তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩০

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩০
ভূমিকা তালুকদার

রেহমান পাষার জিম রুমটা ছোট নয়, বরং এক ধরনের প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ডের মতো,পার্থক্য বোঝায় এক প্রাইভেট ফ্লোরের মতো। দেওয়ালে বড় বড় মিরর বসানো, প্রতিটি স্টেপে তার শরীরের মুভমেন্ট স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কোণগুলোতে ছোট ছোট LED লাইটের হালকা নীলচে আলোর ছটা, যা রুমটাকে আধুনিক আর একদম প্রফেশনাল লুক দিয়েছে।রুমের এক পাশে আছে ফ্রি ওয়েটের জন্য ডাম্বেল, বারবেল আর কেবল মেশিন। আরেক পাশে ট্রেডমিল, রোইং মেশিন আর স্টেপার,প্রতিটি যন্ত্র সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো, যেন কোনো ছোঁয়া লাগলেও সব ঠিক থাকে।

রেহমান পাষা হালকা ঘাম বের হচ্ছে, কিন্তু প্রতিটি
মুভমেন্টে দেখা যাচ্ছে অভিজ্ঞতার ছাপ। বারবেল তুলে নিচ্ছে, তার পেশির টান, হাতের শক্তি আর ঘামের ফোঁটা।বেশ শক্তপুক্ত শরীর। মিরর দেখে নিজের ফর্ম চেক করছে, নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করছে।
ভেতরের পরিবেশ নীরব, শুধু মাঝে মাঝে মেশিনের হালকা শব্দ আর তার নিঃশ্বাসের আওয়াজ। রুমের একটা কর্ণারে রাখা ছোট স্পিকার থেকে হালকা মিউজিক, যা কেবল তার মনোযোগ ধরে রাখছে।কিন্তু হঠাৎ কি ভেবে যেনো রেহমান পাষার মুখে হালকা হাসির ছাপ নিয়ে ফোনটা বের করলেন, একটা নম্বরে কল দিলেন নম্বরটি আগে থেকেই “সুইট মারানি ” নামে সেভ করে রেখেছিলেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কল রিং হতে থাকে, বেশ কিছুক্ষণ পর ওপাশে থেকে নাদিয়ার কণ্ঠের সোনালী সুর ভেসে আসে,
“সকাল সকাল কল করে আমার পুরো দিনটাই মাটি করে দিলেন”হুআই।
“কল দিলে যে অন্তত সালাম দিতে হয় তাও কি জানো না,শুরুতেই এতো তিতা কথা।এসব নেওয়ার মতো নয়!টু মাচ্ পেইন”
“আপনার চামড়া যে গন্ডারের তা কি আপনি জানেন?”
নাদিয়ার কথায় রেহমান পাষা কপালে দুই আঙুল ঠেকিয়ে বলে উঠেন,
“তা উকিল সাহেবা, কোনদিক দিয়ে আমার চামড়া গন্ডারের মনে হচ্ছে আপনার।”
“এই যে আপনার চামড়া এতোটাই মোটা যে এতো কথা শুনাই আপনাকে তাও কোনো কথাই গায়ে লাগেনা। এটাই গন্ডারের চামড়ার লক্ষণ। ইউ নো আই নো।”

“আরে আরে,আমি তো শুধু গুড মর্নিং শব্দটা শোনার জন্য ফোন করছিলাম, বলো, দ্যান আমাকে আবার ডিউটিতে যেতে হবে! ফাস্ট।
” লাইক সিরিয়াসল? আপনি আসলেই একটা চুদলিং পং, এক নাম্বারের খনিকের ছেলে, বাবজাইট্টা।”-বলেই নাদিয়া কল কেটে দেয়।
নাদিয়া রেহমান পাষার কল রেখে বেলকনি থেকে রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো মার্কো দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ছুরি দিয়ে পাউরুটিতে জ্যাম মিশাচ্ছে।
এভাবে মার্কোকে সকাল সকাল নিজের রুমে দেখে নাদিয়া আঁতকে উঠলো, দুই পা হেঁটে মার্কোর সামনে এসে দাঁড়ালো।

“রাতে কোথায় ছিলি?”
আমাকে কখনো কাউকে কৈফিয়ত দিতে দেখেছিস কখোনো।আই ডুন্ট লাইক দ্যাট??
নাদিয়া ঠোঁট বাঁকালো-
“তাও ঠিক, এখন যদি আমি বলি, আমিও যখন তখন আমার রুমে কেউ প্রবেশ করলে,আই অল’সো ডুন্ট লাইক দ্যাট।আার তুই কেন একটা মেয়ের রুমে নক না করে ডুকে পরেছিস?? ”
মার্কো কিছুক্ষণ নাদিয়ার ফুল বডি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পরখ করে দেখলো
রিয়েলি? এটা বুঝি কোনো মেয়ের রুম? আজকে জানলাম, তাও এতবছর পর!টু মাচ্ ফানি।
মার্কোর এমন কথায় নাদিয়া রেগে মেগে ফায়ার হয়ে গেলো। বেডের কাছে গিয়ে একটার পর একটা বালিশ মার্কোর মাথার উপর ফেলতে থাকলোসাথে গালমন্দো একদম ফ্রি।

