তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৩৩+৩৪
নৌশিন আহমেদ রোদেলা
আপু আর অভ্র ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে?
তো?তোমার কি মনে হয় এখনো বসে আছে?বাসর ঘরেও ঢুকে গেছে এতোক্ষণে। বুঝো না গ্রামে সন্ধ্যা সময়ই মধ্যরাত।।ভাইয়া তো বেচারা আরেকটু হলে কেঁদেই দিতো….যতবারই সে কবুল বলতে যায় কিছু না কিছু প্রবলেম শুরু হয়ে যায়।।প্রথম বার যখন কবুল বলতে গেলো রহিমা খালা চেঁচামেচি করে আমাকে অলমোস্ট রেপিস্ট বানিয়ে দিলো…আর সেকেন্ড টাইম তুমি….হা হা হা..
কথাটা বলেই ভুবন কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন উনি।কিন্তু আমার মুখে হাসি নেই।চোখ ভার হয়ে আসছে আমার…অশ্রু দেবী এই এলো বলে।।আমি উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি… আমায় এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি বন্ধ করে চোখের ইশারায় জিগ্যেস করলেন-
কি হয়েছে?
আই এম সরি!!আমার জন্য এতো কিছু..
উনি মুচকি হেসে আবারও নিজের সাথে জড়িয়ে নিলেন আমায়…একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন-
তুমি না আই এম সরি রোদপাখি…এতোটা রিয়েক্ট করা উচিত হয় নি আমার।মাথায় কতোটা ব্যাথা পেয়ে গেছো দেখলে??ইশশ!!কতোটা ফুলে গেছে..(কপালে ঠোঁট ছুইয়ে).আচ্ছা?তুমি রহিমা খালাকে এক্জেক্টলি কি বলেছিলে শুনি??যার জন্য উনি এতো কিছু ভেবে নিলেন!!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
উনার কথায় লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।এখন কি বলবো?রহিমা খালাকে যা বলেছি তা কি আর উনাকে বলা যাবে নাকি??আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলেন-
কি হলো?বললে না তো…কি বলেছিলে?
কিছু না।।চলুন নিচে যাবো।অন্ধকার হয়ে গেছে তো!!
কথাটা বলে উঠতে নিলেই আমার বামহাতটা ধরে একটানে আবারও বসিয়ে দিলেন উনার পাশে….কোমরটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন-
কোথায় যাচ্ছো?চুপচাপ বসে থাকো।হোক রাত…তাতে কি??নিচে যে যার মতো কাজ করছে তোমার সেখানে কোনো কাজ নেই।।সো আমার পাশে বসে থাকো।।আজ সারারাত তোমায় নিয়ে চন্দ্র বিলাস করবো…দেখো কতোবড় চাঁদ উঠেছে!! (আকাশের দিকে ইশারা করে)
পাগল নাকি?কেউ চলে এলে কি বিশ্রী অবস্থা হবে…ভেবেছেন একবার??গ্রামে ছেলে মেয়ে একসাথে বসাটাও খারাপ নজরে দেখা হয়….তারউপর এখন তো রাত!!দেখি ছাড়ুন তো…
রাত তো কি হয়েছে?তুমি কি অন্যকোনো ছেলের সাথে বসে আছো??এই গ্রামের সবাই অলরেডি জেনে গেছে যে তুমি আমার ওয়ানপিস বউ..যে কাহিনী করে বিয়ে হলো…. মাই গড!!…এতো কাহিনীর পর আমার তো মনে হয় শুধু এই গ্রাম না আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষও জেনে গেছে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা।।সো আমাদের এভাবে বসে থাকতে দেখলেও কেউ কিচ্ছু ভাববে না… নো টেনশন।।তাছাড়া রাতের বেলা গ্রামের কেউ ছাদে আসে না…গ্রামের মানুষদের ছাদভীতি আছে বুঝলে?ওদের ধারনা ছাদ মানেই ভূতের বাসা…আর কেউ শখ করে ভূতের হাতে মরতে আসবে না নিশ্চয়?আর তবু যদি ভুল করে চলে আসে তাতেও সফল হতে পারবে না…রাতুল আর সাকিবকে বলে দিয়েছি আজ রাতে যদি কেউ ছাদে ওঠে তো ওদের দুটোর হাত পা ভেঙে নদীতে ফেলে দিবো… সো ওরাই হ্যান্ডেল করবে সব….
আচ্ছা তা নাহয় হলো…কেউ ছাদে না এলেও তো আমাদের নিচে যেতে হবে নাকি??আমি সারাদিন কিচ্ছু খায় নি…ক্ষুধা পেয়েছে তো….(মুখ ফুলিয়ে)
তোমার কি মনে হয় আমি এতো বোকা??ওই দোলনার দিকে তাকাও…খাবার টাবার সব এনেছি রোদপাখি…আমি থাকতে বউ আমার না খেয়ে থাকবে হতেই পারে না।।(চোখ টিপে)
উনার মুখে “বউ” কথাটা শুনেই কেঁপে উঠলাম আমি।।সত্যিই আমি উনার বউ??কয়েকঘন্টার ব্যবধানে কারো জীবনের সাথে কতো সহজেই মিশে গেছি…এখন আমি অন্যের অধিকার…কপালে ঠান্ডা কিছুর ছোঁয়ায় ঘোর কাটলো আমার।।শুভ্র রুমালে বরফ পেচিয়ে,, বরফ লাগাচ্ছে আমার কপালে…কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বরফ কোথা থেকে পেলেন উনি??ভ্রু কুঁচকে যখনই কথাটা জিগ্যেস করতে যাবো তখনই দেখি উনার পাশে একটা আইস বক্স.…তাতে দুটো আইসক্রিম ও দুটো কোকও আছে…বাহ্ উনি তো দেখি পুরো ব্যবস্থা করেই এসেছেন।।করবেনই তো… দেখতে হবে না বরটা কার!! কথাটা ভেবে নিজের মনে একটু হেসেই মনোযোগী হলাম উনার কথায়…উনি খাবারের প্লেটটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বলে উঠলেন-
খাইয়ে দাও…উফফ কি হাত ব্যাথা..আমার প্রচুর হাত ব্যাথা বুঝলে রোদপাখি??ভাত মুখে তুলতে পারবো বলে মনে হয় না।।(ঠোঁট উল্টে)
আমি অবাক চোখে উনাকে দেখছি।লেম এক্সকিউজ!! হাত দিয়ে দুনিয়ার কাজ করছেন উনি আর খাবার সময়ই হাতে ব্যাথা??অদ্ভুত!! আমি খাবারের ঢাকনাটা খুলে আবারও অবাক হলাম…সব গ্রাম্য খাবার…কচুশাকের চচ্চড়ি,,ছোট মাছ..ডালের বড়া… আমি কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠলাম-
এসব কোথায় পেলেন?বিয়ে বাড়িতে তো এসব রান্না হয় না…তাহলে??
জোগার করেছি।বিয়ে বাড়ির এসব ভারি খাবারে বিরক্ত হয়ে গেছি একদম।।আর আমি এটাও জানি মিসেস আবরার শুভ্রও এসবে বোর.. রাইট??
আমি হাসলাম।।সত্যিই বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম এসব পোলাও,,মাংস হাবিজাবি খেয়ে।।আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলেন উনি-
একটু কষ্ট হয়েছে বাট তিনজনের জন্য ম্যানেজ হয়ে গেছে।।(মুচকি হেসে)
তিনজন??আমরা তো দুজন…তাহলে তিনজন বললেন কেন??(ভ্রু কুচঁকে)
আরেকজন হলো সাহেল।খুবই অদ্ভুতভাবে সাহেল আর আমার পছন্দ এক।আমি কোনোকিছু এক দেখায় বলে দিতে পারবো কোনটা ওর পছন্দ হবে আর কোনটা হবে না।।কারণ আমার যা পছন্দ ওর ও তাই পছন্দ…তুমি খেয়াল করে দেখো…আমরা প্রায় সব অকেশনে সেইম ড্রেইস পড়ি…আজও কিন্তু পড়েছিলাম।।কিনতে গেলেও একই রকম কিনি।আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানো??ও তোমাকেও পছন্দ করে(চিন্তিত হয়ে) তোমার মনে হয় না?
আরে ধুর!! উনি আমায় কেনো পছন্দ করতে যাবেন।।সাহেল ভাইয়ার সাথে চিত্রার বিয়েটা হয়ে গেলে দারুন হবে।।আমরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড…. আপনারাও…দারুন হবে না??(কৌতূহলী হয়ে)
উনি হাসলেন।আমার হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে আমার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বলে উঠলেন-
দারুণই হবে বাট চিত্রাকে ওর পছন্দ না।ও বিয়ে করবে না।
কেন কেন??আমার বেস্টুর মধ্যে খারাপটা কি??ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে।।সব ছেলের উচিত ওর পেছনে লাইন মারা…..আর সাহেল ভাইয়া এভাবে রিজেক্ট করে দিবেন??ইম্পসিবল….
