তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪২

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪২
তানিশা সুলতানা

আবরারের কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছে আদ্রিতা। আর আবরার ড্রাইভ করছে। রাতে শহর বড়ই সুন্দর। কোনো গাড়ি নেই মানুষ নেই আলো নেই। নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।
আদ্রিতা বড়ই ক্লান্ত এবং অসুস্থ। মাথা ব্যাথা করছে প্রচন্ড। সেই সাথে পেট ব্যাথা।
মাথা ব্যাথার রিজন আছে। একটুখানি চিন্তা করলেই এমনটা হয় তার সাথে। আর এই মুহুর্তে প্রচন্ড চিন্তায় রয়েছে। এরপর কি হবে? ওদের ভবিষ্যৎ কি? আবরার তাসনিন এর সঙ্গে সারাজীবন থাকতে পারবে সে? রাখবে তাকে? না কি নেশা কেটে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দিবে?

মনের মধ্যে প্রশ্ন খানা উঁকি দিতেই কলিজা কেঁপে ওঠে আদ্রিতার। আঁখি পল্লবে অশ্রুকণারা ভিড় জমাতে চায়। তবে আদ্রিতা বড় কৌশলে অশ্রুকণা গুলোকে লুকিয়ে ফেলে। মাথা তুলে তাকায় আবরার এর মুখ পানে। ডান গালে আঁচড় লেগেছে। ফর্সা গালে আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
এই আঁচড় আদ্রিতার থেকেই প্রাপ্ত। ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে কোনোভাবে লেগে গেছে।
নিজের নখের পানে নজর বুলায় আদ্রিতা। ধবধবে সাদা রংয়ের বিশাল বড় সাইজের নখ। এগুলো কি কেটে ফেলা উচিত?
একদম না।
আবরারও তাকে ভীষণ ব্যাথা দিয়েছে। এই টুকু ব্যাথা তার প্রাপ্য।
“এর পর কি হবে? আমরা কি করবো?
আবরারের মুখ পানে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আদ্রিতা। জবাবের আশায় একটুখানি কাছাকাছি ঘেসে বসে। সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিট পেরোয় কিন্তু জবাব আসে না। যেনো আবরার শুনতেই পেলো না।
আদ্রিতা পূণরায় বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আবরার আমি ভাবছিলাম
এবার আমরা বাংলাদেশে ফিরে যাই। সেখানে ছোট্ট এজটা বাড়ি বানাবো। আমি আপনি মা এ্যানি সিয়াম ভাই আমান ভাই আহাদ ভাই আর ইভান ভাই মিলে সেখানে থাকবো।
আমাদের বড়সর একটা সংসার হবে। ভাইয়াদের বিয়ে করাবো। আমার জা হবে।
সব জা রা মিলে কাজ করবো।
হ্যাপি ফ্যামেলি হবে।
বলুন আবরার?
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে আদ্রিতা। তার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই উজ্জ্বলতা আবরারের নজরে পড়ে না। কেনোনা পাশ ফিরে আদ্রিতার পানে তাকানোর সময় বোধহয় তার নেই।
তবে থেমে নেই আদ্রিতা মাকে কিভাবে বলবে তার সম্পর্কের কথা, সিয়াম ভাইকে কেমন মেয়ে বিয়ে করাবে আবোলতাবোল অনেক কথাই বলে চলেছে।
আদ্রিতার বকবকের মাঝেই শুনতে পায় আবরার তাসনিন এর গম্ভীর কন্ঠস্বর

