তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৪
তানিশা সুলতানা
“যাহহ তোর মাকে ডেকে নিয়ে আয়। বলবি বাবা ডাকছে।
সিয়াম হতদম্ভ হয়ে যায়৷ ক্রাশকে মা বলে ডাকবে? যাকে দেখে হৃদয়ে ঘন্টা বেজেছিলো, মন বলেছিলো ” জীবনসঙ্গী পেয়ে গিয়েছিস” কলিজা বলেছিলো “তাকে তোর জন্যই পাঠানো হয়েছিলো” ফুসফুস বলেছিলো “তোর ভালোবাসার পাখি” নাড়িভুড়ি বলেছিলো “এবার তুই মিঙ্গেল হবি”
সেই ক্রাশকে এবার মা ডাকতে হবে। এই অবিচার ধর্মে সইবে?
হৃদয় খানা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
আবরার কি অন্যায় কথা বলে নি? অবশ্যই বলেছে। ঘোর অন্যায় মূলক কথা বলেছে। চরম লেভেলের অন্যায়। কিন্তু এটা কে বলবে গোমড়ামুখো ভয়ংকর আবরারকে?
কার বুকের পাটা আছে আবরার তাসনিনের গলায় আঙুল দিয়ে বোঝানোর “তুই অন্যায়কারী। তুই অপরাধী। তোর ক্ষমা নাই”
যেই বলতে যাবে তাকেই চোখের দৃষ্টি দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে বা আমানের মতো মুখ খানা ভেঙে দিবে। শুকনো ঢোক গিলে সিয়াম। অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় আবরারের পানে। কি সুন্দর দেখতে। ঠিক রাজপুত্রের মতো। কিছু মন খানা? নির্দয়, পাষাণ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই মুহুর্তে নির্দয় পাষাণ পুরুষ ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ল্যাপটপের কিবোর্ডে আঙুল চালাচ্ছে। খচ খচ শব্দে মুখরিত হচ্ছে গোটা ড্রয়িং রুম। কপালের তার বিশাল তিনটে ভাজ। যেনো ল্যাপটপ তার বউয়ের পানে তাকিয়েছে।
সিয়ামের মনে আছে প্রথম যেদিন তার আবরারের সাথে দেখা হয়েছিলো।
সুইজারল্যান্ড এর গম্ভিয়া নামক এক কোম্পানি চাকরি করতো সিয়াম। একা মানুষ। বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। অফিস টাইম শেষ হওয়ার পরে কানে হেডফোন গুঁজে নিস্তব্ধ রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাঁটছিলো এবং গুনগুন করে গান গাইছিলো।
হঠাৎ একটা গাড়ি এসে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা মারে সিয়ামকে। ছিটকে পড়ে গাছের সাথে বাড়ি খেয়েছিলো। প্রথম মাসের বেতন দিয়ে কেনা oppo ফোন খানা ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছিলো। কপাল ফেটে, হাত পা ভেঙে আধমরা হয়ে পড়ে ছিলো।
গাড়িটা মূলত আবরারের ছিলো।
সে গাড়ি থেমে নেমে সিয়ামের কাছে আসে। কপাল কুঁচকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং বেহাল দশা দেখে কাকে যেনো কল করে। ইংরেজিতে কিছু একটা বলেছিলো।
তারপর অর্ধমৃত সিয়ামকে একা ফেলে গাড়ি নিয়ে শো করে চলে যায়।
মিনিট দশের পরে দুজন লোক এসে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
পুরোনো কথা মনে করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিয়াম। হুট করেই মনে মনে রাগ চেপে বসে। গমগম স্বরে বলে ওঠে
” তু তুই সত্যিই মা ডাকতে বলবি? মায়া দয়া নেই শরীরে? তুই শালা মানুষই না। হারামি।
তোর সাথে থাকতে আমার ভয় করছে। কিভাবে পারলি আমানের হাত ভাঙতে। ও আদ্রিকে
হাতে থেমে যায় আবরারের। ভ্রু কুচকে তাকায় সিয়ামের পানে। মুহুর্তেই সিয়াম চুপসে যায়। কথা গুলো গলায় আটকে পড়ে। উচ্চস্বরে নিচু হয়ে আসে। আমতা আমতা করে বলে
“ও.. ওই মাকে আমান বোনের নজরে দেখতো।
আবরার বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। গলায় ঝোলানো হেডফোন কানে স্যাট করে নেয় অতঃপর আবারও মনোযোগ দেয় নিজের কাজে। সিয়ামের বকবক শোনার ইন্টারেস্ট নেই তার।
অসহায় সিয়াম গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে আবরারের পানে। এই মুহুর্তে আদ্রিতার মতো তারও একখানা কবিতা মাথায় আসছে
” দেখতে মানুষ কিন্তু স্বভাব বাঘের মতো
তাকে দেখে মুতে দেয় মাইয়্যা পোলা কতোশতো
ভালোবাসায় কাঁচা সে খায় বার বার ডাব্বা
সে আর কেউ নয় আমার আবরার আব্বা
কবিতা খানা বিরবির করে আওড়ায় সিয়াম। আজ বিন্দু পরিমাণ সাহস থাকলে উচ্চস্বরে বুক ফুলিয়ে কবিতা বলতো। আফসোস সাহস নেই। সিয়াম হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে চলে যায় কিচেনে। ভীষণ খিধে পেয়েছে। এই মুহুর্তে খাবার প্রয়োজন। আতিয়া বেগম অনেক কিছু রান্না করে রেখে গেছে। সিয়াম সব একাই সাবাড় করে ফেলবে আজকে। আহহহহা কি শান্তি
আতিয়া বেগম অহনার ফোন খানা দিয়ে গিয়েছে আদ্রিতাকে। এই বাড়িতে একটাই টিভি আছে। সেটা ড্রয়িং রুমে। একা একা সময় কাটবে না। তাই ফোন দিয়ে যাওয়া।
আদ্রিতার খুশি আর দেখে কে?