আমার কথায় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে শুভ্র।। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।।এমন কি বললাম যে একদম হেসে মরে যেতে হবে?? উনি কোনোরকম হাসি কন্ট্রোল করে বলে উঠলেন-
ছেলেরা কি শুধু সৌন্দর্যই দেখে নাকি??তাছাড়া সাহেল অন্যান্য ছেলেদের মতো না একটু ডিফারেন্ট …এন্ড মেইন পয়েন্ট ইজ হি ডোন্ট লাইক চিত্রা…
কেনো লাইক করে না??অদ্ভুত!! আচ্ছা আপনাদের দুজনের চয়েজ তো সেইম তাই না??তাহলে আপনিও কি চিত্রাকে লাইক করেন না??
না….
কেনো?(ভ্রু কুচঁকে)
উনি হাসলেন…ফু দিয়ে আমার কপালে এসে পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন-
কারণ আমার বউ আছে আর আমি আমার বউকেই পছন্দ করি।অন্যকাউকে দেখার সময় কোথায়??
তাই বলে পছন্দই করবেন না??(অবাক হয়ে)
আরে বাবা!! সেই পছন্দ বলেছি নাকি…..এই পছন্দ সেই পছন্দ নয় বোকা!!এজ আ পার্সন আমি ওকে পছন্দ করি বাট নট আ স্পেশাল ওয়ান….. আর অপছন্দই বা কেন করবো বলো তো??
ওহ…আচ্ছা আপনি কি জানেন আপনার চয়েজ খুবই বাজে?
আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।প্লেটটা হাত থেকে রেখে আমার হাতে মেডিসিন ধরিয়ে দিতে দিতে বললেন.. ” কেনো?”
কেনো আবার??চিত্রা তো বেশ সুন্দরী কিন্তু আপনি তার প্রেমে পড়লেন না??চিত্রার কথা ছেড়েই দিলাম…শ্রেয়াকেই ধরুন না…আপনি ওর নামটাই ভুলে গেলেন??যেখানে শ্রেয়ার জন্য সবাই পাগল!!
আমার কথায় হাসলেন উনি।।নিজের মুখে খাবার পুড়ে নিতে নিতে বললেন…
রোদপাখি.?ভালোবাসাটা একটা ভয়ঙ্কর নেশা বুঝলে!! তুমি কাকে কখন কিভাবে ভালোবেসে ফেলবে তা তোমার হাতে নেই।।ভালোবাসাটা জাস্ট হয়ে যায়…আর যখন এই ভালোবাসা নামক নেশাটা রক্তে রক্তে ঘুরে তখন পৃথিবীর সব সৌন্দর্যের পাশে ভালোবাসার মানুষটির প্রতিচ্ছবিই ভেসে উঠে বারবার।।আর আমি জানি আমার চয়েজটা কতোটা মারাত্মক …… তাই এতো ভয়ে থাকি….আমার মায়ার জালটা আবার কেউ চুরি করে না নিয়ে যায়….একবার চুরি হলেও তো আমি শেষ…একেবারেই নিঃশ্ব!!
আমি স্তব্ধ হয়ে উনার কথাগুলো গিলে চলেছি।।কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলেন উনি।।খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে…হাতটা আমার আচঁলে মুছেই একটা আইসক্রিম ধরিয়ে দিলেন আমার হাতে…নিজের জন্য একটা নিয়েই আমার কোলে মাথা রেখে সটান শুয়ে পড়লেন উনি আবার কি ভেবে চট করে উঠেই বলে উঠলেন-
তুমি শোয় রোদ।তোমার তো মাথা ব্যাথা করছে।।ইউ নিড স্লিপ।নিচে এত্তো এত্তো মানুষের মধ্যে তোমার ঘুম হবে না।তাই এখানেই ঘুমাও আমি তো আছিই…
কথাটা বলে এক মিনিটও দেরি না করে একরকম জোর জবরদস্তি করেই আমাকে উনার কোলে মাথা রাখতে বাধ্য করলেন।।উনার এতো কাছে এভাবে কখনো ভাবিনি নিজেকে… বড্ড অস্বস্তি হচ্ছিলো মনে।।কিন্তু মাথায় উনার হাতের স্পর্শ আর উনার ননস্টপ বলা কথায় অস্বস্তিটা যেনো দৌড়ে পালালো।।সাথে সাথেই ঘুমেরা ধরা দিলো চোখে।শান্তির ঘুম!!
