তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৯

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৯
তানিশা সুলতানা

আবরারের সামনে রয়েছে এ্যানির লাশ। কাঠের এক খানা বক্সে রাখা হয়েছে। সিয়াম ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আবরারের মুখ পানে৷ কি চলছে এই ছেলেটার মাথায় বুঝতে পারছে না ও। তবে বুঝতে চাইছে। আমানকে পাঠানো হয়েছেন সুইজারল্যান্ড এ যাওয়ার টিকেট বুক করতে। সন্ধ্যা বা রাতের যে কোনো ফ্লাইটে সুইজারল্যান্ড যেতে হবে। আর যাবে আহাদ এবং ইভান। ইতোমধ্যেই বহুবার আবরারকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে “আহাদ এবং আমান সুইজারল্যান্ড কেনো যাবে?”
তবে আবরার জবাব দেয় নি।
অধৈর্য সিয়াম দাঁতে দাঁত চেপে পূণরায় প্রশ্ন করে
“হোয়াট রং উইথ ইউ ব্রো? কি চাইছিস?
আবরার সিয়ামকে ঠেলে একটুখানি সরিয়ে বেডে জায়গা করে নেয় নিজের শরীরটা এলিয়ে দেওয়ার। বড়ই ক্লান্ত যেনো সে।
টানটান হয়ে শুয়ে মাথার ওপরে থাকা সাদা দেওয়ালের পানে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে

“ইউ নো হোয়াট তোরা ছাড়া আমার উইকনেস ছিলো না। বাট পাখি এবং তার ছানাটা খুব অদ্ভুত ভাবেই হৃদয়ে জায়গা করে নিলো। স্পেশালি এই ক্যাটটা। ছোট্ট বাচ্চাই আমার পছন্দ নয় সেখানে একটা ক্যাট আমাকে কাঁদালো? ইন্টারেস্টিং না?
একটু থামে আবরার। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পূণরায় বলে
” আমি এ্যানিকে সারাজীবন মনে রাখতে চাই। সিঙ্গাপুরে আমার নিজের বলতে কোনো প্রোপার্টি নেই। বাট সুইজারল্যান্ড এ বাড়ি আছে। আবরার”স হাউজ।
আবরার’স হাউজ এর পেছনে যে গার্ডেন রয়েছে সেখানে এ্যানিকে কবর দিতে চাই। ওর দেহটা এই অচেনা শহরে রাস্তার এক কোণায় পড়ে থাকবে এটা ভালো লাগবে না আমার।
আবরারের কথা গুলো সিয়াম এর হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বরাবরই আবরার তাসনিন নির্দয় এবং পাষাণ পুরুষ। সেই পাষাণ পুরুষ একটা বিড়ালের জন্য এতো কিছু করছে?
নিজের প্রান ভোমরাকে না খুঁজে বিড়ালকে কবর দেওয়ার পায়তারায় ব্যস্ত।
ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে সিয়াম। আবরারের বুকের ওপর নিজের আঘাতপ্রাপ্ত হাত খানা রাখে।
তখনই আমান চলে আসে।
দুটো টিকেট দেখিয়ে বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“রাত আটটায় ফ্লাইট ভাই। যা যা বলেছিস সবই হয়ে যাবে ভরসা রাখ। আর এক্সট্রা কিছু করার থাকলে বলে ফেল।
আবরার জবাব দেয় না। আহাদ এবং ইভান এ্যানিকে নিয়ে যায়। আবরার তাকিয়ে থাকে। যতক্ষণ দেখা গেলো ততক্ষণই দেখলো এ্যানির জন্য তৈরি কৃত ছোট্ট বক্স খানা। চোখের আড়াল হতেই বিরবির করে আওড়ায়
“তুমি আমার হৃদয়ে রয়েছো থাকবে সারাজীবন
বন্ধু আমি অনেক পেয়েছি তবে তুমি অন্য রকম।
ওরা যেতেই সিয়াম বলে
” ভাই আদ্রিতাকে ফেরাবি কিভাবে? কোনো প্ল্যানি
বাকিটা শেষ করার আগেই কেবিনে ঢুকে পড়ে একটা মহিলা। জিন্সের সঙ্গে সাদা রংয়ের কামিজ পড়েছে। চোখে রোদ চশমা। বয়স চল্লিশ ছুঁয়েছে কি ছোঁয় নি।
আবরার তাকি দেখে উঠে বসে। ডান হাতে কপাল চুলকাতে চুলকাতে বলে
“মিস্টার আরিফ রহমানের সেকেন্ড ওয়াইফ এখানে? আনবিলিয়েবল
ইমা বেগম রোদ চশমা খোলে। হ্যান্ড ব্যাগ থেকে কিছু পেপার্স বের করতে করতে বলে

