তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ২৫+২৬
নৌশিন আহমেদ রোদেলা
ছাড়ুন আমায়!!আমাকে টাচ করার সাহস কি করে হয় আপনার??আর এসব ফালতু কথা আমাকে না বলে আপনার লাইফ লাইনকে বলুন কাজে লাগবে।।আপনার এই শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা মরে যাওয়া নিয়ে আমার কোনই মাথা ব্যাথা নেই।।ট্রাস্ট মি!! আপনার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধছে।।প্লিজ ছাড়ুন আমায়…আপনার প্রতিটি স্পর্শ কে ঘৃণা করি আমি।।।আই জাস্ট হেইট ইউ(চেঁচিয়ে)
ঘৃণা!! ঘৃণা!!ঘৃণা!! কিসের এতো ঘৃণা তোমার??কি করেছি আমি??টেল মি ডেমেড।(আরো জোড়ে চেপে ধরে)
ছাড়ুন আমায়…(চিৎকার করে) কিসের অধিকারে জবাবদিহিতা চান আপনি??আমি আপনার বউ??নাকি জিএফ??কোনটায় নই।।সো জাস্ট স্টপ দিস কাইন্ড অফ ড্রামা।এই মামা?(রিকশাচালক কে উদ্দেশ্য করে) রিকশা থামান!!!
কেন??রিক্সা কেন থামাবে??
কারণ আমি নামবো।।আপনার মতো থার্ডক্লাস কোনো পার্সোনের সাথে একসাথে বসতে আমার গা গুলায়।।এই মামা??থামাতে বলছি না??থামাবেন নাকি চেঁচিয়ে মানুষ জমিয়ে মার খাওয়াবো??সবাইকে বলবো আপনি এই লোকটার সাথে মিলে আমায় তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।।কি চেঁচাবো???(প্রচন্ড রাগে)
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রচন্ড রাগে থরথর করে কাঁপছে আমার শরীর।।সব সহ্য হয় আমার কিন্তু কোনো ছলনাময়ী কখনো নয়।।রিকশা থামানোর সাথে সাথে নেমে হাঁটা দিলাম।।শুভ্র ভাইয়া নিচু হয়ে মাথার চুল মুঠো করে বসে আছেন চুপচাপ।।আমি হাঁটছি আর ভাবছি…এই লোকটা পিছু ছাঁড়ছে না কেনো আমার?মন ভাঙার ছিলো ভেঙেছে আর কি চায় সে??এই রাগ….এই জেদ আমি কাকে দেখাবো?সবার ধারনা হবে আমি ওভার রিয়েক্ট করছি।।আরে…এই কথা বলার আগে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যের কোমড় জড়িয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখার সাহসটা জোগাড় করো।।যেকোনো পরিস্থিতিতে কোনো মেয়েই তা পারবে না…. যা পারবে তা হলো বড় বড় কথা বলা।।সাচ আ ইডিয়টস।।আমার ভাবনার প্রহরকে ছিন্ন করে কেউ হুট করেই কোলে তোলে নিলো আমায়।।হঠাৎ ঘটা ব্যাপারটায় আমি চমকে গেলেও শুভ্রর মুখটা দেখেই চমক টা রাগে পরিণত হলো মুহূর্তেই।।ছুটাছুটি করেও লাভ হলো না।উনার ওজন যেখানে ৮০ কেজি আমার মাত্র ৪৫।। উনার সাথে পেরে উঠার কথাও না।।কিছুক্ষণের মধ্যেই হাঁপিয়ে উঠলাম আমি।।উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিক্সায় বসে পড়লেন।।এই মুহূর্তে শরীর নাড়ানোর ক্ষমতাও আমার নেই।।উনার বুকের সাথে মিশে আছে আমার মাথা।।উনার হার্টবিটের শব্দ আমার কানে স্পষ্ট।।কি তুমুল গতিতে ছুটছে…একসময় এই শব্দটা আমাকে নেশা ধরাতো কিন্তু এই মুহূর্তে…. সেটা নিতান্তই বিরক্তির বিষয়।।অন্যকারো ভালোবাসার মানুষের বুকের শব্দ আমি শুনবো কেন??যে অধিকার আমার নেই সেই অধিকারের অধিকারী হতে চাই না আমি।।