ঘুমটা হঠাৎই ছুটে গেলো আমার…হঠাৎ ঘুম ভাঙায় নিজেকে ঠিক আবিষ্কার করতে পারছিলাম না ঠিক কোথায় আছি আমি?মুখের উপর কাপড় জাতীয় কিছু ফিল হওয়ায় হাত দিয়ে সরিয়ে আনলাম জিনিসটা…রুমাল??রুমালটির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই কোথা থেকে কেউ একজন বলে উঠলো –
গুড মর্নিং রোদপাখি…
কথাটা শুনে চোখ তুলে উপরের দিকে তাকাতেই শুভ্র ভাইয়ার মুখ ভেসে উঠলো।মুখে ক্লান্তিমাখা হাসি।।উনার মুখ দেখেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো আমার।।উনি ঠিক রাতের মতোই বসে আছেন৷।। ইশশশ….উনি সারারাতই জেগেছিলেন নাকি??চারদিকে ভোরের আমেজ শুরু হয়েছে মাত্রই…একেই হয়তো বলে কাক ডাকা ভোর।।কিন্তু চারপাশে কাকের ডাক শুনা যাচ্ছে না মোটেই।।চারপাশে তো পাখির কিচিরমিচিরের শব্দ….এই রকম একটা ভোরের কথায় হয়তো…উপন্যাসিকরা লিখতেন তাদের উপন্যাস পটে…!! আমি মুগ্ধ চোখজোড়া নিয়ে উঠে বসতেই উনি শুয়ে পড়লেন আমার কোলে…আমার আঁচল টা টেনে নিলেন উনার মুখে।।আচঁলে মুখ ঢেকেই বলে উঠলেন..
ডোন্ট ডিস্টার্ব…. পুরো একঘন্টা ঘুমাবো আমি।আর এই আচঁল সরাবে না একদম…এই স্মেল টা আমার নেশা!!!
আজ আবারও ঢাকার গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছি সবাই।।শুভ্র ভাইয়ার মুখটা দেখার মতো হয়েছে…তার প্রধান কারণ হলো আমাদের বিয়ে!! আমাদের বিয়েটার কথা যেনো সবাই ভুলেই গিয়েছে।। তাদের ধারনা এই এক্সিডেন্টালি বিয়ে হওয়াটা আমরা কেউই মেনে নিতে পারি নি।।আর এই বিয়ে কোনো বিয়ের পর্যায়ে পড়ে নি।।পাত্র পাত্রীর অসম্মতিতে বিয়ে ঠিক নয়।।তাই আমাদের বিয়েটাও ঠিক নয়।।ব্যাপারটায় আমার ভাবাবেগ না হলেও শুভ্র ভাইয়া চরম বিরক্ত।।উনি বেশ কয়েকবার আমার কানে ফিসফিস করে বলেও দিয়েছেন-
লুক রোদপাখি!! আজ যদি বিয়েটা আমার… তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সাথে হতো তো বিয়ের দু’মিনিট পরই বাবা চড় থাপড়া দিয়ে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিতো।।আর মা তো আরো একধাপ এগিয়ে…নির্ঘাত স্টার জলসার মা’দের মতো কসম দিয়ে বলতো…খোকা!! কথা দে…একবছরে নাতি নাতনীর মুখ দেখাবি…কথা দে!! আর এখন যখন আমি রাজি আছি তখন দেখো?দুনিয়ার সবাই বিয়েটাই ভুলে গেলো??বাসর তো বহুত দূরের কথা…এটাই আমার কপাল বুঝলে??(মুখ ফুলিয়)
উনার কথায় বারবারই হুহা করে হেসে উঠেছি আমি….কি বাচ্চাদের মতো কথাবার্তা!!
ব্রেকফাস্ট করে ছাদে গিয়ে বসতেই মা এসে হাতে একটা পার্সেল ধরিয়ে দিলো।।আমি অবাক চোখে আম্মুর দিকে তাকাতেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলেন উনি-
তোর নামে এসেছে…দেখ তো কে পাঠালো!!
