তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪১

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪১
তানিশা সুলতানা

আলিসান কক্ষে বড়ই চিন্তিত ভঙ্গিমায় পায়চারি করছে টনি। তার পাহাড়ায় গোটা কয়েক কালো পোশাকধারী লোক বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো এই মুহুর্তে কেউ কক্ষ প্রবেশ করলেই গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবে।
টনি হাত ঘড়িতে নজর বুলিয়ে সোফায় বসে থাকা রোগা পাতলা গড়নের ছেলেটির পানে তাকায়। নাম নিতিন। এই হোটেল এর ম্যানেজার পদে রয়েছে। তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে হায়ার করেছে টনি।
“ক্যামেরা গুলো ঠিকঠাক লাগিয়েছিলে?
নিতিন চটপট মাথা নারিয়ে সম্মতি প্রকাশ করে এবং অতিদ্রুত ল্যাপটপ অপেন করতে করতে জবাব দেয়
“জ্বী বস। যখনই আবরার তাসনিন রুম বুকট করেছে সঙ্গে সঙ্গে আমি ক্যামেরা ফিট করে দিয়েছি।
টনি কুটিল হাসে। চাপ দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বিরবির করে কিছু আওড়ায়। পরমুহূর্তেই দু পা এগিয়ে এসে নিতিন এর পাশে আয়েশ করে বসে।
এবং বাহবা দিয়ে বলে

” গুড গুড।
দেখাও শালা কিভাবে রোমাঞ্চ করছে। আর হ্যাঁ এটা কিন্তু ফেসবুক ইউটিউব ইনস্টাগ্রাম টিকটিক সব জায়গায় দেখতে চাই আমি। নিউজ চ্যানেলের হেডলাইন হবে “গোটা বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ফ্যাশন হাউজ এর মালিক আবরার তাসনিন এর রোমান্টিক মুহুর্তের ফুটেজ ভাইরাল”
ওর বউকে দেখে যেনো সকল যুবকের লালা ঝড়ে। এক রাতে সঙ্গিনী করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।
দেখনো আমি তারপর শালা কি করে।
নিতিন মৃদু হাসে। প্লে করে আবরার তাসনিন এর ফুল সাজানো কক্ষের ফুটেজ। মোটামাট চার খানা ক্যামেরা ফিট করে রেখে এসেছে সে। গোটা কক্ষ সহ ওয়াশরুম এবং সুইমিং স্পষ্ট দেখা যাবে।
টনি বড়ই আগ্রহ নিয়ে তাকায় ল্যাপটপের স্কিনে। মুহুর্তেই মেজাজ চটে যায়। ঠোঁটের কোণের হাসি ফুড়ুৎ করে উড়ে যায়।
দেখা যাচ্ছে ফুল সাজানো খাটে শুয়ে আছে চার যুবক। প্রথমে শুয়েছে সিয়াম তার ওপরে হাত পা তুলে হা করে ঘুমিয়ে আছে আমান। আমানের দিকে পেছন ফিরে ইভানকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে আহাদ। একজনের গায়েও শার্ট নেই৷
চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে টনি।
মুহুর্তেই ল্যাপটপ খানা আছড়ে ভেঙে ফেলে। তবুও যেনো রাগ কমলো না। টি-টেবিলে অবস্থিত চায়ের কাপও ফেলে দেয় ফ্লোরে। গার্ডরা নির্বাক ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকলেও ভয়ে তথাস্তু হয়ে ওঠে নিতিন। কাচুমাচু হয়ে বসে পড়ে খাটে। বারংবার শুকনো ঢোক গিলে ওপর ওয়ালাকে স্মরণ করতে থাকে।
টনি চিৎকার করে বলে ওঠে
“বারংবার আবরার হাত ফঁসকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি পেরে উঠছি না তার সাথে। কেনো কেনো কেনো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সিঙ্গাপুরে সমুদ্র রয়েছে এটা আদ্রিতার ধারণার বাইরে। এখানেও প্রকৃতিক হাওয়ায় শরীর জুরায় সমুদ্রের ঢেউ কানে বাজে আর ভেজা বালুতে খালি পায়ে হাঁটা যায়।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই আবরার বলে ওঠে “চলো সমুদ্রের ঢেউ শুনে আসি”
এবং আদ্রিতার জবাবের আশা না করে চেপে ধরে নরম হাত। বড় বড় পা ফেলে হোটেল এর বাইরে চলে আসে। পার্কিং এরিয়ায় বিভিন্ন মডেলের অহরহ গাড়ি রয়েছে। সেখান থেকে কালো রংয়ের লেম্বারগিনিতে বসে পড়ে আবরার। এবং অপরপাশে আদ্রিতাকে বসিয়ে দেয়।
আদ্রিতা খুশি হয়। নতুন শহর, তারওপর গভীর রাত। নিস্তব্ধ পরিবেশ। কেমন হবে সিঙ্গাপুরের রাতের রূপ?
দেখার জন্য মনটা নেচে ওঠে তার। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায় আবরার তাসনিন এর পানে৷ খুশিতে গদগদ হয়ে বলে
“আপনি ভীষণ ভালো আবরার তাসনিন। কিভাবে বুঝে ফেললেন আমি রাতের শহর দেখতে ভালোবাসি?
দক্ষ হাতে স্টারিং ঘুরিয়ে মেইন রোডে চলে আসে আবরার। ঘাড় বাঁকিয়ে এক পলক তাকায় আদ্রিতার পানে। এবং গম্ভীর স্বরে জবাব দেয়
” তোমাকে দেখাতে নয়
আমি তোমাকে দেখবো বলে নিচ্ছি।
আদ্রিতা ভেংচি কাটে। বিরবির করে বলে “হাতির বাচ্চা গন্ডার। ভালোবাসিস বললে যেনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। আদ্রিতা সব বুঝে। ভালোবেসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানা আছে আমার। তুই জামাইয়ের ঘরের জামাই স্বীকার না করলে আমার ভাঙা ঘর ভেঙেই যাবে মনে হয়”
আবরার শুনতে পেলো কি আদ্রিতার কথা?
পূণরায় গম্ভীর স্বরে বলে