সারাটা বিকেল আর সন্ধ্যাটা শপিং করে কেটেছে…. সাথে বেড়েছে বিরক্তি।।বাসায় এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ফোনটা বেজে উঠলো বড্ড নিষ্ঠুর ভাবে।।ইশশ…কি পাষান! রাতের নিস্তব্ধতাকে কতটা নিষ্ঠুরতার সাথে ছিন্নভিন্ন করে দিলো মুহূর্তেই।।ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি একদৃষ্টে… ফোনের স্ক্রিনে চিত্রার হাসিমাখামুখ ভাসছে সাথে ভাসছে বাংলা অক্ষরে লেখা তার নাম “চিত্রা”।। আমার ফোনে একমাত্র ওর নামটাই বাংলা ফন্টে লেখা।।তার কারণটা অবশ্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।।ওর নামটাতে একটা উপন্যাস উপন্যাস গন্ধ আছে বলেই মনে হয় আমার…. উপন্যাসের নায়িকাদের মতো নাম…আর ভাগ্যের পরিহাসে আমার গল্পটাকে ছিন্নভিন্ন করে সেখানেও নিজের নামটা লাল কালিতে লিখে নিয়েছে সে গভীরভাবে।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা তুললাম…
হ্যালো?
হ্যালো রোদ?
হুম….
কাল ভার্সিটি আসছিস তো??কাল তো রিইউনিয়ন…. দারুন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।।জানিস?এখানে “শেয়ার ইউর লাভ সেশন” নামে একটা সেকশন এড করা হয়েছে এবার।।সবাই তার লাভ এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করবে।।জাস্ট অসাম একটা বিষয়।।আসবি তো??
দেখি..
দেখাদেখি কিসের??এখানে তো দেখাদেখির কিছু নেই।।তুই আসবি ব্যস…শুধু আসবি যে তা না একদম শাড়ি পড়ে আসবি।
বললাম তো দেখি…এখনও সিউর হতে পারছি না।
রোদ?এটা আমাদের জন্য খুবই ইম্পোর্টেন্ট।।৫০ বছরের সব ব্যাচের ভাইয়া-আপুরা আসবে।।তাদের মধ্যে অনেকেই সাকসেসফুল।।ওদের সাথে পরিচয় থাকলে আমাদের ক্যারিয়ারে এফেক্ট পড়বে।।they can give us a great change…
চিত্রা?তুই এই মুহূর্তে ফোন রাখবি।।তোর এই হিসেব নিকাশটা আমার সাথে না করে ক্যালকোলেটরের সাথে কর…. সেটা বেশি এফেক্টিব হবে।।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।।এই চিত্রাটা অলওয়েজ রং টাইমে কল করবে।।আর আমাকে বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে দিবে।।ফোনটা রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম…. রাস্তার সোডিয়ামের আলোর কিছু অংশ আমার বারান্দায় হানা দিয়েছে….আকাশের চাঁদটা মেঘের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে বারবার।।আকাশ থেকে চোখ নামিয়ে রাস্তার দিকে তাকালাম।।একজোড়া কাপল হাতেহাত রেখে হেঁটে চলেছে।।মেয়েটির হাতে আইসক্রিম,, মাথাটা পাশের মানুষটার কাঁধে।।এই মুহূর্তে এই মেয়েটিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী বলেই বোধ হচ্ছে।।মানুষ তার জীবনের যেকোনো একটা পর্যায়ে গিয়ে এমন একটা ভুল করে যার জন্য তাকে পস্তাতে হয়,,,কষ্ট সহ্য করতে হয়,,ব্যথা সহ্য করতে হয়।।কখনো তা হয় মিষ্টি ব্যথা কখনো বা…… আমার ক্ষেত্রে ব্যাথাটা বড্ড তীক্ষ্ণ।। প্রথম যৌবনের প্রথম ভালোবাসা….প্রথম আঘাত…..প্রথম পরাজয় খুবই কষ্টের হয়।।যে কষ্টটা এই মুহূর্তে আমার প্রতিটা পেশীতে বয়ে চলেছে….অদ্ভুত একটা ভাইরাসের মতো।।
