তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৭

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৭
তানিশা সুলতানা

ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ড্রাইভ করছে আবরার। গম্ভীর মুখশ্রীতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে রাগের প্রতিচ্ছবি। চোয়াল শক্ত করছে ক্ষণে ক্ষণে। স্টিয়ারিং এ হালকা আঘাত করছে খানিক্ষন পরপর। বিরবির করে কিছু একটা বলছে। যেনো কাউকে ধমকাচ্ছে।
সিয়াম গভীর নয়নে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে আবরারকে। যেনো আবরার আপেল গাছ থেকে টপকে পড়া আপেল। এবং পড়েছে তার মাথার ওপরে। এবার ভাবতে ভাবতে এক খানা সূত্র আবিষ্কার করেই ফেলবে৷
“তাছিন গ্রুপ অব কোম্পানি” দশ তালা উঁচু বিল্ডিং টা পেরিয়ে বাঁকা রাস্তায় গাড়ি ঢুকে পড়ে। নরেচরে বসে সিয়াম। কপাল কুঁচকে বলে

“তোর কি হইছে খুইল্যা ক তো মাম্মা থুক্কু আব্বা। অফিস তো ফেলে আসলি। রাস্তা ভুইল্লা গেছিস?
আবরার জবাব দেয় না আর না গাড়ি থামায়। স
সিয়াম বিরক্ত হয়। বোবার মতো বসে থাকা যায়? এই আবরারের সাথে অফিসে আসলে বোরিং হয়ে ওঠে সে।
না গাড়িতে এফএম চালাবে আর না একটা কথা বলবে। সিয়াম যে কাউকে কল করে কথা বলবে সেটাও করা যাবে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আব্বা সত্যি কথা ক তো কি হইছে?
এমন মনে হচ্ছে তুই চু/মু খেতে যাচ্ছিলি আর তখনই কেউ কাবাবের হাড্ডি হয়ে ঢুকে পড়েছিলো
তোর ঠোঁ/ট কেমন উজ্জ্বল উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। আবার মুখ খানা
আবরার তাকায় না সিয়ামের পানে। স্টিয়ারিং শক্ত করে চেপে ধরে গম্ভীর স্বরে বলে
“খেতে পারি নি৷ তোর মা ডিস্টার্ব করেছে।
নরেচরে বসে সিয়াম। তবে জবাব আশা করে নি। এমনিতে আবরার তাসনিনকে প্রশ্ন করলে কখনোই জবাব পাওয়া যায় না। আজকে কি সূর্য ওঠে নি? হবে হয়ত।
শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয় সিয়াম। নয়ন জোড়া বড় বড় করে অতঃপর বলে
“খেতে পারিস নি তাই চার ঘন্টা। না মানে আমায় কল করেছিলি ছয়টায়। দশটায় বেরুতে বলেছিলি। সেই হিসেবে চার ঘন্টা। এতোক্ষণ কি করছিলি?
আবরার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায় সিয়ামের পানে। মুহুর্তেই ঠোঁটে আঙুল দেয় সিয়াম। যেনো আর একটাও কথা সে বলবে না। প্রতিজ্ঞা করলো।
তবে মনে মনে বলে

“কপাল খারাপ হলে ক্রাশকেও মা ডাকতে হয়। এটাই নিয়তি ভাই এটাই কপাল।
বেশ অনেকক্ষণ কেটে যায়। পিনপিন নিরবতা গাড়ি জুড়ে। বিরক্ত সিয়ামে উঁকি ঝুঁকি মে /রে বাইরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করছে।
” সিয়াম আমি ওকে নিয়ে কোথাও একটা যেতে চাই। ব্যবস্থা কর।
সিয়াম বুঝতে পারে না ঠিক। সে সিটের ওপর দুই পা তুলে বসে। গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে নেয় “ওকে বলতে কাকে বোঝালো”
তবে তার মোটা মাথায় গবেষণায় কাঁচা।
“ওকে মানে কাকে? আমান ইভান আহাদ না কি আমি মানে সিয়াম
” ও…ই মেয়েটা। যে আমার বাড়িতে থাকে।

“ওহহহ তোর বউ?
মানে আমার মা?
আমার বাচ্চাদের নানি?
আমার বউয়ের শাশুড়ি?
আমার শশুরের বিয়ান?
তোর বাচ্চাদের মানে আমার ভাই বোনের আম্মু?
তোর মায়ের
” সাট আপ সিয়াম।
যেটা বলেছি কর জলদি। দুই দিন সময় দিলাম।।
সিয়াম গালে হাত দিয়ে কিছু একটা চিন্তা করে। তারপর বলে
“তুই কি আলাদা টাইম স্পেন্ড করতে চাচ্ছিস? হা/নি/মু/ন টাইপের?
বিরক্ত হয় আবরার। চোখ মুখ কুঁচকে বলে

” নাহহহ গ্রুপ ডান্স করতে চাচ্ছি।
ভেংচি কাটে সিয়াম।
“হতে পারি সিঙ্গেল তবে বুঝি সব।
হয়ে যাবে। আমানের বাড়িটা তোর জন্য বুক করলাম চার দিনের জন্য। চার দিন মানে চার দিনও। তার বেশি একদিনও না।
তবে আব্বা আমার একটা কবিতা শুনলে তোকে ফ্রীতে ফুলের ব্যবস্থাও করে দিবো।
শুনবি কবিতা?
আবরার জবাব দেয় না। সিয়াম বুঝে ফেলে আবরার তাসনিন বিখ্যাত কবি সিয়াম মাহমুদ এর কবিতা শুনতে ইচ্ছুক।
তাই সিট থেকে পা নামিয়ে সোজা হয়ে বসে। দুবার কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে অতঃপর বলতে শুরু করে

“ওই পাড়ার সেলিনা
তার সাথে আড়ি
কচু গাছে ব্যাঙ হাসে
সিয়াম আবরারকে ভালোবাসে
চিল ডাকে কাক নাচে
আবরার আব্বা চু/মু খেয়ে বাঁচে
বক আর কাক দুই ভাই
সিয়াম ভাই এর বউ নাই
দুঃখ আমার পাহাড় সমান
হাসপাতালে আছে আমার বন্ধু আমা
সিয়াম ভেবেছিলো তার কবিতা শুনে আবরার হাসবে। পিঠ চাপকে বলবে “বাহহহ। দারুণ কবিতা লিখিস তুই। একদিন মস্ত বড় কপি হবি।”

আদ্রিতাকে হালকার ওপরে কপি করেছে এটা একটুও বুঝতে পারবে না।
কিন্তু এসব কিছুই হলো না। উল্টে গাড়ি থেমে গেলো।
বেচারা সিয়াম চমকে বলে ওঠে
“এ ভাই গাড়ি থামালি কেন? মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দিলে আমি অফিস যাবো কি করে? আর জীবনেও কবিতা কমু না ভাই।
সিয়ামের কথা কানে তুলে না আবরার। সিটবেল্ট খুলে নেমে পড়ে গাড়ি থেকে।
সিয়াম পূণরায় কিছু বলবে তার আগেই খেয়াল করে তারা হাসপাতালের সামনে। ব্যাস সিয়ামকে আর পায় কে? লাফিয়ে নেমে পড়ে। ও রীতিমতো ভুলেই গিয়েছিলো আমানের কথা। দুটো দিন চলে গেলো অথচ মনে পড়লো না? ইসস এটাকে বন্ধুত্ব বলে?
ছিহহহ ছিহহ সিয়াম। তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। কপালে বউ নেই রে তোর।
দেখা গেলো শপিং করতে গিয়ে বউ রেখে আসলো ভুলে। তখন কি হবে?।
আলতু ফালতু চিন্তা করতে করতে আবরারকে ফেলেই চলে যায় আমানের কেবিনের দিকে। মূলত আবরারের কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।

কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আতিয়া বেগম। সামনে মাসেই বাংলাদেশ ফিরে যাবে। এখানে আর নয়। অহনার শশুর বাড়ির পরিবারও যাবে কিছু মাসের জন্য। ইচ্ছে ছিলো ছেলেমেয়েকে দেখার দেখে নিয়েছে।
আদ্রিতা মায়ের কোলে মাথা রেখে ফোন দেখছে। আর আতিয়া আদ্রিতার চুলে হাত বুলাচ্ছে আর টিভি দেখছে।
সন্ধ্যা কখন হবে?
আজকের দিনটা ফুরাচ্ছেই না। দীর্ঘ মনে হচ্ছে। সবে বেলা বারোটা।।
আদ্রিতা একটু পরপরই ফোন দেখছে।

” আচ্ছা মা আমি যদি কাউকে পছন্দ করি তাহলে তার সাথে আমার বিয়ে দিবে?
আতিয়া বেগম চমকায় না। কেনোনা এসব উদ্ভট কথা প্রায়ই বলতে থাকে আদ্রিতা। নতুন কিছু নয়।
তিনি একটু হেসে জবাব দেয়
“সে যোগ্য হলে ভেবে দেখবো
আদ্রিতা ভাব নিয়ে বলে
“যোগ্য কাউকেই তো আনবো আমি। একদম রাজপুত্রের মতো।
দেখে নিও তুমি।

” আচ্ছা দেখে নিবো।
তবে শুধু সুন্দর হলেই চলবে না আম্মু। ভালোবাসা থাকতে হবে।
“আমি আদ্রিতা। আমাকে কেউ ভালো না বেসে থাকতে পারবে?
আতিয়া বেগম এর মুখ খানা মলিন হয়ে যায়।
মনে মনে বলে
” যার উচিত ছিলো তোকে ভালোবাসা সেই তোকে ভালোবাসে নি আদ্রিতা। ভীষণ বাজে ভাবে ঠকে গিয়েছিস তুই।
গোটা দিনটা মায়ের সাথে কাটায় আদ্রিতা। এখন সন্ধ্যে ছয়টা বাজে। আসিফ বেশ অনেকক্ষণ আগেই মেসেজ দিয়েছিলো সে ট্যাক্সি ধরেছে। আসছে জুরিখ নদীর সামনে। এই ঘন্টা খানিক সময় লাগবে।
আদ্রিতা আজকে বেশ সুন্দর করে সাজুগুজু করে। লাল রংয়ের জর্জেট থ্রি পিছ। কোমর সমান লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে লাল রংয়ের হেয়ার ব্যান্ড লাগিয়েছে।
ঠোঁ/টে হালকা লিপস্টিক চোখে কাজল আর গালে ব্লাশ। গাল দুটো লাল লাল দেখালে দারুণ লাগে তার কাছে।
অতঃপর পারফিউম মেখে বেরিয়ে পড়ে।
ফাস্ট ডে*ট।

প্রেম হওয়ার পরে তো এই প্রথমবার দেখা হচ্ছে তাদের। একটু স্পেশাল তো হওয়াই উচিত।
আতিয়া বেগম কিচেনে। রাতের জন্য রান্না করছে। আদ্রিতা তাকে না বলে বেরিয়ে যায়। বাড়ির মূল ফটক পেরুনোর আগেই কোথা থেকে এ্যানি দৌড়ে এসে পা জড়িয়ে ধরে তার।
আদ্রিতা মুচকি হেসে কোলে তুলে নেয়।
তুলোর মতো নরম শরীরে ঠোঁট দাবিয়ে চু/মু খায়। এবং আদূরে সুরে বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৬

“চলো মনা
তোমার বাবার সাথে দেখা করে আসি।
এ্যানি মিউ মিউ করে ওঠে। যেনো বোঝাচ্ছে
“আমার আসল বাবা জানতে পারলে তোমাকে কি করবে আম্মু? একবার মনে করো তার কথা।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ১৮