তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৮

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৮
ভূমিকা তালুকদার

জায়ান লিয়ানার রুম থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।তার মুখে কোনো শব্দ নেই,কিন্তু চোখ,চোখ যেন দাবানলের আগুন।সে সোজা হেঁটে যায় নিজের রুমে।দরজা ধপ করে বন্ধ করে দেয় সে।শরীরের রাগে ও চাপে শিরা ফুলে উঠছে।এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে,কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে এক দমকা ঝড়।একটা মহা নীরবতা ঘরজুড়ে,শুধু তার গলা থেকে বেরিয়ে আসা অদ্ভুত গর্জনের মত শব্দ..তারপর ভাইরাল নিউজগুলো দেখা শেষে হঠাৎ করে টেবিলে রাখা নিজের পার্সোনাল ল্যাপটপ চালু করে,, চোখ সরু করে টাইপ করতে থাকে,তারপর,
জায়ান,ইয়ারপিসে বলে-

নেটগ্রিড-এ কানেক্ট করো। স্যাটেলাইট লাইনসহ।
জ্বি, স্যার। সংযোগ সম্পন্ন।
তারপর টাইপ করতে থাকে-
অ্যাকশন: ন্যাশনাল ক্লিন আপ মোড।
টার্গেট : লিয়ানা+জায়ান, রাস্তায় আপত্তিকর ভিডিও।
স্কোপ: অল সোশ্যাল মিডিয়া+নিউজ চ্যানাল
প্রয়োরিটি: ক্রিটিকাল
ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক:ভিডিও মুছে ফেলা হচ্ছে। স্ক্রিনে ভেসে উঠে, কন্টেন্ট রিমুভ ডিউ টু ভায়োলেশন টিভি চ্যানেলগুলো,,,নিউজ পড়ার মাঝে উপস্থাপক থেমে যায়। পর্দা কালো। ভেসে উঠে ওয়ার্নিং !ন্যাশনাল সাইবার অর্ডার।নিউজ পোর্টাল,,আর্টিকেল মুছে গেছে। লিংকে গেলে দেখা যায়,,,Error 404 – Content Missing।গুজব ছড়ানো পেজগুলো হঠাৎ করেই তাদের পেজ ডিজেবল হয়ে যায়।এরপর জায়ান একটি বিশেষ নম্বরে কল করে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

লাইন সিকিউর তো?
সবসময়ই, মি. খান।
যেই ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়েছে—সোর্সটা ট্র্যাক করো। কোথা থেকে ছড়িয়েছে জানতে হবে।
স্যার, ট্রেসিং অনুযায়ী সোর্স এসেছে ‘Z-news24’নামের এক ছোট নিউজ চ্যানেলের সার্ভার থেকে।
Z-news24,ছোট হলেও সাহস কম না।চ্যানেলটা বন্ধ করে দাও। স্থায়ীভাবে।
আজ্ঞে, ঠিক আছে।
ভিডিও কোথা থেকে আপলোড হয়েছিলো?
একটা লোকাল ট্যাবলয়েডের সাব-রিপোর্টার। প্রয়োজনে তাকে!
জায়ান ঠান্ডা গলায় বলে:

ডিজিটাল দুনিয়া থেকে তো সরাওই, দরকার পড়লে পৃথিবী থেকেও সরাও।
কল রেখে,,,জায়ান ধীরে ধীরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়।নিজের চোখে চোখ রাখে।
আমি যার অনুভূতিকে স্পর্শ করতে চাই,,
আর কেউ যদি তার সম্মান নিয়ে খেলে,
তবে আমি সব আগুনে পুড়িয়ে দেবো।
আয়নায় ভেসে ওঠে তার রক্তলাল চোখ।

সারাদিন কেটে গেল, কিন্তু লিয়ানা তার রুমের দরজা একবারও খুলল না। জানালার পর্দা নীচে নামানো, আলো জ্বলছে না, যেন রুমটাও তার মত নিঃশব্দ, নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।নীচতলায় একবার, দু’বার নয়,অনেকবার রুকসানা খান হাঁক দিয়েছেন, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গলা ঝেড়ে বলেছেন,
লিয়ানা.. খেতে আয় মা। সারাদিন কিছু না খেয়ে থাকবি কিভাবে?

কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া আসেনি।রাগে দুঃখে রুকসানা খান একসময় ফিরে গেছেন,চোখে জল, ঠোঁটে চাপা অভিমান। মেয়েটা একসময় কতটা প্রাণবন্ত ছিল, আর আজ,একটুখানি ডাকেও সাড়া দেয় না।মাইশা,আরিশা অনেকবার তাদের লিয়ু আপুকে ডাকতে আসবে ভেবেও জায়ান ভাই এর ভয়ে আর এপাশে পা রাখতে পারে নি।দোতলার পশ্চিম দিকের সিঁড়ি ঘেঁষে শেষের দুটি রুম একটা লিয়ানার, আরেকটা জায়ানের।এর আগের রুমে থাকে রিহান,তারপর এর গুলোতে মাইশা আরিশা।আর পাশের দিকের লাইনে, সিঁড়ির পূর্বপাশজুড়ে কর্তাদের ঘর সোলেমান খান, ফাহিম খান, রেজাউল খানের রাজকীয় রুমগুলো।ঘরের ভেতরে কথা নেই, করিডোরে কেউ হাঁটে না। ছাদ থেকে ঝুলে থাকা বাতিটাও কেমন নিস্তেজ মনে হচ্ছে আজ।এই নিঃশব্দতা, এই চাপা গুমোট পরিবেশ…এ যেন এক ঘূর্ণিঝড় আসার আগের ভয়াল নিস্তব্ধতা।জায়ান ধীরে ধীরে নিজের রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। মুখটা যেন পাথরের মতো নিরাবেগ,তবুও এক মুহূর্তের জন্য চোখটা ঘুরে গেল লিয়ানার রুমের দিকে।কিছু বলল না। কিছু ভাবলো কি না তা বোঝা গেল না।পরক্ষণেই মুখ ঘুরিয়ে নিল। চোরা একটা ক্ষোভ যেন কাঁধ বেয়ে নেমে যাচ্ছে। ধীর পায়ে সে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল।

ডাইনিং স্পেস ফাঁকা। কারো পদচারণ নেই, নেই কোনো শব্দ।বাড়ির বাতাস কেমন থমকে আছে জানালার পর্দাগুলো যেন নিঃশব্দে কাঁপছে।জায়ান ফ্রিজ খুলল, ঠান্ডা পানির বোতল টেনে নিল বের করে।এক টানে বোতল ঠোঁটে তুলে “ডক ডক” শব্দে গলা দিয়ে নামিয়ে দিতে লাগল।প্রতিটা ঢোঁক যেন আগুন নিভানোর প্রচেষ্টা।
আর ঠিক তখনই,,,
মেইন গেটে সঙ্গে সঙ্গেই ঢুকে পড়ে তিনটি কালো রঙের গাড়ি।”খান বাড়ির” গেইট এক ঝাঁক নিরাপত্তার মধ্যে খুলে গিয়েছে চোখ রাঙানো বিশালতা নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছেন খান পরিবারের তিন কর্তা।প্রথমেই গাড়ি থেকে তেজী পায়ে নেমে এলেন সোলেমান খান। মুখে জ্বালা, চোখে ঘূর্ণিঝড়।
সদর দরজা দিয়ে ডুকতে না ডুকতেই তিনি হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন,

জায়ান! জায়ান! জায়ান!
তাঁর পেছন পেছন একটু দূরে এসে দাঁড়ালেন ফাহিম খান আর রেজাউল খান চোখেমুখে গম্ভীরতা আর উদ্বেগ।সোলেমান খানের গর্জন শুধুদেয়ালেই নয় পুরো বাড়ির স্তব্ধতাকেই কাঁপিয়ে দিল।উপরে দোতলায় থাকা দাদি—নাফিসা খান,রুকসানা খান, শারমিন খান আর বাকি সবাই,আরিশা, মাইশা, রিহান, একে একে ভয়ে-উদ্বেগে নিচে নামতে শুরু করল।তাদের চেহারায় আতঙ্ক স্পষ্ট কে জানে কী ঝড় নামছে!আর দোতলার পশ্চিম দিকের সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে লিয়ানা…শব্দ শুনে দরজা খুলে দাঁড়িয়েছে, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নিচের চিৎকার আর হট্টগোলের উৎসের দিকে।

ডাইনিং-এর নিস্তব্ধতা আচমকা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।সোলেমান খান এক ঝড়ের বেগে ভেতরে ঢুকে পড়লেন।চোখে আগুন, কপালের শিরা টানটান।জায়ান ঠিক তখনই সোজা হয়ে দাঁড়াল বোতলের শেষ পানিটুকু গিলে, মুখটা মুছে নিচ্ছিল।
কিন্তু ঠিক তখন—
“ঠাসসস”
একটা তীব্র থাপ্পড়—
জায়ানের মুখ এক পাশ হয়ে যায়, ঠোঁট ফেটে গড়িয়ে পরে রক্ত।কিন্তু সে রক্ত মোছার আগে জায়ান হেসে ওঠে…ঠোঁট বাকিয়ে, ঠাট্টার হাসি,,,
একটা অস্বাভাবিক জোরালো থাপ্পড়ে ঘরের বাতাস থমকে যায়।এক সেকেন্ডের জন্য যেন পুরো বাড়িটা স্তব্ধ।
সোলেমান!
দাদি, চিৎকার করে উঠলেন, কাঁপা কণ্ঠে-

কি করছিস তুই! ও তোর ছেলে!
নাফিসা খান কিছু বলতেই যাবেন,,,কিন্তু তার আগেই সোলেমান খান হাত তুলে চোখের ইশারায় থামিয়ে দেন তাঁকে।তার চোখে এমন গম্ভীরতা, এমন আগুন যে এক মুহূর্তেই সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।
রিহান ফিসফিস করে পাশে থাকা আরিশাকে বলে ওঠে,
“আজকে বাড়িতে এক ভয়ানক দুর্যোগ নামছে।”
তার গলায় স্পষ্ট আতঙ্ক।
আর তখনই,
দোতলার সিঁড়ির পাশ থেকে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে লিয়ানা।তার চোখ বিস্ফারিত, ঠোঁটের ওপর হাত চেপে রেখেছে।ভয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতেই তার গলা বুঁজে আসে।ঘরের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ফাহিম খান আর রেজাউল খান কিছু বলতে চেয়েও থেমে যান।এই মুহূর্তে সোলেমানের রোষ থেকে কেউ নিরাপদ নয়, তা সবাই বুঝে গেছে।ঘরের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে,
এটা আর শুধুই পারিবারিক দ্বন্দ্ব নয় এ যেন এক রাজ্য দখলের অদৃশ্য যুদ্ধের শুরু।
সোলেমান খানঃ
তোমার কি লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই?নির্লজ্জের মতো রাস্তায় তামাশা করে আমার নাম ডুবিয়ে দিয়ে এসেছো। ছেহহহ!

জায়ান এক আঙুল দিয়ে ঠোঁটের র*ক্ত মোছে,তাচ্ছিল্যে হেসে বলে:
না আমার কোনো শরম-টরম নেই.,,Actually,আমার কোনো শরম নেই।
তারপর একটু থেমে, গম্ভীর গলায় বলল,
আর শরম তো আপনারও নেই,থাকলে কি আর আমি এ দুনিয়াতে আসতাম?? মিস্টার সোলেমান খান!
ছেলের এমন কথা শুনে রক্তে আগুন ধরে গেল সোলেমান খানের।
তিনি আবার ছুটে এলেন, আরও এক থাপ্পড় মারতে উদ্যত…
ঠিক তখনই,
প্লিজ! বড়ো আব্বু!…

কাঁপা গলায় জায়ানের সামনে এসে দাঁড়ায় লিয়ানা।ভয়ে চোখ বড় বড়, মুখে অপরাধবোধ।
জায়ান ভাইয়ার কোনো দোষ নেই… সব দোষ আমার আমারই উচিত হয় নি কলেজ ফাংশনে যাওয়া ভুল আমি করেছি।
সবাই স্তব্ধ।জায়ান হতবাক,সে কি ঠিক দেখছে??এই মেয়ে তার হয়ে উকালতি করতে এসেছে??তারপর মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে বলল-
আহা! তুই এখানে এলি কেনো??নিজের রুমে যা,,,Go now
কিন্তু লিয়ানা নড়ল না, তাকিয়ে থাকল সোজা সোলেমানের চোখে।
সোলেমান খান ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন,
কাকে কি বলবো আমি?? বাড়ির সবকটা এক লাইনের.. পুরো দেশের মিডিয়া এখন ব্যাপার টা হেডলাইন করে দিয়েছে। ইজ্জত ঐতিহ্য বলে আর কিছু রইল না।
হঠাৎ, হালকা এক খ্যাপাটে হাসি দিয়ে জায়ান বলল,

what?! কিসের নিউজ? কই নিউজ? দেখতে চাই আমিও,,এই রিহান টিভি টা অন কর তো।
রিহান একটু দ্বিধা নিয়ে রিমোট তুলে টিভি চালু করে।
কিন্তু,,
পর্দায় কোনো খবর নেই।
যে চ্যানেলটা প্রথম জায়ান-লিয়ানার স্ক্যান্ডাল নিয়ে তোলপাড় করছিলো
Z News24 সেই চ্যানেল এর দুর্ঘটনাজনিত আগুনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে।Z News24 এর সম্প্রচার ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড,তবে সৌভাগ্যক্রমে কেউ হতাহত নয়।
বাড়ি জুড়ে এক মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধতা।সবাই তাকিয়ে আছে পর্দার দিকে।
চোখ-মুখ ফাঁকা হয়ে গেছে, যেন কারও বিশ্বাস হচ্ছেনা।
আর তখন,

জায়ান ধীরে ধীরে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে।পায়ের ওপর পা তুলে রিমোট হাতে নিয়ে একটা ক্লিক করে চ্যানেল বদলায়,আর ঠোঁটের কোনে এক চরম “তাচ্ছিল্যের হাসি…” তার চোখে কোনো অনুশোচনা নেই, নেই কোনো ভয়। ফাহিম খান আর রেজাউল খান, তারা দুজনেও বেশ অস্বস্তিতে।
সোলেমান খান সোফায় বসে, বাড়ির ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বল লেন,,,
তোরা সবাই ওপরে যা। এখন বড়দের মধ্যে কথা হবে।
আরিশা, মাইশা, রিহান দ্রুত উঠে যায় ওপরে। লিয়ানা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে নীচে থাকতে চায়, কিন্তু সোলেমান খান রাগী চোখে তাকাতেই ভয়ে মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যায়।
সোলেমান খান ঠান্ডা গলায় বলেন, কি জন্য এসেছো হঠাৎ?
জায়ান হালকা হেসে উত্তর দেয়, কেনো? আপনি জানেন না বুঝি? Come on dad!,এত্ত সরল সাজবেন না, it doesn’t suit on you.!

সোলেমান খান গলা চড়িয়ে বলেন, “যা জিজ্ঞেস করছি, তার উত্তর দাও! বাজে বকো না!
জায়ান এক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে গম্ভীর গলায় বলে, বিয়ে করতে এসেছি।
বাড়ি জুড়ে হঠাৎ এক গম্ভীর নীরবতা। তারপরই দাদী বলে ওঠেন,
আলহামদুলিল্লাহ! এইটা তো সুখবর!
ভয়ে জমে যাওয়া শারমিন খান মুখ চাপা দিয়ে হাসেন।
ফাহিম খান বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করেন, বিয়ে করবি! ভালো কথা। আমি তো ভাবলাম, ফ্রান্সে গিয়ে হয়তো সব গুছিয়ে নিয়েছিস, বিয়ে-টিয়ে করে সেটেল হয়ে গেছিস!
জায়ান চঞ্চল ভঙ্গিতে বলে ওঠে, আহা! শ্বশুর আব্বু! কি যে বলেন! লজ্জা দিয়ে দিলেন তো,,স্যরি, স্যরি, would-be father-in-law!

-What!
সোলেমান খান যেন আগুন হয়ে ওঠেন,সোলেমান খান সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন, চোখে আগুন।
কি বলতে চাস তুই? স্পষ্ট করে বল!
জায়ান উঠে দাঁড়িয়ে, ঘাড় কাত করে একবার চারপাশে তাকিয়ে নিয়ে বলে ফেলল,
Shit! কিছু ভুল বললাম নাকি? Mr. SOLEMAN KHAN! আপনি কি সব ভুলে গেছেন?
চুপ কর ফাজিল!
সোলেমান খানের গর্জন ঘরের বাতাসে ধাক্কা খেল।
এমন সময় নাফিসা খান এগিয়ে এলেন, উদ্বিগ্ন মুখে জিজ্ঞেস করলেন,
জায়ান! তুই কি,তুই কি লিয়ানাকেই বিয়ে করতে চাস?
ঘরের প্রতিটি মুখ যেন জমে গেল। নিশব্দ।জায়ান কিছু বলার জন্য ঠোঁট খুলতেই…
NO! NEVER!
সুলেমান খান গর্জে উঠলেন,

এই বাড়িতে এই কথা যেন আর একটিবারও না শুনি! আমি বেঁচে থাকতে এটা কোনোদিনও সম্ভব না!
তার মুখ লাল হয়ে উঠেছে রাগে। কণ্ঠ কাঁপছে।
তার মতো অসভ্য, উচ্ছৃঙ্খল ছেলের হাতে আমি আমার ফুলের মতো মেয়েকে তুলে দেবো? কখনোই না!…
সবাই স্তব্ধ। জায়ান-
How Disgusting ! আমি কোন দিক দিয়ে কম বলুন তো?
তারপর খানিকটা পেছন দিকে হেলে হালকা দুষ্টু হেসে বলে,
বরং, আমার সাথে থাকলে শুধু দিন না,,রাতেও সুখে থাকবে। সুখের সাগরে ভাসিয়ে দেবো
ঘড়ির কাঁটা থেমে গেছে যেন।দাদি তখনই চেয়ারে বসে থাকতেই হঠাৎ কেশে উঠলেন —
কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যায় ছেলেটা!
ছেলের এমন লাগামহীন কথা শুনে নাফিসা খাঁন থতমত খেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন,রুকসানা খান,শারমিন খানও লজ্জায় পিছন পিছন চলে গেলেন,, বাড়িটা যেন কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। নিঃশব্দ, নিঃস্পন্দ, শুধু হৃদস্পন্দনের শব্দগুলো যেন আরো জোরে শোনা যায়।আর জায়ান? সে তখনো ঠোঁটের কোণে সেই হাসি নিয়ে চুপচাপ বসে যেন এই অশান্তি, এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতা, এই পিনপতন নিরবতাই তার পছন্দের খেলা।

ঝলমলে গুলশানের একটি সুউচ্চ বিল্ডিং,,বিল্ডিংয়ের গায়ে একটা নামপ্লেট ভেসে ওঠে –
RIVERSIDE TOWER – FLAT D/12
ফ্ল্যাট এর ভিতর রাজকীয় অথচ আরামদায়ক সাজসজ্জা। ঘড়ির কাঁটা তখন ১০টা ছুঁই ছুঁই।
একজন অভিজাত নারীর পেছন দিক দেখা যায়, তিনি রিনা শেখ, দেশের প্রভাবশালী একজন রাজনৈতিক নেত্রী। সিল্কের শাড়ি, স্টেটমেন্ট জুয়েলারি, আত্মবিশ্বাসে ভরা মুখ।ধীরে পা ফেলতে ফেলতে রিনা শেখ একটি রুমের দরজায় এসে দাঁড়ান।ভিতর থেকে ভেসে আসছে গিটারের মৃদু টান আর একটি ছেলের হালকা হাসির শব্দ।রুমের আলো হালকা, জানালার পর্দা উড়ছে হাওয়ায়।ইশান গিটার হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আছে। চোখে-মুখে কেমন যেন এক ঘোরের ছাপ, মনে হচ্ছে কোনো স্মৃতি তাকে পেছন থেকে টেনে ধরে রেখেছে।
ঠিক তখন রিনা শেখ ধীরে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকেন।
রিনা শেখ(মায়াভরা গলায়)-

এতো রাতে একা একা কী ভাবছো আমার প্রিন্স?
ইশান (চোখ গিটার থেকে না সরিয়েই হালকা হেসে):
ভাবছিলাম আজ সকালে ঘটে যাওয়া একটা মুহূর্ত নিয়ে
একটা unforgettable moment।
রিনা শেখ (বিছানার পাশে এসে বসেন, ছেলের কাঁধে আলতো হাত রেখে)
কি শুনি?
জানো আজ যখন কলেজ প্রোগ্রামে গেস্ট হয়ে গিয়েছিলাম না!
ওখানে একটা মেয়ে…”
মেয়ে?
হ্যাঁ,,নামটা জানি না,,ওর মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
কেনো ওই মেয়ে কি খুব বেশিই সুন্দর ছিল?
ইশান (গিটারটা নিচে রেখে একটু হেলে বসে)-

Damn! সুন্দর মেয়ে তো অনেক দেখেছি,,কিন্তু ওর মুখে ছিল এক অদ্ভুত মায়া..একটা টান,যেন চেনা, আবার অচেনা,,অনেক pretty, sweet।তবে তার চেয়ে বেশি কিছু,,,বুঝিয়ে বলা মুশকিল,
তাই নাকি? কে সেই মেয়ে আমার ছেলেটাকে এক ঝলকে উড়িয়ে দিল!
আমি তো এখন সেই মেয়েকে দেখতেই আগ্রহী,,এতো মেয়ে দেখালাম কাউকেই মনে ধরলো না, হঠাৎ এই একটাকে মনে ধরলো কেন?”
ভালো লাগা তো হুট করেই হয়, মামুনি, ঠিক যেমন গান, যেমন কবিতা…
হুট করেই একটা সুর মন ছুঁয়ে যায়।
হয়েছে হয়েছে,কে সেই মেয়ে ইনফরমেশন আমাকে এনে দিও, আমি দেখছি কি করা যায়,এখন অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।গেলাম আমি।
তারপর,,,,

গিটার আবারও বাজে হালকা টানে। জানালা দিয়ে ঢুকছে মৃদু রাতের বাতাস।ঘড়ির কাঁটা পেরিয়ে গেছে রাত দু’টো।চারদিক নিস্তব্ধ,গাঢ় অন্ধকারে ডুবে আছে শহর।ঘরের ভেতর আলো নিভে গেছে অনেকক্ষণ আগেই।তবুও চোখে ঘুম নেই ইশানের।ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় সে। নিঃশব্দ পায়ে এগিয়ে যায় বেলকনির দিকে।বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই হালকা এক শীতল বাতাস তার মুখ ছুঁয়ে যায়।চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে নীচের রাস্তায় ইশান চুপচাপ তাকিয়ে থাকে সেই চাঁদের দিকে, চোখে এক রকম হাহাকার।তার কণ্ঠে হঠাৎ হিমস্নিগ্ধ এক সুর— যেন হৃদয় ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা কিছু কথা।.

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৭

“তাকে খুঁজে”
বৃষ্টি চোখে রূপকথা সে অচেনা…
ধরা দিয়েও দেয় না ধরা…
রয়েছে যে অজানা,
রয়… অজানা…!
“কেনো অচেনা?”

তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here