গোলাপী রঙের শাড়ি…ম্যাচিং ব্লাউজ।।কপালে ছোট্ট কালো টিপ।।হালকা গোলাপী লিপস্টিকের সাথে চোখে কড়া করে কাজল এঁটে।।লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।।ভার্সিটিটা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে আজ।।গেইটে পা রাখতেই চিত্রাকে দেখতে পেলাম।।মুখে হাসি যেন ধরছেই না তার।।বেগুনী রঙের শাড়িতে বড্ড মিষ্টি লাগছে ওকে।।””রূপবতী কন্যা তার কেশবরন চুল”” এই মেয়েকে দেখে ছেলেরা তো প্রেমে পড়তে বাধ্য।।চিত্রার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র ভাইয়া।।উনি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।।উনার চোখে যেন হাজারো আকুতি।।এতো সুন্দরী প্রেমিকা পাশে থাকতেও উনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন বুঝতে পারছি না।।উনিও গোলাপী আর সাদার সংমিশ্রণে পাঞ্জাবি পড়েছেন।।বেশ লাগছে…কিন্তু আজ উনাকে খুঁটিয়ে দেখার সাহস যোগাতে পারলাম না।।খুব দ্রুতই চোখ সরিয়ে নিলাম…অন্যের জিনিস বলে কথা!!!আমাকে দেখেই চিত্রা দৌড়ে এলো…চশমা ঠিক করতে করতে কথার ঝুলি নিয়ে বসলো সে।।আমি ভাবলেশহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছি…তখনই কোথা থেকে সাহেল ভাইয়া এসে হাজির…
এই সানশাইন??খুব মিষ্টি লাগছে তোমায়।।
ধন্যবাদ ভাইয়া…(মুচকি হেসে)
মাই প্লেজার মেম….ব্রেকফাস্ট করেছো?
এক্চু…
তোমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে করো নি।।আমিও করি নি…চলো একসাথে ব্রেকফাস্ট সেড়ে আসি।। অনেক কাজ…(শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে) এই শুভ্র?অনুষ্ঠান শুরু কর..এখন আপাতত আমার কোনো কাজ নেই এবার একটা খাওয়া দিবো…প্লিজ আর কোনো কাজের কথা বলিস না।।এই সাইশাইন চলো….!!
শুভ্র ভাইয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।।হয়তো উনি চাচ্ছেন না, আমি সাহেল ভাইয়ার সাথে যাই।।উনার চাওয়া দিয়ে আমার কি কাজ??আমি হাসিমুখে সাহেল ভাইয়ার সাথে হাঁটা দিলাম…আমাদের খাবার আসার আগেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো।।সাহেল ভাইয়া আমাকে এরেঞ্জমেন্টের হেন তেন বুঝাচ্ছিলেন…. তখনই এনাউন্সমেন্ট হলো…
গাইস…এখন আমাদের প্রিয় শুভ্র ভাইয়াকে রিকুয়েষ্ট করছি তার লাভ এক্সপেরিয়েন্স সম্পর্কে বলার জন্য….ভাইয়া?আপনার লাইফে কি ভালোবাসা এসেছিলো??যদি এসে থাকে তো কে সে লাকি মেয়ে??
হ্যা…আছে এমন একজন..
ওয়াও…এটা ভার্সিটির মেয়েদের জন্য বেড নিউজ।।তবুও তারা ভগ্নহৃদয় নিয়ে আপনার লাভ এক্সপেরিয়েন্স শুনতে চায়।।গাইস ডু ইউ ওয়ান্ট টু লিসেন???
ইয়েসসসসসস??(সবাই)
তো ভাইয়া?আপনার ভালোবাসা বলে কথা নিশ্চয় এক্সট্রাঅর্ডিনারি হবেন তিনি….
আমায় যদি জিগ্যেস করা হয় হোয়াই আই লাভ হার??তাহলে বলবো কোনো রিজন নেই।।ওকে ভালোবাসার কোনো রিজন আমার কাছে নেই।।অজানা কোনো কারণে ভালোবাসি তাকে….আর খুবই অদ্ভুত বিষয় কি জানেন??সেও অজানা কোনো কারণে ঘৃণা করে আমায়।।যেখানে আমি ওর সাথে কথা না বলতে পারলে আমার শ্বাস আটকে আসে সেখানে আমার কথা শুনে বিরক্তিতে ওর শ্বাস আটকে আসে।।যেখানে তার হালকা ছোঁয়া আমার শরীরে শিহরণ জাগায় সেখানে আমার ছোঁয়ায় ওর ঘৃণা আসে….অদ্ভুত এক ভালোবাসা আমার….তবুও দিন শেষে ওকে একটাবার দেখার জন্য মরে যেতে ইচ্ছে করে।।কিন্তু সে বুঝে না…বড্ড অবুঝ সে!!এই অবুঝ মেয়েটিকেই চাই আমার…দিনশেষে চোখে চোখ রেখে বলতে চাই…”তোকে চাই” শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি শুধু তোকেই চাই।।
ওয়ান সাইডেড লাভ??
মে বি…(মুচকি হেসে)
আপনাকে কেউ ঘৃণা কি করে করতে পারে??ব্যাপারটায় আমরা সবাই সারপ্রাইজড….এনিওয়ে উনি কি এখানে আছেন??
হুমম…সে এখানেই কোথাও আছে….
ভাইয়া তাহলে উনাকে ডেডিকেট করেই একটা গান যদি গাইতেন।।আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে আপনার গানের দেওয়ানাও কিন্তু এখানে অনেক।।প্লিজজ ভাইয়া…জাস্ট ওয়ান সং…
আজ নয়….
প্লিজজ ভাইয়া…প্লিজ।।ফর আওয়ার গেস্ট…
ওকে…
ক্যাম্পাস কাঁপিয়ে তালির জোয়ার উঠলো।।আমি ততক্ষণে মঞ্চের খানিকটা কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছি….উনি মুচকি হেসে গিটারটা হাতে তুলে নিলেন।।হালকা হাতে সুর তুললেন গিটারে…তারপর চোখদুটো বন্ধ করে গেয়ে উঠলেন-
না রে নারে,, নারে নারে না রে নারে নারে না রে
নারে নারে না….
বুঝেনা সে বুঝেনা..
সে তো আজও বুঝে না..
বুঝে না সে বুঝে না.
সে তো আজও বুঝে না.
কাঁদে মনের কথা..প্রেম কি শুধু ব্যথা
উত্তর আজো মেলে না,,মেলে না,, মেলে না,,,মেলে না
বুঝে না সে বুঝে না।।
এ বুকে এতো প্রেম তার চোখে ঘৃণা..
চায় না শুনতে সে এ বুকের কান্না
আমি চোখের বালি,, কি করে তাকে বলি
এ বুকে কি বেদনা…
বুঝেনা সে বুঝেনা..
সে তো আজও বুঝে না..
বুঝেনা সে বুঝেনা..
সে তো আজও বুঝে না..
কাঁদে মনের কথা..প্রেম কি শুধু ব্যথা
উত্তর আজো মেলে না,,মেলে না,, মেলে না,,,মেলে না
বুঝেনা সে বুঝেনা..
রুরু রু রুরু রু রুরু রু
পৃথিবী একদিকে,একদিকে আমি
আজ আমার রক্তে মিশে গেছো তুমি
নাইবা হলো দেখা দেখবো একা একা
স্বপ্নের এই সীমানা….
দু’চোখ জ্বালা করছে আমার।।হয়তো চোখ থেকে বৃষ্টি ঝরতে চাইছে।।কিন্তু কেন??যার উত্তর শুধুই জানি না।।আবেগ দিয়ে গাওয়া হয়তো একেই বলে।।প্রতিটি লাইন উনার কন্ঠে জীবন্ত হয়ে উঠেছে যেনো।।গান গাওয়া শেষ করে মুচকি হেসে গিটারটা পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিয়েই নেমে গেলেন স্টেজ থেকে।।চোখদুটো টলমল করছিলো উনার যেনো এখনই ঝরে পড়বে দু’ফোটা জল।।কি ভয়ানক গোলকধাঁধায় ফেঁসে গেছি আমি।।উনার গাওয়া গান আর তার আগে বলা প্রতিটি কথা যে ছিলো আমাকেই উদ্দেশ্য করে।।উনি যদি সত্যি আমায় ভাললবাসেন তাহলে চিত্রার সাথে ওসব কেন??হুয়াই?