” আবরার তাসনিন
আদ্রিতাকে চাও?
আবরার স্পষ্ট স্বরে বলে
“আবরার তাসনিন চায় না ছিনিয়ে নেয়।
ইমা চমৎকার হাসে। মানতেই হবে মহিলাটি আগুন সুন্দরী। যৌবন পেরিয়েছে তবুও সৌন্দর্যের বাহার কমে নি।
” আই থিংক এইবার ছিনিয়ে নিতে পারবে না। তোমার নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে আদ্রিতা।
বলতে বলতে চেয়ার টেনে বসে পড়ে নিজ দায়িত্বে। এবং আবারও বলে
” ফাস্ট এ ভেবেছিলাম তোমাকে সিঙ্গাপুর এনে বসে কথা বলবো। আদ্রিতার থেকে দুটো সাইন নিয়ে ছেড়ে দিবো। তোমাদের লাইফে ইন্টারফেয়ার করবো না। বাট যখন টনির বললো আদ্রিতার থেকেও বড় মালদার আবরার তাসনিন। সিরিয়াসলি বলছি মাথা ঘুরে যাচ্ছিলো আমার। তাই প্ল্যানিং বদলে ফেললাম৷
এখন তোমার কাছে একটাই রাস্তা খোলা আছে।
তোমার সব প্রোপার্টি বীণা শর্তে আমায় দান করে দাও। আমি তোমার বউকে তোমার কাছে এনে দিচ্ছি।
আবরার হাসে। সেই হাসিতে শব্দ নেই৷ সিয়ামেরও হাসি পায়। তবে হাসে না। ঠোঁট কামড়ে হাসি নিয়ন্ত্রণ করে। বাঘকে বলতে এসেছে তুমি কামড়ে দিও না আমায়। বোকা মহিলা। আবরার শান্ত স্বরে বলে
“আবরার তাসনিন ভালোবাসে। ভীষণ ভালোবাসে আদ্রিতা চৌধুরীকে। বাট তার থেকেও বেশি ভালোবাসে তার প্রোপার্টি।

আপনার অফার পছন্দ হয় নি আমার। নেক্সট টাইম কথা হবে। এবার আসতে পারেন।
ইমা আশ্চর্য হয়। টনি যে বললো বউ ছাড়া আবরার তাসনিন কিছুই বোঝে না। তাহলে বউকে ফিরে পাওয়ার কোনো আকুতিই নেই কেনো তার মধ্যে? কি জটলা পাঁকাচ্ছে। ইমা বেগম আবার বলে
” আবরার তুমি যতটা সহজ ভাবছো ত
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার বলে
“রাত বারোটা পনেরো মিনিটে উরফি প্লেন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। ২০৪ নাম্বার সিট আদ্রিতা চৌধুরীর। এন্ড ২০৯ নাম্বার সিট আবরার তাসনিন এর।
এখন তারা এয়ারপোর্ট থেকে দুই কিলো মিটার দূরে একটা রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে। আমার পাখি টনি এন্ড আপনার হাজব্যান্ড এর চোখ ফাঁকি দিয়ে রেস্টুরেন্ট এ বাইরে চলে এসেছে। জাস্ট এক মিনিটে পাখি আমাকে কল করবে এন্ড
বাকিটা বলার আগেই কল বেজে ওঠে। ইমা বেগম এর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে। ভুল লোকের সঙ্গে পাঙ্গা নিয়ে এসেছে কি? টনির কথা শোনা ভুল হয়ে গেলো?
আবরার পকেট থেকে ফোন বের করে। ইমাকে দেখায় নাম্বার। তার ঠোঁট কামড়ে কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে আদ্রিতার কান্না জড়িত কন্ঠস্বর
” আবরার কোথায় আপনি? কেনো আসছেন না? আমার ভয় করছে।
আবরার গম্ভীর স্বরে বলে

“আসবে না আমি। তোমার বাপের সঙ্গে বাড়ি চলে যাও
হাউমাউ করো কেঁদে ওঠে আদ্রিতা। অনুনয়ের স্বরে বলে
” প্লিজজ নিয়ে যান আমায়। আপনাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। আমার কষ্ট হচ্ছে। আপনার সব কথা শুনবো আমি। কখনোই বিরক্ত করবো না। আসিফে নামটাও মুখে আনবো না। আবরার দয়া করুন।
“ফোন কাটবে তুমি?
আদ্রিতা কান্না আটকানোর চেষ্টা চালায়। বুঝতে পারে পাষাণ লোকটার হৃদয় নরম হবে না। নিয়ে যাবে না তাকে। তাই অভিমান জড়িয়ে কন্ঠে বলে
” ঠিক আছে আসতে হবে না। নিয়ে যেতেও হবে না আমাকে। শুধু আমার এ্যানিকে কিছু খেতে দিন। সারাদিন কিছুই খায় নি ও। আর চোখে চোখে রাখবেন সব সময়। ও কিন্তু গাড়ি দেখলে ছোটাছুটি করে।
আবরার আঁখি পল্লব বন্ধ করে শব্দ গলায় বলে
“আর কোনো কাজ নেই আমার?
আদ্রিতা পূণরায় কেঁদে ওঠে। করুন স্বরে বলে

” প্লিজজ
আপনি না পারলে সিয়াম ভাইকে বলুন। আমার বাচ্চাটাকে অযত্নে ফেলে রাখবেন না। ও আমার একাকিত্ব জীবনের একমাত্র সঙ্গী। ওর কিছু হলে আমি পাগল হয়ে যাবো।
কল কাটে আবরার। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ইমাকে বলে
“শুনুন প্লেন এর ওয়াশরুমের দিকে কিন্তু ভুলেও যাবেন না। বারো ঘন্টা পরে বউকে কাছে পাবো। ওয়াশরুম টাকেই বেডরুম ভাবতে পারি
ইমা দাঁত কটমট করতে করতে বেরিয়ে যায়।
সিয়াম বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৮

“আদ্রিতার কাছে যাবি?
” ইয়েস
“এতোক্ষণ কেনো চুপ করে ছিলি?
” কজ এতোক্ষণ জানতাম না ওদের ঠিক কি চাই। এবার জেনেছি।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫০