তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৩

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৩
ভূমিকা তালুকদার

রাতটা তেমন গভীর না তবে সারাদিন কাজের প্রেসারে নাদিয়া আজ এসেই শুয়ে পড়েছিলো, শরীরটা বড্ড ক্লান্ত। চোখের উপর স্লিপমাস্ক, নরম কাপড়ের মতো, যেটা থাকলে চোখে আলো প্রবেশ করতে পারে না। কারণ তার ঘুম খুবই পাতলা,একটু আলো পড়লেই ঘুম উড়ে যায়। পড়নের শার্টটা পর্যন্ত ঠিকমতো চেঞ্জ না করেই শুয়ে পড়েছিল।
গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগেই হঠাৎ তার ফোনে মেসেজ নোটিফিকেশন এলো।
শব্দটা কানে যেতেই বিরক্ত ভঙ্গিতে শরীরটা একটু নাড়ালো, বিরক্তি ঝরে পড়লো মুখে। কিন্তু আবারো মেসেজ আসতেই স্লিপমাস্কটা চোখ থেকে সরিয়ে কপালে ঠেলে দিলো, ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে একেবারে সাইলেন্ট করে ঘুমাবে ভেবেছিলো।

কিন্তু স্ক্রিনে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে গেলো।
অপরিচিত নাম্বার,
মেসেজে লেখা,
বাসার নিচে এসো।
নাদিয়া চমকালো। এতো রাতে কে মেসেজ পাঠালো তাকে? বাসার নিচে মানে কী! কোনো অপরিচিত মানুষ তো এই Shadow Empire এ অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে না । চারপাশে এতো হাই সিকিউরিটি। তাহলে?
কিন্তু নাদিয়া ভীতো হলো না। হবে-ই বা কেন? এসব তার কাছে অচেনা না। তাদের কি শত্রু কম আছে নাকি? চারপাশে পিঁপড়ের মতো ঘুরে বেড়ায় শত্রুপক্ষের লোক।
নিজের শার্টের ওপরের দুটো বোতাম লাগাতে লাগাতে বালিশের পাশে রাখা বন্দুকটা হাতে তুলে নিলো। সরাসরি দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।জায়ান বা অন্য কাউকে কিছু বললো না। ভেবেছিলো যদি গণ্ডগোল মনে হয়, তবে ইয়ারপিসে সিগন্যাল পাঠিয়ে দেবে।
এখন আপাতত নিজেই গিয়ে দেখে আসবে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কে অপেক্ষা করছে এই রাতে, বাসার নিচে।তবে যেতে যেতে নাদিয়ার মনে সন্দেহ দানা বাঁধল,
কোনো ষড়যন্ত্রকারী হলে এভাবে তাকে তার পার্সোনাল ফোনে মেসেজ পাঠাবে কেন? ব্যাপারটা বড্ড অদ্ভুত, অস্বাভাবিক, আর সন্দেহজনক।
এভাবেই নানা ভাবনার ভিড়ে ডুবে থাকতে থাকতে নাদিয়া এসে দাঁড়ালো এম্পায়ার এর গার্ডেনের সামনে।অন্ধকারে গাছগুলোর ছায়া যেন আরও রহস্যময় লাগছিলো।
হঠাৎই ফোনে আবার নোটিফিকেশন বেজে উঠলো।
স্ক্রিনে চোখ যেতেই এবার পড়লো,
চলে এসেছো।
যা বলছি, ভালোভাবে শোনো।
না মানলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
নাদিয়ার ঠোঁট বেঁকে গেল, চোখ সরু হলো।

হুমকি? ফাজলামো পেয়েছে নাকি এটা আবার কোন শালা? এত রাতে আমার সাথে এই কি খেলা খেলতে চাইছে? আচ্ছা,আমিও দেখতে চাই, দেখা যাক কে।
তারপর ঠাণ্ডা নিশ্বাস ফেলে, হাতে ধরা বন্দুকটা আরও শক্ত করে ধরে।
গার্ডেনের অন্ধকার থেকে বের হয়ে সরাসরি গাড়িতে উঠে বসলো সে।
ইঞ্জিন অন করার সাথে সাথে হেডলাইট জ্বলে উঠতেই, তার চোখে পড়লো লোকটা দেওয়া লোকেশন।স্টিয়ারিং শক্ত করে ধরে গাড়ির স্পিড ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল,এবং মুহূর্তের মধ্যেই নাদিয়া ছুটে চলল অজানা ঠিকানার পথে।লোকটা বড্ড চালাক।নিস্তব্ধ, শুনশান ফরাসি রাস্তার কোণে নাদিয়াকে এনে দাঁড় করিয়েছে।চারপাশে নেই কোনো কাকের ডাক, নেই রাতজাগা কোনো পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দও।একেবারে গা শিহরিত হওয়ার মতো জায়গায়। অতল নিস্তব্ধতা যেন কানে সিসকার মতো ঢুকছিলো
কাউকে দেখতে না পেয়ে নাদিয়া নিজের হাতে ধরা বন্দুকটা একে একে এপাশ-ওপাশ তাক করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো।ঠোঁট শক্ত হয়ে এলো, চোখে তীক্ষ্ণ আগুন জ্বলল।

