তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ৩+৪
নৌশিন আহমেদ রোদেলা
ভার্সিটির গেইটে দাঁড়িয়ে আছি।।উদ্দেশ্য শুভ্র ভাইয়াকে সরি বলা।।হুমায়ূন স্যার একটা কথা বলেছেন-” দুঃসময়ে কোনো অপমান গায়ে মাখতে নেই” আমিও ঠিক একই কাজ করতে চলেছি।।শুভ্র ভাইয়া এবং তার গ্যাং হয়তো ধুয়ে দিবে আমায় তবু এতে করে ব্যাপারটা কিছুটা শিথিল হলেও হতে পারে।।আপুর ধারনা দোষটা আমার,, অনেক ভাবার পর আমিও বুঝতে পারছি দোষটা আসলেই আমার সো সরি টা বলা উচিত।।আর এই উদ্দেশ্য কে সামনে রেখেই আধ ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি মেইন গেইটে।কিন্তু শুভ্র ভাইয়ার খবর নেই।।চিত্রা মুখ কাচুমাচু করে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।।ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কিছু বলতে চায়।।নিচের ঠোঁটটা চেপে ধরে ভ্রু কুচঁকে ওর দিকে তাকিয়েই বলে উঠলাম-
কিছু বলবি??হাপাঁনির পেশেন্টের মতো এভাবে ছটফট করছিস কেন?
দোস্ত? শুভ্র ভাইয়া যদি বকা দেই তাহলে??আর ওর সাথে তো উনার হারামি ফ্রেন্ডগুলো আছেই।।এগুলো শুভ্র ভাইয়ার থেকেও ফাজিল।।শুভ্র ভাইয়া কখনো মেয়েদের সাথে মিসবিহেভ করে না।।তোর সাথেও করতো না আমি সিউর কিন্তু তুই উনার গালে চড়টা মেরেই ফেঁসে গেলি।।
এই শুভ্র ভাইয়ার চামচা চুপ থাক তো,, এতো ভ্যা ভ্যা করিস না।।বকা এমনিও দিবে ওমনিও দিবে। সো চিল মার।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমাদের কথার মাঝেই বাইক ছুটিয়ে চলে এলেন শুভ্র ভাইয়া।।চিত্রা তো রীতিমতো “হা” করে তাকিয়ে আছে।আমারও সেই একই অবস্থা।।”পোলা তো নয় সে তো আগুনের গোলা রে” মমতাজ আন্টি এই লাইনটা উনাকে ডেডিকেট করার জন্যই হয়তো গেয়েছিলেন।।রেড কালার বাইকে ফুল ব্ল্যাক ড্রেসআপে বসে আছেন উনি।মনে হচ্ছে কোনো শোকসভায় এসেছেন।।তবে যায় বলি না কেনো উনাকে যে একদম চকলেট বয় লাগছে তা স্বীকার করতে আমি বাধ্য।।কোনোরকম নিজের চোখটা সরিয়ে নিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সব মাইয়াই যে যার জায়গায় হ্যাং মেরে দাঁড়িয়ে আছে।।মুখের “হা” এর সাইজ অনুযায়ী দুই তিন কেজি মশা ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে অনায়াসে।। শুভ্র ভাইয়া পার্কিং এ বাইকটা রেখেই চাবিটা পকেটে ঢুকিয়ে ধীর পায়ে আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন।।এমন একটা ভাব যেনো আমাদের দেখতেই পান নি।। এটিটিউট দেখলে বাঁচি না।।নিজেকে কি জন আব্রাহাম মনে করে নাকি??যত্তোসব আবুল কোথাকার।।এদিকে চিত্রা আমায় গুতিয়েই চলেছে।।ওর গুতাগুতি দেখে মনে হচ্ছে আমার হাতের চামড়াগুলো তুলে ফেলায় ওর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য।। বিরক্তিমাখা চাহনী দিয়ে তাকিয়েই বলে উঠলাম- “কি সমস্যা তোর?”
আরে ভাইয়া কে ডাক দে নয়তো সরি বলবি কেমনে??
আমি বললাম, “তাইতো”। চিত্রাকে নিয়ে হাঁটা দিলাম শুভ্র ভাইয়ার পিছু পিছু।।কিছুটা এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো শুভ্র ভাই।উনি উনার ওই হারামি বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে কিছু একটা নিয়ে হাসছেন।।আহা! কি মারাত্মক হাসি।।আবারও ক্রাশ খেলাম বলে মনে হচ্ছে।ছেলেরা এতো সুন্দট হয় নাকি??যায়হোক ক্রাশটা মুহূর্তেই হজম করে নিলাম।।হাজার মেয়ের ক্রাশের প্রেমে পড়া যাবে না।।তাতে ওয়েটিং লিস্টে থাকার চান্স আছে আর রোদ কখনও ওয়েটিং লিস্টে থাকতে রাজি নয়।।মন এবং প্রাণকে জোড় করে বোঝালাম সে আমার ভাই।।মনপ্রাণ কতটুকু বুঝলো জানি না।।সে নিয়ে মাথাও ঘামালাম না তেমন।।হালকা পায়ে উনাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।।ঠিক তখনই সাহেল ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলেন-
আরে সানশাইন নাকি?বাহ দোস্ত! সকাল সকাল বাঁশ খেতে চলে এসেছে রে।
শুভ্র ভাইয়া ডেবিল হাসি দিয়ে কিছু একটা বলতে যাবেন তার আগেই চোখ মুখ খিঁচে বলে উঠলাম…
সরি ভাইয়া।।আই এক্সট্রেমলি সরি।।আমার তেমনটা করা উচিত হয় নি।।আই ওয়াজ রং।।বুঝে উঠতে পারি না।।না বুঝেই এমনটা করে ফেলছি সরি ভাইয়া।।(মাথা নিচু করে)
সামনে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ তুলে তাকালাম।।শুভ্র ভাইয়া শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।।আরো একটা থাপ্পড় দিয়ে বসবেন কি না কে জানে???কিন্তু আমাকে অবাক দিয়ে উনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠলেন…
ইটস ওকে।।
আমি তো চরম অবাক।কই কি পোলা??আমার সাথে কেউ এমন করলে তাকে আমি জিন্দিগিতে মাফ করতে পারতাম কি না সন্দেহ আর সে কি না একটা সরিতেই কুপোকাত?আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।পাশ থেকে নিলি নামের মেয়েটি বলে উঠলো…
এতো সহজে মাফ করে দিলি শুভ্র??তোর এই দয়া দেখে আমার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে…
তো করে ফেল মানা করেছে কে?তবে নীলি আগে রোহানকে বিয়ে করার পর সুইসাইড টা করলে ভালো হয় না??আমরা তোর বিয়ের দাওয়াত আর চল্লিশার দাওয়াত দুইটাই খেতে পারি আরকি।।কি বলিস শুভ্র??
সাহেল ভাইয়ার কথায় মুচকি হেসে শুণ্ভ্র ভাইয়াও বলে উঠলেন..”একদম”
তোদের কি মনে হয়? আমার বিয়েতে তোদের দাওয়াত দিবো??ইম্পসিবল!!! রোহানকেও বলে দিবো যেনো সে তোদের এলাউ না করে।।দরকার হলে এক্সট্রা গার্ড রাখবো।। তবু তোরা এলাউড নস।।হুহ
কথাটা বলেই চোখ মুখ লাল করে উল্টো পথে হাঁটা দিলেন নীলি আপু।।বাকি সবাই ব্যাপারটাকে হেসে উড়িয়ে দিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালেন।
কি ব্যাপার?দাঁড়িয়ে আছো কেন ক্লাসে যাও।(আমি মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানাতেই) আর হ্যা দোষ করে সরি বলাটা দোষের কিছু নয় বরং দোষটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াটা দোষের।। আই থিংক ইউ ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড।।
কথাটা বলেই বন্ধুদের সাথে চলে গেলেন উনি।।আমি উনার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছি একদৃষ্টে।।এদিকে চিত্রা ননস্টপ উনার সুনাম করেই যাচ্ছে।।কিন্তু কোনো কথায় যেন কানে ঢুকছে না আমার।।শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।।একটা মানুষের মধ্যে এতো ডিফারেন্ট টাইপ এটিটিউট থাকে কিভাব? কাল যতোটা রাগী শুভ্রকে দেখেছি।।আজ ততটাই শান্ত শুভ্রকে চোখে পড়লো আমার।।জাস্ট আ স্ট্রেঞ্জ পারসন।
ভার্সিটি লাইব্রেরীতে দাঁড়িয়ে বই দেখছি।।হাজারও বইয়ের সমারোহ চারদিকে।। তারমধ্যে থেকে একটা বই সিলেক্ট করলাম পড়বো বলে।।কিন্তু হায় নিয়তি! বই ধরে এতো টানছি বাট বইটা আমার হাতে আসছে না।।আজিব কারবার কাহিনী কি?বইটা হালকা কাত করে বইয়ের ফাঁক দিয়ে অপরপাশে উঁকি দিতেই একটা হাত চোখে পড়লো।।সেই ব্যাক্তিও সেইম বই ই নিতে চাচ্ছেন।।লোকটার চেহারা দেখার অসীম কৌতূহল নিয়ে বইটা ছেড়ে দিয়ে পাশের সারির দিকে ঝুঁকে পড়তেই কপালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেলাম।।চমকে উঠে অপরের দিকে তাকাতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া।।দুজনেই চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি।।ব্যাপারটা যে আনফরচুনেটলি হয়ে গেছে তা বেশ বুঝতে পারছি।।কিছুক্ষণ ওভাবে থেকে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই দুজন দুদিকে ছিটকে গেলাম।।লজ্জায় লাল হয়ে কোনো রকম ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম লাইব্রেরি থেকে।।কি ভয়ংকর অবস্থা।।ভাবতেই লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।।থেংক গড কেউ দেখে নি নয়তো কি হতো??
রিক্সায় চেপে বাড়ি ফিরছিলাম।।হাতে দুটো আইসক্রিম।। আজ আর ক্লাসে মনোযোগ বসবে না তাই এতো আয়োজন করে বাড়ি ফেরা।।মাঝরাস্তায় এসে একটা মধ্যবয়স্ক লোককে চোখে পড়লো।।লোকটিকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন আর বারবার গাড়ির দিকে তাকাচ্ছেন হয়তো গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে।।কি মনে করে উনার কাছাকাছি এসে রিক্সা থামাতে বললাম।।লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম….
আংকেল লিফ্ট লাগবে??
লোকটি আমার দিকে তাকিয়েই যেনো চমকে উঠলেন।।কোনোরকম নিজেকে সামলে নিয়েই বলে উঠলেন..
অনেক দূরে যেতে হবে রে মা।।তোমার রিক্সায় হবে না।
কেনো জানি না উনার “মা” কথাটা আমার বেশ ভালো লাগলো।।বাবা-মা ছাড়া আর কারো মুখে মা ডাক শুনার ভাগ্য কখনো হয়নি আমার।।আমার জানা মতে মার কোনো ভাই বোন নেই।।বাবাও দাদু-দিদার একমাত্র সন্তান সো আত্মীয় স্বজন বলতে গেলে আমাদের কেউই নেই।।যায়হোক উনার মুখে মা ডাকটা শুনেই রিক্সা থেকে নেমে গেলাম।ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম…
চাচা? আপনি এই রিক্সা নিয়ে চলে যান একটু সামনেই গ্যারেজ আছে।।এখানে রিক্সা পাওয়া দুষ্কর।আপনি বরং গ্যারেজ থেকে কাউকে নিয়ে আসুন।।ততক্ষণ আমি এখানে ওয়েট করছি।।
ড্রাইভার লোকটির দিকে তাকাতেই লোকটি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো,, আর সাথে সাথে রিক্সায় উঠে গ্যারেজের পথে পাড়ি জমালো সে।।আমি মুচকি হাসি দিয়ে উনার দিকে আইসক্রিম বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলাম,,,”নিন আইসক্রিম খান”।।
না রে মা আমি আইসক্রিম খাই না।
একটা খেলে কিছু হয় না।।নিন তো।
উনি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন।।আমার হাত থেকপ আইসক্রিমটা নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন…
তোমার চেহারাটা একদম আমার ছোট বোনের মতো।
তাই নাকি??তাহলে তো দেখতে হচ্ছে।।কোথায় থাকে আপনার বোন?
(দীর্ঘশ্বাস ফেলে) জানি না।।
কেন??(অবাক হয়ে)
প্রায় ২৮ বছর হতে চললো বাবার সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়েছি।। বাবাও খুব রাগী,, রাগ করেই ত্যাজ্য করে দিলেন আমায়।।চলে আসার সময় বলেছিলেন,,তার শেষ ইচ্ছে এ জীবনে যেন আমার মুখ আর না দেখতে হয়।।তাই আর ফিরা হয়ে উঠে নি কখনো।।বোনটা কোথায় আছে জানি না।।তবে যদিন চলে আসি সেদিন ওর বিয়ে ছিলো।।।কি কান্না করছিলো সেদিন।।কলিজার টুকরা ছিলো সে৷। খুব ভালোবাসতাম ওকে এখনও বাসি।।অনেক খুঁজেছি কিন্তু খুঁজে পাইনি ওকে।।হয়তো স্বামী সংসার নিয়ে ভালোই আছে।।(মুচকি হাসি দিয়ে)
হয়তো….দোয়া করি আপনার বোনকে খুব তাড়াতাড়ি খুজে পেয়ে যান।
আচ্ছা তোমার নাম কি??
রোদেলা।তবে সবাই রোদ বলেই ডাকে।আপনিও রোদ বলেই ডাকতে পারেন।।(মুচকি হেসে)
রোদ? সুন্দর নাম।।আর তুমি আমায় মামু ডেকো আমার ভালো লাগবে।।আচ্ছা তোমার মার নাম কি??
আম্মুর নাম আরিয়ানা আঞ্জুমান।
নামটা শুনেই চমকে উঠলেন উনি,,,আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়েই বলে উঠলেন-“অরি”
অরি নামে তো নানুভাই ডাকতো মাকে।।কিন্তু আপনি কি করে জানলেন??
আমার কথার উত্তর না দিয়ে হুট করেই জড়িয়ে ধরলেন আমায়।।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবাক।।
গাড়িতে বসে আছি।পাশে বসে আছেন ওই লোকটি অর্থাৎ মামু।।উদ্দেশ্য আমাদের বাসা।।আমাদের বাসায় কি এমন আছে যার জন্য উনি ইম্পোর্টেন্ট একটা মিটিং ক্যান্সেল করে দিলেন সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।।উনার ব্যবহারগুলোও আমার কাছে বেশ অদ্ভূত ঠেকছে।।কিন্তু কেন যেনো খারাপ লাগছে না।।উনি একহাতে আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন।যেনো ছাড়লেই হারিয়ে যাবো।আমার অস্বস্তি লাগার কথা।এমন একটা পরিস্থিতিতে যেকোনো মেয়েরই অস্বস্তি লাগবে বলে আমার ধারনা।।উনিশ বছরের কোনো যুবতিকে কোনো অপরিচিত ভদ্রলোক জড়িয়ে ধরে বসে আছেন তা নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর।। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আমার অস্বস্তি লাগছে না।।আমার কাছে মনে হচ্ছে এটাই স্বাভাবিক।।উনার জড়িয়ে ধরার মধ্যে অন্যরকম একটা স্নেহ খুঁজে পাচ্ছি যেমনটা বাবার ছোঁয়ায় পাই।।কিছুক্ষণ পর উনি নড়েচড়ে বলে উঠলেন-
রোদ মা?তোকে তুই করে বলছি বলে কি তুই রাগ করছিস?
আমার রাগ করার উচিত হলেও কেনো যেনো এই মুহূর্তে রাগটা লাগছে না।।আপনি আমায় তুই করেই বলতে পারেন।(মুচকি হেসে)
আপনি কি রে?তুমি করে বল।।নয়তো কেমন পর পর লাগে।।তুই জানিসও না তুই আমার জন্য কতোটা ইম্পোর্টেন্ট।
আমি মামুর মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম।।উনার চোখ দুটো বলছে উনি সত্যি বলছেন কিন্তু এই অল্প সময়েই কেউ কারো কাছে ইম্পোর্টেন্ট হয়ে যেতে পারে নাকি?আজব তো!! উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে তার থেকে একটা পুরোনো ফটো বের করে আমার সামনে ধরলেন।আমি ফটোটা হাতে নিয়ে একটু খেয়াল করে দেখেই অবাক হলাম,ওমা এটা আমি,,,কিন্তু আমি বুঝতে পারছি এটা আমি না।।মেয়েটার চেহারাটা ঠিক আমার মতো কিন্তু স্টাইল আর ড্রেসাপ দেখে বুঝা যাচ্ছে ওটা আমি নই।।অনেক বছর পুরোনো একটা ছবি।।আমি অবাক চোখে মামুর দিকে তাকাতেই উনি বলে উঠলেন….
বুঝলি না তো?ওটা তোর মা।তোর বয়সে ঠিক তোর মতোই ছিলো।।এটা যখন ওকে প্রথম দিন কলেজে ভর্তি করে দিই সেদিনকার ছবি।।পাশেরটা তোর বাবা রাদিব আহমেদ।।
তুমি আমার বাবাকে চিনো?(অবাক চোখে)
হ্যা চিনি।আমার বন্ধু ছিলো ও।অরিকে ভালোবাসতো। তোর মা-বাবার লাভ ম্যারেজ হয় জানিস তো?
হুম(মাথা নেড়ে)
বাবা অরির বিয়েটা অন্য জায়গায় ঠিক করে ফেলে। রাবিদ তখন মাত্র মাস্টার্স করছে আর অরি অনার্স ফার্স্ট ইয়ার।বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে না বাবা।এদিকে অরি মুখ কালো করে বসে আছে।।আর যায় হোক আমি ওর মুখ ভার দেখতে পারতাম না কখনো।।ওর চোখের এক ফোঁটা জলেও আমার আত্মাটা ফেঁটে যেতো।।মা ছাড়া বোনটাকে ছোট থেকেই বুকে আগলে রেখেছিলাম।এদিকে বন্ধুও আমার মর মর অবস্থা আমার বোনকে না পেলে সে দেবদাস হবে বলে ডিসিশান নিয়েছে নয়তো হবে চিরকুমার।।শেষমেষ বিয়ের দিন বরের গাড়ি রাস্তায় আসতেই কয়েকজন বন্ধু মিলে তাকে বেদরাম পেটালাম।।আমিও বেশ ব্যাথা পেয়েছিলাম কিন্তু তার তোয়াক্কা করি নি।।আমার উদ্দেশ্য ছিলো বিয়েটা লোক সম্মুখে কিছুটা সিনক্রিয়েট করে ভেঙে দেওয়া।।
তখন বাবার কাছে অন্যকোনো অপশন থাকবে না মানসম্মান বাঁচাতে মেয়েকে যেকোনো ছেলের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত থাকবেন উনি আর প্ল্যানটা কাজেও লেগে গেলো।।তোর বাবার সাথে বিয়েটা সেদিনই হয়ে গেলো।।আমি জানতাম এতোকিছুর পর বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন।।মানুষিক ভাবে আমি প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিলাম।।বাবা বলেছিলো আমি নাকি আমার বোনের সুখ চাই না।।আমার জন্য আমার বোনটা নদীতে ভেসে গেলো।।সেদিন যদি বাবাকে বুকের শান্তিটা দেখাতে পারতাম!! বিয়ের আগের দিন বোনটা আমার কান্নামাখা চোখে বলেছিলো…”ভাইয়া?” তাতেই বুঝেছিলাম ওর কি চায়।।বোনের সুখের কাছে আমার এসব ত্যাগ বড্ড ছোট।।কিন্তু আমার পিচ্চি বোনটাকে তা বুঝাতে পারি নি আমি।।বাড়ির গেইটে পা রাখতেই ভাইয়া বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলো সে।।পেছনে তাকিয়ে দেখি ঞ্জান হারিয়েছে আর রাবিদ ওকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে।রাবিদের চোখেও জল ছিলো কৃতজ্ঞতার,, আর আমার চোখে ছিলো শান্তি।।বাবার মধ্যে যে চিন্তা বাসা বেঁধেছিলো তা আমার মাঝে ছিলো না।।আমার বিশ্বাস ছিলো রাবিদ অরিকে নিজের সবটা দিয়ে ভালো রাখবে।।সেই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই চলে আসি।।আজ ২৮ টা বছর কেটে গেছে ভাবতেই অবাক লাগে(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
ওহ মাই গড।।তারমানে তুমি সত্যি সত্যি আমার মামু??এটা তো পুরোই সিনেমার কাহিনী হয়ে গেলো।।এজন্যই হয়তো বাবা-মার ম্যারেজ ডে কখনো সেলিব্রিট করা হয় না।।এই দিনটাতে মার রুমের দরজা বন্ধ থাকে।।বাবারও প্রবেশ অধিকার থাকে না সেইদিন।।আমি খুবই এক্সাইটেড মামু।।মা কতো বড় সারপ্রাইজ পাবে ভাবতে পারছো??এখন না আমার ওই সাদা বিলাইকে ধরে একটা টাইট কিস করে দিতে ইচ্ছে করছে।।(এক্সাইটেড হয়ে)
আমার কথায় মামু ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো-“সাদা বিলাই?এটা কি তোর পালিত বিড়াল??” মামুর কথায় আমি হুহা করে হেসে উঠলাম মামু তৃপ্তিমাখা চোখে তাকিয়ে আছে।। আমি কোনোরকম হাসি থামিয়ে বললাম….”না গো মামু ওটা কোনো বিড়াল নয় মানুষ।।আমাদের ভার্সিটির বড় ভাইয়া।। উনার সাথে একটু উলটপালট কিছু হওয়ায় ক্লাস রেখেই চলে এসেছি আর তাইতো তোমার সাথে দেখা।তাহলে ক্রেডিট টা তো উনাকেই দেওয়া উচিত তাই না??