এএএই তুই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন??আর এই বালতি ভরা পানিই বা কেনো??
তোকে কিছু প্রশ্ন করবো। না পেঁচিয়ে স্ট্রেট আন্সার দিবি।।আর পেঁচাইলেই এই পানি তোর মাথায় ঢালবো।।বুঝতে পারছিস?
ককি এমন প্রশ্ন করবি?(অবাক হয়ে)
প্রথম প্রশ্ন…শুভ্র ভাইয়ের সাথে তোর রিলেশন চলে?
কিহহ??পাগল নাকি।।উনার সাথে আমার রিলেশন কেন চলবে। আরে উনি তো তোকে পছন্দ করেন।
তাহলে তোর কোমরে হাত রেখে রোমান্সের মানে কি?(রাগী গলায়)
রোমান্স?কি বলছিস তুই?কিসের রোমান্স??(অবাক হয়ে)
ঠাডিয়ে দিবো একটা।ওয়াশরুমের দরজার চিপাই দাঁড়িয়ে তোরা কি মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করছিলি নাকি??(দাঁতে দাঁত চেপে)
আরে… ওটা তো ভাইয়ার পা স্লিপ করেছিলো তাই।তুই যখন ওয়াশরুমে ঢুকলি তখনই ভাইয়া এলো।।উনি কিছু একটা বলতে এসেছিলেন আমায়।কিন্তু কিছু বলে উঠার আগেই পা টা স্লিপ কেটে একদম আমার উপরে এসে পড়লেন।।উনি যদি আমার উপরে পড়তেন তাহলে আমার মাথাটা একদম দেয়ালে লেগে যেতো।।অনেক কষ্টে একহাতে দেয়াল ধরে নিজেকে আটকে নিয়েছেন উনি।।আর অন্যহাতে আমার কোমর ধরেছেন যেনো আমি দেয়ালে ধাক্কা না খাই।।এটুকুই…(মুখ গোমরা করে)
এইটুকুই?
হুম এইটুকুই…
চিত্রা এটুকু বলার সাথে সাথেই বালতির পানিটুকু ঢেলে দিলাম ওর মাথায়।চিত্রা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে….
এটা কি হলো?আমি তো প্রশ্নের উত্তর দিলামই তাহলে পানি কেন?
লেইট করে দিয়েছিস তাই।।তোর কোনো ধারনা আছে এই তিনটা দিন কিভাবে কেটেছে আমার??তিনদিন মানে বুঝিস তুই??তিনদিন মানে হলো ৭২ টা ঘন্টা….তারমানে কতো জানিস?৪৩২০ মিনিট….মাই গড…
চিত্রা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে…. কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নেই বললেই চলে।। আমি তো ভাবছি শুভ্র ভাইয়াকে নিয়ে।ইশশ…না জেনে উনাকে কতো কথা শুনিয়ে দিলাম।।এবার উনাকে সরি বলবো কিভাবে?সামনে যেতেই তো আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার।।
রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানার উপর উঠে লাফালাফি করছি।আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গাইছি… “উফফ মেরি দিলমে থুরি খালি ছি জাগা থি…উফফ তোনে আকে বিন কিরায়ে এ জাগা লি।।কোচ কেহবি না ছাকি…..” শুভ্র ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে শুধু এবং শুধুই আমাকে ভালোবাসে…. ইশশ কি সুখ।।হঠাৎই জানালা ভেদ করে একটা কাগজ এসে লাগলো গায়ে।।আমার রুমটা দু’তলায়।নিচ থেকে কেউ দোতালার জানালা দিয়ে কি করে কাগজ ছুড়ঁতে পারে বুঝতে পারছিলাম না।।কিছুক্ষণ নীরব দৃষ্টিতে কাগজটির দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় পা ছড়িয়ে বসলাম।।কাগজটা হাতে নিয়ে মোচরানো কাগজটা সোজা করে দেখলাম…কিছু একটা লেখা আছে তাতে….
