তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ২৯+৩০
নৌশিন আহমেদ রোদেলা
ছাদের দরজায় ঠেস দিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছেন শুভ্র ভাই।।ঠোঁটে শয়তানি হাসির রেখা।আমি দ্বিধাদ্বন্দে হয়রান…রাগ পাবো নাকি ভয়??উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আপুকে ডেকে উঠলাম কয়েকবার কিন্তু ফলাফল জিরো কারো সাড়াশব্দ নেই মোটে…আমার ডাকাডাকিতে হেসে উঠলেন উনি।হাসিমুখে বলে উঠলেন-
এখানে কেউ নেই রোদপাখি।আমার হবু বউমনি নিজের রুমে আরাম করে তার হবু বরের সাথে প্রেম করছে।
ম ম মানে কি?অভ্র ভাইয়া কোথায়?উনি আমায় ম্যাসেজ করেছিলো মাত্র!!
ভাইয়ের যে নাম্বারটা তোমার কাছে আছে সেই সিমটা এখন আমার ফোনে।বুঝতে পারলে শ্যামবতী?
এএএসবের মমমমানে কি?আআপনি এখানে কি করররছেন??
এখনও তো কিছু করছি না।বাট করবো।
কথাটা বলেই ছাদের রেলিং পা ঝুলিয়ে বসলেন উনি।একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন-
আই এম সো কনফিউজড রোদপাখি….
কনফিউজড? কককেন?
এইযে তোমার সাথে আমি শাকিব-বুবলি টাইপ রোমান্স করবো নাকি সানিলিয়ন-ইমরান হাসমি টাইপ রোমান্স করবো ঠিক বুঝতে পারছি না…. ইটস আ বিগ কনফিউশান। আই থিংক সানিলয়ন-ইমরান হাসমিই ব্যাটার রাইট??
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কথাটা বলেই ডানচোখটা টিপে দিয়ে রেলিং থেকে লাফিয়ে নামলেন উনি।আমার তো কাঁপা-কাঁপি অবস্থা…ব্যাটায় বলে কি?? রোমান্স!! উনি আমার দিকে এগুচ্ছেন আর আমি নিজের সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি রেগে যাওয়ার…. কিন্তু হায় নিয়তি!!এই রাগটাও আমায় পাত্তা দিলো না আজ।।গলা শুকিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত।।কোনো কিছু না ভেবেই পেছন ফিরে দিলাম এক দৌড়….কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না…লম্বা লম্বা পা ফেলে শক্ত হাতে চেপে ধরলেন আমার ডান হাতটা।আমি কাঁদো কাঁদো চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি…উনি রাগমাখা চোখে মিষ্টি হাসি দিয়ে ছাদের দরজার সাথেই চেপে ধরলেন আমায়।।চোখদুটো টলমল করছে…. কান্নাদেবী যেকোনো সময় ভর করতে পারে আমার চোখে।উনি হিসহিসিয়ে বলে উঠলেন-
কি? এখন কান্না কেন?আমি ধরলেই ব্যাথা লাগে,, না??আর ওই হারের ডাক্তার যখন ধরলো তোমায় তখন তো মুখে হাসি যেন ধরছিলোই না।।
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।।”” যতো দোষ নন্দ ঘোষ… “” এই প্রবাদ বাক্যটি হয়তো কোনো এক কালে উনাকে ডেডিকেট করেই তৈরি করা হয়েছিলো।নিজে যে ওই হাতাকাটা মেয়ের সাথে রংঢং করে বেড়াচ্ছেন….তাতে কিছু না হুহ।
কি হলো?মুখে কথা নেই?
আমার বাম হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে চোখের সামনে এনেই বলে উঠলেন-
এই হাতটাই তো ধরেছিলো তাই না?
কথাটা বলেই বামহাতের কনুইয়ের একটু নিচে কামড়ে ধরলেন তিনি।ব্যাথায় চেঁচিয়ে উঠতেই ছেড়ে দিলেন হাত।এবার আমি কেঁদেই দিলাম…চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত।রাক্ষস কোথাকার!!হাত ধরলেই কামরে দিতে হবে?ওই মাইয়া যে উনির উপর আছড়ে পড়ছিলো… ওই হিসেবে আমার তো উচিত উনার সারা শরীরে কামড়ে দেওয়া….সাদা বিলাই কোথাকার…তোর বউ মরে যাবে দেখে নিস।।গালে উনার হাতের ছোঁয়ায় ঘোর ভাঙলো আমার…. রাগী চোখে তাকালাম তার দিকে।কিন্তু সেদিক তার খেয়াল কই?তিনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার চোখে…বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে করুন স্বরে বলে উঠলেন উনি-
খুব লেগেছে? সরি….আর করবো না এমন।।তোমারই তো দোষ…ধরতে দিলে কেন হাত?ওর বাপের সম্পত্তি নাকি তোমার হাত…যখন ইচ্ছে ধরবে…চুলেও তো হাত দিয়েছিলো।
উনার কথায় মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো আমার।ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে।ডানহাতে বাম হাতটা চেপে ধরে বলে উঠলাম-
আহানের বাপের সম্পত্তি যেমন নয় আমার হাত আপনার বাপের সম্পত্তিও তো নয়।সে তো শুধু ধরেছিলো… আপনি তো ক্ষতবিক্ষতই করে দিলেন…
উনি একটু এগিয়ে এসে ফু দিয়ে সামনের চুল গুলো উড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলেন-
রেগো না গো ললনা…মরে যাই আমি।।তোমার রাগী ফেইসটা না একককদমমমম….
লুচু ছেলে….সব ছেলেরাই এক রকম হয়।।মেয়েদের উপর ঢলে ঢলে পড়ে আর যখন কথা মেয়েদের উপর আসে তখন হাইপার…হুহ!
আমার কথায় উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন…কাঁধের কাছে ঝুলে থাকা চুলগুলো টেনে ধরে হাতে পেচাতে লাগলেন…ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে বাধ্য হয়েই উনার দিকে এগিয়ে গেলাম।।লম্বা চুলের ভয়াবহতা আজ বুঝতে পারছি আমি।চুলগুলো হাতে পেচিয়ে নিয়ে ঘাড়ে হাত রেখে মাথাটা আরেকটু টেনে এনে কপালে কপাল ছোঁয়ালেন উনি….ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন-
কেশবতী?আমি মেয়েদের উপর ঢলে ঢলে পড়ি?
অবশ্যই ঢলে পড়েন।শুধু ঢলে পড়েন না।আরো অনেক কিছু করেন….মেয়ে পাশে দেখলে তো দুনিয়ার আর কাউকে মনে থাকে না।কথাও তো বের হয় না মুখ থেকে।।মেয়েবাজ কোথাকার!! ছাড়ুন আমায়…
আমি মেয়েবাজ….??(দাঁতে দাঁত চেপে)
হ্যা মেয়েবাজ!!ছাড়ুন আমায়…কিছুদিন পর ডক্টর আহানের সাথে আমার বিয়ে।।অন্যের বউকে মাঝরাতে হ্যারেজ করতে লজ্জা করছে না??ছাড়ুন বলছি….জাস্ট লিভ মি…
আমার কথায় চোখদুটো লাল হয়ে এলো তার।।আরো জোরে চেপে ধরে বলে উঠলেন উনি…
অন্যের বউ?ওই ডক্টরকে বিয়ে করার খুব শখ জেগেছে না?এতো শখ বিয়ে করার??
আশ্চর্য? শখ না জাগার কি আছে?বিয়ের বয়স হয়েছে বিয়ে করবো না?তাছাড়া ডক্টর আহানের মতো ছেলেরা স্বামী হিসেবে দারুণ হবে।।আমি তো খুব এক্সাইটেড…
কথাটা শুনার সাথে সাথেই একরকম ধাক্কা দিয়ে ছুঁড়ে ফেললেন আমায়… পড়তে পড়তেও নিজেকে সামলে নিলাম আমি।উনি দুহাতে নিজের চুল টেনে ধরে পাশে থাকা টবটা এক লাথিতেই ভেঙে টুকরো করলেন মুহূর্তেই। দেয়ালে দু একবার ঘুষি দিয়ে একটানে নিজের কাছে এনে দাঁড় করালেন আমায়…আলতো হাতে চুলগুলো কানে গুঁজতে গুঁজতে বলে উঠলেন- “ডোন্ট ওয়ারি রোদপাখি…আই উইল কিল হিম।”
রুমময় পায়চারী করে চলেছি। অস্থিরতায় বসে থাকাও দায়।এ পর্যন্ত দুই লিটার পানি শেষ করেছি আমি..তবু তেষ্টা যেনো মিটছেই না।পানি খাওয়া মাত্রই গলা শুকিয়ে কাঠ।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার।।উনি কথাগুলো বলার জন্য বলেন নি….উনার প্রতিটি কথায় সত্য ছিলো।।উনাকে এই মুহূর্তে আস্ত সাইকো মনে হচ্ছে আমার।।ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে একটা মানুষকে খুন করে ফেলতে হবে।নিজের উপরই রাগ লাগছে আমার কেনো যে বিয়ের কথাটা বলতে গেলাম!!শুভ্র ভাইয়াকে ফেইস করার সাহসও আমার নেই….আর সাহেল ভাইয়াকে যে বলবো তার ফোন নাম্বারটাই তো আমার কাছে নেই।।টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার।কিছুক্ষণ পরই কানে এলো আজানের ধ্বনি…রাতটা তাহলে আজ নির্ঘুমই কেটে গেলো আমার!!নামায পড়ে এক কাপ কফি হাতে ছাদে গিয়ে বসলাম।।চারদিকের অন্ধকার ভাবটা এখনো কাটে নি….ঠান্ডা স্নিগ্ধ বাতাসে শরীর কাঁপানো আবেশ।।কফিতে চুমুক দিয়ে ফোন লাগালাম চিত্রাকে….চারবারের মাথায় ফোন ধরলো সে…
হ্যা..লো??এতো রাতে ফোন দিয়েছিস কেন রোদু?
এতো রাত?এই কানা চশমা পড়ে ঘড়িটা দেখ ডাফার…এখন রাত নয় ইটস আ টেনশনযুক্ত মর্নিং।
কি বলছিস এসব?মাত্র তো ৫ঃ৪০ বাজে।ঘুমুতে দে তো….এমনিতে রাতে ঘুমুতে দেরী হয়ে গেছে… প্লিজজ রোদু লেট মি স্লিপ।
চুপ ফাজিল।এখন ঘুমাবি কেন তুই?সারারাত করলি টা কি?ওই পেট মোটা ব্যাটার সাথে প্রেম করছিস নাকি?বাহ্ বা শুধু পেট দেখেই প্রেম?বাকি জিনিস দেখলে কি করবি তাহলে?
কি সব বলিস রোদ…. ওই ব্যাটার ফোন নাম্বারই তো নেই আমার কাছে।প্রেম করবো কিভাবে??বাট ব্যাটার শার্টের কালারটা সুন্দর ছিলো…ক্রিমমি ক্রিমি…
ওহহো… এজন্যই তো বলি..চিতা বাঘ স্বপ্নে এতো ক্রিম দেখে কেন?ক্যান্টিনেও দেখি সব খাবারের সাথে ক্রিম মাখাচ্ছিস।।কাহিনী তাহলে এইটা??
ইশশ রোদু…প্লিজ ইয়ার কই থেকে কই নিয়ে যাচ্ছিস কথা!!এখন রাখ না ফোনটা…ঘুমাবো..
