তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৮

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৮
আমেনা আক্তার

আব্রাহামের মা আব্রাহামের উদ্দেশ্যে বলল।
কেনো এভাবে নিজেকে শাস্তি দিচ্ছিস বাবা। তুই যে ভুল করেছিলে তার কম শাস্তি কি তুই পেয়েছিস।আর কেউ না দেখুক আমি তোর মা আমি তো জানি তুই কতটা কষ্ট পেয়েছিস ও পাচ্ছিস।আমি তোকে কখনো বুঝতে দেয়নি কিন্তু আমি তো দেখেছি আয়নার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান পেয়ে তুই বারবার কিভাবে ভেঙে পরেছিস।আমি তো দেখেছি তুই কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছিস। তুই কতটা কষ্ট নিজের মনের ভিতর চেপে রেখেছিলি তা আমি তো দেখেছি।এই সকল কষ্ট কি যথেষ্ট নয়। কেনো তুই এখনো নিজেকে এতটা কষ্ট দিচ্ছিস। কেনো তুই তোর পায়ের চিকিৎসা করাচ্ছিস না।তোর বাবা ও আমি বারবার বলার পরেও তুই বিদেশ গিয়ে নিজের চিকিৎসা করাচ্ছিস না। কেনো তুই তোর পঙ্গুত্ব কে গ্রহণ করে নিচ্ছিস। আমাদের কথা তো একটিবার ভাব আমরা তোর এই অবস্থা দেখে কতটা কষ্ট পাচ্ছি।
মায়ের কথা শুনে আব্রাহাম বেদনাদায়ক একটি হাসি দিয়ে বলল।

আমার শাস্তি যে এখনো শেষ হয়নি মা।আমি কিভাবে নিজের চিকিৎসা করাবো বলো। যেখানে আমার ভালোবাসার করুন অবস্থা হয়ে আছে।আমি কিভাবে নিজেকে শাস্তি না দিবো বলো যেখানে আমি সামনে থাকা সত্ত্বেও আমার ভালোবাসার এই অবস্থা।আমি কিভাবে নিজেকে ক্ষমা করবো যেখানে আমার জন্য আমার ভালোবাসার এত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমার দেওয়া আঘাতের কারণে ওকে নিজেকে এত শক্ত বানাতে হয়েছে যে ও নিজের ভালোবাসাকেও ভুলতে বাধ্য হয়ে গিয়েছে। কেউ কি নিজের ভালোবাসা কে নিজের মন থেকে মুছে ফেলতে পারে। কিন্তু আয়না পেরেছে শুধু মাত্র আমার দেওয়া কষ্টগুলোর কারনে। তুমি আমার কষ্ট দেখছ আমার তো শুধু পায়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছে আর আয়না ওর কথা একবার ভেবে দেখো।আমি তোমাদের সাথে কথা বলতে পারছি। তোমাদের সাথে হাসতে পারছি। নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে পারছি কিন্তু আয়না ও তো কিছুই করতে পারছে না। নিজের আপন মানুষগুলোকে চোখের সামনে দেখার পরেও ওদের সাথে কথা বলতে পারছে না। নিজের কষ্ট ভাগ করে নিতে পারছে না। আয়নার বাবা মা নিজের চোখের সামনে মেয়ের এই অবস্থা দেখে ওনাদের যে অনেক কষ্ট হচ্ছে।আর তুমি বলছো আমি কষ্টে আছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাগুলো বলেই আব্রাহাম বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। আব্রাহাম আর কিছুক্ষণ ওর মায়ের সামনে থাকলে হয়তো নিজের অনুভূতিগুলো কে সামলানো বড়ো দায় হয়ে পরতো তাই আব্রাহাম বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।আর আব্রাহামের মা ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে অশ্রু সিক্ত চোখে।

আজ সাইরার বিচার বসেছে ওদের বাড়িতে।সাইরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সকলের সামনে।সিরাত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাইরার দিকে।সাইরা কাঁদছে সাইরা শুধু কি কাঁদছে কাঁদতে কাঁদতে সাইরার হেঁচকি ওঠে গেছে তবুও যেনো ওর কান্না থামছে না বা ওপরে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।সিরাত ও সাইরার মা ও বড়ো বোন ওর ও রাজের মধ্যের সম্পর্ক জেনে গিয়েছে।এর মধ্যেই হঠাৎ সিরাত কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো।
ছেলেটা কে?
সাইরা কিছু বলছে না চুপচাপ মাথা নিচু করে কেঁদেই চলেছে। রেহানা বেগম ও মহিমা সোফায় বসে শুধু পর্যবেক্ষণ করছে সাইরা কে। যেখানে সিরাত আছে সেখানে ওদের কিছু বলার প্রয়োজন নেই তাই ওরা চুপচাপ বসে শুধু সামনে কি হবে তা দেখার অপেক্ষা করছে।
সাইরা কে কিছু বলতে না দেখে সিরাত ধমকের স্বরে আবার বললো।
আমি জিজ্ঞেস করেছি ছেলেটা কে?
সাইরার কন্ঠ কাঁপছে, তবুও ও কাঁপা কাঁপা
কন্ঠে বলে উঠলো।
রা…রাজ

রাজের নাম শুনে মহিমা ও রেহানা বেগম অবাক হয়ে গেল। কিন্তু সিরাতকে দেখে মনে হচ্ছে না ও সামান্য পরিমাণও অবাক হয়েছে।সিরাত সাইরা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে সোজা রুমে চলে গেল এবং ফোন লাগালো রুদ্র কে।
রুদ্র ফোন বাজতেই রুদ্র ফোন হাতে তুলে নিয়ে সিরাতের নাম্বার দেখে সময় ব্যয় না করে ফোনটি রিসিভ করলো।
ফোন কানে ধরতেই সিরাত রুদ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো।
তোমার বন্ধু কে বলো ওর বাবা মাকে নিয়ে কিছুক্ষণের মাঝে আমার বাড়িতে আসতে।
কথাটি বলেই ফোনটি রেখে দিলো সিরাত। এদিকে রুদ্র হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে।সিরাত যা বলল তা যেনো ওর মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। কেননা সিরাত রুদ্রের বন্ধুর কথা বললেও কোন বন্ধুর বাবা মাকে নিয়ে সিরাতের বাড়িতে যেতে বলেছে তা কিছুই সিরাত বলেনি। রুদ্র এইসকল কথা ভেবে নিজের মাথায় একটু চাপ প্রয়োগ করতেই বুঝে গেল সিরাত যে রাজের কথা বলেছে।তাই রুদ্র সময় ব্যয় না করে রাজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

রাজ ওর বাবা মায়ের সাথে এখন বসে আছে সাইরার বাড়ির সোফায়। বাড়িতে আয়নার কাছে হৃদিতা ও নূরকে রেখে আসায় আয়নাকে নিয়ে এতটা চিন্তা হচ্ছে না। কিন্তু এখন চিন্তা হচ্ছে সাইরা কে নিয়ে রাজ সাইরাদের বাড়িতে প্রবেশ করার সময় সাইরার চোখ দুটো দেখে বুঝতে পেরেছে সাইরা যে প্রচুর পরিমাণ কান্না করেছে। রুদ্র রাজকে যখন হঠাৎ গিয়ে বলেছিল সিরাত ওকে ওর বাবা মায়ের সাথে নিজের বাড়িতে ডেকেছে তখনি রাজ বুঝতে পেরেছিল অবশ্যই কিছু ঘটেছে।
সিরাত রাজের সামনে এসে কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল।
তুমি সত্যি আমার বোনকে ভালোবাসো নাকি শুধু টাইম পাস করছো।
সিরাতের কথার জবাবে রাজ বললো।
যদি টাইম পাস করতাম তাহলে তোমার বলার সাথে সাথেই আমার বাবা মাকে নিয়ে এখানে হাজির হতাম না।
রাজের কথায় সিরাতের মধ্যে কেনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।সিরাত আবার রাজের উদ্দেশ্যে বলল।
বিয়ে করবে আমার বোনকে,

হ্যা করব,
রাজের কথা শুনে সিরাত এখন ওর বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল।
আপনাদের কি কোনো সমস্যা আছে ওদের বিয়েতে।যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এখন এই মুহূর্তে ওদের মধ্যে থাকা সকল সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। না আমার বোন আপনার ছেলের সাথে কোনো যোগাযোগ করবে না রাজ আমার বোনের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারবে । আমার হারাম সম্পর্ক এমনিতেও পছন্দ না।আর যেখানে ওর এক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না সেখানে ওদের কোনো অনুভুতি রেখেও লাভ নেই।যেই বাড়িতে আমার বোনের কোনো সম্মান থাকবে না সেই বাড়িতে আমার বোনের বিয়ে দিবো না।তাই আপনারা যদি রাজি না হোন তাহলে এই বিয়ে হবেনা।

সিরাতের কথায় রাজের বাবা মা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।সিরাত যে কত শক্তপোক্ত একটি মেয়ে তা ওর কথা শুনেই ওনারা বুঝতে পারছেন। রাজের বাবা চাই না রাজ নিজের ভালোবাসার বলিদান দেওক তাদের জন্য এমনিতেও ওনাদের এক সন্তানের আজ কি অবস্থা ওনারা চান না রাজের ও এমন কিছু হোক। তাই ওনারা ও সম্মতি জানালেন। তখনি রাজ সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি এখন সাইরা কে বিয়ে করতে রাজি আছি। কিন্তু আমি চাই এখন শুধু কাবিন করে রাখতে। বিয়ের অনুষ্ঠান তখনি হবে যখন আয়না সুস্থ হয়ে যাবে। এবং এখন কাবিন আমার বাড়িতে আমার বোনের সামনে হবে।
রাজের কথায় সিরাত সম্মতি প্রকাশ করে বলল।
আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তুমি বাড়িতে যেয়ে কাজী ডেকে আনো এবং যাদের জরুরি ডাকা প্রয়োজন তাদের ডেকে আনো। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।
রাজ ও ওর বাবা বের হয়ে যায় নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
রাজ চলে গিয়েছে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।রুদ্র এখন সিরাতের সাথেই আছে।রাজ চলে যেতেই মহিমা সিরাতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।

তুই সাইরার বিয়ে এভাবে হঠাৎ ঠিক কোনো করলি।সাইরা একটি ভুল করেছে, আমাদের উচিত ওকে বুঝানো ওকে সঠিক রাস্তা দেখানো।ওকে কি এখন বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে। তাছাড়া আমরা মাত্র কিছুদিন ধরে জানি ওই ছেলেকে। ভবিষ্যতে ওই ছেলে যদি সাইরা কে ধোকা দেয় তাহলে। আমার বোনের কি হবে।ও নিজেকে কিভাবে সামলাবে।
মহিমার কথা শুনে সিরাত ওর উদ্দেশ্যে বলল।
রাজ কেমন ছেলে তা আমি ভালোভাবে না জানলেও আমি আমার স্বামীকে অনেক ভালোভাবে জানি ও চিনি। রুদ্র কখনো এমন কারও সাথে আমার বোনের বিয়ে হতে দিবে না যে আমার বোনের জন্য সঠিক না। এবং আমি বা তুই কেউ আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবগত নই। শুধু আল্লাহ জানে আমাদের ভবিষ্যতে কি ঘটবে। ভবিষ্যতে যে শুধু রাজ বদলে যাবে এমন না হয়ে তো সাইরা ও বদলে যেতে পারে।তাই আমাদের উচিত না কখনো ভবিষ্যতের জন্য নিজের বর্তমান নষ্ট করা। ভবিষ্যতে কিছু হলে তা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।
সিরাতের কথা শুনে রুদ্র তাকিয়ে থাকে সিরাতের দিকে।সিরাত যে ওকে এত বিশ্বাস করে তা ও কখনো ভাবেনি নি। রুদ্র মাথা নিচু করে মুচকি হাসে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৭

ঢাক ঢোল পিটিয়ে না, অনেক সাধারণ ভাবে সম্পূর্ণ হলো রাজ ও সাইরার বিয়ে। শুধু কিছু আত্নীয় নিয়ে। রাজের নিকট আত্মীয় ও ওর বন্ধুরা ছিল এই বিয়েতে।আর সাইরার পক্ষে থেকে শুধু ওর মা আর দু বোন।এ নিয়ে অবশ্য রাজের আত্নীয়রা কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু রাজ ওদের কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।যেনো এখন থেকেই নিজের স্ত্রীকে মানুষের কু নজর থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে।সাইরার মুখে এখন লজ্জা লজ্জা ভাব।সাইরা কখনো ভাবেনি সিরাত এত তাড়াতাড়ি ওর ও রাজের বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাবে।ওর ভাবতেও অদ্ভুত লাগছে সাইরাও এখন বিবাহিত।আয়না ও নিজের ভাইয়ের বিয়ে দেখে খুবই খুশি হয়েছে।তা আয়নার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আয়নার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে খুশির রেশ।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা শেষ পর্ব