এই মিষ্টি হাসি,
এতো রাগ কেনো তোমার?এতো জেদ?এই ছোট্ট একটা শরীরে এতো জোড় কিভাবে?? তোমার হাতের চড়টা বেশ শক্ত ছিলো সাথে মিষ্টিও ছিলো।।জীবনের প্রথম কোনো মেয়ের হাতে চড় খেয়েছি আর সেই মেয়েটা হলে তুমি।।তোমার হাতের চড়টা গালে পড়ার পর মনে হয়েছিলো আরেকটা চড় যদি পড়তো আমার গালে তাহলে ব্যাপারটা মন্দ হতো না।।কারো হাত এতোটা নরম কি করে হয় বলো তো?আচ্ছা তুমি কি তিন বেলা তুলো খাও?কালকে তোমার শরীরের ওই গোলাপী শাড়িটা যে কি মারাত্মক সুন্দর ছিলো তা কি তুমি জানো?তোমার সাথে বেশ মানিয়েছিলো রংটা সাথে তোমার গালে ছিলো রাগের ওই গোলাপী আভা।।ইচ্ছে তো করছিলো….থাক বলি না লজ্জা পাবে তুৃমি।।কথাগুলো তোলা থাকুক…কোনো একদিন আমার সামনে বসিয়ে এই লজ্জামাখা কথাগুলো শুনাবো তোমায় আর তুমি লজ্জায় লাল হয়ে মুখ লুকাবে আমার বুকে….আর আমি প্রাণ ভরে দেখবো।।সেদিন তোমার চোখে ভালোবাসাটা দেখতে চাই শ্যামলতা,,ঘৃণাটা নয়।তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণাটা যে আমায় মৃত্যু যন্ত্রণা দেয় প্রতিটি মুহূর্তে। তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রোদপাখি…. নীল শাড়ি..হাতে নীল চুরি,, চোখে গাঢ় কাজল লাগিয়ে বাতাসে চুল উড়িয়ে দাঁড়াবে কি ছাঁদের কোনে?জানি দাঁড়াবে না…তবু অপেক্ষা করে চলেছি দিনরাত।।তোমার পায়ে নিজ হাতে আলতা লাগানোর খুব শখ আমার….একদিন সুযোগ দিও প্লিজ!!শুধু একটিবার…ভালোবাসা মাখা চোখে তাকিও….তোমার সেই চাহনীতেই তো আমি কুপোকাত…..
তোমার একরাশ ঘৃণা💔
চিঠির উপর দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।।মনটা বলে উঠলো নিঃশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ভালোবাসি ভালোবাসি।।ঝটপট উঠে আলমারি থেকে নীল শাড়ি বের করেই জড়িয়ে নিলাম শরীরে….. হাত ভরে চুরি আর চোখে কাজল লাগিয়ে অগোছালো চুল গুলো খুলে দিয়েই দৌড়ে চলে গেলাম ছাঁদে।।ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি,দৃষ্টি রাস্তার দিকে….কোথায় তিনি?উনি কি চলে গেছেন?কথাটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে আমার।।ঠিক তখনই পেছন থেকে আপু বলে উঠলো-
কাউকে খুঁজচ্ছিস?
ন..নাহ তো…কাকে খুঁজবো??
তাহলে এভাবে ছটফট করছিস কেন?কাঁদছিস?
আরে না…বাতাসে বালি উড়ে চোখে পড়েছে।তাই হয়তো…এনিওয়ে তুমি এখানে?কিছু বলবে?
