তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৩

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৩
তানিশা সুলতানা

আবরার তাসনিন বরাবরই গম্ভীর এবং রগচটা মানুষ। যার গম্ভীরতায় সকলেই তাকে ভয় পায়। তাকে কখনোই দুর্বল হতে দেখা যায় নি। বা কখনোই নিজের গম্ভীরতা দমিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিমায়ও হয়ত কেউ দেখে নি। সবার ধারণা আবরার তাসনিন এর কোনো দুর্বলতা নেই। সে সবার থেকে আলাদা। রক্তে মাংসে গড়া মানুষ তবে হৃদয়হীন। ভালোবাসা কিংবা দুর্বলতার কোনো স্থান নেই তার মনে।
সেই আবরার তাসনিন এর দুর্বল রূপ দেখেছে আদ্রিতা। কন্ঠস্বর কাঁপতে দেখেছে। আঁখি পল্লবে অশ্রু কণা জমতে দেখেছে।

“তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। প্লিজজ কখনো ছেড়ে যেয়ো না। আ…..আমি মরে যাবো”
গভীর মিলন এর মুহুর্তে আদ্রিতার কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়িয়ে অসহায় ভঙ্গিমায় বহুবার আওড়িয়েছে বাক্য গুলো। ছোট ছোট বিলাই চোখ দুটোতে জমেছিলো অশ্রুকণা। কন্ঠস্বর কেঁপে উঠেছিলো কয়েকবার।
ব্যাথায় ছটফট করতে থাকা আদ্রিতা স্থির তাকিয়ে ছিলো মায়াভরা ওই মুখটার পানে। অনুভব করে “তারও কেউ নেই। সেও বড্ড অসহায়।”
দুটো অসহায় এবং ভালোবাসা লোভী মানুষকে আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছে। দুজনই ছোট থেকে গভীর সংগ্রাম করেছে। আপন নিড় খুঁজতে খুঁজতে বড় হয়েছে।
মুহুর্তেই আদ্রিতা প্রতিজ্ঞা করে ফেলে।
“এই মানুষটি সে কোনোদিনও ছেড়ে যাবে না। কোনোদিনও তাকে কষ্ট দিবে না। কখনোই তার অবাধ্য হবে না। যখন যেটা বলবে তখন সেটাই শুনবে। রেগে গিয়ে যদি মেরে ফেলে মরবে তবুও পিছু ছাড়বে না”
আদ্রিতার চোখের কুর্ণিশ বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আবরারের ঘামার্তক মুখশ্রীর পানে তাকায়। পরপর গোটা শরীরে নজর বুলায়। লজ্জায় কান গরম হয়ে ওঠে মুহুর্তেই। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
ইসস এই লোকটার এই রূপ আদ্রিতা ছাড়া অন্য কেউ দেখে নি। অন্তরঙ্গ মুহুর্তেই সেই কন্ঠস্বর সেই আকুল আবেদন উইথআউট ড্রেস আপ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সব মিলিয়ে ভয়ংকর দেখায় আবরারকে। সেই ভয়ংকর রূপের সঙ্গে শুধু এবং শুধুমাত্র আদ্রিতা পরিচিত। আর কেউ নয়।
ভাবতে ভাবতেই আবরার এর প্রসস্থ পিঠে হাত রাখে। একটুখানি মাথা তুলে আবরার এর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে
“শুনুন আবরার তাসনিন
আমি আপনাকে কোনোদিনও ছেড়ে যাবো না। এই যে ছুঁয়ে কথা দিলাম।
ড্রিম লাইটের নীল আলোতে স্পষ্ট দেখা যায় আবরার এর মুখ খানা। ঘন দাঁড়ির মাঝখানে থাকা গোলাপি অধরে হাসি। ধবধবে সাদা দাঁত গুলো দৃশ্যমান।
আদ্রিতার আঁখি পল্লব বড় বড় হয়ে যায়। দুই ঠোঁট ফাঁকা হয়। অবাক নয়নে দেখতে থাকে আবরার তাসনিন এর হাসিমাখা মুখ খানা। মনে মনে কয়েকবার মাশাআল্লাহ আওড়ায়।
এবং মুখে বলে

” ওহহহ মাই আল্লাহ
হাতি মশাই আপনি হাসতেও পারেন? আমাকে কেউ চিমটি কাটো। বিশ্বাস হচ্ছে না যে।
মুহুর্তেই আদ্রিতার গলায় মুখ ডুবায় আবরার। শক্ত করে কামড় বসায়। ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে নেয় আদ্রিতা। মৃদু স্বরে “আহহহহ” বলে ওঠে।
আবরার ছেড়ে দেয়। মুখপানে তাকিয়ে শুধায়
“আরও কাটতে হবে চিমটি?
আদ্রিতা অনবরত মাথা নারিয়ে না বোঝায়।
আবরার বাঁকা হেসে হাতড়িয়ে কম্বল খুঁজে গায়ে জড়িয়ে পাশে শুয়ে পড়ে। আদ্রিতা পূণরায় কামড়ে দেওয়া স্থানে হাত বুলিয়ে “উফফফ” শব্দটা বলে ওঠে। আবরার ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে
“অশ্লীল আওয়াজ দিবে না। এনার্জি শেষ।
আদ্রিতা কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। এবার ঘূর্ণিঝড় টর্নেডো সাইক্লোন যাই হয়ে যাক আর মুখ তুলবে না। কিছুতেই না। কোনোমতেই না।
বজ্জাত লোকের মুখ খানা অশ্লীলতায় ভরপুর। মুঝ খুললেই শুধু ভুলভাল শব্দ বের হয়। কথাই বলবে আর।

