তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫
তানিশা সুলতানা

এই মুহুর্তে বড়সড় একখানা ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলো সুইজারল্যান্ড এর জুরিখ নামক শহরের এক কোণায় অবস্থিত আবরার কুটিরে। এখানে উপস্থিত সকল মানব স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। যেনো আসমান ভেদ করে ব্রজপাত এসে পড়েছে তাদের মাথায়। বা প্রাণ ঘাতী ঘূর্ণিঝড় আক্রমণ করেছে তাদের।
ইভানের কোল হতে পড়ে গিয়েছে এ্যানি৷ একটু ব্যাথা পেয়েছে কি সে? ম্যাউ ম্যাউ আওয়াজ তুলে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। সেই দিকে মোটেও হুশশ নেই কারোরই। বিরক্ত আবরার কপাল কুঁচকে এক পলক এ্যনির পাশে তাকায়। বিড়ালটি কি বুঝলো তাকে চোখ রাঙানো হলো?
সে গুটি গুটি পাশে এগিয়ে আবরারের পায়ের কাছে শুয়ে পড়ে।

সিয়াম নাকের পাটাতল ফুলিয়ে ফোঁস ফোঁস করছে সাপের মতো। যেনো এই মুহুর্তেই হামলে পড়বে আবরারের ওপর। ছোবল দিয়ে ধ্বংস করে দিবে এই মানবটিকে। ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে দেহখানা।
আবরার পরবর্তীতে ফোনে মনোযোগ দেয়। অফিসের কিন্তু ইমপটেন্ট ডকুমেন্টস চেক করছে। আমান ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়ে। কপাল চাপকাতে চাপকাতে আহাজারি করে বলে ওঠে
“মানি না আমি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিছুতেই মানবো না। এটা হতে পারে না। কোনো মতেই না। আমার কলিজা জ্বলি যাচ্ছে। আমার হৃদপিণ্ড পুরে যাচ্ছে। ওরেহহহ তোরা আবরারের মুখে কচু ঢুকিয়ে দে।
আহাদ আমানের পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে বলে
” স্যার প্লিজ উত্তেজিত হবেন না৷
আমান আহাদের হাত খানা ঝাঁড়া মেরে ফেলে দেয়। চোখ পাকিয়ে বলে
“রাবিশ কথা বলবেন না।
আমি মরে যাচ্ছি যন্ত্রণায় আর শা লা তুই বলিস উত্তেজিত হবো না? শুধু উত্তেজিত কেনো? আমি তার বড়টা হবো।
চুপসে যায় আহাদ। কাচুমাচু হয়ে বসে থাকে আমানের পাশে।
এতোক্ষণে মুখ খোলে সিয়াম। গটগট পায়ে এগিয়ে আবরারের পাশে বসে। তার হাত থেকে ফোন খানা টেনে নিয়ে ঝাঁঝালো স্বরে বলে

” কি বলছিস তুই এসব? কবে বিয়ে করলি? ৬ বছর হলো এক সাথেই তো আছি৷ কোনো বা*ল*ছা*ল তো দেখলাম না।
কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো আবরার। বরং সিয়ামের হাত হতে ফোন নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়।
“ফোন দে।
” আগে জবাব দে
“প্রয়োজন বোধ করছি না।
হতাশ হয়ে ফোন খানা দিয়ে দেয় সিয়াম।
আবরার ফের মনোযোগী হয় ফোনে। যেনো আশেপাশের কোনো কথাই তার কানে যাচ্ছে না। সিয়াম ছোট ছোট নয়নে তাকিয়ে থাকে। মিথ্যে কথা বলে না আবরার। তাহলে মেয়েটিকে বিয়ে কবে করলো? মুহুর্তেই চিন্তিত হয়ে পড়ে।

