তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৭
ভূমিকা তালুকদার
গাড়ির জানালা আধখোলা, বাইরের বাতাস ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকে লিয়ানার চুলের কিছু গোছা উড়িয়ে দিচ্ছিল।সে চুপচাপ বসে ছিল, গালের পাশে কনুই ঠেকিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে, যেন বাইরের অচেনা দৃশ্যগুলোতে নিজের মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে।সামান্য আগেই কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানের কোলাহল শেষ হয়েছে, কিন্তু তার বুকের ভেতর সেই শব্দের রেশ এখনো বাজছে, অদ্ভুত এক অনুভূতিতে।ড্রাইভার ফরিদ চাচা ধীরে ধীরে উত্তরার ফাঁকা রাস্তা পেরোচ্ছিল।কখনো অল্প রোদে ঝিকমিক করছে দোকানের সাইনবোর্ড, কখনো আবার রাস্তার ধুলো বাতাসে ভেসে এসে গাড়ির কাঁচে লেগে থাকছে।
হঠাৎই—
চ্যাঁঁক্!
এক ঝটকায় গাড়ি থেমে গেল।লিয়ানা ধাক্কা খেয়ে সামনের দিকে হেলে পড়ল, বুকের ভেতর ধুপধুপ করে উঠল।
আহ্! কি হলো, চাচা?বিরক্তি মেশানো গলায় বলল সে, কপালের ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এভাবে মাঝ রাস্তায় ব্রেক মারলেন কেন? ভয় পেয়ে গেলাম তো!
ফরিদ চাচা সামান্য গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
ম্যাডাম,,সামনে তাকান, বুঝবেন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
লিয়ানা বিরক্তি নিয়ে সামনের দিকে চোখ ফেরাতেই… বুকের মধ্যে যেন কেমন শূন্যতা নেমে এলো।মাত্র কয়েক গজ দূরে, কালো BMW রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে।গাড়ির সামনের অংশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জায়ান।সাদা শার্টের কলার হালকা খোলা, হাত দুটো বুকের কাছে ভাঁজ করা, মুখে সেই পরিচিত ঠাণ্ডা অথচ ধারালো দৃষ্টি,যা একসঙ্গে ভয় আর অদ্ভুত টান জাগায়।তাঁর চোখ সরাসরি লিয়ানার গাড়ির দিকে,যেন রাস্তার সব মানুষ, সব শব্দ মিলিয়ে গেছে, শুধু তাকেই দেখছেন।একটুও পলক নেই, একটুও নড়াচড়া নেই।লিয়ানার নিঃশ্বাস হঠাৎ অগোছালো হয়ে গেল।
তার গলার ভিতর শুকনো হয়ে এলো, আর অজান্তেই সে গিলে ফেলল এক ভারী ঢোক,মনে হলো, সেই ঢোক গেলার শব্দ যেন সারা রাস্তায় শোনা যাচ্ছে।বুকের ভেতর ধীরে ধীরে জমে উঠছে এক অদ্ভুত আতঙ্ক, যার অর্ধেক ভয়… আর অর্ধেক এক অজানা অনুভূতি।জায়ানের দৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্যও সরে না।লিয়ানার বুকের ভেতর কেমন শিরশিরে ঠাণ্ডা নেমে এলো— সেই চোখের ভেতরে কি আছে, রাগ, নাকি..অন্য কিছু?
জায়ান হঠাৎ ডান হাত উঠিয়ে আঙুলের হালকা এক বাঁকানো ইশারায় কিছু বললো।একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না, কিন্তু লিয়ানার বুঝতে বাকি রইল না..গাড়ি থেকে নামতে বলছেন তিনি,,তার আঙুলের সেই ধীর অথচ কর্তৃত্বপূর্ণ নড়াচড়া যেন বাতাসকেও থামিয়ে দিল।লিয়ানার হাতের তালু ভিজে উঠল ঘামে।কাঁপা কাঁপা আঙুলে দরজার হ্যান্ডেল টেনে খুলল— যেন প্রতিটি মুহূর্ত আরও ভারী হয়ে যাচ্ছে।পা মাটিতে পড়তেই ঠাণ্ডা বাতাস চামড়া কেটে গেল, অথচ গায়ের ভেতর আগুনের মতো তাপ ছড়িয়ে পড়ল।
জায়ান গাড়ির ড্রাইভারকে এক ঠাণ্ডা মাথার হালকা ইশারায় চলে যেতে বললেন।ফরিদ ড্রাইভার বিনা প্রশ্নে গাড়ি ঘুরিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল রাস্তার ভিড়ে।এবার শুধু তারা দু’জন,নির্জন রাস্তায়, দাঁড়িয়ে মুখোমুখি।লিয়ানা ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো, তার চোখ নিচু, অথচ প্রতিটি পদক্ষেপে বুকের ভেতর ধকধক শব্দ যেন পুরো দুনিয়াকে ঢেকে দিচ্ছে।জায়ানের সামনে এসে থামল সে।হাওয়ায় শার্টের কলার হালকা নড়ছে, কিন্তু সেই চোখ, স্থির, গভীর, যেন তার অন্তরের সব গোপন অংশ উলটে দেখছে।লিয়ানা ধীরে ধীরে কাছে যেতেই জায়ানের চোখ সরল না,তার দৃষ্টি একবার শাড়ির আঁচল বেয়ে গিয়ে মুখে আটকালো, তারপর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি।
মুখটা একটু ঝুঁকিয়ে, এমনভাবে ফিসফিস করে বলল যেন শব্দগুলো সরাসরি তার কান ছুঁয়ে যাচ্ছে—
এই মেয়েটা,কি পাগল করে দেবে নাকি আমায়? শাড়িতে যেন এক হুর, যার শরীরে বিষের বাসা বেঁধেছে!
