তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২২
ভূমিকা তালুকদার
Panthéon-Sorbonne University ক্যাম্পাসের কোলাহলের ভিড়ের
ভেতরেও একটা ছেলেকে একেবারে আলাদা করে চোখে পড়ছিলো। এক কোণের টেবিলে বসে, দু’হাত জড়িয়ে রেখেছে মাথার ওপর। সামনে খোলা বই, পাশে ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ। চারপাশের শব্দ যেন তার কানে পৌঁছাচ্ছে না,একেবারেই নিজের দুনিয়ায় ডুবে আছে।সেই মুহূর্তে হালকা চঞ্চল ভঙ্গিতে এলেনা ঢুকে পড়ল। লম্বা চুল কাঁধে ছড়ানো, ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। দূর থেকেই ছেলেটাকে লক্ষ্য করছিলো, অবশেষে এগিয়ে এসে টেবিলের ঠিক পাশে দাঁড়ায়,
হেই হ্যান্ডসাম! একা একা বসে কী করছো?
কোনো সাড়া নেই। ছেলেটা যেন শোনেইনি।
এলেনা ভুরু কুঁচকে আবার ঝুঁকে তুড়ি বাজিয়ে বলে,
তুমি কি বোবা নাকি?
এবার হঠাৎ ছেলেটা মুখ তুলে তাকালো। তার চোখ দুটো এতটাই গভীর, এতটাই তীক্ষ্ণ যে মুহূর্তেই এলেনার বুক ধক করে উঠলো।
এলেনা ভয়টা আড়াল করে হেসে,,,
ওওমাইগড এভাবে তাকিও না, বরফ গলেই পানি হয়ে যাবো হায় হায়! তুমি কি new comer?
আবার কোনো উত্তর নেই।
এলেনা হাত গুটিয়ে ঠোঁট কামড়ে হালকা নাক সিঁটকালো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
—আরে কিছু তো বলো,বাঙালি তাই না? অবাক হচ্ছো আমি কীভাবে বাংলা বলছি? আমার দুইজন ফ্রেন্ড আছে, ওদের থেকে শিখেছি।
তার কথায় ছেলেটার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। মুখ হঠাৎ আরওগম্ভীর হয়ে গেলো, টেবিলে জোরে আঘাত করে মাথাটা আরও জোরে চেপে ধরে, যেন কোনো কথা একেবারেই শুনতে চাইছে না,বলাতো দূরের কথা।
এলেনা চমকে উঠে একপা পিছিয়ে গেলো। তবু ভদ্র হেসে বলে,
আরে আরে! এমন করছো কেন? হুয়াট হেপেন্ড ? তুমি কি ডিপ্রেশড্?
গো টু হেল। আই এম নট ইন্টারেস্টেড। প্লিজ গো।
কথাগুলো এমন বরফশীতল কণ্ঠে বেরোল যে, এলিনা যেন জমে গেলো। এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। কি অদ্ভুত! এমন রূঢ়তা, এমন তিক্ততা! Attitude থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু এই ছেলেটার আচরণ যেনো একেবারেই অস্বাভাবিক।
এলেনা নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই ছেলেটা হঠাৎ টেবিল ঠেলে উঠে দাঁড়ালো। চেয়ারটা ঠকঠক শব্দে সরে গেলো, আর কোনো দিকে না তাকিয়ে হুড়মুড় করে নিজের ডিপার্টমেন্টের দিকে হেঁটে যেতে লাগলো।তার অজান্তেই ব্যাগের ভেতর থেকে একটা ছোট্ট জিনিস মাটিতে খসখস শব্দ করে পড়ে গেল,একটা পাসপোর্ট।এলেনার চোখে পড়তেই সে ঝটপট নিচু হয়ে সেটা তুলে নিলো। কৌতূহল চাপতে না পেরে কভারটা উল্টিয়ে খোলামাত্র তার দৃষ্টি আটকে গেল ভেতরের ছবিতে। ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে থাকা এক তরুণ,ঠিক সেই ছেলেটাই। আর নামটা স্পষ্ট অক্ষরে লেখা,
জায়ান খান (বীর)
একটা হাঁটু বয়সের মেয়ের পা ধরতে বলছিস?