“শোনো মেয়ে
তোমায় ভালোবাসি না আমি। আর কখনো বাসবোও না।
আদ্রিতা যেনো মজা পেলো। খিলখিল করে হেসে ওঠে।হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো। একবার গাড়ির জানালায় বারি খাচ্ছে তো আরেকবার আবরারের ওপরে পড়ছে। বিরক্ত আবরার আড়াআড়ি ভাবে ভ্রু কুঁচকায়।
আদ্রিতা হাসি একটু নিয়ন্ত্রণে এনে বলে
” সেই বার রোজার ঈদে ফ্রিজে রাখা সেমাই খেয়ে ফেলেছিলাম আমি। তো বড় মা আমাকে ডেকেছে কোনো একটা কাজ করানোর জন্য। কিন্তু আমি তার ডাক শুনেই বলে ফেললাম “বিশ্বাস করো বড় মা আমি সেমাই খাই নি”
আবরার দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“উইথ আউট ড্রেস এ তোমায় কেমন দেখায় সেটা দেখার জন্য পারফেক্ট একটা প্লেস চাই। রুমে এ্যানি আছে না?
সো

ব্যাসস আদ্রিতার হাসি গায়েব সেই সাথে কথাও ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছো। বড় বড় নয়নে তাকায় আবরারের পানে। নির্লজ্জ বেহায়া লোক কোথাকার। ইচ্ছে করে সব গুলো চুল মুঠো করো ধরে ইচ্ছে মতো টেনে দিতে। আর অশ্লীল ঠোঁট দুটো সেলাই করতে।
তখন দেখবে কিভাবে অশ্লীল কথা বলতে পারে।
আবরারকে বকা দিতে দিতেই রাস্তা ফুরিয়ে যায়।
গাড়ি থামিয়ে আবরার নেমে পড়ে। বড় বড় পা ফেলে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। সাদা রংয়ের শার্ট পড়েছে। বড় বড় চুল গুলো কিছুটা এলোমেলো। হাতে ঘড়ি নেই। পায়ে কালো রংয়ের জুতো।
বাতাসের তালে লোকটার শার্ট ফুলে উঠছে।
আদ্রিতাও নেমে পড়ে। এমন পরিবেশ দেখে বেমালুম ভুলেই গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে আবরার তাসনিন ছি মার্কা কথা বলেছে। এবং তাকে লজ্জা দিয়েছে।
সেও আবরারের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

দুই হাত মেলে চোখ বন্ধ করে বড় করে নিঃশ্বাস টানে। আহহহা কলিজা ওবদি পৌঁছে যাচ্ছে বাতাস।
” কি ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ। ভালোই লাগছে বলুন?
আবরার তাকায় আদ্রিতার পানে।
পাতলা সিল্ক এর শাড়ি পড়েছে। ছোট হাতার ব্লাউজ। দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। ঠোঁটে টকটকে লাল রংয়ের লিপস্টিক আর চোখে কাজল।
বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে আবরারের। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বোধহয়।
এই মুহুর্তে একটুখানি অক্সিজেন প্রয়োজন নাহলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা পড়বে।
তাই চটজলদি আদ্রিতার কোমর জড়িয়ে ধরে। দুই হাতে শক্ত করে ধরে শূন্যে তুলে এবং মুহুর্তেই ওষ্ঠদ্বয় আঁকড়ে ধরে। গভীর চুম্বনে লিপ্ত হয়। আদ্রিতা বুঝে উঠতে পারে না তার সাথে ঠিক কি হলো। যখন বুঝতে পারে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকে।
আবরার বিরক্ত হয়। চুমু খাওয়ার মাঝে বোয়াল মাছের মতো লাফালাফি করলে শান্তিতে চুমু খাওয়া যায়?
মেজাজ চটে যায়। মুহুর্তেই ছেড়ে দেয় আদ্রিতার ওষ্ঠ এবং দুই হাত আলগা করে।
ঠাসস করে পড়ে যায় বালুর ওপরে। কোমরে ব্যাথা পায় না তবুও কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায় আবরারের মুখ পানে। বলে
“রাক্ষস এর মতো করছেন কেনো? খেয়ে ফেলবেন না কি?
আবরার হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে। বা হাতে প্যান্টের বেল্ট খুলতে খুলতে জবাব দেয়
“ইয়েসস