লিয়ানা কেঁপে উঠল, একটু পেছনে সরে গিয়ে তোতলাতে লাগল—
কি, কি বললেন? আপনার তো শরীর ভালো ছিল না।
জায়ানের চোখ মুহূর্তেই আগুন হয়ে উঠল। ঠোঁট শক্ত হয়ে গেল, স্বরটা নিচু আর ভয়ঙ্কর—
Shut up,বেয়াদপ! আমায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে বাধ্য করবি না একদমই। তোর শরীরে যদি এতটাই আগুন থাকে,, আমাকে বলতি, আমি কমিয়ে দিতাম। নিজেকে আর কতো সস্তা বানাবি?
ছিহ!.. এসব কি বলছেন আপনি?
জায়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল, রাগে চোখ রক্তলাল। পকেট থেকে ধীরে ধীরে ফোন বের করল, আর পর্দাটা লিয়ানার সামনে ধরে দিল—
“দেখ,,,নিজে দেখে নে।”
স্ক্রিনে কলেজর সেই মুহূর্ত,ইশানের সঙ্গে লিয়ানার ধাক্কা খাওয়া। কিন্তু
এবার তা অজস্র মানুষের শেয়ার করা ভিডিও, ক্যাপশনে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যের বন্যা। একজন পাবলিক ফিগারের সাথে এই ফুটেজ ইতিমধ্যেই ভাইরাল।
লিয়ানা মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই—
ধপ্প!
দুইটা তীব্র থাপ্পড়ের শব্দ কানে বাজল।
তারপর,,,
আরো দুটো।
লিয়ানা হকচকিয়ে গেল, গাল ঝলসে উঠল। জায়ান আরেকটা মারতে গিয়ে থামে, কিন্তু হাতের জায়গায় এবার তার আইফোনটা সরাসরি মাটিতে আছড়ে ফেলল।এক বিকট শব্দ!
ঠাসস!
রাস্তার মানুষ মুহূর্তেই ভিড় করল। ফিসফাস, শ্বাসরুদ্ধ উত্তেজনা।
আর জায়ান.. দাঁড়িয়ে আছে, শ্বাস টেনে নেওয়া সেই আগুনে চোখে লিয়ানার দিকে তাকিয়ে।জায়ানের বুক ওঠানামা করছে দ্রুততায়, চোখে পুড়ে যাওয়া আগুন।সে হঠাৎ দু’হাত বাড়িয়ে লিয়ানার দুই কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরল।
আঙুলের চাপ এমন যে হাড়ের গায়ে ব্যথা ফুটে উঠছে।
“কি চাইছিস তুই, হ্যাঁ? ভালো থাকতে দিবি না আমাকে? আমায় অ-মানুষ বানাতে চাস?” জায়ানের গলার শব্দ নিচু, কিন্তু তাতে রাগের সাথে দমবন্ধ করা এক হুমকি লুকিয়ে আছে।
লিয়ানার মুখ ফ্যাকাশে, ঠোঁট কাঁপছে।ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
প্লিজ..রাস্তায়..এমন করবেন না…সবাই দেখছে…বাসায় চলুন…আমি বলছি আসল ব্যাপারটা. ভিডিওটা যেমন তেমন নয়..
জায়ান ঠান্ডা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তার কথা কেটে দিল।
কোন মুখে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছিস?
সে ধীরে ধীরে মাথা নামিয়ে লিয়ানার ঠোঁটের কাছাকাছি এসে ফিসফিস করল—
এই মুখে.. ?
কথাটা শেষ হতেই জায়ানের আঙুল লিয়ানার চিবুকের তলায় উঠে গেল। এক টানে মুখটা উপরে তুলল, আর সে সরাসরি ঠোঁটের দিকে ঝুঁকল—রাস্তাঘাট, ভিড়, দৃষ্টি, কিছুই যেন তার পরোয়া নেই।লিয়ানা আতঙ্কে দু’হাত দিয়ে তাকে ঠেলতে লাগল, কাঁপতে লাগল।
না.. ছাড়ুন..
কিন্তু জায়ানের চাপানো শক্তি হাড়ের গায়ে গেঁথে যাচ্ছে।
ঠিক সেই মুহূর্তেই—
একটা টকটকে লাল ব্রেকিং নিউজ ব্যানার হঠাৎ শহরের লাইভ নিউজ ফিডে ঝলসে উঠল।শিল্পপতি সোলায়মান খানের একমাত্র ছেলে ও ভাইয়ের মেয়েকে নিয়ে রহস্যময় ঘটনা!—লাইভ দৃশ্য।
ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ল সেই মুহূর্ত—
সাদা শার্টে জায়ান, নীল শাড়িতে লিয়ানা, রাস্তার মাঝেই এক বিপজ্জনক কাছাকাছি অবস্থান..জনতার ফিসফিস, ফোনে তোলা ভিডিও, লাইভ কমেন্টের ঢেউ,সব মিলিয়ে মুহূর্তটা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ল।
সিলেট,,,
এক প্রাচীন, জমকালো প্রাসাদঘর।বড় বড় খিলানওয়ালা জানালা দিয়ে ভোরের আলো নরমভাবে ঢুকে পড়েছে হলঘরে। দেয়ালের পুরনো পেইন্টিং আর সিলিংয়ের ঝাড়বাতি সেই ঘরের ঐতিহ্যের কথা বলে।সামনের লেদারের সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন সুলায়মান খান,গাঢ় রঙের পাঞ্জাবি পরা, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। হাতে খোলা পত্রিকা, এক হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ। মাঝে মাঝে পাতার শব্দ, আর তার সাথে চুমুকের টুংটাং ধ্বনি।কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে, মোবাইল কানে দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে কথা বলছেন ফাহিম খান। গলার স্বর থেকে বোঝা যায় তিনি কোনও গুরুত্বপূর্ণ ডিলারের সাথে দাম, শর্ত আর সময়সীমা নিয়ে তর্ক করছেন।
না, এটা ডেডলাইন… এর মধ্যে কাজ শেষ করতেই হবে।
অন্যদিকে, হলঘরের কোণের পাশে রাখা বড় স্ক্রিনের টিভির সামনে রিমোট হাতে নিয়ে বসে আছেন রেজাউল খান। চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে থমকে গেলেন হঠাৎই—
টিভি স্ক্রিনে লাল ফ্ল্যাশ ব্যানার:
ব্রেকিং নিউজ!
ক্যামেরায় ভেসে উঠল রাস্তার ভিড়, ফ্রেমের মাঝখানে এক সাদা পোশাক পরা পুরুষ আর নীল শাড়ির এক মেয়ে—তাদের অবাক করা কাছাকাছি অবস্থান। নিউজ টিকার বয়ে চলেছে:
শিল্পপতি সোলায়মান খানের একমাত্র ছেলে জায়ান খানকে ঘিরে বিতর্ক।
রেজাউল খান অবাক চোখে স্ক্রিনের দিকে ঝুঁকলেন। তার কণ্ঠে বিস্ময় ও আঘাত মিশে বেরিয়ে এলো—
এসব কি??
এমন মুহূর্তে পত্রিকার পাতায় ডুবে থাকা সুলায়মান খান ভুরু কুঁচকে তাকালেন, আর ফাহিমের ফোনের কথোপকথন থেমে গেল মাঝপথে..ঘরের বাতাস এক মুহূর্তে ভারী হয়ে উঠল।টিভি স্ক্রিনে দৃশ্য জমে আছে—নীল শাড়ির মেয়েটির দিকে ঝুঁকে আছে জায়ান খানের মুখ, রাস্তার ভিড়ের কোলাহল পেছনে জমাট। নিউজ টিকারে বারবার ভেসে উঠছে তার নাম, যেন পুরো দেশের চোখ এখন ওই ফ্রেমে গেঁথে আছে।সুলায়মান খান প্রথমে নিঃশব্দে দৃশ্যটা দেখলেন, তারপর ধীরে ধীরে তার হাতের চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রাখলেন। চোখের পেছনে জমে উঠল তীব্র রাগের ছায়া। হঠাৎই তিনি পত্রিকা ভাঁজ করে পাশে ছুঁড়ে দিলেন—শব্দটা যেন ঘরের নিস্তব্ধতা ছিঁড়ে দিল।তিনি আসন থেকে উঠে দাঁড়ালেন, কাঁধ সোজা, চোখে বজ্রের মত দৃষ্টি। গলা ভারী, কিন্তু প্রতিটি শব্দে যেন আগুন জ্বলছে—
ফাহিম.. গাড়ি বের করো।
ফাহিম খান বিস্মিত হয়ে তাকালেন—
এখনই..?
“হ্যাঁ, এখনই। আজকেই ঢাকা ফিরব। আজকের মধ্যে এই ঘটনার একটা বিহিত আমি করব। তার স্বরে কোনও দ্বিধা নেই, কেবল কঠোর সিদ্ধান্তের ইস্পাত।সামনে থাকা রেজাউল খান উঠে দাঁড়ালেন, চশমা খুলে টেবিলে রাখলেন, কিন্তু কিছু বললেন না,মুখের অভিব্যক্তিতে বোঝা যায়, তিনিও জানেন সুলায়মান খান যখন এভাবে দাঁড়ান, তখন ফেরার আর পথ থাকে না।সুলায়মান খান শেষবারের মতো টিভির দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বললেন
এমন দৃশ্য আমি কোনওদিন মেনে নেব না…কোনওদিনও না।
ঘরের ভেতর বাতাস যেন জমে গেল, আর কেবল শোনা গেল ফাহিম খানের তাড়াহুড়ো করে মোবাইলে ড্রাইভারকে গাড়ি প্রস্তুত করার নির্দেশ।গেটের সামনে এসে থামল একসাথে তিনটা কালো গাড়ি—মাঝখানেরটা খান পরিবারের সিগনেচার লিমুজিন। সুলায়মান খান, ফাহিম খান, আর রেজাউল খান ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলেন।
অন্যদিকে,, বৃষ্টিহীন গরম দুপুর। গাড়ির ভেতরে নিস্তব্ধতা গলায় কাঁটার মতো বিঁধছে। লিয়ানা জানালার বাইরে তাকিয়ে চোখ মুছছে বারবার। জায়ান স্টিয়ারিং আঁকড়ে ধরে আছে, ঠোঁট শক্ত করে চেপে রেখেছে—রাগ, জেদ আর অদ্ভুত এক অভিমান একসাথে বুকে ধুকপুক করছে। মাথায় কিছুই কাজ করছে না, শুধু ইঞ্জিনের ঘনঘন গর্জন শুনতে পাচ্ছে দু’জনই।গাড়ি খান বাড়ির গেট পেরোল। মুহূর্তের মধ্যেই জায়ান জোরে ব্রেক কষে দাঁড়াল,
দরজা ঠাস করে খুলে লিয়ানাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিল,কোনও কোমলতা নেই, কেবল লোহার মতো শক্ত হাতের চাপ।খান পরিবারের বসার ঘরে টিভি এখনো চালু,সেই ভাইরাল হওয়া নিউজ চলছে বারবার। সবার চোখ হঠাৎই দরজার দিকে। জায়ান টানতে টানতে ঢুকছে লিয়ানাকে, লিয়ানার চেষ্টায় হাত ছাড়ানো ব্যর্থ।
দাঁড়াও জায়ান..তুমি যা করছো, এবার কিন্তু অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে! — কড়া গলায় বললেন নাফিসা খান, তার চোখে বিস্ময় আর অসন্তোষ একসাথে। খান পরিবারের মান–অভিজাত্যকে মাটিতে মিশিয়ে দিও না!
সবার দৃষ্টি এবার লিয়ানার দিকে,তার শাড়ির আঁচল এলোমেলো, মুখে লজ্জা আর ভয়ের ছাপ।
জায়ান হেসে উঠল,তবে সেই হাসি ছিল ঠান্ডা, বিদ্রূপে ভরা—
ওয়াও,হাউ,ফানি!… এই বাড়ির মান–সম্মান থাকলে, তবেই না,নষ্ট হবে!
দাদি কড়া গলায় বললেন—
কি চাইছিস তুই? খোলাখুলি বল, পরিবারের বড়রা মিলে আলোচনা করি।
জায়ান এক ঝটকায় উত্তর ছুঁড়ল—
রাখুন আপনারা আপনাদের আলোচনা। এইসব আমি দশ বছর আগেই সেড়ে ফেলেছি,কোনও লাভ হয়নি। এখন যা হবে..হবে আমার ইচ্ছেমতো ।
নাফিসা খান হতবাক—
মানে? কি বলতে চাইছো স্পষ্ট করে বলো।তোমার এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কারণ তো আমরা আজ অবধি জানলামই না।
জায়ান এক পলক তাকাল, কণ্ঠ ঠান্ডা কিন্তু ধারালো—
জানবেন কিভাবে? সেটা আপনার স্বামী সোলায়মান খানের কাছেই জেনে নিন।
রুকসানা খান বলে উঠলেন,,,
তুমি ফিরে এসেছো, তাতে আমরা সবাই অনেক খুশি হয়েছি,,এ বাড়ির কেউই তোমার থেকে একদিনও কোনো কৈফিয়ত চাই নি… !বিদেশে পড়তে গিয়েছো,,,গিয়েই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছো এ বাড়ির সাথে,,,নিজের মায়ের কথাও ভেবে দেখো নি,,,বছরে এক দু’বার কল ধরেছো,তাও অজুহাত দিয়ে কল রেখে দিতে!কি করছো না করছো তা কেউ জানতে পারিনি আমরা বলোই নি,,,,,সব মেনে নিয়েছি, নিজের ছেলের মতো ভালোবেসেছি,শুধু আমি না এ বাড়ির সবাই প্রতি মুহুর্তে তোমার কথা মনে করে দিন পার করে ছে।কিন্তু তুমি যা করছো তা ভালো করনি করছো না,,,আমার মেয়েটার কি হাল করেছো একবার দেখো,, ওর হাতটা ছেড়ে দাও।….
নাফিসা খানের চোখে জল,,,কিছু বলতে গিয়েও বলার মতো ভাষা খুজে পাচ্ছেন না!পুরো বাড়ি নিস্তব্দ।
-আপনাদের সবার বলা শেষ?? আর কিছু বাকি আছে?Anything else??
তারপর লিয়ানার দিকে তাকিয়ে হাত আরও শক্ত করে ধরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো। প্রতিটা ধাপ পেরোনোর সাথে সাথে তার স্বরে বাড়তে লাগল হুমকি, আর হ্যাঁ যদি কারও এক পা–ও এইদিকে আসে..আই,রিপিট করছি, এক পা–ও, আমি এই পুরো বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবো।
সিঁড়ির নিচে দাঁড়ানো সবাই স্তব্ধ।জায়ানের হাতের শক্ত গ্রিপে লিয়ানার কব্জি লাল হয়ে উঠেছে। সে কাঁদতে কাঁদতে হাপাচ্ছে—
ছেড়ে দিন.. একটু শান্ত হন..আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি..
জায়ানের কণ্ঠ নিচু কিন্তু বিস্ফোরণ,পূর্ব চাপা গর্জনের মতো—
একদম চুপ! আমি এমনিতেই অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছি
দরজা ধাম করে খুলে, জায়ান তাকে টেনে নিয়ে ঢুকল। মুহূর্তে লিয়ানার শরীর হালকা বাতাসে ভাসা মতো ছিটকে পড়ল বিছানায়। চুল এলোমেলো, শাড়ির আঁচল বুকে জড়িয়ে ধরল সে।
আপনি চাইছেন টা! কি?!,কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল লিয়ানা।
জায়ান এক পা এগিয়ে ঠান্ডা চোখে তাকাল—
কি চাই? চুমু খেতে!দিবি? দে!
লিয়ানা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বসল—
না..অসভ্য লোক! চলে যান এখান থেকে!
জায়ানের ঠোঁট বাঁকলো, কিন্তু হাসি নয়—বরফে ঢাকা ধারালো ছুরি,,
আজকে তোর মুখ যেন আমি আর না দেখি। এই রুম থেকে এক পা যদি বের করিস,সেই পা কেটে রেখে দেবো। কথাটা মাথায় রাখিস.. এটা তোর শাস্তি।
পেছন ফিরে দরজার দিকে হাঁটতে লাগলো জায়ান। কিন্তু হঠাৎ থেমে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো—
শিট!.. তিলটা তো গলায় ছিলো, এত নিচে নামলো কি করে, — ফিসফিস করলেও শব্দটা ঠিকই পৌঁছে গেল লিয়ানার কানে।
তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৬
জায়ান বেরিয়ে গেলো, দরজা ধাম করে বন্ধ।
লিয়ানা মাথা নিচু করে নিজের ব্লাউজের ঠিক উপরের, ছোট্ট তিলটা স্পর্শ করল। কান্নার মাঝে ঠোঁট কামড়ে ধীরে ধীরে ফিসফিস করলো—
— “অসভ্য লোক,!
