তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৫

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৫
ভূমিকা তালুকদার

সন্ধ্যা-৭টা
(চট্টগ্রাম)
পতেঙ্গা থেকে খানিক দূরের এক সুনসান গলিপথ। রাত নামতেই এলাকা ফাঁকা । চারপাশে কিছু বন্ধ দোকান, ছায়ায় ঢাকা পুরনো বিল্ডিং, আর একটা শীতল নীরবতা। ঠিক যেন শ্বাস বন্ধ করে রাখা শহরের নিঃশব্দ কোলাহল।
একটা কালো bmw এসে থামে একটা পুরনো মাল্টিস্টোরি ভবনের সামনে। গাড়ির দরজা খুলে পড়ে নিঃশব্দ পায়ের শব্দ। কালো শার্ট, প্যান্টে মোড়া সেই পুরুষ, যার চোখদুটো এতটাই স্থির যেন কারও না বলা গল্প পড়ে নিতে পারে এক ঝলকে।
জায়ান খান।

সে চারপাশটা একবার ভালো করে দেখে নেয়। তারপর নির্দিষ্টভাবে ছয়তলার দিকে তাকায়। ওই ছাদেই আলো জ্বলছে। নিঃশব্দে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে। ছাদে পৌঁছাতেই দেখা যায় তিনজন লোক আগে থেকেই দাঁড়িয়ে। কারও মুখ দেখা যাচ্ছে না স্পষ্টভাবে একজন জ্যাকেট পরা মোটা গলা, অন্যজন লম্বা, ঠোঁটে একটা সিগারেট, আর তৃতীয়জন ফোনে কথা বলতে বলতে এদিক-সেদিক হাঁটছে।
“আপনি তো সময় মত এসে পড়েছেন, ইম্প্রেসিব” ঠোঁটে সিগারেটটাকে চেপে ধরে বলল লম্বা লোকটা।
জায়ান শান্ত গলায় বলল, “দামটা বলো। বাজে কথা শুনতে আসিনি।”
একজন মোটা লোক একটা ছোট্ট বাক্স এগিয়ে দিল। ভিতরে কিছু পুরনো নোট, আর একপাশে একটা USB ড্রাইভ।
এই ডেটাটার দাম টাকা দিয়ে মাপা যায় না, মোটা লোকটা বলল।
জায়ান বাক্সটা হাতে নিয়ে গভীরভাবে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো। তারপর বলল, তুমি জানো না, কিসের সাথে খেলতে যাচ্ছো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জায়ান চোখ সরিয়ে নিল। মৃদু বাতাসে তার চুল উড়ছিল।
“বেশ। ডেটা আমি নিচ্ছি। কিন্তু মনে রেখো এই লেনদেনটা আজই শেষ। পরবর্তীবার কেউ আমায় ট্রেস করার চেষ্টা করলে, আর কোনো কথা বলবে না।Be careful
তারপর সে বাক্সটা হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করল।
ধোঁয়ার কুয়াশার মত একটা পরিবেশ। আলো-আঁধারি, সাদা-কালো অনুভব।
চট্টগ্রাম শহরের পেছনের এক নির্জন রোড দিয়ে কালো bmw গাড়িটা ছুটে চলেছে ঢাকা অভিমুখে। রাস্তায় খুব একটা গাড়ি নেই, যেন সব থেমে গেছে।
গাড়ির ভিতরে চলছে গাড়ির রেডিও—একটা পুরনো ইংরেজি গান। জায়ানের হাত গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে, চোখের দৃষ্টি স্থির, কিন্তু মনের ভেতর ঢেউ। হেডলাইটের আলো সামনের ধুলিধূসর পথটাকে আঁচড়ে যাচ্ছিল যেন।
হঠাৎ—

একটা ছায়া।
সামনের রাস্তার ঠিক মাঝখানে কেউ দাঁড়িয়ে।
ব্রেক চেপে ধরল সে।টায়ারের কাঁকড়কাঁকড় শব্দে রাতের নিস্তব্ধতা ছিন্ন হয়ে গেল।গাড়ি থেমে গেল ঝাঁকুনি দিয়ে, ছায়াটা তখনও দাঁড়িয়ে, চোখে চোখ—গা ছমছমে চাহনি।জায়ান দরজা খুলে নামল গাড়ি থেকে।
“Who the hell”সে ফিসফিস করল।
ছায়াটা যেনো কিছু বলতে চায়, কিন্তু আচমকা পেছন থেকে এক ধাক্কা।
কেউ একজন ছুটে এসে ছুরির কোপ বসিয়ে দিলো জায়ানের বাঁহাতের কাঁধের কাছে!
সাহস থাকলে সামনে থেকে মারিস! কাপুরুষদের মতো পেছন থেকে না!
জায়ান এক ধাক্কায় পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়, আরেক ঘুষি মেরে ফেলে দেয় লোকটাকে।দুইজন ছিল।তাদের মুখ ঢাকা, হাতে ছুরি।