তা ঠিক।কিন্তু তুই তাকে সাদা বিলাই ডাকার কারণ কি??চোখ-মুখে কি একটা বিলাই বিলাই ভাব আছে নাকি??
মামুর কথায় আবারও হেসে উঠলাম আমি।।এখন কেন জানি মনে হচ্ছে মামু আমার বেস্টফ্রেন্ড হতে বেশি দেরি হবে না।।হাসিটা ঠোঁটে ঝুলিয়েই বলে উঠলাম…
ছেলেটা বেশ কিউট।।বলতে গেলে একদম স্টবেরি আইসক্রিমের মতো।। ছেলেটা আমার থেকেও দ্বিগুন ফর্সা।।আর সাদা বিড়ালগুলো কত্তো কিউট হয়।।সেও যেহেতু কিউট + সাদা।।তাই নাম দিয়েছি সাদা বিলাই।।লজিকটা বুঝলে মামু??
হুমম এবার বুঝলাম।।ওই ছেলের প্রেমে পড়েছিস নাকি??(মুচকি হেসে)
মামু?কি যে বলো না?আচ্ছা আগে বলো তো, তখন তুমি ওভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন??যখন আমি হাসছিলাম।
তুই ঠিক তোর মার মতো।।তাই তোর সবকিছুর মাঝেই আমি অরিকে খুঁজে পাই।।কতোদিন ওকে দেখি না তাই দেখছিলাম।।মন ভরে দেখছিলাম।।(প্রশান্তির হাসি দিয়ে)
দুই ঘন্টা যাবৎ বাসায় এসেছি।।এই দুইঘন্টায় মা দুইবার সেন্স হারিয়েছে।।দরজা খুলে মামুকে দেখেই একবার সেন্সলেস হয়েছে তো একবার মামুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে।।এখনও মা মামুর বুকে গুটিশুটি মেরে চুপটি করে বসে আছে।।আর মামুও কি সুন্দর দু’হাতে আগলে রেখেছে মাকে।।যেনো পিচ্চি একটা বাচ্চা ভয় পেয়েছে আর তার ভাই তাকে বুকে জরিয়ে সেই ভয় থেকে আগলে রেখেছে।।মা কে এই মুহূর্তে কি কিউটই না লাগছে,,ইশশশ আমার মা এত্তো কিউট??সবাই খাবার খাচ্ছিলাম মামু আজ মাকে খাইয়ে দিচ্ছে।।আগে নাকি রোজ মামুই খাইয়ে দিতো মাকে।।মা হঠাৎই বলে উঠলো…
ভাইয়া?তুমি অনেক কিছু মিস করে ফেলেছো।।তোমার বোনের বড় হওয়াটা মিস করেছো।।ওকে মা হতে দেখতে মিস করেছো।।তোমার পিচ্চি বোন থেকে সংসারী হতে দেখাটা মিস করেছ।।
মামু আম্মুর কথায় মুচকি হেসে বলে উঠলেন…
তা করেছি।।কিন্তু সেসব পুষিয়ে নিতে পারবো বলে তেমন আপসোস হচ্ছে না।
মানে??(অবাক হয়ে)
ওই তো দেখ(আমাকে ইশারা করে) আমার ছোট অরি ওখানেই বসে আছে।।ওকে বড় হতে দেখবো এবার।।তোর যা যা মিস করেছি সবকিছু রোদকে দেখে পুষিয়ে নিবো।।ও যে ঠিক তোর মতো হয়েছে তা কি তুই জানিস??একদম এক,,কিভাবে সম্ভব?
আমার থেকেও মিষ্টি হয়েছে ও ভাইয়া।।
তা ঠিক।।রোদ মা,,এদিকে আয় আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।।আর শোন…আমি যখনই এখানে আসবো তখনই তোকে খাইয়ে দিবো।।আয় আয়….
আমি উঠে যেতেই ভাইয়া নাকি সুরে বলে উঠলো…
মামু?আমি আর রুহি কি দোষ করেছি??
কিছু দোষ করো নি তোমরা কিন্তু বাবা রোদ যে আমার চোখের তারা সেটা আমি তোমাদের সান্ত্বনা দিতে গিয়েও অস্বীকার করতে পারবো না।।আমার বোনকে যা দিতে পারি না সব এনে দেবো ওকে,,সবকিছু।।
আমি খাচ্ছি আর ভাবছি বাহ! মার মতো হওয়ার কতো সুবিধা।।
ক্যান্টিনে বসে বাইরের দিকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছি।।আসলে শুভ্র ভাইয়াকে খুঁজছি।।উনার ওই চুমু যে আমার জন্য লাকি চার্ম আগে জানলে প্রতিদিনই একটা করে চুমু খেয়ে যেতাম।।ছিহ্ ছিহ্ নির্লজ্জর মতো কি সব ভাবছি।।তবে হ্যা! উনাকে একটা কিউট থেংক্স তো দেওয়ায় যায় হাজার হলেও উনার জন্যই মামুকে পেলাম।।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম চিত্রা আমার দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে আছে।।ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে স্ট্রেট হয়ে বসে বলে উঠলাম….
এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন??
আগে তুই বল যে,তুই এভাবে উঁকিঝুঁকি মারছিস কেন??তোর কি পেট খারাপ হয়েছে ওয়াশরুম যাবি নাকি কাউকে খুঁজছিস,,কোনটা?(ভ্রু কুচকে)
আব..ককাকে খুঁজবো?ভার্সিটি দেখছিলাম।।এনিওয়ে দোস্ত তুই কখনো চুমু থেরাপির কথা শুনেছিস??যে চুমু পেলেই সব ম্যাজিকের মতো হয়ে যায় দেটস টাইপ।।(ভ্রু নাচিয়ে)
পাগল হয়ে গেছিস তুই?এসব কি আজেবাজে বকছিস।।এমন কোনো থেরাপি হয় না।।তাহলে সব ছেলেরা চুমু থেরাপিস্টই হতো আর সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের ধরে চুমু দিয়ে দিতো আ…
চিত্রার কথার মাঝপথেই শুভ্র ভাইয়াকে দেখতে পেলাম…ব্রাউন কালার একটা শার্ট,, ব্লু জিন্স।।ডানহাতে ঘড়ি। বামহাতে সিল্ক স্ট্রেট চুলগুলো ঠিক করতে করতে মাঠের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।।আশেপাশে উনার হারামি বন্ধুগুলোকে দেখতে না পেয়ে বেশ খুশি হলাম।।চিত্রাকে রেখেই ক্যান্টিন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম।।চিত্রা যে হা করে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে তা আমি ওর দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারছি।।ও “হা ” করে থাকুক বা হা করে উল্টে পড়ে যাক তাতে আপাতত আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।।এই মুহূর্তে আমার একমাত্র মাথাব্যাথা হলো শুভ্র ভাইয়া।।দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে উনার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালাম। হঠাৎ হুট করে এভাবে উনার সামনে দাঁড়ানোতে উনি বেশ হকচকিয়ে গেলেন বলেই মনে হলো।। অবাক চোখে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন…
আর ইউ ওকে??(ভ্রু কুচঁকে)
ইইইয়াহহ(জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে)
দেখে তো মনে হচ্ছে না।।তুমি এমন ভাবে হাঁপাচ্ছো দেখে মনে হচ্ছে কোনো কুকুর তাড়া করেছিলো।।এভাবে হাঁপাচ্ছো কেন??(অবাক হয়ে)
আপনার জন্য!!
এমন কিছু বলতে না চাইলেও ফট করে কথাটা বেরিয়ে গেলো মুখ থেকে আমার কথায় তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত ফিল করলেন বলেই মনে হলো।।এদিকে ওদিক তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো…
আমার জন্য মানে??
ননা মমমানে…
তোকে চাই সিজন ২ পর্ব ১+২
কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না হঠাৎ করেই বলে উঠলাম,,”আপনার চুমুতে যে ম্যাজিক্যাল পাওয়ার আছে সেটা কি আপনি জানেন?” কথাটা বলেই মুখ চেপে ধরলাম।।ছি ছি কি বলে ফেললাম।।উনি হতভম্ব হয়ে বলে উঠলেন…”সরি??”