কী রে? সাহস থাকলে সামনে আয়!
এভাবে চোরের মতো লুকিয়ে থেকে কী লাভ?
তাও কিনা একটা নারীর কাছে।
কথাগুলো বলতে বলতে নাদিয়া পায়চারির মতো ঘুরতে ঘুরতে চারপাশ দেখতে লাগলো।ফোনের লোকেশন আগেই অন করে রেখেছিল।হঠাৎই এক শীতল হাওয়া ঝাপটা দিয়ে বয়ে গেলো তার শরীর বেয়ে।।নাদিয়ার গা কেঁপে উঠলো, যেন হাড়ের ভেতরে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে যাচ্ছে।তার শরীর অনিয়ন্ত্রিতভাবে হালকা কাঁপুনি খেলো।
আর সেই মুহূর্তেই,
পেছন দিক থেকে এক শক্তপোক্ত হাত ঝাঁপিয়ে পড়ে তার গলা চেপে ধরলো!
নাদিয়ার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।কিন্তু নাদিয়ার ফাইটিং স্কিল একদম পাকা। নিজের হাতের কনুই পেছনে ঠেলে দিলো, পুরো শক্তিতে।
ধাম!

পেছনে থাকা লোকটার পেটে সরাসরি আঘাত লাগতেই লোকটা গোঁ গোঁ শব্দ করে দুলে উঠলো।
নাদিয়া আর দেরি না করেই,একটা ঝটকা লাথি মেরে লোকটাকে সোজা রাস্তায় ফেলে দিলো।লোকটা মাটিতে গড়িয়ে পড়লো।তার পুরো শরীর ঢাকা লম্বা ওভারকোটে, মুখটা পুরোটা ঢাকা,হাতে কালো চামড়ার গ্লাভস।
মুখটাএকটুও দেখা যাচ্ছিল না,নাদিয়া বন্দুকটা সোজা তাক করে লোকটার দিকে।ট্রিগারে চাপ দিতে যাবে, তার আগেই,বিদ্যুৎগতিতে লোকটা সামনে এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো!এক হাতে বন্দুকের নল চেপে ধরলো, অন্য হাতে নাদিয়ার কবজি মুচড়ে ধরলো।নাদিয়া সমস্ত শক্তি দিয়ে টানাটানি করতে লাগল।তীক্ষ্ণ শ্বাসের শব্দে চারপাশের নিস্তব্ধতা ভাঙতে লাগলোকিন্তু লোকটা আরও বীভৎস গতিতে সামনে ঝুঁকে পড়লো।তার কালো গ্লাভস পরা হাত দিয়ে বের করলো একটা ধারালো চাকু,
এক ঝটকায় সেটা সোজা নাদিয়ার কোমরের পাশে ঢুকিয়ে দিলো!
আআআহহহহ!

চিৎকার ছিঁড়ে বেরোলো নাদিয়ার মুখ থেকে।তার চোখ উলটে গেলো, শরীর কেঁপে উঠলো, তারপর ধপ করে রাস্তায় বসে পড়লো।হাত দিয়ে ক্ষত জায়গাটা চেপে ধরতেই আঙুলের ফাঁক বেয়ে গরম র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো।নিস্তব্ধ রাতের অন্ধকারে সেই রক্তের ফোঁটা যেন অস্বাভাবিক শব্দে মাটিতে পড়ছিলো।লোকটা এক মুহূর্তের জন্য নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল,
এক পা,এক পা,টলতে টলতে এগোলো নাদিয়া দিকে।
নাদিয়া পেট চেপে ধরে পিছাতে লাগলো।র*ক্ত ঝরে ঝরে তার শরীর একেবারে নিস্তেজ হয়ে আসছিলো।
মনে হচ্ছিল,এই তো, এখানেই শেষ!
লোকটা এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে তার সামনে।
চাকুর ধারালো ফলটা অন্ধকারে ঝিলিক দিয়ে উঠে, আর সেটা একেবারে নাদিয়ার গলার পাশে চেপে ধরে।
শ্শশশ….. ভালো লাগছে??

