তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৩
তানিশা সুলতানা
“সহ্য করতে পারবে তো?
আদ্রিতা ভ্রু কুচকে তাকায় আবরারের মুখ পানে। পাগলের মতো কথা। আদ্রিতা না কি সহ্য করতে পারবে না? চুমু সহ্য করতে না পারলে জীবনটাই তো বৃথা। হাহহ খুব পারবে। এই যে টিভির স্কিনে থাকা মেয়েটা মজা করে সহ্য করে নিচ্ছে। যেনো এর থেকে মজাদার আর কিছু নেই।
আবারও ভাবনায় পড়ে যায় সে। সত্যিই কি এর থেকে মজাদার কিছু নেই?
আবরারের মুখ পান থেকে নজর সরায়। এই মুহুর্তে টিভির স্কিনে চলছে অশ্লীল এবং আপত্তিকর দৃশ্য। হাত পা কাঁপতে শুরু করে আদ্রিতার। লজ্জায় গাল দুটে লাল হয়ে উঠেছে। কানে গরম অনুভব করছে। চোখের পাতা ভাড়ি মনে হচ্ছে। তাকাতে ইচ্ছে করছে না।
শুকনো ঢোক গিলে সে। জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে আলগোছে টিভি বন্ধ করার জন্য রিমোট খুঁজতে থাকে। কিন্তু আশেপাশে তার দেখা মেলে না। কাজের সময় কিছুই পাওয়া যায় না।
আবরার সোজা হয়ে বসে। একটা হাত আদ্রিতার পেছন দিয়ে সোফার হাতলে রাখে। একটু একটু ছুঁয়ে দিচ্ছে আদ্রিতা পিঠ। আরেক দরফা চমকায় সে। মনের মধ্যে অদ্ভুত কিছু ভাবনারা ভিড় করেছে। তাড়াহুড়ো করে একটু এগিয়ে বসে সে।
আবরার নিচু স্বরে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এসব দেখে হাজব্যান্ড এর অভাব ফিল করো না?
সামান্য কথা কিন্তু মিনিংটা অমান্য। লাজুক এবং ভীতু আদ্রিতার লাজ বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। হলোও তাই মাথা খানা একদমই নিচু হয়ে গিয়েছে। দুই হাত একে অপরের সঙ্গে চাপ প্রয়োগ করছে। ইচ্ছে করছে দৌড়ে চলে যেতে। কিন্তু বেইমান দেহ খানা চলতে চাইছে না যেনো।
এটারই সুযোগ নিলো বোধহয় আবরার। সোফার হাতলে রাখা হাত খানা আদ্রিতার কাঁধে রাখে। এবং আচমকা টান দিয়ে নিজের দিকে নিয়ে আসে।
ভয়ার্তক আদ্রিতা বলে ওঠে
” ক…..কি করছেন?
সিয়াম ভাই কিচেনে।
কথা খানা বলে নিজেই বিরক্ত নিজের ওপর। বা***লের এক্সকিউজ দেখালো। যেনো তারা জামাই বউ। কড়া ভাষায় কিছু বলা যেতো না?
“ডু ইউ থিঙ্ক
আই ফাকিং কেয়ার অ্যাবাউট
গোটা বাক্য শেষ করার আগেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে সিয়াম। আদ্রিতা এক লাফে দাঁড়িয়ে পড়ে এবং জান প্রাণ এক করে দৌড়ে চলে যায় নিজ কক্ষে। এ্যানিকে সাথে নিতে বেমালুম ভুলেই গিয়েছে। নিজের জীবন বাঁচাক আগে তারপর অন্য কথা।
সোফায় গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকা এ্যানির পানে তাকায় আবরার। ইচ্ছে করলো নরম তুলতুলে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে।
তবে ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিলো না।
সিয়াম বোকার মতো তাকিয়ে আছে আবরারের পানে। আদ্রিতাকে দেখলো সে ছুটে পালাতে। এখন কথা হচ্ছে আবরার কি করছিলো আদ্রিতার সাথে?
কি করছিলো? কি মানে কি?
ভাবতে ভাবতে এগিয়ে আসে সিয়াম। আবরারের পাশে বসে প্রশ্ন করে
” চুমু খেয়েছিস?
“চুমুতে পোষাবে না আমার। হট নাইট লাগবে।
” অল হবে না?
“উহু
গোটা নাইট হ ট থাকতে হবে।
” আদ্রিতাকে ছেড়ে দে ভাই। তোর এই হটনেস বাংলাদেশের একটা জনগণ কমিয়ে দিবে।
আবরার সিয়াম এর মাথা চাটি মারে।
“ইডিয়েট
জনগণ বাড়িয়ে দিবে।
রাত তিনটে বাজে। তিনটে মানেই আমানের কাছে গভীর রাত। ঘুমিয়েছে দুটোয়। তার কিছু মুহুর্ত পড়েই ফোন বেজে ওঠে। আননন নাম্বার থেকে কল করে বলা হয়েছে জুরিখ নদীর পাশে আসতে। কে বা কারা কল করেছে জানা নেই আমানের। তবে যাওয়াটা বাধ্যতা মূলক মনে হলো। হয়ত কোনো প্রয়োজন। নাহলে কেনো কল করে ডাকবে?
টিশার্ট এবং টাউজার পড়ে ঘুমিয়ে ছিলো আমান। সেভাবেই বেরিয়ে যায়। গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করতে হবে। এই মুহুর্তে গ্যারেজে যেতে ইচ্ছে করলো না তাই বারান্দায় ঢেকে রাখা বাইক নিয়েই ছুটে।
ঠান্ডা পড়েছে প্রচন্ড। কুয়াশায় রাস্তা ঘাট দেখা মুশকিল। বিরক্ত আমান বাইকের স্পিড কমিয়ে দেয়। পাছে আবার এক্সিডেন্ট করে বসবে৷
তবে শেষ রক্ষা হয় না। পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারে তার বাইককে। বাইক সমেত পড়ে যায় আমান। ডান হাতের ওপরে পড়ে বাইকের মাথা। প্রচন্ড যন্ত্রণায় ছটফট করে ওঠে আমান৷ মৃদু স্বরে চিৎকার করে।
গাড়িটাও থেমে যায়৷ বেরিয়ে আসে আমান এবং সিয়াম৷
ভয়ার্তক সিয়াম এগিয়ে যায় আমানের দিকে। বাইকের তলা থেকে টেনেটুনে বের করে তার হাত। শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে।।
অপরদিকে আবরার বুকে হাত গুঁজে শান্ত নয়নে দেখছে। না কোনো সিমপ্যাথি দেখাচ্ছে আর না কোনো অনুসূচনা মূলক বাক্য আওড়াচ্ছে।
কিছু মুহুর্তে আগে নিজে ইচ্ছেকৃত ভাবে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো এতে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই।
সিয়াম একা একাই গাড়িতে তোলে আমানকে। এবং নিয়ে যায় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। দাঁড়িয়ে থাকে আমান। ঠোঁটের কোণায় বোধহয় একটু হাসি ফুটে উঠলো তার। অন্ধকারে ঠিক বোঝা গেলো না। তবে বিলাই আঁখি দুটো চকচক করছে।
“যে হাত আমার বউকে স্পর্শ করার সাহস দেখাবে সেই হাত না থাকাই শ্রেয়।
নেক্সট টার্গেট আসিফ আদনান।
ঘুম উঠে গিয়েছে সিয়াম এর। আমানকে হাসপাতালে ভর্তি করে বাসায় আসতে আসতে সকাল হয়ে গিয়েছে। আবরার ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে টি-টেবিলের ওপর পা রেখে আরাম করে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ল্যাপটপে কিছু দেখছে।
“তুই আমান এর হাত ভেঙে দিলি?
ভয়ার্তক কন্ঠস্বর সিয়ামের। দৃশ্য খানা সে ভুলতেই পারছে না। প্রাণ প্রিয় বন্ধুর সুন্দর হাত খানা কিভাবে চোখের পলকেই ভে ঙে দিলো। গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করছিলো।
আবরার ল্যাপটপের স্কিনে দৃষ্টি রেখে স্বাভাবিক স্বরে জবাব দেয়
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১২
” দিলাম ভে ঙে। নেক্সট টার্গেট তুই।
এবার তোর চোখ তুলবো।
সিয়াম সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখের ওপর হাত রাখে। অনুন্নয়ের স্বরে বলে
“প্রয়োজনে তোর বউকে মা বলে ডাকবো। তাও চোখ তুলিস না।
” ওকে
যাহহ তোর মাকে ডেকে নিয়ে আয়। বলবি বাবা ডাকছে।