“ফাক ইউ বিচ্”
নাদিয়ার রুম থেকে জোরে জোরে শব্দ আসায় এলেক্স দরজার পাশে এসে দাঁড়ালো কি হচ্ছে সকাল সকাল তা দেখতে,এসেই সে ফোন বের করলো, ক্যামেরা অন করলো, ভিডিও করতে শুরু করে।শিষ বাজাতে বাজাতে বলে।
“নাইস সিন চালিয়ে যায়।ক্যাপশন হবে,দুই চেংড়া চেংড়ির চুলাচুলির দৃশ্য!”

জায়ান লিয়ানার বক্ষে মাথা রেখে শুয়ে আছে।চোখ-মুখে ক্লান্তির ছাপ টানা কয়েক রাত ঘুমহীন কেটেছে তার।এদিকে জায়ান এভাবে লিয়ানার বক্ষের ওপর মাথা হেলিয়ে শুয়ার ফলে লিয়ানার পুরো শরীর শির শির করতে থাকে,বুক জোরে জোরে উঠা নামা করছে, মনে হচ্ছে দম আটকে এখনি মরে যাবে।জায়ানকে এত ক্লান্ত দেখে সরাতেও পারছে না,কিভাবে বুঝাবে জায়ানের এভাবে শুয়ে থাকার ফলে তার শরীর মন দুটাই নিয়ন্ত্রণে বাহিরে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে শরীরের চারপাশে রঙিন প্রজাতির দল উড়ে উড়ে বেরাচ্ছে।এত শিহরণ এর ফলে উত্তেজনার বশীভুত হয়ে পড়ছে তার এইটুকুনি দেহখান।জায়ানের চুল লিয়ানার বক্ষের মাঝে খোঁচা লাগছে বারবার।শার্টের হাতাটাও অর্ধেক নিচের নেমে আছে।ঠিক করারও জোর নেই লিয়ানার।নড়তে চড়তেও যে পারছে না।মাথাটা একটু সামনে এনে জায়ানের মুখশ্ররীর দিকে তাকালো সে।দেখতে পেলো জায়ানের চোখ দুটো বন্ধ, মনে হল যেনো ঘুমিয়ে পড়েছে।

সেই ভেবেই আস্তে করে উঠতেই যাচ্ছিল লিয়ানা
ঠিক তখনই জায়ান হঠাৎই কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে আবার বিছানায় শুইয়ে দিলো।তারপর কপালে হাত রেখে নিঃশব্দে খুঁজে দেখল জ্বর আছে কিনা।না,নেই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক।
একটা নিঃশ্বাস ফেলে জায়ান আবার লিয়ানার বক্ষের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।তারপর নেশালো গলায় ফিসফিস করে বলে,
“হুহ!উঠছিস কেন? একটু শুয়ে থাকতে দে না।”
লিয়ানার ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে বলে,
“আ..আপনি একটু বালিশে গিয়ে শুন না।”
কে শুনে কার কথা জায়ান আরও শক্ত করে লিয়ানাকে চেপে ধরে লিয়ানার বক্ষস্থলে ওষ্ঠ ঠেঁকিয়ে দেয়।কন্ঠে মধু মিশে গুন গুন করে ব’লে,

“কেন? আমার ছোঁয়া ভালো লাগে না তোর?”
লিয়ানা চোখ-মুখ খিচকে চুপ করে রইল, প্রতিত্তুর কলো না।বিছানার চাদর শক্ত করে খামছে ধরে রাখলো শুধু।
“কি হলো বল!”-জায়ান এবার নড়েচড়ে উঠে লিয়ানার বক্ষের ওপরের তিলকে আলতো করে কামড় বসিয়ে বলে,
“তোর চুপ থাকাটা আমায় আরও বেশি সিডি’উস করে দেয় জান।যতক্ষণ মুখ বন্ধ করে রাখবি ঠিক ততক্ষণ আমার ঠোঁট তোর শরীরে বিচরণ করতে থাকবে, ঠিক যেমন আর্টিস্ট তার তুলির সাহায্যে ক্যানভাস রঙিন করে তুলে।”
জায়ান লিয়ানার ঘাড়ে মুখ ডুবাতে ডুবাতে বলে,
“বেবিগার্ল।ইউ ওয়ান্ট ওয়ান মোর বাইট?? “ইউ নো ফিফটিন বিলিয়ন লিপ ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড, বাট আই নিড অনলি ইউর ফোর লিপ।”

লিয়ানার সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে উঠে,নিজের উত্তেজনা সামলে নিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে জায়ানকে সরিয়ে তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।শার্টের হাতা টেটে টুনে উপরে উঠিয়ে।টেবিলে রাখা পানির গ্লাস থেকে এক গ্লাস পানি নিমিষেই এক ডুকে শেষ করে ফেলে।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছে যেই না পিছনে ফিরে, আঁতকে উঠে লিয়ানা,জায়ান একটা ওয়াইনের বোতল সমেত গ্লাস হাতে নিয়ে তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।জায়ানের পুরো মুখ কেমন ফেকাসে রঙ ধারণ করে আছে।ছোঁয়াল টান টান। হাতে ধরে রাখা গ্লাস্কটা এতটাই শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে যার ফলে হাতের শিরাগুলো ফুলে উঠেছে। চোখের সামনের স্বামীর এমন অদ্ভুত পরিবর্তন এ ভয়ে ভয়ে শুকনো ডুক গিলে পিছাতে থাকে পিছাতে কর্ণার টেবিলের সাথে পিঠ ঠেকে যেতে দেখেই জায়ান ঘার বাকা করে বলে উঠে।

“আর কোথায় যাবি,যা! -কথাটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লিয়ানার দিকে ছুরে দিয়ে হাতে থাকা ওয়াইনের গ্লাসটা পুরোটা এক ডুকে শেষ করেই লিয়ানার দিকে হাত বাড়িয়ে ,এক চাপে পুরো গ্লাস ভেঙে টুকরো করে ফেলে, গ্লাসে কণাগুলো মার্বেল ফ্লোরে পড়তেই ঝন ঝন করে উঠে,তবে তা র*ক্তবর্ণ ধারণ করে। কেননা ততক্ষণে গ্লাসের টুকরোগুলো জায়ানের হাতে বিঁধে টাটকা র*ক্ত তার হাত বেয়ে ফ্লোরে টপ টপ করে পড়তে থাকে। এমন বীভৎস দৃশ্য দেখে লিয়ানা এক হাতে মুখ চেপে ধরে কেঁদে ফেলে।কোনো সুস্থ মানুষ এমন করে নিজেকে আঘাত কিভাবে করে তা তার জানা নেই। দম আটকে আটকে আসছে।অন্যদিকে জায়ানের চোখে মুখে নেই কোনো রকম প্রতিক্রিয়া শুধু লিয়ানার দিকেই তাকিয়ে, অন্য হাতের ওয়াইনের বোতল থেকে মদ র*ক্তাক্ত হাতে ঢালতে থাকে। জায়ানের এমন অমানুষিক আচরণ দেখে লিয়ানা হঠাৎ জোরে কেঁদে উঠলো, বুকের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বের করে ভয়কে দূরে ঠেলে জায়ানের দিকে ছুটে গেলো।হাতের থেকে ওয়াইনের বোতল নিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয় লিয়ানা।তারপর জায়ানের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে-

“হায় আল্লাহ!খোদা।আপনি…আপনি কি মানুষ?? “কি হয়েছেটা কি আপনার?? কি করেছি আমি??কেন এমন করলেন?? ”
জায়ান বাঁকা হেসে উঠে, লিয়ানার হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে, হাতে গেথে থাকা দুইটা কাচের টুকরো টান দিয়ে খুলে ফেলে।
“নিজেকে আঘাত করার অভ্যস আমার আছে।এখন তুই বল তা সহ্য করার ক্ষমতা তোর আছে তো?? যতবার আমার কথার অবাধ্য হবি আমিও ঠিক ততোবার ধ্বংসের খেলায় নামবো”
“আপনি কি মানুষ?? ” পাগল হয়ে গেছেন!ম্যন্টালি সিক আর ইউ।

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ২৯

জায়ান লিয়ানার থুতনি নিজের দু’হাতের মাঝে রেখে লিয়ানার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে নেয়।
“না মানুষ না,”-লিয়ানার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে উঠে,
“এখন বল আমার ছোঁয়া ভালো লাগেনা তোর??
ব্যথা কিন্তুু শরীরে লাগে না আমার বুকে লাগে ডিরেক্ট। বুকটা কেমন চিন চিন করে উঠে সহ্য করতে না পারলে শরীরে আঘাত করে শান্তি পাই ”

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here