শুনতে পায় না আদ্রিতা। সে তো বড় বড় নয়নে দেখছে আবরারের বেল্ট খোলার দৃশ্য। কেনো খুলছে? মারবে না কি তাকে? কি করেছে সে? রাক্ষস বললো তাই?
শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা। ঠিকঠাক করে বসতে নেয় তখনই আবরার তার হাত দুটো ধরে ফেলে। এবং খুবই যত্ন সহকারে দুই হাত বাঁধতে শুরু করে বেল্ট দ্বারা।
“ক….কি করছেন? বাঁধছেন কেনো?
অসহায় স্বরে শুধায়। আবরার ঠোঁট বাঁকিয়ে জবাব দেয়
” রাক্ষস বললে না?
ডিস্টার্ব করবে জানা আছে আমার। তাই
হাত বাঁধা হয়ে গেলে শাড়ির আঁচল টেনে ধরতেই আতঙ্কে ওঠে আদ্রিতা। আশেপাশে নজর বুলিয়ে বলে
“আরেহহ আরেহহহ কি করছেন? ব্রিচ এটা প্লিজজজ
থোড়াই কেয়ার করলো আবরার। নিজ উদ্যোগে খুলে ফেলে আঁচল খানা। গোল হয়ে বসে গালে হাত দিয়ে দেখতে থাকে কাচুমাচু হয়ে থাকা আদ্রিতাকে। হাসি পেলো বোধহয় তার। ঠোঁট বাঁকিয়ে একটুখানি হাসার চেষ্টা করে বলে

” ইউআর লুকিং সো হট এন্ড সে**
আই লাভ ইট
কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হামলে পড়ে আদ্রিতার ওপরে। দুই হাতের অবাধ্য বিচরণ এবং পুরু ওষ্ঠের বেসামাল ঘর্ষণে কলিজা কাঁপতে থাকে আদ্রিতার। আবরারের সঙ্গে তাল মেলাতে বা তাকে সহ্য করতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে। ভালোও লাগছে আবার মনে হচ্ছে এই বুঝি জানটা বেরিয়ে যাবে।
বালির সঙ্গে মিশে গিয়েছে আদ্রিতা। সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ এর গর্জন, বাতাসের শা শা আওয়াজ এবং আদ্রিতার মৃদু স্বরে চিৎকারের আওয়াজ আবরারকে ক্ষণে ক্ষণে পাগল করে তুলছে। বড়ই বেপরোয়া সে। নিজের খায়েশ মেটাতে ব্যস্ত। দীর্ঘক্ষণ মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় আদ্রিতা তবে ধীরে ধীরে আবরারের এর বেপরোয়া ভঙ্গিমায় বাড়তে থাকে।
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে করুণ স্বরে বলে
“প্লিজজজ ছেড়ে দিন। আমি মরে যাবো।

আবরার তাকায় আদ্রিতার মুখ পানে। আদূরে ভঙ্গিমায় দুই গালে হাত রাখে। কপালে চুমু খেয়ে বলে
” আর একটু সহ্য করো পাখি
আ…আমি মরে যাচ্ছি প্লিজজজ
বড়ই অসহায় শোনালো আবরারের কন্ঠস্বর। মায়া হয় আদ্রিতার। সে একটু কষ্ট সহ্য করলে যদি আবরারের ভালো লাগে তাহলে সে সহ্য করবে।
চোখ বন্ধ করে নেয় আদ্রিতা। বাঁধা হাত দুটো দ্বারা আবরারের বড় বড় চুল গুলো মুঠো করে ধরে। শুনতে পায় প্রাণ প্রিয় পুরুষের আদূরে কিছু বাক্য

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪০

“আমার পাখি
আমার জান
তুমি আমার আসক্তি
তোমাকে ছাড়া দুই সেকেন্ডও থাকতে পারবো না আমি।
ভীষণ ভাল
বলতে বলতে থেমে যায়। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে
” ভালোবাসি না।
কখনোই বাসবো না।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪২