললো।
এইটা আমি কিভাবে বলবো, এখন তো আমি জরুকা গোলাম হয়ে গিয়েছি। আমার বিবি সাহেবা যা বলবে আমি তাই করবো।ও যদি রাজি থাকে আমার কোনো সমস্যা নেই।
তোর সমস্যা কিভাবে থাকবে হারামি তুই তো এই অপেক্ষাতেই বসে আছিস।
হৃদিতা দাঁতে দাঁত চেপে আরশাদের উদ্দেশ্যে বলল । হৃদিতার কথাটি শুনে আরশাদ এক্সাইটেড হয়ে হৃদিতা কে বলল।
তাহলে তুই রাজি,
আরশাদের কথার প্রতি উত্তরে হৃদিতা কিছু বলার আগেই কেবিনে প্রবেশ করলো ডাক্তার। এবং আরশাদের সামনে এসে বলল।
তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৪
আপনার শরীর আগের থেকে এখন অনেকটাই সুস্থ। এখন আপনার পিঠের যেই অংশ পুড়ে গিয়েছে সেখানে প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হবে।আমি ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি। খুব তাড়াতাড়ি আপনি চাইলে আপনার পিঠে প্লাস্টিক সার্জারি করানো হবে।
ডাক্তারের কথার প্রতি উত্তরে আরশাদ কিছু বলার আগেই হৃদিতা বলল।
ওর কোনো প্লাস্টিক সার্জারি হবে না।
হৃদিতার কথায় সকলে অবাক হয়ে যায়। এবং একসঙ্গে সকলে বলে উঠলো।
কেনো?