তোর ঘুম বের করছি আমি….জাস্ট ১৫ মিনিটে বাসায় এসে হাজির হ।।দেয়ার ইজ আ ইম্পোর্টেন্ট ফিংক টু ডিসকাস।।আমার জীবন মরন সমস্যা….
এতো সকালে??
হ্যা..এতো সকালেই…কাম ফাস্ট…নয়তো ওই চিপকু মফিসকে তোর নাম্বার দিয়ে দিবো বাই গডড…
কথাটা বলেই ফোন কেটে দিলাম।।আমি জানি ও আসবে।ধীরে সুস্থে কফিটা শেষ করে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়ালাম।মনে মনে ছক কষছি…কিন্তু সব ছকই এলোমেলো লাগছে আজ….প্রায় ২০ মিনিট পর চিত্রাকে গেইটের সামনে এসে দাঁড়াতে দেখলাম…সবুজ জামার সাথে হলুদ ধুতি পায়জামা পড়নে…গলায় কালো ওড়না পেঁচানো…অগোছালো চুলগুলো কোনোরকম খোঁচায় আটকানো…দেখেই বুঝা যাচ্চে যেমন ছিলো ঠিক সেভাবেই চলে এসেছে সে।।নিচে গিয়ে গেইট খুলে নিজের রুমে আনলাম ওকে।ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলো –
এবার তো বল হয়েছেটা কি?
তুই একটু সাহেল ভাইয়াকে কল কর না প্লিজ?
কেনো?কেনো?(ভ্রু কুঁচকে)
শুভ্র ভাইয়া ডক্টরের জন্য রিস্কি রে…আমার হাত ধরার দায়ে তাকে শাস্তি দিবেন উনি।।তুই একটু সাহেল ভাইয়াকে ফোন দিয়ে ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে বল না প্লিজ!!
তার থেকে আমি বরং হসপিটালে একটা ফোন দিই বুঝলি?ওই হারের ডক্টরের জন্য একটা ওটি বুক করে রাখি…কি বলিস?(খুশি হয়ে)
চুপপ..বেয়াদপ মেয়ে…তোকে ফোন দিতে বলছি ফোন দে ব্যস…
চিত্রা চরম অনিচ্ছায় ফোন হাতে নিয়ে ডায়াল করলো।খুবই ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো চিত্রার কাছে কিভাবে যেনো সবার নাম্বারই থাকে…শত্রু হোক বা বন্ধু.. ওর কাছে ক্যাফিটেরিয়ার মামার নাম্বার থাকলেও আমি অবাক হবো না মোটে।।ভেবেছিলাম ফোন রিসিভ হবে না…এতো সকালে আর যায় হোক ছেলেরা ঘুম থেকে উঠে না।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রথম রিং-এ ফোনটা রিসিভ হয়ে গেলো।।ওপাশ থেকে ক্লান্ত গলায় বলে উঠলো কেউ-
হ্যালো? কে বলছেন?
ভাইয়া আমি চিত্রা। আইআর ডিপার্টমেন্টের চিত্রা।ওইযে আপনার সানশাইন আছে না? ওর বেস্টু…অন্যভাবেও চিনতে..
শাট আপ চিত্রা।আমি তোমাকে চিনি এতো বিশ্লেষণ করার কিছু নেই…কি বলবে তাই বলো।
ভাইয়া…বলছিলাম কি?ওই ডক্টরকে নাকি শুভ্র ভাইয়া দুলাই দেবে??ওয়াও..আই এম সো হ্যাপি ফর দেট…আমি বলি কি?আমার পক্ষ থেকেও দশ বারোটা ঘুষি দিয়ে দিয়েন ভাইয়া…আই উইল পে ফর দেট…
তাই পে করবা?তাও আমাকে?গ্রেট তো কি পে করবে শুনি?একটা চুয়িংগাম?