ফিসফিস শব্দে লোকটার কণ্ঠ যেনো বিষের মতো শোনালো।
চাকুর ধার কেটে দিলো নাদিয়ার গলার সাইডের চা*মড়া।
চা*মড়ার দুই টুকরো হয়ে ফেটে গেলো, আর সেখান থেকে গরম গরম র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো, যেন অন্ধকার রাতটা রক্তে রাঙিয়ে তুলবে।
ওই লড়াইয়ের ভেতরেই নাদিয়ার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়েছিলো রাস্তায়। সে টের পেলো, তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে,চোখ দুটো ভারী হয়ে বন্ধ হয়ে আসছে।
কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে,

লোকটা হঠাৎ নিজের মুখের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে নিলো।
আড়ালের মানুষটা সামনে আসতেই নাদিয়ার নিস্তেজ চোখ বড় বড় হয়ে,
মার্শাল
ভাঙা কণ্ঠে নাম উচ্চারণ করলো সে।
হ্যাঁ, এ-ই সেই প্রাক্তন দানব!যার ফাঁদে পা দিতে গিয়েও বেঁচে যায় সে।
যাকে জেলে পুরেছিলো নাদিয়া নিজে।কিন্তু এই শয়তান জেল থেকে বের হলো কীভাবে?
মার্শাল ঠাণ্ডা হাসি হেসে ঝুঁকে এলো,
নূরিসোনা,ভয় পাচ্ছো? তোমায় মারতে আসিনি তো! রিল্যাক্স,শুধু একটু আদর করতে এসেছি।
সে হাত বাড়াতেই নাদিয়া সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে তার মুখে থুথু ছুঁড়ে মারলো।
তোর ওই জঘন্য মুখে আমার নাম নিবি না।
কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করলো নাদিয়া।

মার্শাল থুতু মুছে নিলো ধীরে নিজ হাত দিয়ে আর হাতটা নিজের ওভারকোটে মুছে নেয়, তারপর নাদিয়ার চুল শক্ত করে চেপে ধরে, চোখ দুটো লাল, গর্জে উঠে,
তুই ভেবেছিস তুই আমায় জেলে পাঠাবি আর আমি তোকে ছেড়ে দেবো? আজ তোকে নিয়ে টি- টুয়েন্টি ম্যাচ খেলবো আমি!
হঠাৎই!
পেছন থেকে প্রচণ্ড আলো এসে পড়লো তাদের ওপর।একটা ব্ল্যাক মার্সিডিজের হেডলাইট এর আলো মুখে পড়লো মার্শালের।
নিস্তব্ধ রাত ভেদ করে পুরুষালি কণ্ঠ গর্জে উঠল,
ওকে! আমার সঙ্গে খেলবি টি-টুয়েন্টি??। তুই যে দলে খেলছিস, আমি সেই দলের কোচ। কিভাবে খেলতে হয়, সেটা আমি শেখাব তোকে।
মার্শাল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পেছন ফিরলো।

আলোর বিপরীতে দেখা গেল এক লম্বা ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।
লম্বা কালো লেদার জ্যাকেট পরে, প্রায় ছ’ফুট উঁচু শরীর।মুখটা তখনও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না।কিন্তু সেই কণ্ঠস্বর,নাদিয়া চোখ আধখোলা রেখেই চিনে ফেললো।তার ঠোঁটে ক্ষীণ কাঁপুনি, নিঃশ্বাসে র*ক্ত মিশে যাচ্ছে।
তবু নিস্তেজ চোখে তাকিয়ে রইল সেই ছায়ার দিকে,
কারণ সে জানে,

এই মুহূর্তে মৃত্যু আর বেঁচে থাকার মাঝে যে দাঁড়িয়ে আছে, সেই এক জনই!
লেদার জ্যাকেট পরা লোকটা সামনে আসতেই নাদিয়ার মুখে ভয় আর স্বস্তির মিশ্র ছাপ ফুটে উঠল,এ যে আর কেউ নয়, মার্কো! নাদিয়া অর্ধভুজা ঝাপসা হয়ে আসা চোখে তাকিয়ে রইলো,হ্যা, এটাই মার্কো। লম্বা চওড়া, চুলগুলো কাঁধ পর্যন্ত নেমে আছে, থুতনির মাঝে কাটা দাগ,শ্যামসুন্দর পুরুষ।
মার্শাল উঠে মার্কোকে আঘাত করতে যাবে, ঠিক সেই সময় মার্কো টানা চারটা গুলি করলো মার্শালের পায়ে। সাথে সাথেই মার্শাল রাস্তায় পড়ে গেলো। তবুও তার তেজ কমলো না, আবার চাকু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। কিন্তু মার্কো নির্ভুল হাতে ছুরিটা ধরে উল্টো ঘুরিয়ে মার্শালের গলার ভেতর ঢুকিয়ে দিলো। ছুরিটা গলার এপাশ ভেদ করে ওপাশে দৃশ্যমান হলো।

মার্কোর চোখমুখে কোনো রাগ নেই, নেই উত্তেজনা,একেবারে শীতল মস্তিষ্কে লাথি মেরে ফেলে দিলো মার্শালকে। মার্শালের গলা থেকে ছিটকে বেরোনো র*ক্ত নাদিয়ার গলা-শরীর ভিজিয়ে দিলো।মার্কো পকেট থেকে লম্বা একটা সাদা কাপড় বের করে নাদিয়ার দিকে এগিয়ে দিলো।
ধর, নিজের কোমরে শক্ত করে বেঁধে নে। আসেপাশে কোনো হাসপাতাল নেই যে তোকে নিয়ে যাবো। কাপড়টা বেঁধে নিলে রক্তঝরা কমবে।
নাদিয়া ঝাপসা চোখে মার্কোর দিকে তাকিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেললো।
শালা কেমন ইতর! নিজের মৃতপ্রায় বেস্টির র*ক্ত বন্ধ করার জন্য তাকেই বলছে! কেন ভাই, তোর কি নিজে হাতে বেঁধে দিতে কষ্ট হয়?(মনে মনে ফিসফিস করলো নাদিয়া)
হা করে কী দেখছিস?
নাদিয়া কিছু বললো না। ওর হাতে রুমালটা নেবার মতো শক্তি নেই। মার্কো বুঝতে পারলো, হাঁটু গেড়ে বসলো নাদিয়ার সামনে।

শার্টটা একটু উপরে তুল।
নাদিয়া একটুও নড়লো না।আর কিছু না ভেবে মার্কো নাদিয়ার শার্টটা একটু উপরে তুলে তাতে কাপড়টা হালকা শক্ত করে বেঁধে দিলো,নাদিয়ার শরীর কেঁপে উঠলো,মার্কো উঠে দাঁড়িয়েই বললো,
গাড়িতে উঠে বস।
নাদিয়া এবার চুপ থাকতে পারলো না। সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে তার। কথা বলার শক্তি না থাকলেও তেজ ভরা গলায় বলে উঠলো,
আমি কীভাবে যাবো?
কেন? হেঁটে হেঁটে, হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দিয়ে আয়, সিম্পল।
নাদিয়ার মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে। ব্যাপারটা যেন দুধ দিয়ে কাল সাপ পোষার মতো। কী রকম বন্ধু বানিয়েছে, তা তার জানা নেই। তবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, মার্কোর কাছ থেকে এমনটাই আশা করা যায়।এর বেশি কিছু না।

আমি সত্যি এই হাঁটতে পারবো না।
আমাকে কি ফিল্মের হিরো ভেবেছিস? যে তোকে কোলে তুলে নিয়ে যাবো? ইডিয়েট।এত দুর্বল মেয়ে আমার টিমে আসলো কোথা থেকে।আবার পাকনামি করে কাউকে ইনফর্ম করা ছাড়াই চলে এসেছে।
শাট আপ মার্কো! তুই যা,আমি এখানে বসেই মরবো।
মরার হলে আরেকটু আগেই মরে যেতিস।
কথাটা বলেই মার্কো নাদিয়াকে কাঁধে তুলে নিলো। নাদিয়ার ঠোঁটে হালকা একটুকরো ব্যঙ্গের হাসি ফুটে উঠলো, সে আলতো করে মার্কোর গলা ধরে রাখলো,নাদিয়াকে গাড়িতে বসিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে মার্কো গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।তবে নাদিয়ার চোখ পড়ে গাড়ির স্টিয়ারিং-এর দিকে বুঝতে তার একটুও দেরি হলো না,মার্কো গাড়িটা ফুল স্পিডে চালিয়ে এসেছে তার কাছে।

নাদিয়া সব বুঝলো, কিছুই বললো না একবার মার্কোর দিকে তাকালো, তারপর আবার মুখ ঘুরিয়ে দিলো অন্ধকার রাস্তাটার দিকে।
প্রাক্তন কে মেরে ফেলেছি তাই খুব কষ্ট হচ্ছে নাকি তোর??
একদমি না।আফসোস হচ্ছে। নিজের হাতে মারতে পারিনি সেকারণে।
মার্কো শুধু একটু বাঁকা হাসলো।
গাড়িটা অচেনা রাস্তায় ঢুকে গেলো ধীরে ধীরে।

দরজায় ঠক!ঠক আওয়াজ।
শব্দটা কানে যেতেই জায়ান ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত স্বরে বলে,
আমার রোমান্স নষ্ট করার জন্যে এম্পায়ারের লোকগুলা সেরা রে।
লিয়ানা জায়ানের ওপর থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। বাইরে কেউ নেই, শুধু খাবারের ট্রলি রাখা। লিয়ানার বুঝতে দেরি হলো না, মিসেস হান এসেই খাবার দিয়ে আবার চলে গিয়েছেন।সে খাবারটা হাতে নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকে পড়লো।
জায়ান লিয়ানার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
এখানে বস, সারাদিন তো না খেয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলি।
লিয়ানা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
আপনি খেয়েছেন?
জায়ান মাথা নাড়লো,

না।
কেন?
তোর খাওয়া হয়নি তাই।
লিয়ানার ঠোঁটে একচিলতে হাসি খেলে গেলো। সে মজা করে জিজ্ঞেস করলো
উফফফ!এতো ভালোবাসেন আমায়? আমি খাইনি বলে আপনিও খাননি?
জায়ান গম্ভীর গলায় জবাব দিলো,
আমি কবে বললাম ভালোবাসি তাই? খেতে মন চায়নি তাই খাইনি। ব্যস।
জায়ানের এমন কথা শুনে লিয়ানার হাসিমাখা মুখটা আচমকাই ভ্যাপসা আমসত্ত্বের মতো বিগড়ে গেলো। সে গোমড়া মুখে,
খাবো না আমি। আপনি খান, যত্তসব।
বলে সে উঠে যেতে লাগলো। কিন্তু জায়ান তার হাত শক্ত করে ধরে আবার বিছানায় বসিয়ে দিলো।
তারপর প্লেটটা হাতে নিয়ে খাবার তুলে লিয়ানার মুখের সামনে ধরলো।
নে, হাঁ কর।

লিয়ানা হতভম্ব। সে ঠিক দেখছে তো? পিটপিট করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। বিশ্বাস করাই মুশকিল, জায়ান নাকি তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে চাইছে!লিয়ানা নিজের হাতে জোরে একটা চিমটি কেটে নিলো। যেনো সে স্বপ্নে নয়, বাস্তবেই বসে আছে। বুকের ভেতরটা হঠাৎই আবেগে ভরে উঠলো তার। বাড়িতে থাকাকালীন যখন খাবার খেতে চাইতো না, তখন জায়ানের মা মানে তার বড় আম্মু, নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন। নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখতেন। সেই বড় আম্মুর মতোই আজ হুবহু খাইয়ে দিচ্ছে জায়ান!এক দৃষ্টিতে লিয়ানা তাকিয়ে রইলো জায়ানের দিকে। দেখতে সবার থেকে আলাদা হলেও গায়ের রংটা তার মায়ের মতোই ফর্সা, আর মুখে মায়ের মতোই সেই বাদামি তিল, তবে বড় আম্মুরটা চোখের নিচে,আর জায়ানেরটা। ঠোঁটের নিচে।লিয়ানা খাবারটা মুখে নিয়ে এক দমে সেই স্মৃতি আর বর্তমানের মিল খুঁজে পেয়ে অচল হয়ে তাকিয়েই রইলো,লিয়ানাকে এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে জায়ান হাত দিয়ে তুরি মেরে তার দৃষ্টি ভাঙলো।

এভাবে হাঁ করে কি দেখছিস আমার? আজকে কি বেশি হট লাগছে নাকি আমায়?
লিয়ানা ঠোঁট বাঁকিয়ে হালকা কটাক্ষ ছুঁড়ে দিলো,
এহহ্, আসছে নিজেই নিজের প্রশংসা করতে,মনে রাখবেন, নিজে যারে ভালো বলে ভালো সে নয়। লোকে যারে ভালো বলে,ভালো সে হয়।
জায়ান মুচকি হেসে গম্ভীর গলায় জবাব দিলো,
তাই নাকি? আমি ভালো না? খারাপ কোন দিক দিয়ে ? তোর মুখ দিয়েই বল?,তুই যা বলবি তাই মানবো। লোকজনের কথা কানে নেই না আমি। কিন্তু তুই যা বলবি, সেটাই আমার কাছে সত্যি।
লিয়ানা আড়চোখে তাকয় জায়ানের দিকে। জায়ানের উ*ন্মুক্ত বুক,ভেজা চুল, তার গম্ভীর দৃষ্টি, তার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি অদ্ভুত আকর্ষণীয়। একেবারে সিনেমার নায়কের মতো।আসলে সে তো অনেক আগেই জায়ানের প্রতি হার মেনেছে।ফ্রান্সে থাকা অবস্থায় জায়ান কখনোই ফোন করতো না বাড়িতে, এক কথায় কাউকেই না। শুধু তার বড় মা সারাক্ষণ ফোন দিতেন, আর জায়ান বছরে হাতে গোনা এক-দু’বার কথা বলতো উর্ধে তিন-চারবার। তাও খুব সংক্ষেপে। লিয়ানার সঙ্গে তো কোনো দিনই কথা হয়নি । এমনকি কখনো জানতেও চায়নি, সে দেখতে কেমন হলো, বড় কেমন হয়েছে।

কিন্তু লিয়ানা স্কুলে পড়া বয়স থেকেই জায়ান কল ধরেছে শুনলেই ছুটে আসতো তাকে দেখতে। ভিডিও কলের সামনে না এলেও চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে জায়ানকে দেখতো। বয়সে এত বড়, তবু কেন যে এত ভালো লাগতো! ছোটবেলায় ভয় পেলেও যৌবনে এসে সেই ভয় হারিয়ে গিয়েছিলো।জায়ান বাড়িতে থাকার কোনো কিছু তার তেমন মনেও পড়ে না,এমনিতেও ভুলো মন।আবার ছোটোও ছিলো।শুধু মনে আছে জায়ানের বিদেশ চলে যাওয়ার দিনটার কথা।তবে সে কথা নাহয় থাক।

জায়ানকে কল এ যতবারই দেখতো আর ভাবতো উফফ্ এত সুন্দর ফিগার, এত হ্যান্ডসাম, এত ড্যাশিং! ফোনের ওপাশে দেখেই হৃদয় কেঁপে উঠতো। সামনাসামনি হলে কি হবে ভাবলেই গা শিরশির করতো। যতবার দেখতো, ততবারই ক্রাশ খেতো।মাঝে মাঝে মন খারাপ হতো এত সুন্দর একজন পুরুষ, নিশ্চয়ই অগণিত গার্লফ্রেন্ড আছে তার। থাকবেই বা না কেন! তখন মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করতো,
এমন একজন ড্যাশিং মানুষ যেনো আমার কপালেও জোটে।
তবে খোদা তার দোয়া একটু বেশি কবুল করে নিয়েছেন। জায়ানের মতো নয় বরং জায়ানকেই নিয়তি জামাই বানিয়ে তার জীবনে বেঁধে দিয়েছে।

তার এই ছুট্টো মনে হাজারো প্রশ্নের দানা বেঁধে আছে জায়ানকে নিয়ে।
কেন তিনি তাকে বিয়ে করলেন।হঠাৎ করে দেশে এসে তার সাথে এমন আচরণ কেন করলেন।কেমন অদ্ভুত। মাইশা, আরিশা, রিহানদের সাথে তো একটু-আধটু হলেও বলতেন,কিন্তুু তার সাথে কখনো একবারের জন্যও কথা বলা দূরের কথা, দেখতেই চাননি তিনি,তাকে বিয়ে করার কোনো কারণ আজও পায়নি সে।এতো বড় মাপের মানুষ চাইলে কি মেয়ের অভাব পড়তো? অবশ্যই না,তার এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে এত বড় বড় প্রশ্নের উত্তর অজানা, জায়ানকে বলেও লাভ হবে না, তিনি এসবের উত্তর তাকে কখনোই দেবেন না,দু’চারটা চড় বসিয়ে দিতে পারেন।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই লিয়ানার মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ে,

আচ্ছা জায়ান ভাই
জায়ান খাবার শেষ করে পানি মুখে নিতেই “ভাই” ডাক শুনে পানিটা খেতে গিয়ে সাথে কাশতে শুরু করে,লিয়ানা থতমতো খেয়ে জায়ানের দিকে হাত বাড়াতে যাবে, ঠিক তখনই তার গালে কষিয়ে চড় বসিয়ে দেয় জায়ান,
বিয়ের আগেই ভাই ডাকতে নিষেধ করেছিলাম,তুই তো দেখি বিয়ের পরেও ভাই ডেকে যাচ্ছিস।
লিয়ানা গালে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে রইলো,গালখানা লাল হয়ে উঠেছে…
আমি কি ইচ্ছে করে বলেছি নাকি, মুখ ফুসকে বেরিয়ে গেছে।
জায়ানের কণ্ঠে ঝড়,

বেয়াদপ! তোর মুখটা একদিন আমি সেলাই করে দেবো,কী বলতে চাইছিলি ঠিক করে এবার বল।
থাপ্পড় মেরে আবার জিজ্ঞেস করছে,এখন আর বলার সাহস আছে নাকি আমার। মনে মনে আওড়ালো লিয়ানা।
জায়ান আবার ধমক দিয়ে বলে।
কি হলো, বল। তুই কি চাস বাকি থাপ্পড়টা তোর বাঁ গালেও পড়ুক?
না মানে,ইয়ে,বলতে চাইছিলাম যে, আপনার কি কখনো কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিলো?
লিয়ানা চোখ বন্ধ করে বলে দিল কথাটা,
প্লিজ মারবেন না,এমনি বলেছি।
জায়ানের ঠোঁট থেকে বের হল শুধু দুটো অক্ষরের শব্দ,

না কথাটা শুনে লিয়ানা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এবার একটু শান্তি লাগছে।খুশিতে তার তাতা থই করে নাচতে ইচ্ছে করছে,মার খেয়েছে সেটাও ভুলে গেলো এক নিমিষে,এমন শুদ্ধ পুরুষের হাতে একটা কেন, হাজারটা মার খেতেও রাজি আছে সে।চট করে উঠেই বেলকনিতে চলে গেলো।জায়ানও পিছন পিছন, ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বেলকনিতে,এসে দাঁড়ালো।খোলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে লিয়ানা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো, চাঁদ আর তারার দিকে।জায়ানও এসে পাশে দাঁড়ালো।
আকাশের দিকে তাকিয়েই লিয়ানা জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

যদি আমার কোনো ভুল হয়?
কিসের ভুল??
মানে,যদি কখনো কোনো ভুল করি, আপনি কি আমায় ছেড়ে দেবেন? থাকবেন না আমার সাথে?আগলে রাখবেন তো সারাজীবন?
লিয়ানার এমন কথায় জায়ান এক টানে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো
বেলকনির রেলিং-এ ঠেসে দু’হাত দিয়ে তাকে ঘিরে ফেলল।আলতো হাতে লিয়ানার সামনের ছোট্ট চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে,

ফা*ক ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না,খেয়ে ছেড়ে দেওয়ার যুগে আমি তোকে রেখে রেখে খাবো, সুইটহার্ট। একেবারে লবণ মরিচ মাখিয়ে, সুইট ক্যান্ডির মতো চে*টে চে*টে।
জায়ানের এমন লাগামহীন কথাগুলো তার শরীর কাঁপিয়ে দেয় বারবার।
ইশশ।খাওয়া-খাওয়ি ছাড়া কি আপনার মুখ থেকে কোনো কথা বের হয় না?
না,খাওয়া-খাওয়ি ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে নাকি,পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি।
আহারে,আমায় কি বলদ পেয়েছেন নাকি?আপনি ডিরেক্টলি মানুষ খাওয়ার কথা বললেন।
জায়ান ভ্রু কুঁচকে লিয়ানার দিকে তাকালো,

আমাকেও কি তুই রাক্ষস মনে করিস নাকি? আমি কেন মানুষ খাবো, আমি তো আমার বৌকেই খাওয়ার কথা বলেছি।
ওই একই হলো।সরুন তো, পড়ে যাবো।আমি।
আগে আমার দিকে তাকা তো।
লিয়ানাও ঠোঁট ফোলানো ভঙ্গিতে জায়ানের দিকে তাকাল।তার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে জায়ানের দিকে তাকাতে।শরম শরম পায়।উফফফফ, হার্টবিটটাও কেন যেন এত লাফাচ্ছে,বুক ছিড়ে বের হয়ে আসবে যেন।
তোকে ভুল করার কোনো সুযোগ আমি দিবো না কোনোদিনও না, সুযোগ পেলে তবেই তো ভুল করার কথা আসবে তাইনা।

জায়ান লিয়ানার থুতনিতে আঙুল রাখলো। তারপর আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবার লিয়ানার চোখের পানে নিজের চোখ গেঁথে দিলো।
আমি কোনো প্রেমিকপুরুষ না যে তোকে ওই চাঁদের সাথে তুলনা দিবো। আমি কখনো তোকে চাঁদের সাথে তুলনা দেইনি, দিবোও না। কারণ আকাশের চাঁদ তো সবার। কিন্তু তুই,
লিয়ানা নিশ্বাস আটকে ফিসফিস করে বলল,
আমি কী?
জায়ানের ঠোঁট বেয়ে বেরিয়ে এল ভারী গলায় শব্দ,
তুই শুধু আমার!
লজ্জায় ভেসে যাওয়া মুখে লিয়ানা হাসলো,

বাহ্‌, আপনি এত সুন্দর করে কথা বলা শিখলেন কবে থেকে আবার? আমি তো ভেবেছিলাম আপনাকে জন্মের পর মধু খাওয়ানো হয়নি, তাই মুখ দিয়ে শুধু তিতা তিতা কথা বের হয়,হাহ্‌!
জায়ান হালকা ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল।
জন্মের পর খাওয়ানো হয়েছিলো কিনা জানি না, তবে বিয়ের পর থেকে যে মধু খাওয়া শুরু করেছি, ওইটারই ইফেক্ট।
কবে খেলেন মধু?
রোজই তো খাই।
মানে?

তোর মতো বলদ এসব বুঝবি না।
লিয়ানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গুনগুন করলো,
আপনি গুরু, আমি শিষ্য।
বুদ্ধি আমার কম।
আপনি বুঝাইয়া দিলে বুঝিতে সক্ষম।
আয়, বুঝাচ্ছি।
কই?
বেডে।
আপনি যান, আমার তো ভালোই লাগছে ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস।
জায়ান রেলিং থেকে হাত সরিয়ে লিয়ানার হাতের উপর রাখলো। আঙুলে আঙুল জড়িয়ে ফিসফিস করলো,
এবার আমার কথার উত্তর দে। যা মনে আসবে তাই বলবি, মিথ্যে বলার দরকার নেই, ভয় পাওয়ারও দরকার নেই।
কি?
কোনোদিন যদি আমি ভুল প্রমাণিত হই?
মানে?

ধর, দুনিয়ার সবাই ঠিক, আমি ভুল। সবাই সোজা পথে চলে, আর আমি বাঁকা পথে,তখন তুই কোন পথ বেছে নিবি?
জায়ানের এমন ঘোরানো প্রশ্নে লিয়ানা থমকে গেলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরে গলায় বলে,
যদি পুরো দুনিয়া সোজা পথে হাঁটে,আমি তবুও সেই সোজা পথে যাবো না। আপনার পেছন পেছন বাঁকা পথে হাঁটবো।
জায়ান গভীর দৃষ্টিতে তাকালো লিয়ানার দিকে,
যা বলছিস, ভেবে বলছিস তো?
হুম
আকাশে চাঁদ জ্বলছিলো, কিন্তু দু’জনের চোখ থেকে চোখ সরেনি একটুও। মনে হচ্ছিলো, তাদের পৃথিবীতে আর কেউ নেই।শুধুই তারা দু’জন, আর চারপাশে নিস্তব্ধ রাত।জায়ান লিয়ানার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতেই তার চোখ পড়লো,লিয়ানার আঙুলগুলো একদমই খালি। ভ্রূ কুঁচকে এক মুহূর্ত স্থির হয়ে রইলো সে। এতো টাকা–পয়সার মালিক হয়েও কি লাভ, যদি তার বউয়ের আঙুল এমন খালি থাকে? এখনো তো বাসর করতে পারেনি, বাসর রাতের গিফ্টও দিতে পারেনি লিয়ানাকে,কিছুই দেওয়া হয়নি। আঙুলগুলো একেবারে ফাঁকা।জায়ান হাত টেনে কাছে নিয়ে লিয়ানার আঙুলগুলো গভীরভাবে দেখতে লাগলো। লিয়ানা অভিমান করে বিয়ের মেহেদিটুকুও লাগায়নি হাতে। স্বাভাবিক, তার মনমতো বিয়ে হলে তবেই তো লাগাতো। চোখে যেন সেই অভিমানও ধরা পড়লো। জায়ান হঠাৎ হাত ছেড়ে দিয়ে নিচু গলায় বললো,

এখানেই দাঁড়িয়ে থাক।
বলে ঘুরে সে রুমে চলে গেলো।রুমে ঢুকতেই হঠাৎ মনে পড়লো,ছ,মাস আগেই তো সে একটা ডায়মন্ড রিং কিনেছিলো! মলে হঠাৎ চোখে পড়তেই মন কেমন জানি করে গিয়েছিলো তার ভালো লেগেছিলো, কিছু না ভেবেই কিনে ফেলেছিলো। তারপর ব্লেজারের পকেটে রেখে আর খোলেইনি। আজ হঠাৎই মনে পড়লো সেই রিং-এর কথা।কাবার্ড খুলে সবগুলো ব্লেজারের পকেট খুঁজতে লাগলো সে। একের পর এক পকেট,কিছুই নেই। অবশেষে শেষের সারির ব্লেজারে হাত দিতেই আঙুলে ঠেকলো ছোট্ট একটা বাক্স। হালকা হাসি খেলে গেলো তার ঠোঁটে। বাক্সটা হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে ফিরে এলো লিয়ানার কাছে।বাক্সটা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ডায়মন্ড রিংটা চকচক করে উঠলো। চাঁদের আলো পড়ে যেনো আরও ঝলমল করে উঠলো সেটি। যেনো এক টুকরো আলো ধরে আছে সে হাতে।

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২২

রিং-এর সঙ্গে দুলছিলো দাম লেখা প্রাইস ট্যাগ,এখনো খোলা হয়নি।লিয়ানা হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। চোখ সরাতে পারছিলো না।
অতুলনীয় সুন্দর, হবেই বা না কেনো বিখ্যাত “Pink Star” হীরের রিং এর সৌন্দর্যই তার চোখের সামনে।জায়ান তার হাত বাড়িয়ে নিয়ে আলতো করে রিংটা পরিয়ে দিলো আঙুলে। লিয়ানা অবাক হয়ে প্রাইস ট্যাগের দিকে তাকাতেই যাবে, ঠিক তখনই জায়ান দ্রুত ট্যাগটা ছিঁড়ে ফেলে দিলো।চোখে চোখ রেখে শুধু ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি খেললো তার।তারপর লিয়ানার হাতে একটা চুমু খেয়ে নেয়।
আপনার কি লাগবে ম্যাডাম??আপনি যেটাতেই হাত রাখবেন।সেটাই আপনার নামে লিখে দিবো।

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here