আহাদ ফোনের স্কিনে সময় দেখে নেয়৷ এই মুহুর্তেই তাকে যেতে হবে।
তাই ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে
“আমাকে যেতে হবে। আসছি হ্যাঁ কালকে আবরারের ক্লাস নিবো। বিয়ের ভুল ছোটাবো ঘাড় হতে।
পরপর আমানও বলে তারও যেতে হবে।
একে একে সকলেই প্রস্থান করে। শুধু রয়ে যায় সিয়াম। সে আবরারের সাথেই থাকে।
সকলেই যেতে ফোঁস করে শ্বাস টানে আবরার। ফোন খানা ফেলে রেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। প্রথমেই দরজা আটকায়৷ পরপরই খুলে ফেলে পরনের থাকা সাদা রংয়ের শার্ট খানা। বুকের ক্ষত গভীর। শার্টে বেশ সমস্যা করছিলো।
সিয়াম এখনো তাকিয়ে আছে আবরারের পানে। যতক্ষণ না গোটা ঘটনা খুলে না বলবে ততক্ষণ সে দৃষ্টি সরাবে না এটা জানা আবরারের।
তাই কিনেচে ঢুকতে ঢুকতে বলে
“মেবি ২০১৫ সাল ছিলো। ওই মেয়েটার আম্মু মা রা যায়৷ তখন দাদুভাই রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়েছিলো আমাকে দিয়ে। ব্যাসসস

সিয়ামের কপালে ভাজ পড়ে। মানে কি? সেই অনেক অনেক অনেক আগের বিয়ে। আবরার নিজ বক্তব্য শেষ করে রান্নার প্রসেসিং শুরু করে দিয়েছে। ব্যস্ত ভঙ্গিমায় প্রথমে ফ্রীজ থেকে মাংস বের করলো সেটা পানিতে ভিজিয়ে পেঁয়াজ কাটার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।
সিয়াম বড় বড় পা ফেলে কিচেনে ঢোকে এবং আবরারের পাশে বসে পড়ে। গালে হাত দিয়ে বলে
” আই গ্রেস মেয়েটিকে তোর পছন্দ না। তুই তাকে ডিভোর্স দিতে চাস?
খচ খচ আওয়াজ তুলে পেঁয়াজ কাটতে কাটতে আবরার জবাব দেয়
“দ্যাটস নান অফ ইউওর বিজনেস।

” ধুরর সহজ কথা সহজ ভাবে জবাব দিতে পারিস না?
দেখ ভাই তাকে আমার ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে। একটা পুতুল সে। তুই তাকে পছন্দ করিস না৷ তাছাড়া তোদের বিয়েরও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। ভাই আমাকে ওকে দিয়ে দে। আই প্রমিজ বুকের ভেতরে আগলে রাখবো। ট্রাস্ট মি।

জবাব দেয় না আবরার। একটু বিচলিতও হয় না। চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকে। বিরক্ত হয় সিয়াম। তবে এইটুকু বুঝেছে আবরার মেয়েটিকে ০% ও পছন্দ করে না। মনে মনে বেশ খুশি হয়।
“ভাই তোর তখন লজ্জা লাগলো না এইটুকুনি মেয়েকে বিয়ে করতে? তুই কোনো ভাবে বিয়েটা আটকাতে পারতিস। রীতিমতো শিশু নির্যাতন করেছিস তুই। তোর নামে মামলা করবো আমি৷ হাজতে পুরবো। জেলের ভাত খাওয়াবো।
বেশ জোরেই কথাগুলো বলেছে সিয়াম। এ্যানির খোঁজে নিচে নেমেছে আদ্রিতা। তাই সিয়ামের শেষের কথা গুলো শুনে ফেলেছে৷ মুহুর্তেই বড় বড় পা ফেলে কিচেনে প্রবেশ করে খুশি হয়ে সিয়াম এর পাশে দাঁড়িয়ে বলে

” হ্যাঁ হ্যাঁ
চলুন থানায়। করে আসি মমলা। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। আমি আছি আপনার পাশে। ওনাকে হাজতে রেখে এসে আমরা বারবিকিউ পার্টি করবো।
আবরার ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় আদ্রিতার পানে। সদ্য গোসল করেছে বোধহয়। লম্বা চুল গুলো বাঁধন ছারা করে রেখেছে। ঘন কালো চুল গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোটা পিঠ জুড়ে। ভীষণ সিদ্ধ লাগছে।
সিয়ার হা করে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। চোখের পলক পড়ছে না যেনো। একটু চেপে দাঁড়ায় আদ্রিতার দিকে। আনমনে বলে ওঠে

“ভীষণ সুন্দর তুমি আদ্রিতা। ঠিক যেনো পরি।
আদ্রিতার কানে সিয়ামের কথা গুলো বোধহয় ঢুকলো না। কেনোনা ততক্ষণে তার নজর পড়েছে আবরারের প্রসস্থ বাহুতে। নিলর্জ্জ লোক কথাকার। বাড়িতে একটা নাদুসনুদুস ছোট মেয়ে আছে তারপরও খালি গায়ে নাচছে? চরিত্র হীন।
নিজ ভাবনার মাঝেই শুনতে পায় লোকটার সেই চিরচেনা গম্ভীর কন্ঠস্বর

” কি চাই এখানে?
নরেচরে দাঁড়ায় আদ্রিতা। সিয়ামও দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। শুকনো ঢোক গিলে।
আদ্রিতা মুখ বাঁকিয়ে জবাব দেয়
“কিছু চাই না এমনি এসেছি। সারাক্ষণ রুমে বসে থাকতে পারি না আমি।
আবরার ছু ড়ি আদ্রিতার দিকে তাক করিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে
“মুখ বাঁকাবি না ওয়ার্নিং দিলাম।
আদ্রিতা বড় বড় চোখ করে পিছিয়ে যেতে থাকে। সিয়াম ঘাবড়ায়৷ একদম আদ্রিতার নিকটে দাঁড়িয়ে ছু ড়ি খানা গলায় চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“এটা আমার বাড়ি। যখন তখন রুম হতে বের হওয়া যাবে না। এখানে সেখানে ঘুরঘুর করা যাবে না। ইটস মাই অর্ডার।

গলা শুকিয়ে আসে আদ্রিতার। লোকটা কি তাকে মে রে ফেলবে? সে কি ডাকাট? আল্লাহ এখন কে বাঁচাবে? ভয়ার্তক দৃষ্টিতে তাকায় সিয়ামের পানে। ইশারায় বলে ” আমাকে বাঁচাও”
সিয়াম ইশারায় বোঝায় “আমি কিছু করতে পারবো না”
আদ্রিতা আবরারের টকটকে লাল চোখের পানে এক পলক তাকিয়ে রিনরিনিয়ে বলে
“এমন করছেন কেনো? আ…..মি তো কিছু করি নি। আমাকে মে রে ফেলিয়েন না প্লিজ। এখনো বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখা বারণ।
আবরার ছু ড়ি খানা শব্দ করে ফেলে দেয় ফ্লোরে এবং শক্ত করে আদ্রিতার হাত খানা মুঠো করে ধরে।
সিয়ার এবার একটু সাহস পেলো বোধ। এক পা এগিয়ে বলে

” আবরার কি করছিস তুই? ধরেছিস কেনো ওকে?
আবরার চোখ পাকিয়ে তাকায় সিয়ামের মুখ পানে। আঙুল তুলে বলে
“সী ইজ মাই পার্সোনাল প্রোপার্টি সিয়াম।
সিয়াম চুপ করে যায় এবং মাথা নিচু করে ফেলে। আবরার টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে আদ্রিতাকে
” আরেহহহ আরেহহহ করছেন টা কি? টানাটানি কেনো করছেন? এটা কিন্তু ঠিক না। মা আসুক বাড়িতে। আমি বলে দিবো সবটা।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪

ননস্টপ বকবক করতে থাকে আদ্রিতা। কিন্তু থামাতে পারে না আবরারকে। টানতে টানতে নিয়ে আসে আদ্রিতার জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় কক্ষের ভেতরে। তারপর বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
চাপা আর্তনাদ ভেসে আসছে ভেতর থেকে। হুমড়ি খেয়ে ফ্লোরে পড়ে যাওয়ার ফলে বেশ ব্যাথা পেয়েছে পা এবং হাতের কনুইয়ে।
জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার পায়তারা চালায় আবরার।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