নাহ ভাইয়া…একটা নয় যতোটা ঘুষি দিবেন,,প্রতিটি ঘুষির জন্য একটা করে চুয়িংগাম।দারুন না?
ওয়াও…এতো ভালো পেমেন্টের কথা আমি আমার লাইফেও শুনি নি।।তোমার নামটা তো স্বর্ণাক্ষরে খুদাই করে রাখা উচিত।এনিওয়ে?তুমি ডক্টরকে মারতে চাও কেন?সে তোমাকে প্রেগনেন্ট টেগনেন্ট করে পালায় নি তো??হা হা হা
ছিহ ভাইয়া!! আপনি এতো বাজে কথা বলতে পারেন আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।।আর ইউ সাহেল ভাইয়া??রিয়েলি??আই কান্ট বিলেভ!!
তুমি বিলিভ না করতে পারলেও কিছু করার নেই।এতো সকালে যে ঘুম ভাঙিয়ে ডিসটার্ব করেছো তার জন্য ওই কথাটা খুবই সামান্য…
ও হ্যালো?আমি নিজের জন্য নয় আপনার সানশাইনের জন্য ফোন দিয়েছি ওকে??
তাহলে আমার সানশাইনকেই ফোনটা দাও না গো সুন্দরী… প্লিজজ!!
সাহেল ভাইয়ার কথায় চিত্রা রেগে আগুন হয়ে ফোনটা কোনোরকম ছুড়ে মারলো আমার উপর..
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া..
ওয়ালাইকুমুস সালাম সানশাইন…আই নো তুমি কেন ফোন দিয়েছো।বাট এখন আর ফোন দিয়ে লাভ নেই…শুভ্রর যা করার ও করে দিয়েছে….সারারাত ওকে আটকানোর প্রচেষ্টায় জীবন শেষ… মাত্রই বাসায় ফিরলাম…শাওয়ার নিয়েই ঘুম দেবো…
মানে কি?আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন?ডক্টর আহানের সাথে করেছেটা কি উনি??
সিটি হসপিটালে গিয়ে নিজের চোখেই দেখে আসো সানশাইন।থার্ড ফ্লোর.. রুম নম্বর ৩৩৬…. আমি এখন ঘুমোবো সুইট লেডি…হেভ আ নাইস ডে..
আমি ফোন হাতে নিয়ে থম মেরে বসে আছি।যা করার করে দিয়েছে মানে কি?মেরে টেরে ফেলেছে নাকি?আবারও গলা শুকিয়ে আসছে আমার..!!উফফ মানুষ এমন পাগল হয় কি করে?হাও?
দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই ডক্টর আহানের করুণ অবস্থা চোখে পড়লো।হাতে-পায়ে প্লাস্টার আর ব্যান্ডেজের ছড়াছড়ি।ইশশ….আমার জন্য উনার এতোটা ক্ষতি হয়ে গেলো। এই মুহূর্তে শুভ্র ভাইয়ার প্রতি চরম রাগ লাগছে আমার…..একটা মানুষকে এভাবে মারতে পারে কেউ??একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরে ঢুকতেই ডক্টর আহান চোখ মেলে তাকালেন।আমাকে দেখেই মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠলেন-
কেমন আছেন লিটল বেবি?
আমি তো ভালো আছি বাট আপনার অবস্থা তো করুন।।আই এম সো সরি….সবকিছু আমার জন্য…
আরে না না…আপনার জন্য কেনো হবে?কাল রাত ১টার দিকে একটা প্রেংক কল এলো….ক্লিনিকে নাকি ইমার্জেন্সি পেশেন্ট আছে…হসপিটালে এসে দেখি কিছুই না…ফেরার সময় কোথা থেকে একদল ছেলে এসে গাড়ি থেকে জোড় করে বের করে পেটালো…মরেই হয়তো যেতাম থেংক গড আপনার ভাইয়া চলে এসেছিলো নয়তো…
উনার কথায় আমি অবাক…ভাইয়া মানে?ভাইয়া তো রাতে নাক ঢেকে ঘুমোচ্ছিলো,, ভাইয়া কখন গেলো সেখানে??আমি কৌতূহলী হয়ে বললাম –
ভাইয়া??
হ্যা,, আপনার কাজিন…নামটা যেনো কি?ওহ হ্যা শুভ্র!!সাথে উনার বন্ধুও ছিলো উনার নাম মে বি সাহেল হবে।
আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে এলো শুভ্র ভাইয়া….অমায়িক হাসি দিয়ে বলে উঠলেন-
ওহ গুড মর্নিং ডক্টর। কেমন আছেন এখন?
জি ভালো!!থেংক্স এগেইন ম্যান।
ইটস অলরাইট!!
কথাটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলেন উনি।।আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না…নিজে মার খাইয়ে নিজেই সেবা? বাহ্…”সাপও মরলো লাঠিও ভাঙলো না” এই প্রবাদটার সঠিক প্রয়োগ করেছেন উনি।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিত্রা আর শুভ্র ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম-
আমার ডক্টর আহানের সাথে কিছু কথা আছে।একটু বাইরে যাবেন প্লিজ?চিত্রা?তুইও যা!!
কেনো?কি এমন বলবি এই ডক্টরকে যে আমার সামনে বলা যাবে না?এই একদিনের ডক্টর তোর আপন হয়ে গেলো আর আমি পর??
এইযে বিউটিফুল লেডি! আপনি কি অলওয়েজ ঝগড়ায় করেন নাকি?(মুচকি হেসে)
কিহ?রোদ?দেখ এই ডাক্তার কি বলে…আমি নাকি ঝগড়ুটে!! বেশ হয়েছে ভাইয়া মেরেছে একে…আরো মারা উচিত ছিলো…হুহ
ভাইয়া মেরেছে মানে?(কনফিউজড হয়ে)
নাথিং ডক্টর…. এই তোরা যা না প্লিজ!!
আমার কথায় কেভিন থেকে বেরিয়ে গেলো শুভ্র-চিত্রা।আমি আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেডের পাশের টোলে গিয়ে বসলাম।মাথা নিচু করে বলে উঠলাম-
মিষ্টার আহান? আই এম সো সরি।আপনার এই অবস্থার জন্য আলটিমেটলি আমিই দায়ী।(কিছু বলতে নিলে) প্লিজ ডক্টর আহান…লেট মি ফিনিশ।সেদিন শপিং মলে চুরি দেখতে গিয়ে আচমকাই হাত ধরেছিলেন আমায়।বিষয়টায় আমিও চমকে গিয়েছিলাম… সাথে সাথে ছেড়েও দিয়েছিলেন কিন্তু…. এনিওয়ে… আমি একজনকে পছন্দ করি।আর যাকে পছন্দ করি তার মাথায় একটু গন্ডগোল আছে বলেই মনে করি আমি।এমনিতে সব ঠিকঠাক শুধু আমার ব্যাপারেই যতো পাগলামো তার।আপনি আমার হাত ধরায় রাগের মাথায় আপনার এই অবস্থা করেছে সে।। তাই বলছিলাম কি?একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিন প্লিজ।আমাকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করুন নয়তো আবারও মার খেতে হতে পারে….হয়তো মেরেই ফেলবে।।সো প্লিজ..এই বিষয়টা নিয়ে আর না এগোলেই বেটার।
বাট আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ।।ইটস নট এবাউট মাই ফিলিংস…আমার মায়ের ফিলিংসও জড়িয়ে আছে এতে…মা অনেক পছন্দ করেন আপনাকে।।তাছাড়া এখন আমিও তাই চাই…
দেখুন…আগে জীবন তো বাঁচান তারপর বিয়ে।।আমার জন্য কারো ক্ষতি হোক তা মোটেও চাই না আমি।।তাছাড়া উনি আপনাকে না মারলেও বিয়েটা করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।।আই রিয়েলি লাভ হিম।প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।আপনার মা কে বলে দিবেন যে আমি ফালতু একটা মেয়ে।।তাহলে দেখবেন উনি নিজেই সরে যাবেন।আসছি!!
কথাটা বলে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে হাঁটা দিতেই পেছন থেকে ডেকে উঠলো আহান-
হেই লিটল বেবি!!
হু?(পেছনে তাকিয়ে)
আপনার কথায় রাখবো…মাকে বলবো বিয়েটা করছি না কিন্তু একটা রিকুয়েষ্ট আছে…রাখবেন??
রিকুয়েষ্ট??কি রিকুয়েষ্ট??(ভ্রু কুঁচকে)
চলে তো যাচ্ছেনই…মাথাটা ব্যাথা করছে খুব একটু হাত রাখবেন মাথায়??প্লিজ!!
আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলবো বুঝতেই পারছি না।।কি একটা অদ্ভুত অস্বস্তি হচ্ছে আমার!!ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুৃকলো শুভ্র…আমার হাতটা টেনে ধরে বলে উঠলো..
কাম রোদ…ভিজিটিং টাইম শেষ আমাদের যেতে হবে।হেই ডক্টর…আজ আসি কেমন?তাড়াতাড়ি সেড়ে উঠুন…(মুচকি হেসে)
আহানকে কিছু বলতে না দিয়েই আমার হাতটা টেনে বেরিয়ে এলো শুভ্র।।মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।।চিত্রা আর আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে উঠলেন উনি-
আজকেই লাস্ট টাইম।।এই হারের ডক্টরের সামনে আর যেনো না পড়ো তুমি।
আপনিই আপনার চেলাদের দিয়ে এভাবে মেরেছেন উনাকে,,,তাই না?
হুম…মেরেছি তো??
তো মানে?মারলে নিজে মারবেন…অন্যকে দিয়ে মার খাইয়ে ভালো সাজার মানেটা কি??
আমি মারলে পুলিশ কেইস হতো….পোলাপানগুলো যেভাবে মেরেছে তাতে ব্যাপারটা রাস্তাঘাটে ছিনতাইকারীর আক্রমন হিসেবে শো করছে… পুলিশ কেইস হলেও কোনো এ্যাকশন হবে না।।নিজেই মারতে চেয়েছিলাম বাট সাহেলের জন্য পারি নি।।তাই বাধ্য হয়েই…
উনাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েই চিত্রা বলে উঠলো…
ওহহো শুভ্র ভাইয়া…এই সাহেল ভাইয়াটা না অলওয়েজ ওভার করে..উনাকেও দু’চারটা চড় থাপড়া দেওয়া উচিত ছিলো ভাইয়া!!আপনার বউয়ের হাত ধরে…
আমি রাগী চোখে তাকাতেই থেমে গেলো চিত্রা।।আমতা আমতা করে বলে উঠলো সে..
না ম..মানে আমি তো এমনি বলছিলাম…হে হে
মাইরটা সাহেল ভাইয়াকে না দিয়ে তোর ওই পেট মোটা “হতে হতে না হওয়া” জামাইকে দেওয়া উচিত।(দাঁতে দাঁত চেপে)
কেন?সে কি করলো তোকে?(মুখ ফুলিয়ে)
তোকে বিয়ে করে যে আমাদের উদ্ধার করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সেটা তো ভেঙে টুকরো করে দিলো…. এটা কি কম বড় অন্যায়??আমি কতো ভেবেছিলাম তোর মতো সিন্দাবাদের ভূত থেকে রেহাই হয়তো পাবো এবার…কিন্তু ব্যাটা লাস্ট স্টেজে এসে ভেগে গেলো??
আমাদের কথায় শুভ্র ভাইয়া হুহা করে হেসে উঠলেন।আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছি আর চিত্রা অসহায়!!
সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি পাড়ি জমিয়েছি।আপুদের বিয়েটা গ্রামেই হবে।গ্রামের বাড়ি বলতে আমার নানু বাড়ি আর শুভ্র ভাইয়ার দাদু বাড়ি।।মামু প্রায় ২৮ বছর পর বাড়ি ফিরছেন….চিত্রাসহ শুভ্র ভাইয়ার সব ফ্রেন্ড আর কিছু জুনিয়ররাও যাচ্ছে আমাদের সাথে….এরমধ্যে অনেকেরই এই প্রথম গ্রামে যাওয়া।চারদিকে হৈ-হুল্লোড় আর গান বাজনায় মাথা নষ্ট অবস্থা।।আমরাও প্রায় ৬ মাস পরে গ্রামে যাচ্ছি…নানু মারা যাওয়ার পর এদিকে আসায় হয় না তেমন। বাস থেকে নেমেই মনটা শান্ত হয়ে গেলো একদম….বিভিন্ন ধরনের গাছপালার মাঝে ছিমছাম পুরাতন দু’তলা বাড়ি।সবার জন্য রুম বরাদ্দ হয়ে গেছে….কিন্তু সমস্যা হলো আমার বেলায়..শুভ্র ভাইয়া আর আমার একই রুমই পছন্দ হয়েছে।এই নিয়ে কি তুমুল ঝগড়া… অবশেষে মামুর ধমকে দমে গেছে শুভ্র…বিনা বাক্য ব্যয়ে দুটো গ্রুপে ভাগ হয়ে গিছে আমরা….একটা সিনিয়র সিনিজেন অর্থাৎ মামুদের গ্রুপ আরেকটা জুনিয়র সিটিজেন..অর্থাৎ আমাদের গ্রুপ।।
ছাদে তুমুল গতিতে পাটি বিছানো হচ্ছে আজ সারারাত গল্প আর পিঠা খাওয়া হবে।।রহিমা খালা আর মজিদ চাচা দুজনে নিজ ইচ্ছেই আমাদের গ্রুপে নাম লিখিয়েছেন তার নাকি ওইসব বুইড়াদের সাথে মিশ খায় না।রহিমা খালা এই বাড়ির কাজের লোক আর মজিদ চাচা কেয়ারটেকার…এদের দুজনের মধ্যে মাখো মাখো ভাব…প্রেমের দ্বিতীয় এপিসোড চলছে তাদের।।রাত আটটা বাজতেই সবাই গিয়ে বসলাম ছাদে…রাতুল ভাইয়া এখনও শুভ্রকে বারবার দুলাভাই বলে চলেছেন…সাথে দু’একটা থাপ্পড়ও খাচ্ছেন কিন্তু তাতে তার কোনো ভাবোদয় হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না….বরং বেশ মজা পাচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে….সাকিব ভাইয়া চিত্রাকে ইমপ্রেস করার বহুত চেষ্টায় আছে কিন্তু সিনিয়রদের সামনে নিজেকে ঠিক প্রকাশ করতে পারছেন না বেচারা।।
তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮
নীলিমা আপু আর রোহন ভাইয়া তাদের ননস্টপ ঝগড়া চালিয়ে যাচ্ছে।।রাহি আপু সাব্বির ভাইয়ার সাথে কি এতো ফুসুরফুসুর গল্প করছেন আল্লাহ মালুম….আমাদের সাহেল ভাইয়া ক্যামেরা হাতে ছুটেছেন…সবারই বিভিন্ন এ্যাংগেলের ছবি তোলে মেমোরি ভরে চলেছেন….তার ক্যামেরায় রহিমা খালা আর মজিদ চাচার সিঁড়ি তলের রোমান্সও ধরা পড়েছে চরম ভাবে।।