হুম….মা আমাদের তৈরি হতে বললো।মামুদের ওখানে যাবো।বিয়ের ডেইট ফিক্সড করবে আজ।(লাজুক চাহনিতে)
আপুর কথাটা শুনেই মনটা খুশি হয়ে গেলো।।নিশ্চয় ওখানে গিয়ে ওনাকে খুঁজে পাবো।ইশশ…কথাটা ভেবেই আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই এক দৌড়ে নিচে চলে গেলাম।।আনন্দে সাড়া বাড়ি নেচে বেড়াতে ইচ্ছে করছে আমার।।
বাড়িতে ঢুকে মামু আর মামানির সাথে দায়সারা কথা বলেই চারদিকে চোখ ঘুরাতে লাগলাম।কিন্তু মহাশয়ের দেখা মিললে তো।।কাউকে কিছু জিগ্যেসও করতে পারছি না।।না জানি কি ভাববে সবাই।।কিছুক্ষণ বসে থেকে মুখ কাঁচুমাচু করে উঠে গেলাম।।ধীর পায়ে দু’তলায় উঠেই উঁকি ঝুঁকি দিতে লাগলাম চারপাশে যদি দেখা পাই।।হঠাৎ কেউ একজন আমার হাত টেনে দেয়ালে চেপে ধরে ঠিক আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়লো।।এমন একটা কাজ শুভ্র ভাইয়া ছাড়া আর কারো হতেই পারে না।।লজ্জায় আমি মাথা তুলে তাকাতেই পারছি না যেনো।এতোক্ষণ যাকে এতো খুঁজাখুঁজি তাকে সামনে পেয়েও তাকাতে পারছি না।।উনি আমার চুলগুলো হাতের আঙ্গুল দিয়ে আচঁড়ে দিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিলেন।।কানের কাছে ঠোঁট এনে নরম স্বরে বলে উঠলেন-
আলতা লাগানোর অধিকারটা কি দেবে আমায়?
উনার কন্ঠে আমি কেঁপে উঠলাম।কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলতে যাবো তার আগেই পেছন থেকে কেউ একজন কেঁশে উঠলো।।যাকে বলে নোটিশেবল কাঁশি।।কাঁশির শব্দ কানে যেতেই আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো শুভ্র।অভ্র ভাইয়া পকেটে হাত দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলেন-
কাহিনী কি?কি চলে এখানে??
ইশ,, কি লজ্জা..কি লজ্জা।।এতোক্ষণ যে হারে লজ্জা পাচ্ছিলাম সেই লজ্জার হার মুহূর্তেই দশগুণ বেড়ে গেল এবার।।ইচ্ছে হচ্ছিলো মাটি ফাঁক করে তার ভেতর ঢুকে যাই আমি।শুভ্র ভাইয়া এবার পাঞ্জাবীর কলার ঠিক করতে করতে বলে উঠলেন-
কি আবার চলে?তোর একমাত্র শালীকে আপ্যায়ন করছিলাম আরকি।।বোনের হবু শশুড়বাড়ি বলে কথা।আদর যত্ন না করলে চলে?তাই আদর করছিলাম।(চোখ টিপে)
তাই নাকি?নিচে আমার হবু শশুড়,শাশুড়ী, শালা সবাই বসে আছে তাদের আপ্যায়ন না করে তুই আমার ছোট্ট শালীর উপরই এতো কর্তব্যবোধ দেখাচ্চিস কেন বুঝতে পারছি না।।এতো আদর কি শুধু তার জন্যই?(বাঁকা হেসে)
আব..তোর একটু শালী বেশি ছোট কিনা…হারিয়ে টারিয়ে গেলে তো আবার সমস্যা তাই না??তাই ভাবলাম একটু গার্ড দিই আরকি…বাচ্চা মেয়ে বুঝিসই তো!!
বাহবা….ছোট মিয়া কাহিনী কি?আমার শালী নিয়ে তোমার এতো চিন্তা? সন্দেহজনক ব্যাপার…ব্যাপক সন্দেহজনক ব্যাপার।
ভাই বারবার শালী না বলে মাঝে মাঝে ভুল করে আমার বউ ও তো বলতে পারিস।।তাহলেই তো এতো প্রশ্ন আসে না।(শয়তানী হাসি দিয়ে)
তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ২৩+২৪
ওওহহো…তাই বুঝি এখানে দাঁড়িয়ে বা…
আমি আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে এলাম সেখান থেকে।দুই ভাই মিলে আমাকে কি ভয়ানক লজ্জার মধ্যেই না ফেলতে যাচ্ছিলো।।অসভ্য কোথাকার!!
