তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪
তানিশা সুলতানা

আতিয়া বেগম এয়ারপোর্ট থেকেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরুবে। আদ্রিতাও যেতে চেয়েছিলো তবে আতিয়া বেগম সাথে নিতে নারাজ। এমনিতেই দুর্বল এখন হাসপাতালে গেলে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। অহনার হাজব্যান্ড নিতে এসেছে ওনাকে। আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খায় আতিয়া বেগম। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে হাত ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। এবং বলে

“মেলোড্রামা শেষ হবে কখন?
আদ্রিতা ভেংচি কাটে। কি রে ভাই? এভাবে গম্ভীর স্বরে বলার কি হলো? স্বাভাবিক কন্ঠে বলা যেতো না “আম্মু তোমাদের আলাপ শেষ হলে এবার যাও। সন্ধ্যা হয়ে আসছে”
উজবুক একটা। আদ্রিতা ভেবে পায় না তার মতো এতো কিউট ইনোসেন্ট মিষ্টি মেয়ের ভাই এমন তারকাটা গোমড়ামুখো ভাল্লুক কি করে হলো?
অবশ্য হবে নাই বা কেনো?
সে তো আপন ভাই না। খালাতো ভাই।
আতিয়া বেগম আবরারের হাত ধরে বলে
“ওকে দেখেশুনে নিয়ে যাসস।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদ্রিতা সাথে সাথেই ঘোর প্রতিবাদের সুরে বলে
” মা আমাকে দেখে নিতে হবে না। আমি বড় হয়ে গিয়েছি। নিজেই দেখেশুনে যেতে পারবো
চোখ রাঙায় আতিয়া বেগম। একটুও কেয়ার করে আদ্রিতা। আবরার ভ্রু বাঁকিয়ে এক পলক তাকায়। এবং সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে।
অতঃপর আতিয়া বেগম গাড়িতে উঠে বসে৷ শেষবার হুশিয়ার করে আদ্রিতাকে এবং আবরারকে। মুহুর্তেই শোওওও করে চলে গেলো গাড়ি। গাল ফুলিয়ে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে আদ্রিতা। রাস্তা ঘাট বড্ড পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। কোনো জ্যাম নেই। নিরিবিলিতে গাড়ি চলাচল করছে।
আদ্রিতা মনে মনে বলো

“যতটা ভেবেছিলাম ততটাও উন্নতি করতে পারে নি দেশ টা। বাংলাদেশে কতো গাড়ি। এতো এতো গাড়ির ঠেলায় রাস্তা ব্লক হয়ে থাকে। আর এই দেশে রাস্তা ঘাটে তেমন গাড়িই নাই। গাড়ির উৎপাদন কম। ধুররর কোথায় এসে পড়লাম? জ্যাম এর মজা উপভোগ করতে পারবো না।
ভাবতে ভাবতেই তার আরেকটা বিষয় খেয়াল হয় তাকে কেউ ভালোবাসে না। কেউ মানে কেউই না। ভালোবাসলে মা নিশ্চয় তাকে একা ফেলে চলে যেতে পারতো না।
হতাশ আদ্রিতা এ্যনির পানে তাকায়। সে আপাতত কুটুর কুটুর নয়নে চারিপাশটা পর্যবেক্ষণ করছে। মনে মনে বোধহয় বলছে “মাম্মাম তুমি আমাকে নিয়ে কোথায় চলে আসলে?”

এই বিড়ালটা আদ্রিতাকে এনে দিয়েছিলো তার বাবা আসাদুল ইসলাম। বিশতম জন্মদিনে তিনি মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলো সূদুর সিঙ্গাপুর থেকে। তিন মাস সময় কাটিয়েছেন। বিড়াল ছানাটি তখন ছিলো একটুখানি। ভালো করে হাঁটতেও পারতো না। সেই থেকে আদ্রিতা তাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। নাম দিয়েছে এ্যানি।
ধবধবে ফকফকে পরিষ্কার রাস্তার এক কোণায় কালো রংয়ের একটা গাড়ি রাখা রয়েছে। দেখতে বেশ সুন্দর।
সেই গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে যায় আবরার। আদ্রিতা দৌড়ে এসে দাঁড়ায় আবরারের সামনে। আতঙ্কিত স্বরে বলে

“আল্লাহ কি করছেন? অন্যের গাড়িতে কেনো উঠছেন? নিশ্চয় আমার সামনে একটু বড়লোক সাজতে? আরেহহহ বড় ভাই এটা বাংলাদেশ নয়। এখানে
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার শক্ত গলায় ধমকে বলে
” শাট আপ। মুখটা বন্ধ রাখো এবং
গাড়িতে বসো।

শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা। তার ছোট্ট বুক খানা কাঁপছে। এতো জোরে কেউ ধমক দেয়? একটুর জন্য কিডনিটা গলে যায় নি। আল্লাহ
জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে আশেপাশে একটু নজর ঘুরিয়ে দেখে নেয়। নাহহ কেউ তাকিয়ে নেই। মানে মাঝ রাস্তায় আদ্রিতাকে অপমানিত হতে কেউ দেখে ফেলে নি। মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। এবং মনে মনে পণ করে এই খাটাশটির সাথে জিন্দেগীতেও কথা বলবে না।
গাল ফুলিয়ে গাড়ির পেছনে গিয়ে বসে পড়ে। এ্যানিকে নামিয়ে দেয় পাশের সিটে।
হাত দুটো ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। এবার একটু ভালো লাগছে।

