তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২১
তানিশা সুলতানা
নিজের ওষ্ঠের ওপর হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে আদ্রিতা। একচুয়েলি কি হলো তার সাথে?
জাস্ট পাঁচ সেকেন্ড। তার মধ্যেই ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আবরার তাসনিন ঝড়ের বেগে এসে চুমু খায় আদ্রিতার ওষ্ঠের ভাজে এবং পরপরই নিজের সিটে গা এলিয়ে দেয়। বড়ই ক্লান্ত যেনো সে।
কেটে যায় কিছু মুহুর্ত। রাত বাড়ছে সেই সাথে পাল্টা দিয়ে বাড়ছে শীতের প্রতাপ। ইতোমধ্যেই ঘন কুয়াশায় ছেয়ে গিয়েছে চারিপাশ। গাড়ির জানালা দিয়ে দূরের বস্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।
আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে। এখনো ভেজা ভেজা অনুভব করছে ওষ্ঠের ভাজে। গালে বিঁধছে লোকটার খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।
আদ্রিতার স্টেচু মেরে বসে থাকতে দেখে আবরার বিরক্ত স্বরে বলে
“শ্বাস টানো ইডিয়েট। খেয়ে ফেলি নি তোমায়।
আদ্রিতা শ্বাস টানে। এতোক্ষণ যেনো নিঃশ্বাস আটকে বসে ছিলো। নত মাথা উঁচু করে তাকায় আবরারের মুখ পানে। তাতেই যেনো ঝটকা খেলো আদ্রিতা। বুক কেঁপে ওঠে পূণরায়।
আবরার তাসনিন এখনো তাকিয়ে আছে আদ্রিতার অধর পানে। যেনো মৌমাছি মধুর সন্ধান পেয়েছে। এবং সমস্ত মধু নিজ আহরণে না নিয়ে আসা পর্যন্ত নজর ফেরাবে না বা শান্ত হবে না।
আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে। বাঁকা নয়নে আবরার তাসনিন এর অধর দেখে নেয়। ঘন কালো দাঁড়ির মাঝে চিকন সরু গোলাপি অধর জোড়া। বড়ই আর্কষণীয়।কাঁপাকাঁপা স্বরে বলে
” আ….আপনি এটা
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বলতে বলতে থেমে যায়। গলা কেঁপে উঠছে। কান দুটো গরম হয়ে উঠেছে। তলপেট মোচর দিচ্ছে। আবরার সময় নেয়। দৃষ্টি সরায়। পকেট থেকে সিগারেট বের করে এবং তখুনি ঠোঁটের ভাজে পুরে নেয়। গাড়ির ডেস্ক থেকে লাইটার বের করে জ্বালিয়ে দেয় সিগারেট।
গাড়ির জানালা খুলে বেশ আয়েশ করে সিগারেট এর স্বাদ নিতে থাকে।
আদ্রিতা গোটা বিষয় লক্ষ করে। সিগারেটের স্মেইল সহ্য হয় না তার। মুহুর্তেই বমি চলে আসে। ওড়না দ্বারা নাক চেপে ধরে। এই মুহুর্তে ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে হাতির মতো দেখতে লোকটাকে একটা চটকানা দিয়ে ম্যানার্স শেখাতে। বাজে লোক।
“আ…পনি আমার ভাই। এটা ঠিক হলো না। কি করছেন এসব? আপন
আবরার বোধহয় বিরক্ত হলো। ফোঁস করে শ্বাস টেনে সিগারেট শূন্যে ফেলে দেয় এবং দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“হাজব্যান্ড
এ’ম ইউওর লাইফ পার্টনার। এন্ড ইটস ট্রুথ
আদ্রিতা শুনতে পেলো কি? বা বুঝতে পারলো কি?
তার নয়ন জোড়া দূরের ওই ভাঙা ট্যাক্সির পানে অবস্থিত। আচমকাই নজর জোড়া সেদিকে চলে গেলো। এবং দেখতে পায় কিছু মানুষ ভাঙা ট্যাক্সি থেকে বের করছে আহতদের।
তাদের মধ্যে আসিফ আদনানও ছিলো। সত্যিই কি? আসিফ যে রংয়ের শার্ট পড়ে এসেছিলো একই শার্ট। হাতে যে ঘড়ি ছিলো আঘাত প্রাপ্ত হাতেও সেম ঘড়ি। র*ক্তে রঙিন হয়ে গেলেও আদ্রিতার চিনতে অসুবিধা হয় না। বেশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। কপাল বেয়ে র*ক্ত ঝড়ছে।
চমকায় আদ্রিতা। ভয়ার্তক স্বরে বলে ওঠে
” আসিফ আদনান
আবরার হামি তোলে। গাড়ির কাঁচ তুলে দেয়। স্টারিং ঘুরিয়ে স্ট্রাট দেয় এবং বলে
“ফাস্ট কিসস অলওয়েজ স্পেশাল ডে তেই করা উচিত।
এম আই রাইট মাই সো কল্ড বোন?
আদ্রিতা জবাব দিতে পারে না। মাথা ঘুরছে তার। মস্তিষ্ক স্মরণ করাচ্ছে শুধু একটাই দৃশ্য। কানে বাজছে ” আসিফ আদনান”
গাড়ি কিছুটা দূরে যেতেই হুশ ফেরে আদ্রিতার। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে
“আসিফ আদনান এক্সিডেন্ট করেছে। ভাইয়া আমাকে নিয়ে চলুন তার কাছে।
আবরার যেনো শুনলো না। ফর্সা চোয়াল শক্ত করে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয়। তারপর হাজারবার একই বাক্য আওড়িয়েছে আদ্রিতা। তবে আবরার তাসনিন জবাব দেয় নি।
ঘড়ির কাটা টিকটিক আওয়াজ তুলে জানান দিচ্ছে বারোটা বেজে গিয়েছে। তারিখ পাল্টেছে আর নতুন বারের সূচনা ঘটেছে। বারোটার আগে ছিলো সোমবার আর বারোটার পরে হলো মঙ্গলবার।
ঠিক সেই মুহুর্তেই তাসনিন ভিলার সামনে গাড়ি থামে।গাড়ি পার্ক করে আবরার বীনা বাক্যে নেমে পড়ে গাড়ি থেকে এবং বড় বড় পা ফেলে চলে যায় বাড়ির ভেতরে। আদ্রিতা এ্যানিকে কোলে তুলে আবরারের পেছন পেছন দৌড়ে যায়। একটা মানুষ কতোটা নির্দয় হলে গভীর অন্ধকারে একটা মেয়েকে রেখে চলে যেতে পারে? দরজার সামনেই উপস্থিত সিয়ামকে। গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো গভীর কিছু নিয়ে গবেষণা করছে। আবরার সিয়ামের মাথায় চাটি মেরে ভেতরে ঢুকে পড়ে। সিয়াম বিরক্ত হয়ে কবিতা আওড়ায়
” খেলাম চাটি দিলো কে?
আবরার চাচা ছাড়া আবার কে?
খালি মারে খায় না চুমু
আরেহহ ব্যাটা সিয়াম
তুই কি মেয়ে না কি শালা নাম তার সুমু
কবিতা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিতা তার হাত ধরতে যায়। সিয়াম এক চিৎকার দিয়ে পিছিয়ে যায়। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে
“মা প্লিজ আমার নিরিহ নিষ্পাপ হাত ছোঁবে না। আব্বা ভেঙে দিবে।
আদ্রিতা বিরক্ত গলায় বলে
” কে আপনার আব্বা?
সিয়াম শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয়। তারপর বলে
“দেখতে শুনতে সুন্দর তবে ভালোবাসায় ডাব্বা
সে আর কেউ নয় আমার আবরার আব্বা।
ফোঁস করে শ্বাস টানে আদ্রিতা। করুন স্বরে বলে
” আমার বয়ফ্রেন্ড আসিফ আদনান এক্সিডেন্ট করেছে।
“করে নি তো।
ওই হাবলু কি গাড়ি চালাতে পারে না কি যে এক্সিডেন্ট করবে?
কি যে বলো না তুমি মা।
এক্সিডেন্ট করবে তো আমার আব্বা। তার চার খানা গাড়ি আছে। আর নিজে ডাইভ করতে পারে।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না? ডাকবো আব্বাকে? বলবো প্রমাণ দিতে?
আদ্রিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ করবেন? শুনবেন আমার কথা?
“হ্যাঁ হ্যাঁ বলো। শুনছি তো। আমি কি কালা না কি? সব শুনতে পাই।
কবিতার ভাষায় বোঝাবো?