তোকে আমার বৌয়ের পা ধরতে বলছি,বড়ো না ছোটো, এগুলো ক্যালকুলেট করতে বলিনি তোকে!
তার চোখে আগুন, দাঁত চেপে আবার ধমকালো,
তোকে তো আমিইইইই।
তুই কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিস! এমন ভাব করছিস যেনো বিষ খাইয়ে দিয়েছি। কেন তুই খাসনি? আমি খাইনি? নাদিয়া খায়নি? প্রত্যেকেই তো খাই! সেখানে আমিও একটু লিয়ানাকে অফার করেছিলাম, সেও খেয়েছে। এখানে আমি কি এমন মহাভারত অপরাধ করে ফেললাম??
এলেনার ভয়ে অভিমানে চোখ ছলছল, কপালে রক্ত জমে নীলছে হয়ে আছে। অথচ জায়ানের রাগ থামার নাম নেই। তার কণ্ঠস্বর যেনো বজ্রপাত, বাতাস কেটে আগুন ছড়াচ্ছে চারদিকে।এলেনা কপালে হাত চেপে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, চোখে রাগ আর ব্যথা মিশ্রিত ঝড়। তখনই নাদিয়া এগিয়ে এসে তার কাঁধ ধরে ফেললো।
হয়েছে টা কি? বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস কেন তোরা? আর এলেনা, তুই এবার নিজেকে একটু সংযত রাখার চেষ্টা কর, সেটাই তোর জন্য বেটার হবে।
এলেনা কাঁপা গলায় বলে উঠল,
আমার কোনো মিস্টেক নেই এখানে।জায়ান বরং বেশি বাড়াবাড়ি করছে। ও হয়তো ভুলে যাচ্ছে আমরা কারা, ওর জন্য কী কী করেছি সব ভুলে গিয়ে,ওয়াইফ নিয়ে পরে আছে।
এই কথা শোনা মাত্র জায়ান চোখ লাল করে উঠলো। সে হঠাৎই এলেক্সকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিয়ে, তারপর ঝড়ের মতো এলেনার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,
শাট আপ এলেনা! সব মনে আছে,আছে বলেই বন্ধুত্বের খাতিরে শুধু পা ধরতে বলেছি। তা না হলে তুই ভালো করেই জানিস, তোর ওই দুই হাত ভেঙে দিতে আমি দুইবারও ভাবতাম না।
জায়ানের চোখে তখন শুধু রক্তের লালচে আগুন।
তো ভেঙেই দে।
ওহো কাম অন,,,এখন এসব ভাঙাভাঙিতে গেলে আমার অনেক সময় নষ্ট হবে। তুই বরং আমার বউ এর পা ধরে নে,তাহলেই সব লেটা চুকে যাবে।
আর ইউ ম্যাড।পাগল হয়ে গিয়েছিস জায়ান তুই।এ-সব পাগলামি দেখবি একদিন তোকে তোর লক্ষ্য উদ্দেশ্য শেষ করে ধ্বংসের পথে নামাবে।
জাস্ট শাট আপ!তোর কপাল ভালো আমি মেয়েদের গায়ে হাত দি না তা না হলে বা*লের তোর বন্ধুত্ব এখানেই মাটি চাপা দিয়ে, তোর শরীর থেকে হাত গুলো খুলে সেগুলোও মাটি চাপা দিয়ে দিতাম।
এবার নাদিয়া হঠাৎ এগিয়ে এসে এলেনাকে নিজের পেছনে টেনে নিয়ে জায়ানের সামনে দাঁড়ায়
জায়ান প্লিজ…মাথা ঠান্ডা কর। এখন এসব নিয়ে ঝামেলা করার টাইম আমাদের কাছে একদমই নেই। আমি যেটা বলতে এসেছি সেটা শুন।
ল’ ফার্মে চল। নিউজ দেখেছিস আজকের?
যাব তো বটেই,কিন্তু কিসের নিউজ?
নাদিয়ার কথা শেষ হতেই, সোফায় বসা এলেক্স হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ালো
হুয়াট হেপেন্ড,আর মার্কো কই।
নাদিয়া মাথা নেড়ে বলে,
মার্কোর কথা ছাড়, কালকের পার্টিতে ওভার খেয়ে টাল হয়ে পড়ে আছে দেখ গিয়ে। তোরা বরং আজকের নিউজটা দেখ।
এলেক্স তড়িঘড়ি করে টেবিল থেকে রিমোটটা হাতে তুলে নিলো টিভি অন করলো। আর স্ক্রিন ভরেই হঠাৎ ঝড়ের মতো ব্রেকিং নিউজ ভেসে উঠে,নিউজ প্রেজেন্টারের কণ্ঠে আতঙ্ক আর তীব্রতা মিশে,
ফ্রান্সের খাদ্যমন্ত্রী Lucien Dubois এর ছেলে Étienne Duboisএর বিভৎস ন*গ্ন মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল, প্যারিস শহরের উপকণ্ঠে একটি পুরোনো বন্ধ গ্যারেজ। নিহতের কপালে আগের মতোই স্পষ্ট করে লেখা—❝ Rapist❞ এর মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো এই খুনের পেছনে আছে এক রহস্যময় খুনি, যাকে সাধারণ মানুষ চিনে— ❝Black Mouse ❞নামে।
টিভি স্ক্রিন ভরে উঠলো ঘটনাস্থলের ফুটেজে, ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাঙা কাঁচ, দেয়ালে ছিটকে থাকা শুকিয়ে যাওয়া রক্ত, আর মাঝখানে কুঁজো হয়ে পড়ে থাকা এক যুবকের প্রাণহীন দেহ।
নিউজ প্রেজেন্টার গলা নামিয়ে বললেন,
খবর পাওয়া গেছে, নিহত Étienne এর বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে ধ*র্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। মামলার ডিফেন্স লইয়ার হওয়ার কথা ছিলো জায়ান খানের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি তখন হাসপাতালে কোমায় ছিলেন। সুস্থ হয়ে মামলার রায়ের আগেই ঘটে গেল Étienne Dubois এর ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ জানে না এই Black Mouse আসলে কে? কেমন দেখতে,? কিংবা কোথায় থাকে। একটার পর একটা হত্যাকাণ্ড তবুও ঘটনাস্থলে কোনো প্রমাণ ফেলে যায় না সে। পুলিশের নাগালের একেবারেই বাহিরে। অথচ, আশ্চর্যের ব্যাপার,ফ্রান্সের সাধারণ মানুষদের কাছে সে এক ধরনের অপ্রতিরোধ্য হিরো। কারণ, তার হাতে প্রাণ দেয়া প্রতিটি মানুষই ছিলো সমাজের কলঙ্ক,রেপিস্ট।
এলেক্স জায়ানের দিকে তাকাল।
এই শালা ঘুরে ফিরে আমাদের কেসগুলোতেই হাত দেয়,গত দুই বছর ধরে এই বেটার পেছনে স্পাই লাগিয়ে রেখেছি, তাও এক বিন্দু তথ্য পাইনি।শা*লার বেটা অনেক চালাক।
তবে জায়ানের মুখে অন্যরকম ভাব।সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে গভীর কিছু ভেবে চলেছে,ঠোঁটের কোণে টেনে আনে এক বাঁকা হাসি।
চল, ল ফার্মে।
যাব না। এলেনা নাদিয়াকে সরিয়ে হন হন করে রেগে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে যায়।
জায়ানঃ
রাসকেল। একে যেতে বলেছেই বা কে!
এলেক্সঃ
মার্কো?