তুইই সেই,,যার কাছে মাল যায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে?
একজন ফিসফিস করে বলল।
ভুল ঠিকানায় এসেছিস। এবার তোকে পাঠাবো ঠিকানার বাইরে।
জায়ানের ঠান্ডা কণ্ঠ যেন বরফে মোড়া।
এক ঘুষি, এক লাথি, আর একটা ছুরি হাতে থাকা লোকের কবজি মোচড় দিয়ে ভেঙে দিলো। তারা পালাতে চাইলো, কিন্তু জায়ান থামিয়ে দিল না—ওদের ভয়ে পালানোই তার কাছে যথেষ্ট।জায়ান ধীরে ধীরে গাড়ির কাছে ফিরে আসে, বাঁহাতের জামা রক্তে ভিজে যাচ্ছে।কাঁধে ব্যাথা টানছে, তবুও কপালে এক বিন্দুও চিন্তার রেখা নেই।সে গাড়িতে উঠে আবার স্টার্ট দেয়।রক্ত পড়ছে, কিন্তু গতি থেমে না।ঢাকার পথে, এক অজানা অন্ধকারে, সে চলে যাচ্ছে একাই… যেন কিছুই হয়নি।

চাতালের ওপরে ল্যাম্পপোস্টের আলো এখন নিভে গেছে, কেবল দূরের রোড থেকে হালকা আলো এসে জানালার কাঁচে টকটকে ছায়া ফেলছে। সেই ছায়া যেন বাড়ির শ্বাসরুদ্ধ কানাকানিতে মিশে গেছে।রাতের খাবার শেষ করে লিয়ানা চুপচাপ নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়েছে। অনেকক্ষণ হলো ঘুমোতে পারছে না। হঠাৎ মনে পড়ল সকালের সেই ব্যাপার কালো পেপারে মোড়া প্যাকেটা।সকালবেলায় যখন তার বড়ো আম্মু নাফিসা খান ভিতরে কি আছে জানতে চেয়েছিলেন,,
তখনই লিয়ানা চট করে বলে দিয়েছিলো,

আরে তেমন কিছু না! ওটা চুরি আমি আনিয়েছি,, মনেই ছিল না… আচ্ছা আমি নিয়ে যাচ্ছি আমার রুমে ।কারও সন্দেহ হোক সে চায়নি। আর সেটা রুমে নিয়ে এসেছিলো। ওই মুহূর্তে মজার কিছু ভেবেই হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল—কেউ হয়তো কলেজ থেকে দুষ্টুমি করেছে ওর সঙ্গে।
এখন আবার সেই প্যাকেটার দিকে তাকিয়ে আছে যা রাখা ছিলো টেবিলের একপাশে।আার মনে পড়লো সারাদিনে জায়ান ভাইয়ের কোনো খবর নেই। দুপুরের পর থেকেই ফোন অফ। কেউই জানে না ঠিক কোথায় গেছেন ওনি।
একটা অস্থিরতা বুকের মধ্যে হাওয়ার মতো ঢুকে বসে আছে।রাত আরও গাঢ় হতে হতে একসময় চাঁদের আলো কাচের জানালায় ধুয়ে দিলো রুমটা
কে,লিয়ানা ধীরে ধীরে হাঁটলো তার রাগী জায়ান ভাইয়ের রুমের দিকে। ডোরটা বন্ধ। তবু একটা টান যেন ওকে নিয়ে যাচ্ছিল।না চাইতেও যেতে হচ্ছে, কি জানি হঠাৎ এতো অস্থির লাগছে কেনো তার নিজেও জানে না।
এসেছেন কি?চুপিসারে ফিসফিস করলো লিয়ানা। কোন উত্তর নেই।
ডোর হালকা ঠেলে খুলতেই নিঃশব্দ এক শীতল অন্ধকার।
রুমটাতে ঢুকতেই ওর নিশ্বাস থমকে গেলো।