শুনতে পাই সব আমি কান নয় কালা
ভালোবাসার লাল গোলাপ দিবে আব্বা তোমায় গান গাইবে লা লা
আদ্রিতা নিজের কপালে দুটো থাপ্পড় মারে। তারপর ঝাঁঝালো স্বরে বলে
” আব্বার চামচা চুপ কর বাল
আমার বয়ফ্রেন্ড আসিফ আদনানকে
আদ্রিতাকে থামিয়ে সিয়াম বলে
“হাবলু আসিফ ঠিক আছে। আমি তাকে নিজে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছি।
বিশ্বাস হলো না আদ্রিতার ঠিক। কেনো না সে নিজে চোখে দেখেছে আসিফের র*ক্তা*ক্ত হাত। সিয়াম বোধহয় বুঝলো আদ্রিতার মনের কথা। তাই নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে গ্যালারিতে ঢোকে। গাড়িতে সে এবং আসিফ বসে আছে সেরকম একটা ছবি দেখায়। এতোক্ষণে বিশ্বাস হয় আদ্রিতার। একটু হেসে টেনে দেয় সিয়ামের গাল।
” আমার মিষ্টি ভাইয়া
আদ্রিতা চলে যায় বাড়ির ভেতরে। অসহায় সিয়াম নিজের গালে হাত বুলাতে বুলাতে করুণ স্বরে আওড়ায়
” খাবো মা*ই*র কাটবে গাল
কেনো দিলাম আমি আম্মার তালে তাল?
আমার আব্বা ভয়ংকর সাইকো
এবার আমাকে বানিয়ে দিবে কাইকো কাইকো
ড্রয়িং রুমে এখনো বসে আছে আতিয়া বেগম। ছেলে মেয়ে কেউ বাড়িতে নেই ঘুম হবে তার? কখনোই না।
আবরার প্রথমে আসে। কোনো কথা না বলে নিজ কক্ষে চলে যায়। পেছনে আসে আদ্রিতা। আতিয়া বেগমকে দেখে জড়িয়ে ধরে আবরারের নামে হাজার খানা নালিশ করে। আতিয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আদ্রিতার কপালে চুমু দিয়ে বলে
“আম্মু আবরারের থেকে দূরে থাকবে। তার আশেপাশে যাবে না। ঠিক আছে?
আদ্রিতা মাথা নেরে সায় জানা৷
” আমার সোনা মা।।
এবার যাও ঘুমিয়ে পড়ো। কালকে ঘুরতে যাবো আমরা।
আজকের সকালটা বেশ সুন্দর। মনটা ভীষণ ফুরফুরে আদ্রিতার। কেনোনা আতিয়া বেগম বলেছে তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনলে আদ্রিতার চোখের ঘুম উড়ে যায়। আজকেও তাই হয়েছে। সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারে নি। এ্যানিকে কোলে নিয়ে গল্প করতে করতেই কাটিয়েছে।
ভোরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গেই কক্ষ ছেড়েছে। গতকাল মা নুপুর দিয়েছে আদ্রিতা। ঝুন ঝুনি ওয়ালা সুন্দর ডিজাইনের নুপুর। সেটা পায়ে দিয়েছে আদ্রিত।
মেরুন রংয়ের টপস এবং সাদা রংয়ের স্কার্ট। গলায় ঝুলিয়েছে সাদা ওড়না।
ঠোঁটে একটু লিপস্টিক দিতেও ভুলে না। লম্বা চুল গুলো হাত খোঁপা করে কিনেচের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। জম্পেশ একটা নাস্তার আইটের বানাবে আজকে। এ্যানি আদ্রিতার পেছন পেছন হাঁটছে অলস ভঙ্গিমায়। আরও ঘুমতে চায় সে। তবে খিধেও পেয়েছে। এ্যানির প্ল্যানিং খাবার খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়বে।
আদ্রিতা কিচেবে ঢুকে পানি গরম দেয়। তারপর ফ্রীজ খুলে ডিম, বেড, টমেটো, শশা, চিজ সব বের করে নেয়।
ইউটিউব দেখে শিখেছে রান্নাটি।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২০
চায়ের পানিতে বুরবুরি উঠে যেতেই সেখানে উপস্থিত হয় আবরার।
আদ্রিতার আঁখি পল্লব বড় বড় হয়ে যায়।
লম্বা হাতির মতো গোটা শরীরে শুধু একটু শর্ট প্যান্ট।
শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা। দ্রুত পেছনে ঘুরে।
আবরার নিজের মতো করে আদ্রিতার গরম করা পানি নিজের কফি মগে ঢেলে নেয়। তারপর তাতে ব্রিং টি এর একটা প্যাকেট চুবিয়ে চলে যায়।
আদ্রিতা ভেংচি কাটে। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে
“বাজে লোক একটা। ইচ্ছে করে একটা চটকানা দিয়ে বাপের নাম ভুলিয়ে দিতে। হাতির বাচ্চা গরিলা।