তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৯

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৯
তানিশা সুলতানা

ব্যাথায় নাক মুখ কুঁচকে ফেলে সিয়াম। বেশ ভালোই লেগেছে। আমান নিজের আঘাতপ্রাপ্ত হাতে পূণরায় আঘাত পায়।
ওদের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় আদ্রিতার। ধরফরিয়ে উঠে বসে। আতঙ্কিত স্বরে শুধায়
“কি…কি হয়েছে?
ইভান দাঁড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যেই। দাঁত কেলিয়ে হেসে জবাব দেয়
” নাথিং।
এভরিথিং অল রাইট
তুমি ঘুমাও।
আদ্রিতা গোল গোল নয়ন ঘুরিয়ে সকলের মুখ পানে তাকায়। কিছুই যে ঠিক নেই বুঝতে পারে তবে পাল্টা প্রশ্ন করে না। জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে ঘুমন্ত এ্যানিকে কোলে তুলে নেয়।
আহাদ আবরারের গম্ভীর মুখপানে তাকিয়ে বলে

“আমাদের কোনো দোষ নেই। সব দোষ সিয়ামের।
আহত সিয়াম কাঁদো কাঁদো স্বরে আওড়ায়
” দোষ করলো সবাই ঘাড়ে পড়লো সিয়ামের
আবরার তাসনিন এখন বানিয়ে ফেলবে কিমারে
বাঁচতে চাইলে পালা সিয়াম
লাগা একটা দৌড়
তুই ছাড়া তোর কেউ নেই
পেলি তার প্রমাণ?
বলেই দাঁড়িয়ে পড়ে। এবং খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ে চলে যায়। তার পেছন পেছন বাকিরাও লেজ গুটিয়ে পালায়।
আবরার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কক্ষ হতে বেরিয়ে যায়।
ভয়ার্তক আদ্রিতা মাথা নুয়িয়ে বসে থাকে। অন্ধকারে ঘ্রাসস করে রেখেছে গোটা কক্ষ। এখান থেকে বের হয়ে যাবে টা কোথায়? নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে আমান ভাইয়ারা দখল করে নিয়েছে ইতোমধ্যেই ঢেড় বুঝতে পারে।
বাকি রাতটুকু এই কক্ষেই থাকতে হবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গোটা দিনে এ্যানি কিছু খায় নি। খাবার ছিলো না এমনটা নয়। তবে আদ্রিতাকে ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস তার নেই। খাবার দিয়ে আদ্রিতা পাশে বসে থাকলে তবেই খায়। আজকে ছিলো না বিধায় খাওয়া হয় নি। খুধায় ঘুম ছুটে যায় তার। মিউ মিউ আওয়াজ তুলে আদ্রিতার মুখ পানে তাকায়। যেনো বোঝাতে চাইলো “খেতে চাই আমি”
আদ্রিতা টুপটাপ কয়েকটা চুমু খায় এ্যানির মাথায়। আদূরে স্বরে বলে
“আমার সোনা এখুনি খাবার আনছি।
বলেই বিছানা ছাড়ে। কম্ফোর্টের মধ্য থেকে বের হওয়ার পরে অনুভব করে বেশ ঠান্ডা। কিছু একটা গায়ে জড়ানো উচিত। নাহলে শীতে কাঁপতে কাঁপতে অক্কা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজে এবং পেয়ে যায় আবরারের হুড়ি। চঞ্চল হাতে চটজলদি সেটাই গায়ে জড়িয়ে নেয়। সাদা রংয়ের হুড়ি খানা থেকে অদ্ভুত সুন্দর একটা ঘ্রাণ বেরুচ্ছে। কোনো দামি ব্যান্ডের পারফিউম হবে হয়ত।
আদ্রিতা হুড়ির মধ্যে মুখ ডুবিয়ে নাক টেনে ঘ্রাণ শুকে নেয়।
মনে মনে বলে

” জল্লাদ হাতির বাচ্চার হুড়ি থেকেই এতো সুন্দর ঘ্রাণ আসছে। না জানি তার গায়ের ঘ্রাণ কতে সুন্দর হবে। আর একবার কাছে আসলে ভয়টয় না পেয়ে ঘ্রাণ শুকে নিবে।
পরপরই নিজের মাথায় চাটি মারে। বিরবির করে বলে
“নির্লজ্জ বেহায়া আদ্রিতা। ওই লোকটা বেয়াদব। তোকে বিয়ের নাম করে অপমান করেছে। আজকে হাত পুরিয়ে দিয়েছে। তার কথা ভাবলে তোর মন কে/টে হালুয়া বানিয়ে ফেলবো। বলে দিলাম।
ক্যাটফুটের প্যাকেট কেটে বাটিতে ঢালছে আবরার। তখনই তার ফোন খানা কেঁপে ওঠে। ভ্রু কুঁচকায় আবরার। বিরক্ত হলো বোধহয়।
এতো রাতে কেউ কল করে?
টাউজারের পকেট হতে ফোন বের করে। আননন নাম্বার তবে চিনে আবরার। পার্সোনাল ফোনে সুইজারল্যান্ড এর নাম্বার হতে একজনই কল করতে পারে।
সোজা হয়ে দাঁড়ায় আবরার। ডান হাতে কপাল চুলকে কল রিসিভ করে।

” আবরার তাসনিন
ওরফে এ টি তাসিন। বড়ই সুন্দর নাম। আই লাইক ইট।
আবরার শোনে মনোযোগ দিয়ে তবে জবাব দেয় না। ওপাশ থেকে পূণরায় ভেসে আছে
“একটা মেয়ের জন্য আমার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছো তুমি। সে এখন হাসপাতালে। হাত দুটো অকেজো। কখনোই ঠিক হবে না।
এই পর্যায়ে আবরার ঠোঁট মেলে একটু হাসার চেষ্টা করে। তবে ব্যর্থ হয়। হাসির সাথে সম্পর্ক চুকিয়েছে সেই ছোট বেলায়। এখন চেষ্টা করলেও ধরা দিতে চায় না।
” কেনো করলে এমন?