আদ্রিতার বুঝি আজকে আশ্চর্য হওয়ারই দিন। গাড়ি হতে নেমে হা করে দেখছে চারিপাশটা। কি সুন্দর জায়গা। ছোট ছোট বাড়ি তবে বেশ দূরে দূরে। সূর্য মামা ডুবে গিয়েছে। আকাশটা অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে। দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে।
তবে পাখি দেখা যাচ্ছে না। এদেশে কি পাখি নেই?
এবার আদ্রিতার নজর পড়ে নিজের সামনের বাড়িটির পানে। কয়তালা বাড়ি এটা? এক তালা? বাড়িতে কোনো গেইট নেই, ফুলের বাগান বাগান নেই। শুধুমাত্র কয়েকটা সবজি গাছ দেখা যাচ্ছে।

আবরার তাসনিন কোথায় গেলো? বাড়িতে ঢুকে পড়েছে? হবে হয়ত।
আদ্রিতাও পা বাড়ায় ভেতরে ঢোকার উদ্দেশ্যে। তখনই দেখতে পায় দুটো মেয়ে আসছে। জিন্স এবং টিশার্ট পড়েছে বোধহয় তারা। চুল গুলো ছোট ছোট এবং ব্রাউন কালার। ধবধবে ফর্সা। আদ্রিতা হা করে তাকিয়ে থাকে৷ মনে মনে মাশাআল্লাহ আওড়ায়। এবং পরপরই হেসে হাত নারিয়ে হাই বলে।
মেয়ে দুটোও হাই বলে।
যাকক বাবা এদেশের মানুষ তাহলে হাসতে জানে। আবরার তাসনিনের মতো নয়৷
আদ্রিতা মুচকি হেসে পা বাড়ায়। এ্যানিকে কোল থেকে নামিয়েছে বেশ অনেকক্ষণ আগেই। সে আপাতত আদ্রিতার পেছন পেছন হাঁটছে।

দরজা খোলা। আদ্রিতা একটু উঁকিঝুঁকি মেরে ভেতরে পা রাখতেই এক মুখো ফুলের পাপড়ি এসে পড়ে তার মাথায়। চমকে ওঠে সে। পরপরই উচ্চস্বরে কিছু ছেলে বলে ওঠে
“ওয়েলকাম আবরার তাসনিন এর বোন।
হাসি ফুটে ওঠে আদ্রিতার ঠোঁটের কোণে। সবাইকে সালাম দেয়৷ এবারেও সকলে এক সাথে সালাম ফেরায়।
আবরার সিঙ্গেল সোফায় বসে পায়ের ওপর পা তুলে ফোন ঘাটছে। সিয়াম হা করে আদ্রিতাকে দেখছে। পিকচারের থেকেও বাস্তবে বেশি কিউট। ইসস পুরোই একটা পুতুল।
আমান নিজের টিশার্ট খুলে সোফা মুছে আদ্রিতাকে বলে

” এখানে বসুন ম্যাম।
আদ্রিতা আমানের পানে এগিয়ে আসতে আসতে বলে
“আমাকে ম্যাম বলতে হবে না। আমার নাম আদ্রিতা। আমাকে আদ্রিতা বলেই ডাকবেন। নাহলে আদ্রি।
আহাদ জবাব দেয়
” আমি পরি বলে ডাকবো। ট্রাস্ট মি তুমি পরির মতোই সুন্দর।
লাজুক হাসে আদ্রিতা। কিছু বলার জন্য হা করতেই আবরার বলে
“ওপরের বা পাশের রুমটা তোমার। যাও
সিয়াম বলে ওঠে

” সবে মাত্র আসলো। এখনে বসে একটু রেস্ট নিক তারপর নাহয় যাবে রুমে।
সিয়ামের কথায় সায় জানিয়ে আদ্রিতাও মাথা নারে। কিন্তু আবরার ফের শক্ত গলায় বলে
“যেতে বলেছি আমি।
ধুররর
মনে মনে আবরারের গুষ্টির ষষ্ঠী পুজো করতে করতে নিজ কক্ষের পানে ছোঁটে আদ্রিতা। এ্যানি এদিক সেদিক ঘুরে বাসা দেখছে।
ইভাব খপ করে ধরে কোলে তুলে নেয় এবং বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩

” আবরার কি কিউট রে তোর বোন৷ সাথে কেটটাও কিউট।
সিয়াম গিয়ে বসে পড়ে আবরারের পায়ের কাছে। দুই পা জড়িয়ে ধরে উরুর ওপর মাথা রেখে বলে
“কি করলে তোর বোন পটবে ভাই? একটু পটিয়ে দে। নাহয় ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দে।
চোখ বন্ধ করে ফোঁস করে শ্বাস টানে আবরার। গম্ভীর স্বরে বলে
“সে আমার বোন নয় বউ।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