উপরে থেকে টেনে নিয়ে আয়।বল জায়ান ডাকছে।
সন্ধ্যা।আকাশের গাঢ় নীলচে রঙ ক্রমশ মিশে যাচ্ছে অন্ধকারে। খ্রিষ্টান কালচারের দেশ হওয়ায় দূরে মসজিদ মিনার থেকে আজানের সুর ভেসে আসতে শুনা যায় না।আর না শুনা যায় সেই শহরের গলিপথের অচেনা শব্দ রিকশার ঘণ্টা, কোনো চায়ের দোকানের টুংটাং গ্লাসের শব্দ আবার মিলিয়ে যাওয়া মানুষের কথাবার্তা।এ শহর এ শহরের মানুষজন বরই ব্যাস্ত।
লিয়ানার রুমটা অদ্ভুত নীরবতায় ভরা। পর্দা টেনে রাখা জানালার ফাঁক গলে হালকা সোনালি আলো এসে পড়েছে বিছানার ওপর। লিয়ানা শুয়ে আছে একদম নির্জীবের মতো, নিস্তব্ধ ঘুমে আচ্ছন্ন। তার শ্বাসপ্রশ্বাস ধীর, মাঝে মাঝে বুকটা খুব আস্তে ওঠানামা করছে, যেন পৃথিবীর কোনো শব্দই তার কাছে পৌঁছায় না।আসলে লিয়ানা এমনিতেই ঘুমকাতুরে মেয়ে। সকালবেলা মায়ের ডাক ছাড়া কোনোদিনই বিছানা ছাড়তে পারেনি। কলেজ থেকে ফিরেই শুয়ে পড়তো, আর রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তো ।দিন-রাত জুড়েই যেন তাকে ঘিরে থাকে ঘুমঘুম আবেশ।কখনো কখোনো ক্লাসরুমেই বেঞ্চর উপর নাক ডেকে ঘুমিয়ে থাকতো।
কিন্তু আজকের দিনটা আলাদা।রাতে জায়ান তাকে খাইয়ে দিয়েছে ঘুমের ওষুধ।সকালের পর থেকে এখনও অবধি একবারও চোখ খোলেনি সে।
খাওয়া-দাওয়া? তার কোনো নামগন্ধ নেই। যেনো সময় থেমে আছে তার শরীরে, শুধু ঘুমের অন্ধকার একের পর এক ঢেউ হয়ে ভাসিয়ে নিচ্ছে তাকে।
মিসেস হান কয়েকবার এসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেছেন। নরম গলায় ডেকেছেন, হালকা করে নাড়িয়েছেনও। কিন্তু লিয়ানার শরীর থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।প্রতিবার ব্যর্থ হয়ে বাইরে চলে গেছেন তিনি।
এদিকে জায়ান সকাল থেকে বাড়িতেই নেই। কিন্তু অনুপস্থিত থেকেও যেন সবখানে ছায়া ফেলে রেখেছে।সারাদিনে বহুবার ফোন করেছে মিসেস হানের কাছে। প্রতিবার একই কথা—
আমার লিন উঠেছে?
না, এখনও ওঠেনি।
এভাবেই দিন ফুরিয়ে গেছে।রুমেট ভেতরে নীরবতা আর নিস্তব্ধতার মধ্যে ডুবে আছে লিয়ানার শরীর, বাইরে কিন্তু অন্য ছবি।
জায়ানের “ল ফার্ম “এখন উত্তপ্ত।
খাদ্যমন্ত্রীর ছেলের ইস্যুতে মিডিয়া, লোকজনের ভিড়, সাংবাদিকদের ক্যামেরা, ফোন কল,সব মিলে অস্থির এক পরিবেশ। প্রতিটা টেবিল ভর্তি ফাইল, কাগজপত্র ছড়ানো, মানুষ দৌড়ঝাঁপ করছে একেবিন থেকে ওকেবিন।সেখানে সবাই চরম ব্যস্ত, চারদিকে যেন এক ঝড় উঠেছে।নাদিয়া
এলেক্সদের অনেক আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো জায়ান।
কাল রাতের পার্টির পর থেকেই মার্কোর কোনো খোঁজ নেই,বাড়িতেও ফেরেনি সে। কে জানে কোথায় গিয়ে পড়ে আছে।
রাত ক্রমেই গভীর হচ্ছে।
