তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৪
তানিশা সুলতানা
বন্ধ অফিস রুমের এক প্রান্তে বসে আছে আবরার। মনোযোগ মনিটরের স্কিনে। মুভি চলছে। কি মুভি ঠিক বুঝতে পারছে না আদ্রিতা। অশ্লীল ড্রেসআপ। মাঝেমধ্যেই চুম্বনের দৃশ্য ফুটে উঠছে। হিরো হিরোইন সুন্দর দেখতে তবে কথায় কথায় চুমু কেনো খায় বুঝে উঠতে পারে না আদ্রি। আবরার তাসনিন বেশ এনজয় করছে মুভিটা ঢেড় বুঝতে পারছে আদ্রিতা। তবে তার লজ্জা লাগছে।
বন্ধ ঘরে দুজন নরনারী এক সঙ্গে মুভি দেখা মোটেও শোভনীয় নয়। এই মুহুর্তে মুভির পজিশন ভালো ঠেকছে না। কথা বুঝতে না পারলেও এটা বুঝতে পারছে অস্বাভাবিক কিছু ঘটবে এখন।
শুকনো ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নেয়। মনিটরের স্কিন থেকে দৃষ্টি সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখনই অপ্রীতিকর দৃশ্য ফুটে ওঠে।
কেঁপে ওঠে আদ্রিতার সত্তা। দাঁড়িয়ে পড়ে এবং বড় বড় পা ফেলে কক্ষের শেষ প্রান্তে চলে যায়। সেখানে সুন্দর বারান্দা রয়েছে তবে বন্ধ দরজার কারণে প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
আদ্রিতা পর্দা মুঠো করে ধরে জোরে জোরে শ্বাস টানে। হাইইইই রে পাগল আদ্রিতা তুই কেনো লোকটার সঙ্গে রয়ে গেলি?
জানিস না? সে নির্লজ্জ এবং বেহায়া।
মনে মনে নিজেকে বকা দেয় সে।
একচুয়েলি তখন সবাই বেরিয়ে গেলেও আদ্রিতা যায় না। এমনটা নয় যে আবরার তাকে থাকতে বাধ্য করেছে। ইচ্ছে করেই থেকে গিয়েছে। কিছু কথা বলবে আবরারকে। এবং সেগুলো বলা জরুরি।
কক্ষ খালি হতেই লোকটা কিবোর্ডে আঙুল চালিয়ে এক খানা মুভি প্লে করলো। আদ্রিতা কতোবার বললো “কিছু কথা বলতে চাই”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হাতির বাচ্চা গরিলা সেসব কানেই তুললো না।
অগত্য মুভি শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আদ্রিতাও বসে রইলো লোকটার পাশে।
সময় গড়িয়ে ঘন্টা পেরুলো তবুও লোকটার হেলদোল নেই। যেনো সে ছাড়া এই কক্ষে আর কেউ নেই।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদ্রিতা। দেয়াল ঘড়ির পানে নজর বুলিয়ে দেখে নেয় কয়টা বাজে। সন্ধ্যা হয়ে যাবে কিছু মুহুর্ত পড়েই।
সকালে কি খেয়েছিলো মনে নেই। তবে দুপুরে খাওয়া হয় নি। বড্ড খিধেও পেয়েছে।
ঘড়ির পাশেই রয়েছে আবরার তাসনিন এর বিশাল এক খানা ফটো। বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তোলা৷ ফটো খানা যে এখনকার সেটা গেটআপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তার মানে লোকটা বাংলাদেশে যায়। তাহলে বাড়ি কেনো যায় না? আদ্রিতার মাথায় ঢোকে না।
মুভিতে বোধহয় এখন গান হচ্ছে। আবরার সাউন্ড কমিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। দুই হাত পরিপাটি চুলের ভাজে। বড্ড অস্থির দেখাচ্ছে।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় আদ্রিতা। অনুমতি বিহীন আবরারের পাশের চেয়ারটা দখল করে বসে। কাঁচের তৈরি টেবিলে হাত রেখে জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। এবং বলতে শুরু করে
“ভাইয়া আপনি বোধহয় আমার লাইফ সম্পর্কে জানেন না। তবে আপনার জানা উচিত।
আমার মা নেই। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। আপনার মা আমাকে বড় করেছে। ভালোবাসা দিয়েছে। আমি এতিম এই কথাটা কখনোই মনে করতে দেয় নি।
একটু থামে আদ্রিতা। আবরারের পানে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে লোকটা আদৌও শুনছে কি না। তবে তার কোনো নরচর নেই। একই ভঙ্গিমায় রয়েছে। মনিটর আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়৷
আদ্রিতা পূণরায় বলে
” আপনার সঙ্গে আমার রেজিস্ট্রি হয়েছিলো। বিয়ের প্রতিশ্রুতি। আমি আজকে সকাল ওবদিও জানতাম না আমাদের রেজিস্ট্রি হয়েছিলো। সেই ছোট বেলায় মায়ের মৃত্যুর পরে দাদু এসে বলেছিলো “এখানে তোমার নাম লিখো” লিখেছিলাম। কেনো নাম লিখতে বলেছিলো সেটাও জিজ্ঞেস করি নি।
এখন জানতে পারলাম আপনি আমাকে মানতে
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার চোখ খুলে আদ্রিতার পানে তাকায় এবং গম্ভীর স্বরে বলে
“তখন আমাকে সামলানোর শক্তি ছিলো না তোমার। বেপরোয়া আমি। ধরলে ম/রে যেতে।
আদ্রিতার বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। অশ্লীল ইঙ্গিত বুঝতে সময় লাগে না। আবরারের পানে তাকিয়ে ছিলো বিধায় চোখাচোখি হয়ে যায়। লাল লাল চোখ দুটো দেখে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায় আদ্রিতার। চটজলদি দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
বিরবির করে বলে
” আপনি প্লিজ কথা বলিয়েন না। আপনার মুখের একেকটা বুলি আগুনের থেকেও ভয়ংকর। জ্বালিয়ে দেয় আমার সমস্ত সত্তা।
শুনতে পায় আবরার৷ টেবিলে দুই হাত রেখে নিজের মাথাটা হাতের ওপর রাখে এবং পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আদ্রিতার পানে। প্রথমে মাথা তারপর নাক, ঠোঁট সর্বশেষে গলায় দৃষ্টি নামায়। হাঙ্কি স্বরে বলে
“তুমিও ভীষণ হট
শান্তিতে থাকতে দাও না আমায়।
আদ্রিতা ফোঁস করে শ্বাস টানে। এই মুহুর্তে এই বাক্য আশা করে নি সে। দুঃখের কাহিনি শোনাতে এসেছিলো। ভেবেছিলো লোকটাকে সব বলা উচিত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এর সাথে কথা বলতে আসাটাই ভুল হয়েছে।
বিরক্ত আদ্রিতা হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলে।
” মুখটা বন্ধ করে আমার কথা শুনুন প্লিজ। দয়া করুন একটু। আমার আপনার সাহায্যের প্রয়োজন।
আবরার ভদ্র বাচ্চাদের মতো মাথা নারায়। যেনো এবার গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনবে কথা। আদ্রিতা বলতে শুরু করে
“আমার বাবা আমাকে নিতে চাচ্ছে। বাংলাদেশে ফেরার পরে আমাকে আর সাথে রাখবে না মা। বাবা এবং তার নতুন সংসারে স্থান হবে আমার।
যেটা কিছুতেই মানতে পারবো না। আমি ম/রে গেলেও ওই সংসারে যাবো না।
একটু থামে আদ্রিতা।
” আমি আসিফ আদনানকে বিয়ে করতে চাই। দুজন দুজনকে ভালোবাসি।
বাংলাদেশে ফেরার পরেই আসিফ আদনানের বাড়িতে যেতে চাই।
“জাস্ট বললে রেজিস্ট্রি হয়েছে। দুটো বিয়ে করবে?
” সেটাই তো বলতে চাইছি।
আপনি বিয়ে মানেন না। আমিও আপনাকে পছন্দ করি না। সো আমি চাচ্ছিলাম এই বিষয়টা আমাদের মধ্যেই থাকবে। কেউ জানবে না। আর আপনি একটু কষ্ট করে আমার আর আসিফের বিয়েটা
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরারের ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে “ফাকিং পুলিশ” নামটা ভেসে উঠেছে। আদ্রিতা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে ফেলে। এটা কেমন নাম?
আবরার কল খানা রিসিভ করে ব্লুটুথ অন করে কানে দেয়।
“স্যার আসিফ আদনান
” মেরে ফেলুন তাকে।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৩
ব্যাসস কল কেটে দেয়। আদ্রিতা বড়বড় নয়নে তাকায়। আবরার তাসনিন কি কোনো মাফিয়া টাফিয়া না কি? কি সাবলীল ভাষায় বলে দিলো মেরে ফেলুন? যেনো তার প্রফেশন এটাই।
শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা। আবরার কিবোর্ড চেপে অর্ধেক দেখা মুভি খানা পূণরায় চালিয়ে দেয়। আয়েশি ভঙ্গিমায় গা এলিয়ে দেয় চেয়ারে।
আদ্রিতা অসহায় ভঙ্গিমায় তাকিয়ে থাকে আবরারের মুখ পানে। কানে ভেসে আসে অশ্লীল লোকটার অশ্লীল বার্তা
“এই মুভির মতো পারফরম্যান্স করতে পারলে ভেবে দেখবো বিয়ের ব্যাপারটা চেপে যাওয়া যায় কি না।
আদ্রিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“আপনি
আদ্রিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই আবরার