কথাটা বলে আবারও ব্যস্ত ভঙ্গিতে নিচে নেমে গেলেন আম্মু। আম্মুর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পার্সেলটার দিকে তাকালাম।আমার জন্য পার্সেল??কে পাঠাবে??মনের মাঝে হাজারও প্রশ্ন নিয়ে চোখদুটো কুঁচকে দূরের নীল আকাশটির দিকে তাকালাম।পার্সেলটা খুলে মনের কৌতূহলটা মিটাতে ইচ্ছে করছে না মোটে।থাকুক না কিছু কৌতূহল!! এই অচেনা প্রশ্নগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে বেশ লাগছে!!ছাদের পাশের আম গাছটায় লাল নীল রঙের একটি পাখি এসে বসেছে প্রায় আধা ঘন্টা হলো।কি অলস তার চালচলণ,, আচ্ছা?? এই ঢাকা নামক কাকের দেশে এই রূপসী পাখিটা এলো কিভাবে??তারও কি আমার মতো অস্তিমজ্জায় অলসতা ভর করেছে??তারও কি একজন শুভ্র আছে??পাগলাটে টাইপ শুভ্র!!অসম্ভব সুন্দর এই পাখিটার নামটা জানতে ইচ্ছে করছে খুব।।মা নিশ্চয় জানে নামটা,, কিন্তু মাকে ডেকে জিগ্যেসই করতে ইচ্ছে করছে না মোটেই।।থাকুক না নামটা অজানা….সব সৌন্দর্যই কি নাম দিয়ে বিচার করা জরুরি??থাকুক না কিছু নাম হীন সৌন্দর্য…নাম হীন অনুভূতি।।কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর পার্সেলের বাদামী রং এর আবরণটা খুলে চোখ রাখলাম ভেতরের জিনিসটিতে।।ডায়েরি!!অসম্ভব রকম কৌতূহল নিয়ে ঝটপট হাতে নিলাম ডায়েরীটা…ডায়েরীর উপরে আাঠা দিয়ে লাগানো ক্যাম্পাস লাইব্রেরীর টেবিলে মাথা রেখে ঘুমন্ত আমার ছবি…তার নিচে ছোট ছোট গোটা গোটা অক্ষরে লেখা “❤For sunshine ” “সানসাইন” শব্দটা দেখেই যে মানুষটার কথা প্রথম মনে হলো সে হলো সাহেল ভাইয়া। তাহলে কি সাহেল ভাইয়াই পাঠিয়েছে এই পার্সেল?এটাই কি উনার বলা গিফ্ট!!অধীর আগ্রহ নিয়ে ডায়েরীটা খুললাম…তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা-
সাইনশাইন,
“সানশাইন” নামটা শুধুই আমার জন্য…এই নামের অধিকার আর কাউকে দিও না প্লিজ।থাকুক কিছু আমার ঝুলিতে খুব গোপনে।।ভার্সিটির প্রথম দিনটিতে ক্যান্টিনে ঠিক আমার সামনের চেয়ারটাতে বসা মেয়েটির বাচ্চাদের মতো ঘন ঘন পলক ফেলে ভয় ভয় দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকানো!!হঠাৎ করে রেগে ওঠা…আর কি জেদ!! বাচ্চা একটা মেয়ের এতো উত্তাপ?এতো সাহস?সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম আমার আর রক্ষে নেই….এবার তো মরণ নিশ্চিত। দ্বিতীয় দিনটিতে হলুদ জামা পড়ে গুটি গুটি পায়ে হাজারো অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়ালো আমাদের সামনে।দ্বিধা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো-” সরি ভাইয়া!!” বলো তো .. এতো সুন্দর করে সরি বললে কি রেগে থাকা যায়??তোমার বলা ওই সরি কথাটা বুকে গিয়ে লেগেছিলো সেদিন….কি মিষ্টি সে স্বর!!শুভ্ররও হয়তো সেইম ফিলিংসটায় হয়েছিলো তাই তো বিনা বাক্যে ক্ষমা করে দিলো তোমায়।।
যদিও এর পেছনে আরেকটা কারণও ছিলো…সেদিন শুভ্র জানতো তুমি ওর ফুপ্পির মেয়ে…সাথে জানতাম আমিও।।সেদিন সেই মুহূর্তে দুটো মন কেঁপেছিলো একইসাথে….আমার মনে ছিলো ভালোবাসা আর শুভ্রর মনে ছিলো ভালোবাসা আর পাগলামো।।তোমাকে পাওয়ার পাগলামো।।তুমি ওর সাথে নিজ থেকে কথা বলবে শুধুমাত্র এই কারণটার জন্য দিনের পর দিন নিকৃষ্ট ব্যবহার উপহার দিয়েছে তোমায়….তার উদ্দেশ্য একটায়.. রেগে হোক,,হেসে হোক বা প্রতিশোধ নেওয়ার আশায় হোক তুমি তার সাথে কথা বলো!!প্রতিটি দিন তুমি ক্লাস থেকে বের হতেই দুটো মানুষের দৃষ্টি তোমার উপর পড়তো সবার আগে….সেদিন লাইব্রেরীতে শুভ্র নিজের বেস্ট এসাইনমেন্টটায় দিয়ে দিয়েছিলো তোমায়…ভাগ্যিস আমিও গিয়েছিলাম খাতা হাতে…দেখেছিলাম তোমার সাথে ওর অন্তরঙ্গ মুহূর্ত।। জানতে পেরেছিলাম তোমার প্রতি শুভ্রর ফিলিংস…আর থমকে গিয়েছিলো হৃদয়!!