” ইউ উইল গো টু বাংলাদেশ টুমরো
আদ্রিতা কপাল কুঁচকে তাকায় আবরারের মুখ পানে। পর মুহুর্তেই খুশি হয়ে বলে
” সত্যিই?
আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন?
আবরার বিরক্ত হয়। চোখ মুখ কুঁচকে বলে
“সাট আপ আদ্রিতা।
তুমি একা যাচ্ছো।
” কিন্তু কেনো?
আমি একা যাবো না। গেলে দুজন একসাথে যাবো না গেলে যাবোই না। এখানেই থাকবো
ব্যাসস।
নাছর বান্দা স্বরে জবাব দেয় আদ্রিতা।
আবরার আর কিছু বলে না। তারই মধ্যে হোটেলে পৌঁছে যায়। প্যার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্ক করিয়ে গাড়ি থেমে নামে। তারপর আদ্রিতাকে নামায় এবং কোলে তুলে নেয়।
চমকায় আদ্রিতা।
আবরারের গলা জড়িয়ে ধরে চাপা স্বরে বলে

“কি করছেন?
সবাই দেখে ফেলবে।
“হু কেয়ার’স?
আদ্রিতা ভেংচি কাটে। বিরবির করে বলে
“তা কেয়ার করবেন কেনো? লজ্জা শরমের বেলায় আপনার কোনো কেয়ার নেই। হাতি কোথাকার। আই উইশ আল্লাহ ওনাকে একটু লজ্জা শরম দিতো। আর আমি বেঁচে যেতাম”
আবরার আদ্রিতার নাকে চুমু খায় এবং বলে
“আল্লাহ লজ্জা শরম আমাকে দিবেও না। তুমিও বাঁচবে না।
রুমে এসে আদ্রিতাকে নামিয়ে দেয় আবরার। বালুতে সারা শরীর মাখামাখি। মনে হচ্ছে বালুর মধ্যে গোসল সেরে এসেছে। এ্যানি ঘুমায় নি। আদ্রিতার আওয়াজ পেয়ে মিউ মিউ আওয়াজ তুলে দৌড়ে চলে আসে। তবে আদ্রিতা কোলে নেওয়ার আগেই আবরার কোলে নেয়। বুকের সাথে মিশিয়ে কয়েক পলক তাকিয়ে থাকে।
আশ্চর্য বনে যায় আদ্রিতা। এ্যানি কুটুর কুটুর নয়নে তাকিয়ে আছে আবরারের মুখ পানে। মনে মনে যেনো বলছে ” আরেহহহ আব্বু তুমি কোলে নিয়েছো আমায়। আমি যে কত্তো খুশি”
আবরার এ্যানিকে নিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে

“কুইকলি শাওয়ার নাও।
আই উইল বি দ্যেয়ার ইন ফাইভ মিনিটস।
বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়ে চলে যায়।
সিয়ামদের কক্ষের সামনে দু বার টোকা দেয় সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে সিয়াম। বড়ই শোচনীয় অবস্থা তার। পরনে শুধু শর্ট প্যান্ট।
হামি তুলছিলো কিন্তু আবরারের কোলে এ্যানিকে দেখে হামি আটকে যায়। ছৌ মেরে নিয়ে নেয় বিড়াল খানা৷ বুকের সাথে জাপ্টে ধরে বলে
” আমার বোনু
সোনা মনা।
তোকে একটা চুমু খাই?
আমান পেছন থেকে সিয়াম এর মাথায় গাট্টা মেরে বলে

“ও তোর বোন হইলো কেমনে?
” যেমনে আদ্রিতা আমাদের মা হলো।
চুপসে যায় আমানের মুখখানা। দুঃখের মুহুর্ত স্মরণ হয়।
আবরার বড় বড় পা ফেলে টি টেবিলের ওপর থাকা ল্যাপটপ হাতে তুলে নেয়। বলে
“তোরা এভাবেই ঘুমচ্ছিলি?
আহাদ বলে
” তো কিভাবে ঘুমবো ভাই? নাইটি পড়ে?
আবরার ঠোঁট বাঁকায়। দুই আঙুল ল্যাপটপের কি বোর্ডে চালাতে চালাতে বলে
“টনি ক্যামেরা ফিট করেছিলো। তোদের ঘুমানোর স্টাইল দেখে নিয়েছে।
চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় ওদের। আবরারের পাশে চলে আসে। ল্যাপটপের স্কিনে দৃষ্টি ফেলতেই হেসে ওঠে সবাই।
ইভান বলে

” শালা তুই রিভেঞ্জ নিতে ওয়াশরুমে ক্যামেরা ফিট করেছিস?
আবরার জবাব দেয় না ল্যাপটপ ওদের হাতে দিয়ে একটু দূরে সরে আসে। পকেট থেকে ফোন বের করে কল লাগায় টনির নাম্বারে।
টনি ধুমপান করছিলো আপন মনে। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় কিছুটা চিন্তিত হয়। পার্সোনাল ফোন নাম্বার বউ এবং ভাই ছাড়া কেউ জানে না।
আর তারা এতো রাতে কল করবে না। তাহলে কে কল করলো?
ফোন খানা হাতে নিয়ে স্কিনে তাকায় আননন নাম্বার। কৌতুহল বসত রিসিভ করে। কানে ঠেকাতেই ভেসে আসে পরিচিত কন্ঠস্বর
” মিস্টার টনি হোয়াটসঅ্যাপ এ ভিডিও পাঠিয়েছি দেখুন।
বলেই কল কাটে। চিন্তিত টনি অতি দ্রুত নেট কানেক্টেড করে হোয়াটসঅ্যাপ এ ঢুকে। দেখতে পায় কিছুক্ষণ আগে ওয়াশরুমে কি কি করছিলো সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ওই তো কমোডে বসে গান গাচ্ছিলো। গোসলের সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ………
ঘাম ছুটে যায় টনির।
দ্বিতীয় ভিডিওটা প্লে করে। সেখানে তার বউয়ের গোসলের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
হাত ফঁসকে ফোন পড়ে যায়। উত্তেজনায় হাত কাঁপছে। শুকনো ঢোক গিলে ফোন খানা তুলে নেয়। ভিডিও অফ করে কল লাগায় আবরার তাসনিনকে। এবার রিসিভ করে সিয়াম এবং বলে

“ওরেহহহ শালার পুত সুমন্ধি
এসব তো কিছুই না। তোর টুনটুনির সা*ই*জ জেনে গেছি। পেছনে লাগলে ভাইরাল করে দিবো।
ব্রেকিং নিউজ কি দিবো আপাতত ভাবছি। ঘুমা শালা। নাহলে কলিকাতা হারবাল খেয়ে টুন***টুনি ব****ড় কর।
কল কেটে দেয় সিয়াম। এবং পরপরই বন্ধ করে ফেলে। এখন শালা কল করতে করতে মরুক।
আবরার বাঁকা হাসে। সিয়ামের কোল থেকে এ্যানিকে নিয়ে
” গুড নাইট
বলে বেরিয়ে যায়। সিয়াম মুখ বাঁকায়।
“গুড নাইট
হাহহহ
এখন যল বউয়ের সাথে কি কি করবি জানা আছে আমাদের। শালা আসছে গুড নাইট বলতে।

গোসল সেরে আবরারের সাদা রংয়ের শার্ট পড়েছে আদ্রিতা। এই মুহুর্তে পড়ার মতো আর কিছুই নেই৷
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছ।
শার্টটা হাঁটুর একটু ওপর পর্যন্ত হয়েছে। বুকের কাছে দুটো বোতাম খুলে দিয়েছে। এবং হাতা গুটিয়ে নিয়েছে। দেখতে বেশ হট হট লাগছে।
ভাবতেই মুচকি হাসে আদ্রিতা। দুই হাতে মুখ ঠেকে ফেলে। তখনই উপস্থিত হয় আবরার। আদ্রিতার এই রূপ দেখে শুকনো ঢোক গিলে। এ্যানিকে কোল থেকে নামিয়ে বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪১

” আর একবার তোমার মাঝে ডুবে যেতে দিবে?
গড প্রমিজ আজকের মতো এটাই লাস্ট।
আর একবার কাঁদাই তোমায়।
প্লিজজজ

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৩