দীর্ঘ চার ঘন্টা ফেসবুক ঘেটে “ইশারা তাসমিন” নামক আইডিখানা খুঁজে পেয়েছে সিয়াম। এই মুহুর্তে সে ওয়াশরুমে বসে আছে ঘাপটি মেরে। বন্ধুদের বোকা বানিয়ে পটি করার কথা বলে এখানে এসেছে। এতো লুকোচুরির এক খানা কারণ রয়েছে।
বহু পূর্বে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গিয়েছে “পড়িলে নারীর প্রেমে বিয়ে করে নিও গোপনে
কখনোই বলবে না বন্ধুদের কারণ
বন্ধুদের বললে পরে
তারাই নিবে পটিয়ে”
যদিও ওই সময়ে কবি মেলাতে পারে নি ছন্দ খানা৷ তবে ইশারার সাথে বিয়েটা কোনোমতে হয়ে গেলে অবশ্যই ছন্দ খানা মিলিয়ে দিবে কবি সিয়ামন্দ্রনাথ সরকার।
ভাবতে ভাবতেই নিজের ফেসবুক প্রোফাইল খানা পাল্টে ফেলে সিয়াম। কেনোনা প্রোফাইল এ সানি লিয়ন এবং তার একটা ফটো দেওয়া ছিলো। কয়েক দিন আগেই আমান এটা এডিট করে দিয়েছে। সানিকে বড়ই পছন্দ কি না সিয়ামের।
তাই আগে প্রোফাইল থেকে সানির ফটো সরায়। তারপর গ্যালারি ঘেটে নিজের সব থেকে সুন্দর একটা পিকচার বেছে সেটা প্রোফাইল দেই। এই-বার ঠিক আছে।
সঙ্গে সঙ্গে ইশারাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়।
ছোট্ট একখানা টেক্সট দিতেও ভুলে না। “হ্যালো ইশারা আমি সিয়াম। ওই যে ধাক্কা খেয়েছিলাম তোমার সাথে”
ইতোমধ্যেই আমান ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা শুরু করে দিয়েছে। কাবাবের বড় হাড্ডি হচ্ছে আমান। মাঝারিটা আদ্রিতা। আর বাকি ছোট ছোট হাড্ডি আহাদ ইভান এবং আবরার।
বিরক্ত সিয়াম বিরবির করতে করতে টেক্সট খানা সেন্ট করে দরজা খুলে দেয়। রাগী ভঙ্গিমায় আমানের পানে তাকিয়ে বলে

“শালা ডিস্টার্ব করছিস কেনো?
” বা***ল তোর ফোন লাগবে। টনিকে কল করবো।
“কেনো?
তাকে কি প্রয়োজন?
“কলিকাতা হারবাল গিফট করবো তাকে। দেহহ শালা ফোন।
সিয়াম নিজের ফোন খানা আমানের হাতে দিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দেয়। এবার সত্যিই টয়লেট চেপেছে।
আমান আহাদ ইভান তিনজন গোল হয়ে বসে পড়ে। টনির নাম্বার শুধু সিয়ামের ফোনেই রয়েছে। “টুনটুনি ছোট” লিখে সেভ করে রেখেছে। সেই নাম্বার বের করতে যেতেই কল বেজে ওঠে। স্কিনে “ইশারা তাসনিম” নামটা লেখা। মেসেঞ্জারে কল করেছে।
আমান সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে। ওপাশ থেকে ভেসে আছে সুন্দর মিষ্টি কন্ঠস্বর।
“আসসালামু আলাইকুম। ওই যে ওড়না আটকেছিলো ঘড়িতে আপনি ওই সিয়াম বলছেন?
ইভান সালাম এর জবাব দিয়ে বলে
” ওয়ালাইকুম আসসালামু

সিয়াম হাগতে গেছে। চার পাঁচ হলো হাগু হচ্ছে না। কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভুগছে। তারওপর আবার টুনটুনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দিনকে দিন সাইজ কমছে।
সব মিলিয়ে বেচারা বড়ই দুঃখে রয়েছে।
আপনি অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পরে কল করুন।
বলেই কল কাটে। এবং তিনজন উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। সিয়াম রিংটোন এর শব্দ পেয়েই ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ইভানের কথা শুনে চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে।
আহারে শখের নারী। আর আহারে বন্ধুবান্ধব। তারা কি করে পারলো অসহায় সিয়াম আর জীবন খানা ছারখার করে দিতে?

“গিয়েছিলাম হাগতে
বন্ধুরা বলে দিয়েছে তাকে
আমি ভালোবেসে ফেলেছি যাকে
এখন আমার হবে কি?
মুখ দেখাবো কি করে?
ইশারা তুমি ভুল বুঝো না
ফোন রেখে আমি আর কখনোই হাগু করতে যাবো না।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪২

আবরার কক্ষে নেই। বেরিয়ে গিয়েছে বহুক্ষণ হলো। বেচারা এ্যানি পেছন পেছন গিয়েছে। যদিও আদ্রিতা নিশ্চিত আবরার এ্যানিকে সঙ্গে নিয়েই ফিরবে।
একা কক্ষে বোরিং লাগছে আদ্রিতার। কিন্তু আবরার যাওয়ার আগে দুবার বলেছে “এখান থেকে বের হবে না”
স্বামী ভক্ত আদ্রিতা স্বামীর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্য এতো সময় একা কক্ষে বসেছিলো। তবে এখন আর থাকতে পারছে না।
তাই ওড়না মাথায় দিয়ে বেরিয়ে পড়ে কক্ষ থেকে।
নিজেদের কক্ষ পেরুতেই সামনে পড়ে অতি পরিচিত একখানা মুখ।
“আদ্রিতা তুমি এখানে?

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৪