তারপরও হাল ছাড়ি নি আমি ভেবেছিলাম বলবো তোমায় কিন্তু দিন দিন বাড়ছিলো তোমার প্রতি শুভ্রর পাগলামো।তুমি চিন্তাও করতে পারবে না কতোটা পাগল সে তোমার জন্য!! তোমার অগোচরেও যারা ভুলেও তোমার দিকে তাকিয়েছে তাদের অবস্থা কতটা বাজে করেছে তা শুধু আমি জানি।।তোমায় দেখে শিষ দিয়ে উঠার অপরাধে ভার্সিটির এক জুনিয়রকে ১০ দিন হসপিটালাইজড থাকতে হয়েছে।।নিজের পরিচয় গোপন করে তোমার কাছে যাওয়ার ওর চেষ্টাও আমার চোখে পড়েছিলো…তার সাথে পড়েছিলো অনেক দীর্ঘশ্বাস!!যেদিন রাতে তোমার সাথে ইনসিডেন্টটা হলো…সেদিন পিলে চমকে গিয়েছিলো আমার….শুভ্রর রিয়েকশন ছিলো তার থেকেও ভয়ানক।।সেদিন আরেক শুভ্রকে দেখেছিলাম আমি…কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সে!!
তোমায় হসপিটালে এডমিট করার পর সারাটা রাত জানোয়ারের মতো মেরেছিলো ওদের।।চিৎকার করে কেঁদেছিলো তোমাকে হারানোর ভয়ে….নিজের হাতের কি অবস্থা করেছিলো দেখেছিলে নিশ্চয়??তোমার জানার বাইরেও কতো ধরনের পাগলামো করে সে শুধু তোমার জন্য তা হয়তো শুধু আমিই জানি….তুমি কি জানো??রাত ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত তোমাদের বাসার জামরুল গাছটার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে শুভ্র! একঝাঁক মশার কামড় খায়…এরমধ্যে কফি হাতে তুমি বেলকনিতে আসো…এতো দূর থেকে রাতের অন্ধকারে তোমার ছায়াটা দেখেই বাড়ি ফিরে সে…রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য তোমার বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষাও একটা আগ্রহের বস্তু ওর…তাই তো কখনোই আধাঘন্টার আগে রিকশা পাও না তুমি…কারণটা বুঝেছো নিশ্চয়!!
আমার আর শুভ্রর পছন্দগুলো সেইম…ড্রেস কিনতে গেলে সেইম ড্রেস ডাবল না হলে অর্ডার দিয়ে হলেও বানিয়ে নিতাম আমরা…কিন্তু ভাগ্য দেখো…লাইফের সবচেয়ে এক্সপেন্সিভ জিনিসটায় তো ডাবল পেলাম না।।তোমাকে পাওয়া হলো না।।যদি লাইফের অর্ধেক হায়াত দিয়ে হলেও আল্লাহর কাছে আরো একটা “তোমাকে” অর্ডার করতে পারতাম তবু করে নিতাম সানশাইন!! কিন্তু এমন তো আর হওয়ার নয় তাই না?? কখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় জানো?যখন মনে হয় তোমাকে নিয়ে নিজের কল্পনায়ও ভাবার অধিকার নেই আমার তোমার সবটাতেই শুধু শুভ্রর অধিকার,…তখন ক্ষতবিক্ষত হই আমি…মারাত্মকভাবে ক্ষতবিক্ষত হই।। তবু সরে দাঁড়িয়েছে কারণ আমি জানি…শুভ্র তোমাকে না পেলে পাগল হয়ে যাবে…কিন্তু আমি হবো না।।
যতবার তুমি সামনে আসো নিজেকে বলি তাকাবো না,, দেখবো না তোমায়…কিন্তু চোখটা শুনলে তো!!বেহায়া চোখ বারবার ঘুরেফিরে সেদিকেই যায়।।এই চিন্তা করো না…আমি কিন্তু খারাপ নেই বরং ভালো আছি।।বাচ্চাদের মতো ভাবি কি জানো?কোন এক পরি আসবে আর তার ম্যাজিক দিয়ে তোমাকে ভুলিয়ে দিবে…আসবে তো সানশাইন??নিশ্চয় আসবে তাই না??এক সপ্তাহ পর ফাইনাল এক্সাম শেষ হচ্ছে…পাড়ি জমাবো অনেক দূরের দেশে।ভাবলাম যাওয়ার আগে ফিলিংসগুলো জানিয়ে দিই তোমায় আপাতত বুকের ভারটা তো হালকা হবে।।শুভ্রও পেয়েছিলো স্কলারশিপ কিছু না ভেবেই রিজেক্ট করলো।।তোমায় ছাড়া নাকি থাকতে পারবে না সে…বড্ড হারানোর ভয় ওর…।।তোমার পছন্দ করে দেওয়া শাড়িটা বড্ড সুন্দর ছিলো… আমি দেশে ফিরলে আমার বউ এর শাড়িটা তুমিই পছন্দ করে দিও…দিবে তো??আর একটা কথা,, প্লিজ দেখা হলে স্বাভাবিক থেকো একদম আগের মতো…নয়তো লজ্জা পাবো বেশ!!
সাহেল
ডায়েরীর এই পৃষ্ঠা টা পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম আমি…সাহেল ভাইয়া??কিছু কিছু সত্য না শুনাটায় যে মঙ্গল তা আজ বুঝতে পারছি আমি।।কোনো জানলাম শুধু?কোনো খুললাম পার্সেলটা? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদের কোণে গিয়ে দাঁড়ালাম… মনটা বলে উঠছে বার বার…পরিটা যেনো আসে!! খুব শীঘ্রই আসে!! মার ডাকে ঘোর ভাঙলো আমার…তৈরি হওয়ার জন্য চেচাচ্ছে মা…আজ নাকি আপুকে আনতে যাবো আমরা…আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে নেমে গেলাম আমি….
খাবার টেবিলে বসে আছি…সবাই খাবার নিয়ে ব্যস্ত মামুদের কিছু গেস্টও আছে সাথে।।পানিটা মুখে নিয়ে গিলতে যাবো ঠিক তখনই ধুমধুম করে নিচে নেমে এলেন শুভ্র ভাইয়া।।উনাকে দেখেই গলায় পানি আটকে এলো আমার…এলোমেলো চুল…সাদা টি-শার্ট,, লাল থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পড়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসেই বলে উঠলেন উনি-
মা?তাড়াতাড়ি খেতে দাও…পড়া এখনও কমপ্লিট হয় নি আমার…আই হেভ টু ফিনিশ মাই সিলেবাস…
কথাটা বলেই নিচু হয়ে খেতে শুরু করলেন উনি।।এদিক ওদিক একটুও তাকালেন না…ঢং!! হঠাৎ করেই উনার সেই দূরসম্পর্কের মামি বলে উঠলেন-
দুলাভাই?অভ্রর তো বিয়ে হয়েই গেছে এবার শুভ্রর বিয়েটাও তো দিতে হবে।।আপনি একদম চিন্তা করবেন না দুলাভাই…আমি মেয়ে ঠিক করে নিয়েছি!! খুবই লক্ষি একটা মেয়ে।।শুভ্র বাবা?ওর সাথে একটু দেখা করবি?এনি টাইম দেখা করতে রাজি সে।
মহিলার কথা শুনে গলায় খাবার আটকে গেলো আমার।।শুভ্রও বিষম খেলো…আমার দিকে আড়চোখে তাকালো।।মামু কিছু বলতে যাবে তার আগেই মহিলাটা আবারও বলে উঠলেন…
দেখা না করলেও ফোনে আপাতত কথা বলে নে ….লক্ষি ছেলে!
শুভ্র বিরক্ত মুখে বললো….
আমি কেবল স্টাডি করছি মামি…সো আমার বিয়ে নিয়ে এতো টেনশন করতে হবে না তোমায়।।আগে স্যাটেল হই তারপর বউ আমার ঘরে আপনাআপনিই চলে আসবে…
আরে তোর আবার স্যাটেল কি রে??তোর তো সব স্যাটেলই…আমি ফোন লাগিয়ে দিচ্ছি..খেতে খেতেই কথা বলে নে না।।তোর অবশ্যই পছন্দ হবে।।মেয়েটা তুই বলতে পাগল!!
মামির কথায় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলেন শুভ্র-
আমার পছন্দের সিস্টেমটা ওয়ানটাইমার…একবার উইজ হলে আর কাজ করে না।।আর তোমার ভাগ্য খারাপ সেটা ইউজ হয়ে গেছে…এখন রাণী এলিজাবেথ কে এনে দিলেও কাজ হবে না।।আর আমি কোনো পাগল ছাগল কে বিয়ে করবো না।।সো লিভ ইট।
আরে কথা তো বল।।আমার মান রাখতে আপাতত একটু কথা বল বাবা!! কতো বড় মুখ করে বললাম তোর সাথে কথা বলাবো।।প্লিজ বাবা!!
শুভ্র এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালেন…ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলেন-
ওকে দাও!! ইউ হেভ জাস্ট ফাইভ মিনিটস…
মামি খুশিতে গদগদ হয়ে ফোনটা ডায়াল করেই উনার হাতে ধরিয়ে দিলেন।।রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো আমার।।শুভ্র খুব স্বাভাবিকভাবে ফোনটা নিয়ে টেবিলে রেখে লাউডে দিলেন…হয়তো উনি আমার মনের অভিপ্রায় বুঝতে পারছিলেন।।কিছুক্ষণ পরই রিনরিনে কন্ঠে একটা মেয়ে বলে উঠলো-
হ্যালো??
হ্যালো আই এম আবরার শুভ্র….আমার মামি বললো আপনি আমার সাথে কথা বলতে চান।বলুন প্লিজ….
ওহ মাই গড! আপনি?কেমন আছেন?এক্চুয়েলি আমি খুবই নার্ভাস ফিল করছি।
মেয়েটির কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।ফাজিল মাইয়া এতো নার্ভাসনেস আসে কই থেকে তোর??কি বুঝাতে চাস তুই??উনি আমার দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসলেন তারপর প্লেটের দিকে তাকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগী হয়ে বলে উঠলেন-
এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই মিস! কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন…আই এম বিজি।
আপনি কি ওলওয়েজ গম্ভীর মুখে থাকেন?হাসেন না??
হাসি তো…বউয়ের পাশে থাকলে অলওয়েজ হাসি হাসি মুডে থাকি গম্ভীরতা সিস্টেমটা তখন আর কাজ করে না।।নেক্সট!”
বউ?বউ মানে??
আপনি কি প্রাইমারিতে পড়েন??প্রাইমারি পড়া ছেলেমেয়েরাও তো বউ মানে বুঝে… আপনি বুঝেন না??স্ট্রেঞ্জ!!
উনার কথায় সবাই মুখ চেপে হাসছেন আর আমি লজ্জায় লাল রং ধারন করছি।।মেয়েটা আবারও বলে উঠলো-
ওকে লিভ ইট।আমরা কি কোথাও দেখা করতে পারি??
না পারি না।
কেনো??
আপনার সাথে দেখা করার কোনোই রিজন নেই।তাই দেখা করতে পারি না।
তাহলে ফোনে কথা বলছেন কেন?
মামির সম্মান বাঁচাতে…
হা হা হা…আপনি আসলেই অনেক কিউট।।আচ্ছা বলুন তো…এমন কে আছে…যাকে রিকুয়েষ্ট করলে আপনি আমার সাথে দেখা করবেন.. আমি তাকে পা ধরে রিকুয়েষ্ট করবো।।প্লিজ বলুন
এমন কেউ নেই। আপাতত আমি কারো রিকুয়েষ্ট শুনছি না।।একজনের টা শুনবো বাট সে এই রিকুয়েষ্ট টা করবে না…সো প্রশ্নই আসছে না।
উনি কথাটা বলার সাথে সাথেই সবাই আমার দিকে তাকালো…আমি মাথা নিচু করে খাবার খেতে শুরু করলাম…কি অস্বস্তিকর পরিবেশ!!এই মাইয়া মরে না কেন??অসভ্য!! খুব দেখা করার শখ না?তোকে তো আমি..
কে সে একজন??
মাই ওয়াইফ…এন্ড ইউর টাইম ইজ ফিনিশ!! বাই..
কথাটা বলেই ফোনটা ডিসকানেক্ট করে উঠে দাঁড়ালেন উনি।।মামানির দিকে তাকিয়ে বললেন-
মা?আগামী তিনঘন্টার মধ্যে আমার রুমে যেনো কেউ না ঢুকে আমি ঘুমোবো…
তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২
মামনি ভ্রু কুঁচকে রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বললেন.. ” কেউই ঢুকতে পারবে না?” মামনির কথায় হেসে উঠলেন শুভ্র।।আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়েই ব্যস্ত ভঙ্গিতে সিঁড়ি ভেঙে নিজের রুমে ঢুকে গেলেন,, যেতে যেতে বলে উঠলেন- “যার কথা বলছো সে এনিটাইম এলাউড মা…” উনার মামি এখনও শক খাওয়া চোখে তাকিয়ে আছেন।সাথে অন্যান্য গেস্টরাও..” ওয়াইফ” শব্দটা নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তাদের।আমি মাথা নিচু করে আড়চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছি।সবাই ঠোঁট চেপে হেসে চলেছে এমন কি মামুও!! ছি কি লজ্জা!!!