এই রুমের গন্ধটা… অদ্ভুত। পুরোনো স্মৃতির মতন একটা তীব্র” ব্লিউ ডি শ্যানেল “পারফিউম—মাথা ঘুরিয়ে দেয়। বিশেষ একটা গন্ধ,, জায়ান ভাইতো রুমে নেই,,এখনো আসে নি।গুটিগুটি পায়ে এসে বিছানায় বসে পড়লো।রাত অনেক, সাথে চোখে ঘুম আর ক্লান্তি,, অনেক্ক্ষণ বসে থাকতে থাকতে কখন যে জায়ান এর বিছানায় গা গেলিয়ে শুয়ে পড়ে একসময় আর বুঝতেই পারলো না কখন ঘুমিয়ে পড়েছে ও।বাইরে তখনও অন্ধকার। একটা রাত শেষ না হওয়া অপেক্ষার মতন।একটা নিশুতি রাত। চারপাশ নিস্তব্ধ, যেন গোটা দুনিয়া নিঃশ্বাস আটকে রেখেছে কারও ফেরার অপেক্ষায়।ঠিক রাত তিনটা। ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে, একটি কালো BMW বাড়ির গেইট পার হয়ে প্রবেশ করল। তার কালো বডিতে ছায়ার মতো চাঁদের আলো পড়ে এক অদ্ভুত রহস্যময় দৃশ্য তৈরি করে। গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হতেই নীরবতা যেন আরও ঘনীভূত হয়ে উঠল। গাড়ি থেকে নেমে এল এক ছায়ামূর্তি—তীক্ষ্ণ মুখাবয়ব, চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু এখনও রাজসিক—জায়ান।তার শার্টের এক পাশ ছেঁড়া, হাত বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু যেন সেটা তার কানে যাচ্ছে না। সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে উঠছে সে, এক হাতে রেলিং ধরে, আরেক হাতে পিঠটা চেপে ধরে রেখেছে যেন যন্ত্রণাকে আটকে রাখছে। গোটা বাড়ি তখন নিদ্রার অতলে ডুবে, কেউ জানেও না—এই মুহূর্তে এই বাড়ির ভেতরে ঢুকেছে আগুনের মতো এক পুরুষ, যার শরীর জর্জরিত, অথচ যার চোখে এখনো জ্বলছে আগুন।জায়ান নিজের রুমের সামনে এসে দাঁড়াল। দরজাটা আধা খোলা। ধীরে ধীরে ভিতরে পা রাখতেই হঠাৎ থমকে গেল সে।

নরম চাঁদের আলোয় তার নিজস্ব বিছানার ওপরে পড়ে আছে এক অনিন্দ্যসুন্দর নারী। মুখটা অচেনা নয়—লিয়ানা।
জায়ান সেদিকেই তাকিয়ে থাকলো,, আর তার মুখ থেকে ভেসে আসলো এক শব্দ – “স্লিপিং বিউটি ”
লিয়ানা সে তো এক কোণে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে, যেন সমস্ত জগতের ঝড় তার এই শূন্য ঘুমে এসে থেমে গেছে। এক হাতে চাদর শক্ত করে ধরে রেখেছে, যেন নিজের অজান্তেই কাউকে আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছে। তার খোলা চুলগুলো ছড়িয়ে আছে বালিশের ওপরে—নরম কালো ঢেউয়ের মতো, ঘ্রাণে ভরে আছে ঘরটা। জায়ানের নাকে এল সেই চেনা ঘ্রাণ…রুমের বাতাসে মিশে থাকা সেই সুবাস যেন বলে দেয়—এই ঘরটা তারই। এই মেয়েটা.. এই বিছানাটা..সবই যেন তার অধিকার।জায়ান ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে বিছানার পাশে বসলো। তার চোখে এখন আর ক্লান্তি নেই—শুধু এক অবাক বিস্ময়। তারপড় তার আঙুল গিয়ে ছুঁয়ে গেলো লিয়ানার কপালের কাছে লুটিয়ে পড়া চুলগুলো। সেগুলো সরাতেই হঠাৎই লিয়ানা অস্থির হয়ে উঠলো।

চোখ খুলে ফেললো সে। বিস্ময়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো সামনের ছায়ামূর্তির দিকে। মুহূর্তটা স্থির হয়ে গেল। যেন সময় থেমে গিয়েছে।লিয়ানা ধড়মড় করে উঠে বসল বিছানায়। তার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হচ্ছে, মুখে আতঙ্ক আর বিস্ময়ের ছাপ।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল—চোখে হাজার প্রশ্ন, অথচ কেউ কিছু বলল না।
লিয়ানা কাঁপা গলায় বলল
“আপনি… আপনি কখন এলেন ভাইয়া?”
তুই আগে এটা বল… আমার রুমে এসে, আমার বিছানায় ঘুমাচ্ছিস—এই সাহস তোর কোথা থেকে এলো?
লিয়ানা হকচকিয়ে গেল। মুখটা শুকিয়ে গেল—তবু বলল:
“আমি আসলে… মানে… দেখতে এসেছিলাম আপনি এসেছেন কিনা!… তারপর কখন যেন চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি…”
জায়ান ঠান্ডা গলায়, কিন্তু চোখে আগুন নিয়ে বলল,,

তোর কি নিজের রুমটা অপছন্দ? নাকি আমি দেশের বাইরে থাকতেও তুই আমার রুমেই এসেই ঘুমাতি?
এই বলে সে উঠে দাঁড়ালো, ধীরে ধীরে বাথরুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
ঠিক তখনই লিয়ানার চোখ পড়লো ওর পিঠে—রক্তের ছোপ আর… ছুরির আঁচড়।
সে চমকে উঠে বিছানা থেকে উঠে পড়ে।
আপনার,,,আপনার পিঠে রক্ত! কে করেছে এটা? কিভাবে হলো? কোথায় ছিলেন আপনি?— ভয়, উদ্বেগ আর আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞেস করলো।

জায়ান দাঁড়িয়ে পড়লো। বাথরুমের দরজার সামনে থেকে ফিরে তাকালো। চোখদুটো অন্ধকারে লালচে রাগে জ্বলছে।
তোর মুখটা আমি ভেঙে দেবো… চিলাচ্ছিস কেনো? বাড়ির সবাইকে জাগানোর এত শখ তোর?
লিয়ানার কানে তো কোনো কথাই গেলোনা,, সে দৌড়ে এসে জায়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো-
ও মা! এত রক্ত? আপনাকে তো ফার্স্ট এইড করানোটা খুব দরকার! প্লিজ না নড়ুন, এখানেই থাকুন, বিছানায় এসে বসুন,,আমি ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
জায়ান কিছুটা বিরক্ত, কিন্তু ভিতরে কোথাও যেনো এক অদ্ভুত কোমলতা ঢুকে পড়ে তার কণ্ঠে। ঠোঁট আঁটসাঁট করে বলে ওঠে,
তুই নিজের রুমে যা, আমারটা আমাকেই সামলাতে দে।
কিন্তু লিয়ানা নাছোড়বান্দা। এই একগুঁয়ে মেয়েটা যেন আজ পিছু হটবে না। কাদোঁ, কাদোঁ গলায় অভিমান মিশিয়ে বলে,

না… আপনি চুপ করুন। আজ আপনি আমার কথা শুনবেন।তারপর ধীরে ধীরে ড্রয়ার খুলে ছোট একটা ফার্স্ট এইড বক্স বের করে আনলো। আবার এসে বিছানার পাশে দাঁড়াল, চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। কোমল অথচ দৃঢ় স্বরে বলল,
দেখি, কই কাটেছে? আমি একটু ওষুধ মেখে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
শার্টটা খুলুন।
জায়ান ধীর গলায় চোখ সরিয়ে বলল,
আর ইউ সিরিয়াস??,, স্লিপিং বিউটি!,,
কিসের সিরিয়াস? খুলুন না শার্টটা। এইভাবে সহ্য করছেন কীভাবে? প্রচণ্ড ব্যাথা করছে না?
জায়ান ঠোঁটে এক চিলতে হাসি টেনে বলল,
না, ব্যাথা তো পিঠে না,, ব্যাথা তো বুকে।
বুকে মানে? আপনার হৃদরোগ আছে নাকি?হায় হায় কি বলেন!লিয়ানা গম্ভীরভাবে বলতেই যেন পরিবেশটা এক মুহূর্তে বদলে গেল।
Shut up! idiot -ব্যাথা না, মুড নষ্ট করছিস। তাড়াতাড়ি তোর কাজ শেষ কর, তারপর বের হয়ে যা আমার রুম থেকে।

জায়ান ধীরে ধীরে শার্ট এর বোতাম খুলতে লাগলো,,লাইটের আলোয় তার পিঠের ওপর গাঢ় লাল রক্ত ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু রক্তের থেকেও বেশি দৃষ্টি টেনেছিল ওর শক্ত, ফর্সা চামড়া আর ভরাট কাঁধ—আর তার নিচে যেন এক অজানা অভিমান লুকানো।লিয়ানা ওষুধে তুলো ভিজিয়ে আলতো করে তার পিঠের কাটা অংশে ছোঁয়ালো। জায়ানের শরীর হালকা কেঁপে উঠল।
“ব্যাথা লাগছে?”ধীরে প্রশ্ন করল লিয়ানা।
“না,” গলা ভারী হয়ে আসছে জায়ানের, “তোর ছোঁয়াটাই… বেশি ব্যাথা দিচ্ছে।”
লিয়ানার হাত থমকে গেল। কয়েক সেকেন্ড দুজনেই নীরব। ঘরের নিস্তব্ধতার মধ্যে ওদের নিঃশ্বাসের আওয়াজটা যেন আরও গম্ভীর শোনায়।

তবে লিয়ানা নিজেকে সামলে আবার ব্যান্ডেজটা জায়ানের পিঠে আলতো করে পেঁচাতে লাগল। তার আঙুলের ছোঁয়া ছিল সাবধানী, কিন্তু অদ্ভুতভাবে মায়াবী—যেন শুধু ব্যাথা কমানো নয়, বরং কষ্টের ভিতরেও সে একরকম শান্তি দিতে চাইছে।জায়ান আর কিছু বলল না। লিয়ানার স্পর্শে তার চোয়াল একটু শক্ত হয়ে ওঠেছে। এমন যত্ন, এমন নরম ছোঁয়া — অনেক অনেক বছর পর যেন কেউ ছুঁয়ে দিল তাকে এভাবে, না ভয় পেয়ে, না দূরে সরে গিয়ে।কিন্তু জায়ানের চোখ দুটো, যা সবসময় আগুনে ঝলসে থাকে, সেই মুহূর্তে যেন একটু নরম, একটু গলানো।লিয়ানা মাথা নিচু করে, ব্যান্ডেজ বেঁধে কাজ শেষ করল। তার কাঁধে, গালে তখন গরম লজ্জা, একটা অভূতপূর্ব অস্থিরতা।
জায়ানের বুকে হালকা সুবাস ” ব্লিউ ডি শ্যানেল” এর যেন পুরো রুম জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, আর সেই রুমের দেয়ালে, বাতাসে।

পরক্ষণেই লিয়ানা বলে উঠলো –
“কিভাবে পেলেন এই আঘাত?? কে করলো এমন! সারাদিনই বা কোথায় ছিলেন??আর ফোনও অফ ছিলো কেনো??”
জায়ান চুপ করে থাকে।
!কি হলো বলুন??? কিছু বলছেন না কেনো?? আমি তো জানতে চাই!
জায়ান ধীরে ধীরে তাকালো, ঠোঁটে হালকা একপাশে টান পড়লো। গলায় যেন বরফের মতো ঠান্ডা অথচ ভিতরে আগুন—
তুই কি তোর মুখটা একটু বন্ধ করবি? বারবার জেরা করছিস কেনো? এমন ভাব করছিস যেন আমি তোর প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য!

লিয়ানা চোখ সরালো না, ঠোঁট চেপে বলল,
আপনি কথাটা ঘোরাবেন না! আমি জানি, কিছু একটা আছে বলতে চান না!
হঠাৎ, মুহূর্তে জায়ান তার সামনে এগিয়ে এলো।
এক হাতে লিয়ানার কাঁধের নিচে হাত রেখে তাকে ঠেলে দিলো পাশের দেয়ালের দিকে।দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ফেলে, অন্য হাত দিয়ে লিয়ানার গালটা জাপটে ধরল—ঠোঁটের খুব কাছাকাছি।তার চোখে তীব্র আগুন, গলা নিচু কিন্তু কাঁপন ধরানো—
তোর মুখ থেকে যেন এখন আর একটা শব্দও না বের হয়। এই ঠোঁট কাঁপানোটা কীভাবে থামাতে হয়, খুব ভালো করেই জানি আমি।
তার ঠোঁট লিয়ানার মুখের খুব কাছাকাছি চলে এল—
আমার ঠোঁট দিয়েই থামাবো??

আর একটু আওয়াজ কর… তারপর দেখ, তোর সাথে কী করি…!
লিয়ানা ধাক্কা দিয়ে জায়ানকে হালকা সরিয়ে দিয়ে বাহিরের দিকে পা বাড়ায়,,,যেন আর এক মুহূর্তও সেখানে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবু ঠিক দরজার মুখে এসে থেমে যায়। দরজার হাতলটা ধরে, কিন্তু টান দেয় না। শুধু ধীরে ঘুরে তাকায় পিছনের দিকে—জায়ান তখনো, গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকেই।
এক মুহূর্ত দুই মুহূর্ত নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে লিয়ানা, যেন বুকের ভেতর জমে থাকা কথাগুলো ঠেলেই বেরিয়ে আসবে এবার।,,,সে বলে উঠলো-

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৪

“এই দুনিয়াতে যদি কারোর মন পড়ে দেখা যেতো,
তাহলে,,
“আমি আপনার মনটাই পড়ে দেখতাম ”

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here