কক্ষের দরজা আটকে বেশ অনেকক্ষণ কথা বলেছে আসিফ আদনানের সাথে। কালকেই সে সুইজারল্যান্ড আসছে। তারপর আদ্রিতাকে নিয়ে ঘুরবে গোটা শহর। অনেক কিছু দেখাবে।
অতঃপর বাংলাদেশে পা রেখেই আদ্রিতার মায়ের কাছে বিয়ের প্রপোজাল দেবে। রাজি হলে হলো নাহলে দুজন মিলে পালাবে।
এমনটাই শলাপরামর্শ করেছে।
আসিফ কল কাটতেই আদ্রিতার ভয় করতে শুরু করেম
বিশাল এই বাড়ি খানায় একা একা থাকা যায়? আদ্রিতার মতো পুঁটিমাছ থাকতে পারবে? এটা সম্ভব?
কখন না জানি ভুত এসে গিলে খেয়ে ফেলে। তারওপর আদ্রিতার কক্ষের পেছনেই রয়েছে বিশাল পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে যদি কিছু একটা চলে আসে?
একা কক্ষে বড্ড ভয় করছে তার। এ্যানি শান্তিতে ঘুমচ্ছে কম্বল মুড়ি দিয়ে।
ভয়ার্তক আদ্রিতা এ্যানিকে কোলে তুলে নেয়। বেলকনির দিকে এক পলক তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে।
আশ্চর্য আসিফের সাথে যখন কথা বলছিলো তখন কেনো ভয় করলো না?
আর এখনই বা কেনো করছে?
ভয়েরও কোনো কান্ডবজ্ঞান নেই। ধুরর
বিরক্ত আদ্রিতা ফোন এবং এ্যানিকে নিয়ে কক্ষ ত্যাগ করে। ড্রয়িং রুমে আলো জ্বলছে। দিনের মতোই চকচকে।
সোফা খানাও বেশ চওড়া।
আদ্রিতা এ্যানিকে বুকের মধ্যে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। কুশন বালিশ হিসেবে মাথায় দেয়।
বাহহহ এখন আর ভয় করছে না। শান্তিতে ঘুমতে পারবে।
মৃদু হাসে আদ্রিতা। বিরবির করে বলে
“আসিফ আদনান স্বপ্নে এসে আমায় চুমু খেয়ে যান। শক্ত চুমু।
যে চুমুতে আমি কপোকাত হয়ে যাবো।
ভোর হওয়ার আগেই আবরারের ঘুম ছুটে যায়। এটা বরাবরের স্বভাব। আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। ল্যামপোস্টের পাশে হ্যালো কিটির মাথা ওয়ালা ঘড়ি খানা টিকটিক করে বেজে চলেছে। জানান দিচ্ছে ” আবরার তাসনিন উঠে পড়ো। তোমার শরীর চর্চার সময় হয়ে গুয়েছে”
চোখ বন্ধ করেই সাদা কম্বলের তলা থেকে হাত বের করে। ঘড়ির মাথায় থাকা বাটন চেপে সেটা বন্ধ করে।
অতঃপর চোখ খুলে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। বেলকানির পর্দা সরানো। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বাইরে বেশ কুয়াশা পড়েছে।
বা হাতে চোখ ডলে নেয় আবরার। এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে কোমর হতে কম্বল সরায়।
দৃশ্যমান হয় গোটা শরীর। দু কোয়ার্টার প্যান্ট ছাড়া আর কিছুই নেই। মার্বেল ফ্লোরে পা রেখে জুতো খুঁজে নেয়। পেয়েও যায় মুহুর্তে।
জুতো পড়ে বিছানা ছাড়ে। প্রথমেই কম্বল ভাজ করে কাবাডে রাখে। বিছানা চাদর টানটান করে বালিশ সাজিয়ে কক্ষ হতে বেরিয়ে যায়।
এক কাপ কফি ছাড়া সকাল শুরু হয় না।
শেষ সিঁড়িতে পা রাখতেই আবরারের চোখ আটকায় সোফায় ঘুমিয়ে থাকা আদ্রিতার পানে।
লম্বা চুল গুলো ফ্লোরে বিছিয়ে আসে। সাদা রংয়ের টপস খানা ওপরে উঠে গিয়েছে। স্কার্টের অবস্থাও শোচনীয়। হাঁটুর ওপরে চলে এসেছে। ওড়না ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
এ্যানি ওড়নার মধ্যে ঘুমিয়ে আছে।
বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে আবরার। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় সিয়াম এর কক্ষের পানে। যে কোনো মুহুর্তেই বেরিয়ে আসবে ইডিয়েটটা।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৩
দাঁড়ি ভর্তি গালে হাত বুলিয়ে এগিয়ে আসে আবরার। আদ্রিতার উদরে অবস্থিত মধ্য বিন্দুর পানে নজর পড়তেই পুরুষালী চিত্ত লাফিয়ে ওঠে। কাটা দিয়ে ওঠে শরীরে। কঠিন কিছু গালি আওড়ে নজর ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু বেহায়া চোখ দুটো সরতে নারাজ।
অগত্য বসে পড়ে ফ্লোরে। নজর পড়ে ফোনের পানে।
সেটা হাতে তুলে কল করে সিয়াম এর নাম্বারে।
বেশ সময় লাগে রিসিভ হতে।।
হ্যালো বলার আগেই আবরাট বলে ওঠে
“দশটার আগে রুম থেকে বের হবি না।
সিয়ামকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কাটে। পরপরই ফোন খানা অযত্নে ফেলে রাখে অন্য সোফায়।