জায়ান টেবিলের সামনে বসে কফির কাপ ঠোঁটে তুলল, এক চুমুক দিয়ে আবার নামিয়ে রাখলো। সামনে ছড়িয়ে থাকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের পাতায় চোখ বুলিয়ে যাচ্ছিলো।চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট, তবু ভেতরে যেনো কিছু ভেবে চলেছে গভীরভাবে।
হঠাৎ উঠে দাঁড়ায় সে। চেয়ারের পাশে রাখা নিজের খোলা ব্লেজারটা তুলে নিয়ে শার্টের ওপর গায়ে চাপাল।পিছন পিছন কয়েকজন গার্ড এগিয়ে আসছিলো। জায়ান হাতের ইশারায় থামিয়ে দিল তাদের।চারপাশে সারাক্ষণ এত এত দেহরক্ষী ঘুরঘুর করা,সে একদমই পছন্দ করে না।
নিজেকে কিভাবে রক্ষা করতে হয়, সেটা জায়ান খুব ভালো করেই জানে।
রাত প্রায় দশটা।
স্যাডো এম্পায়ারের বাইরে এসে থামলো জায়ানের গাড়ি। দরজা খুলে নামতেই বড় বড় পদক্ষেপে ভেতরের দিকে এগিয়ে গেলো সে।
মিসেস হান তখন ডাইনিং টেবিল গুছাচ্ছিলেন। জায়ানকে ঢুকতে দেখে খানিকটা অবাক হলেন।কারণ তিনি তো এই বাড়িতে পাঁচ-ছয় বছর ধরে কাজ করছেন, তবুও একবারও দেখেননি জায়ানকে এত রাতে বাড়ি ফিরতে।যেদিন ওর ওপর কাজের চাপ বেশি থাকতো, সেদিন ” ল ফার্মেই”রাত কাটাতো। বাড়ি ফিরতই না।
কিন্তু আজ ফিরল,আসবেই বা না কেন? এখন তো ঘরে বউ আছে।
মিসেস হান ঠোঁটের কোণে একটুখানি মুচকি হাসলেন।
জায়ান মিসেস হানের দিকে তাকিয়ে বলল,
একটু পর আমার রুমে খাবারটা দিয়ে আসবেন।
মিসেস হান মাথা নাড়লেন সম্মতিতে।
উপরে এসে নিজের রুমের দরজা খুলতেই পুরো রুম অন্ধকার।
পর্দাগুলো ঠিক যেমন করে টেনে রেখেগিয়েছিলো সে তেমনি আছে, তবে বারান্দার পর্দাগুলো বাতাসে দুলছে। ফাঁক গলে বাইরে পূর্ণিমার চাঁদের আলো এসে সোজা তার বেডের ওপরে পড়েছে।সেই আলো গ্রাস করে রেখেছে লিয়ানার পুরো শরীর।
তার গায়ে রয়েছে সেই লেডিস শার্ট, যা জায়ানই কাল রাতে ওকে পরিয়ে দিয়েছিল।রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙতে ভাঙতে বাথরুমের দরজা খুললো। জায়ান। ভিজে চুল থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে, হাতে ধরা তোয়ালে দিয়ে আস্তে আস্তে মুছছে সে। গায়ে কেবল ট্রাউজার, খালি বুকের ওপর দিয়ে জলের ফোঁটাগুলো গড়িয়ে নেমে আসছে বুকের ভাঁজ বেয়ে।শাওয়ার শেষ করে ভারী পা ফেলে সে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো আয়নার সামনে।কিছুক্ষণ নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর চোখ ধীরে ধীরে সরে গেলো বিছানার দিকে। গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকা মেয়েটার শরীরটাকে চাঁদের আলো যেন আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। ঘুমের মধ্যে এত নড়াচড়া করেছে যে জামাটা পুরো এলোমেলো, বোতামগুলো অর্ধেক খোলা, নিচে পড়ে থাকা স্কার্টও উঠে গিয়ে উন্মুক্ত করে দিয়েছে তার পা।
জায়ানের ঠোঁটে দুষ্টু এক হাসি খেলে গেলো। নিচু স্বরে ফিসফিস করে বললো সে—
বেচারি যখন ঘুম ভেঙে দেখবে, পড়নের জামাটা আমি নিজের হাতে পাল্টিয়ে দিয়েছি,তখন কী গালমন্দই না করবে! ইশশ, বউয়ের মুখে গালি শোনার মধ্যেও আলাদা এক মজা আছে।
কথাগুলো বলতেই যেন নিজের ভেতরেই হেসে উঠল সে। তোয়ালেটা টেবিলের ওপর ছুঁড়ে রেখে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো। তার চোখ থেমে রইলো লিয়ানার ওপর। শ্বাসপ্রশ্বাসের হালকা ওঠানামা করা লিয়ানার বুক, চুল কপালের ওপর এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে পড়া, আর চাঁদের আলোয় আধখোলা শরীর সবকিছু মিলিয়ে দৃশ্যটা যেন তাকে আরও কাছে ডাকছিলো।এক মুহূর্তও না থেমে জায়ান আস্তে আস্তে ভারী পায়ে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে। হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে বিছানার পাশে।
লিয়ানার অর্ধউন্মুক্ত উদরের দিকে কিছুক্ষণ দৃষ্টিপাত ফেলে রাখে সে।তারপর জিব্ দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নেয়,তারপর নিজের মুখ দিয়েই লিয়ানার উদর পুরোটা উন্মুক্ত করে দেয়।যার ফলে লিয়ানার উদরে মাঝে থাকা মধ্যমণি ভাসমান হয়ে উঠে ,আর জায়ান তাতে আলতো করে চুমু খায়।তারপর জোরে একটা কামুড় বসিয়ে দেয়। জায়ানের দাতের স্পর্শ পেতেই লিয়ানার শরীর এ হালকা কাপন সৃষ্টি হয়,সে নিজের হাত রাখে উদরের উপর,লিয়ানার হাত রাখতেই জায়ান মাথা সরিয়ে নেয়।কিন্তুু জায়ান নাছোড়বান্দা ততক্ষণে তার ভিতরে থাকা নেশা তীব্র হতে থাকে।তার বউ কেন এভাবে শুয়ে থাকতে হবে সে কি জানেনা তাকে এভাবে দেখলে জায়ানের মাথা আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যায়।
জায়ানের নেশালো দৃষ্টি এবার লিয়ানার শার্টের খোলা বোতাম এর দিকে যায়।জায়ান উঠে লিয়ানার গলায় আলতো করে হাত রেখে আরেক হাত এ শার্টের বোতাম খুলতে যাবে তখনি লিয়ানা চোখ খুলে। তবে ঘুমের ঘোরে নিজের উপরে জায়ানকে এভাবে দেখেই হঠাৎ ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে।
ওমাগো!কেএএএএএএএএএএ,ভূত নাকি! হায় আল্লাহ বাচাও আমাকে।
লিয়ানাকে এভাবে চিৎকারে করতে দেখেই জায়ান লিয়ানার মুখ জোরে চেপে ধরে ফেলে।
আরেএএএএএ,বেয়াদব চুপ!আমি ভুত হতে যাবো কেন?? Stupid মেয়ে।
আ,,,আপনি……..
ইয়েসসস আমি।এভাবে এতো রাতে চিৎকার দিয়ে উঠেছিস যে,মানুষজন ভাব্বে আমি কি না কি করে ফেলেছি তোর সাথে।
করে ফেলেছেন মানে??
লিয়ানা দু হাত দিয়ে নিজের বুক চেপে ধরে তারপর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নিজেকে ভালো ভাবে স্কেন করে নেয়,নিজের জামাকাপড় এরকম এলোমেলো অবস্থায় দেখে,জায়ানের দিকে তাকায়,
ছিহহহ! ছি!ছি! ছিহরেএএএএ,আপনি এভাবে আমার ঘুমোনোর সুযোগ নিতে পারলেন??
না বউ একদমি না!(লিয়ানার মাথায় হাত রেখে)।
মিথ্যে বলবেন না একদমি।!
মহামুশকিল তো। আমি কেন নিজের বিয়ে করা বউয়ের সুযোগ নিতে যাব??আমার যা দরকার আমি তা নিতে যাচ্ছিলাম,এখানে সুযোগ নেয়ার কি আছে বেবি।
আস্ত একটা অসভ্য লোক আপনি।
আমি অসভ্য হলে তুই কি??ভুলে গেলি কাল রাতের কথা??
কাল রাত মানে??
জায়ান ঠোঁট কামড়িয়ে লিয়ানার দিকে ঝুকে,,,,
ইয়েসসস সুইটহার্ট কাল রাতে আমাদের মধ্যে অনেক দুষ্টু দুষ্ট রোমান্স হয়ে গিয়েছে।
জায়ানের এমন কথা শুনে লিয়ানার কান গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে যায়,দাঁতে দাঁত পিষে নিজের শার্টটা আরও জোরে চেপে ধরে তবে নিজের পরনে শার্ট দেখেই চোখ কপালে উঠে যায় তার,নাক ছিটকিয়ে বলে,
আমার জামা কে বদলালো??
জায়ান নিজের কপালের সামনের পরে থাকা চুলগুলো বেক ব্রাশ করতে করতে,
জি মহারানী এটাও আপনার প্রাণপ্রিয় স্বামী করেছে।
কিহহহহহহহহহহ!আপনাকে যতোটা অসভ্য ভাবতাম আপনি তার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে।
লিয়ানা ঠোঁট উল্টিয়ে আবার বলে,
আ,আপনি কি আমার সব দেখে নিয়েছেন??
না তো একদমি না,চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম।
স,সত্যি??
না একটু দেখেছি।….(দুষ্ট হেসে)
ইশশশশশশশশশ!……..লিয়ানা এইবার বেডের উপরে থাকা বালিশ হাতে নিয়ে জায়ানকে মারতে শুরু করে।
অসভ্য, ইতর,লোক,ইশশশশশ!আমার এতো লজ্জা লাগছে মন চাচ্ছে মাটি খুঁড়ে তার নিচে ডুকে পড়তে।
কি দূরদিন এলো আমার, শেষে কিনা বউয়ের হাতে মার খেতে হচ্ছে।
মানুষ মার খায় আমার হাতে, আর আমি মার খেয়ে যাচ্ছি বউয়ের হাতে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টও বউয়ের হাতে থাপ্পর খেয়েছিলেন,আর আমি খাচ্ছি বালিশের বারি।এক কাজ কর মাটিটা বরং আমার জন্যেই খুড় তাহলে তাতে আমিই ডুকে পরি।মিডিয়ার লোকজন যদি জানতে পারে, আমার সঙ্গে কী ঘটল, তারা তো রীতিমতো হাসাহাসি শুরু করে দিবে।
লিয়ানা কিছু না বলেই আরও জোরে জোরে জায়ানকে মারতে থাকে।মারতে মারতে জায়ানকে বিছানায় শুইয়ে দেয়,তারপর জায়ানের পেটের উপরেই বসে পড়ে বালিশ দিয়ে বারি দিতে যাবেই তখনি জায়ান বালিশ ধরে ফেলে,লিয়ানাও বুঝতে পেরে উঠতে যাবে,কিন্তুু জায়ান লিয়ানার হাত ধরে কাছে টেনে আনে,,,,,
বল!কে কাছে আসে?বার বার!
লিয়ানার বুক কেঁপে উঠে।হার্টবিট ফা্সট চলতে শুরু করে,,,,তার চোখ পড়ে জায়ানের উন্মুক্ত বুকে,,,,,যেখানে লাল লাল ছুপ ছুপ দাগ কামড়ের।
তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২১
কি দেখছিস!এইগুলো তো তুই ই দিয়েছিস।এখন আমিও একটু ডং করি??ওমাগো!আহহহহ ব্যাথা পেয়েছি!বলি??…….আমার বুক কেটে যে তোর নাম লিখে দিলি আমিও লিখে দি তোকে ঠিক সেখানেই??
লিয়ানা লজ্জায় চোখ জোড়া বন্ধ করে জায়ানের বুকে মুখ গুজে নিতেই,,,,
দরজায় ঠক!ঠক! শব্দ ভেসে আসে।