আবরার ফোঁস করে শ্বাস টানে। টাউজারের পকেট হতে সিগারেটের প্যাকেট বের করে। এক খানা সিগারেট ঠোঁটের ভাজে পুরে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে নেয়। পরপর সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে জবাব দেয়
“সী ইজ মাই ওয়াইফ।
” আই নো মাই বয়।
ইনফরমেশন জোগাড় করে ফেলেছি। তোমার
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার বলে ওঠে
“তার দিকে চোখ তুলে তাকালে চোখ তুলে নিবো। সে মন্ত্রীর ছেলে হোক আর যেই হোক।
মাইন্ড ইট
বলেই কল কাটে।
ইতোমধ্যেই কপালের রগ ফুটে উঠেছে। হাত দুটো মুষ্টি বন্ধ করে ফেলেছে। ইচ্ছে করছে গোটা দুনিয়া জ্বালিয়ে দিতে।

দুই হাতে মাথার চুল খামচে ধরে আবরার। তাতে গোছালো চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যায়। সিগারেট প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। একটু হলেই ঠোঁটে ছ্যাঁকা লেগে যাবে কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই আবরারের।
সে আনমনে ভেবে চলেছে অনেক কিছু।
এবং হলোও তাই। সিগারেট ঠোঁটের সঙ্গে লেগে ছ্যাঁকা লাগে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে আবরার। মৃদু স্বরে “ফা****” শব্দ খানা উচ্চরণ করে পরপরই শক্তপোক্ত হাত খানা দ্বারা ঠোঁট ঘসে নেয়।
সেই মুহুর্তেই আদ্রিতা কিচেনে পা রাখে। অগোছালো আবরারকে দেখে একরাশ চিন্তারা এসে ভিড় জমায় মনের কোণে।

একটু উঁকি ঝুঁকি মেরে মুখ খানা দেখার চেষ্টা করে। প্রথমেই নজরে পড়ে লাল ওষ্ঠ জোড়া। এখনো সিগারেট এর পোরা অংশ লেগে আছে।
লাল লাল চোখ দুটো দেখে আদ্রিতার চিন্তা বেড়ে যায়। অনুমান করে নেয় “লোকটার জ্বর এসেছে কি?”
হাত বাড়িয়ে আবরারকে ছুঁয়ে দেওয়ার সাহস আদ্রিতার নেই।
“আ….পনি কি অসুস্থ? এমন দেখাচ্ছে কেনো? ডাক্তার ডাকতে বললো ভাইয়াদের?
প্রশ্ন খানা করেই ফেলে আদ্রিতা। পরপরই নিজের ওপর বিরক্ত হয়। ” ওরেহহ বাল এখন যে অশ্লীল কথা গুলো বলবে ওই গুলো শোনার জন্য প্রস্তুত হ”
অসভ্য আদ্রিতা।
হলোও তাই। আবরার দু পা এগিয়ে আসে আদ্রিতার পানে। গায়ে নিজের হুড়ি দেখে ঠোঁট বাঁকায়। ঠোঁটে আঙুল ঘসতে ঘসতে হাঙ্কি স্বরে বলে

“আই নিড ইউওর লিপস।
আদ্রিতা দু পা পিছিয়ে যায়। উদ্দেশ্যে দিবে এক খানা ভৌ দৌড়। এক দৌড়ে কক্ষে চলে যাবে তারপর দরজা লক করে দিবে। ব্যাসস আজকের মতো বেঁচে যাবে।
আদ্রিতার পরিকল্পনা বোধহয় বুঝতে পারলো আবরার। লম্বা হাত খানা বাড়িয়ে পেঁচিয়ে ধরে আদ্রিতার কোমর। পরপরই গলায় মুখ গুঁজে লম্বা শ্বাস টানে।
জমে যায় আদ্রিতা। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এটা কি হলো? তলপেটে মোচর দিয়ে উঠছে। হাত পা মৃদু কাঁপছে। লোকটার ছোঁয়া ভয়ংকরের থেকেও ভয়ংকর।
নিজেকে বাঁচাতে আবরারের হাতের ওঠে হাত রাখে। কাঁপা-কাঁপা স্বরে বলে
” ছা…ড়ুন প্লিজ। আমার ভালো লাগে না।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৮

সুবোধ বালকের মতো সত্যিই ছেড়ে দেয় আবরার।
আড়াআড়ি ভাবে ভ্রু কুচকে বলে
“দরজা খোলা, কেউ দেখে ফেললে এসব বললে মেনে নিবো।
বাই ভালো লাগছে না
নেক্সট টাইম এটা শুনলে জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।
ভালো লাগলেও আমি ছুঁবো। না লাগলেও আমি ছুঁবো। মাইন্ড ইট

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩০