তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫১
তানিশা সুলতানা
কতক্ষণ ঘুমিয়েছে জানা নেই আদ্রিতার। তবে চোখ খুলতেই মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। মনে হচ্ছে এখুনি বমি করে ফেলবে। দুই হাতে মাথা চেপে উঠে বসে। ইমা বেগম পাশেই বসে ফোন দেখছে। আদ্রিতা নিচু স্বরে বলে
“ওয়াশরুম যাবো।
চমকায় ইমা বেগম। হাত ফঁসকে ফোন খানা পড়ে যায়। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। আদ্রিতা ভ্রু কুচকে ফেলে। ইমা বেগমের রিয়াকশন দেখে ভাবে “ওয়াশরুমের কথা শুনে এভাবে চমকালো যেনো কোনো বড় ধরনের ক্রাইম করে ফেলেছে”
“ও…..য়াশরুম কেনো যাবে? ক….কি কি দরকার?
” বমি পাচ্ছে।
তাছাড়া পালিয়ে যাচ্ছি না আমি। প্লেন থেকে লাফ দিবো না। ভয় পাবেন না।
ইমা বেগম বিরবির করে বলে
“ভয় তো প্লেনেই বসে আছে।
” কি বললেন?
“ক…কিছু না যাও।
আদ্রিতা মাথা দুলিয়ে চলে যায়।
“যেমন বর তার তেমন বউ। ওয়াশরুমে এবার কি কান্ড ঘটা
বাকিটা শেষ করার আগেই পেছনে কারো অস্তিত্ব টের পায়। নিচু স্বরে বলছে
“আপনিও চলুন।
ইমা বেগম ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে তাকায়। আবরারকে দেখে দাঁত দাঁত চেপে বলে
” আমি কেনো যাবো?
“শশুরের বেয়াদব বউ
পাবলিক ওয়াশরুম ওটা। যে কেউ ডিস্টার্ব করতে চলে যাবে।
সো আপনি পাহাড়া দিবেন।
চলুন
বলেই আবরার চলে যায়। ইমা বেগম নিজের কপালে চার পাঁচটা থাপ্পড় মারে। বিরক্ত স্বরে বলে
“কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম আল্লাহ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চোখে মুখে পানি দেয় আদ্রিতা। বহুদিন পরে আয়নায় নিজের মুখটা দেখলো। ধবধবে ফর্সা নয় সে। তবে কালোও নয়। মা বলতো তার মুখ খানায় অনেক মায়া রয়েছে। সেই মায়াবী মুখখানা আজকে বিষন্নতায় ঘেরা। দুই তিনটা পিম্পলের দেখা মিলেছে গালে। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল চুল গুলো উসকো খুশকো। সব মিলিয়ে পাগল দেখাচ্ছে তাকে।
নিজেকে নিয়ে গবেষণা করার মাঝেই শুমুখ পারফিউম এর সুঘ্রাণ নাকে লাগে। বড্ড চেনা এই পারফিউম। তার থেকেও বেশি চেনা এই পারফিউম ব্যবহার কারী মানুষটা।
তার মানে যে মুখ খানা দেখার জন্য ছটফট করছে আদ্রিতা সেই মুখ খানা আশেপাশে রয়েছে। অপেক্ষার অবসান ঘটবে এখনই। দেখতে পাবে তাকে।
মুহুর্তেই কলিজা কেঁপে ওঠে। শ্বাস প্রশ্বাস বেড়ে যায়। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি। আর চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে নোনাজলে। পাগলের মতো এদিক ওদিক দৃষ্টি ফিরিয়ে খুঁজতে থাকে কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে। দেখতে না পেয়ে অধৈর্য হয়। কাঁপা-কাঁপা স্বরে বলে
” আবরার আমি জানি আপনি এখানেই আছেন৷ প্লিজ সামনে আসুন।
তখনই অনুভব করে নিজের ঘাড়ে কারো নিঃশ্বাস পড়ছে। পরপরই ওষ্ঠের বিচরণ অনুভব করে নিজের কানে। আবরার তাসনিন শান্ত স্বরে বলে
“পাখি
আদ্রিতা পেছন ঘুরে। আবরারের দুই হাতে হাত দিয়ে কিছুটা সময় নিয়ে দেখতে থাকে গম্ভীর মুখ খানা। কিন্তু কলিজা ঠান্ডা হচ্ছে না। তাই জড়িয়ে ধরে। তবুও কলিজা ঠান্ডা হচ্ছে না। পাগলের শার্টের বোতাম গুলো টেনে টেনে খুলতে শুরু করে আদ্রিতা। তারপর নাক ডুবিয়ে দেয় প্রশস্ত বুকে। বেশ অনেকটা সময় নিশে ঘ্রাণ শুকে। শুমুখ পারফিউম এর সাথে আবরারের শরীরের ঘ্রাণ মিলে এক মাতাল করা সুঘ্রাণ। যা পাগল করে তুলছে আদ্রিতাকে।
কলিজা ঠান্ডা হচ্ছে এবার। শার্টের কলার ছেড়ে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কখনো চুমু খেতে থাকে তো কখনো মাথা ঘষতে থাকে যেনো ঢুকে যেতে চাচ্ছে বুকের ভেতরে।
আবরার আদ্রিতার মাথায় হাত রেখে পাগলামি অনুভব করে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে। তারপর নরম স্বরে বলে
“রিলাক্স পাখি
Ive come.
আদ্রিতা শান্ত হয় না। বরং আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অনুন্নয়ের স্বরে বলে
” আমাকে আপনার বুকের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখুন। কেউ নিতে আসলে বলবেন “সী ইজ মাই পার্সোনাল প্রোপার্টি”
আবরার ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। এবং বলে
“হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে আমার। চুমু খাওয়ার ক্রেভিং উঠছে। কন্ট্রোললেস হয়ে পড়লে ওয়াশরুমেই রোমাঞ্চ শুরু করে দিবো।
আদ্রিতা লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দেয় না আবরারকে। বরং ফিসফিস করে বলে
” বিচের থেকে ওয়াশরুম অনেক ভালো।
আবরার ফোঁস করে শ্বাস টানে। আদ্রিতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওষ্ঠজোড়া পুরে নেয় নিজ ওষ্ঠের ভাজে। ওষ্ঠের সংঘর্ষণ এবং অবাধ্য হাতের বিচরণে মুহুর্তেই অস্থির করে তুলে আদ্রিতাকে। ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে মৃদু স্বরে গুঙিয়ে ওঠে।
আবরার ছেড়ে দেয়। হাতের উল্টো পিঠে ওষ্ঠ মুছে রাগান্বিত স্বরে বলে
“বা****
কেঁদে কুটে ডাকছিলে কেনো?
তোমার আহহ উফফ শোনার জন্য?
আমাকে সামলানোর এবিলিটি নেই আসছে বিচ এন্ড ওয়াশরুমের জাজ় করতে। ইডিয়েট
আদ্রিতা নিজ ওষ্ঠের হাত বুলায়। লাল রংয়ের রক্ত হাতে লেগে যায়।
” এমন করেন কেনো আমার সাথে? মানুষ মনে হয় না?
চোখ বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা চালায় আবরার। পরপরই চোখ খুলে জবাব দেয়
“আবরার তাসনিন বেপরোয়া। তার পার্টনারকেও তো একটু বেপরোয়া হতে হবে তাই নাহহ?
আদ্রিতা জবাব দেয় না।
“ডার্ক রোমাঞ্চ সহ্য করতে না পারা ওবদি আমায় ডাকবে না। কিছু মুভি এন্ড অডিও বুক দিবো। সেগুলো
বাকিটা শেষ করার আগেই আদ্রিতা বলে
” এতো অবহেলা কেনো আবরার? আপনাকে ভালোবাসি বলে? আপনাকে ছাড়া থাকতে পারি না বলে?
আবরার জবাব দেয় না। শুধু তাকিয়ে থাকে টলমল করা আঁখি পল্লবের পানে।
“আমাকে মেরে ফেলুন আবরার তবুও অবহেলা করিয়ে না। দূরে সরিয়ে রাখিয়েন না। এক দুরত্ব সইতে পারছি না আমি।
“সারাজীবন এক সঙ্গে থাকার জন্য মাঝেমধ্যে একটু দূরে যেতে হয় পাখি।
একদিন সমস্ত অন্ধকার কেটে যাবে, আমাদের কাছের মানুষ গুলো শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়বে। সেইদিন আবরার আদ্রিতা আবারও এক হবে। এই দুরত্বের সমাপ্তি ঘটবে।
ততদিন পর্যন্ত তোমার হাতে ঘড়িটা খুলবে না। আসছি পাখি
ব্যাসস ঠিক যেভাবে এসেছিলো আবরার তাসনিন সেভাবেই চলে যায়। আদ্রিতা হাঁটু মুরে বসে হুহু করে কেঁদে ওঠে। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে তার। আবরার তাসনিন চলে গেলো। আবারও হারিয়ে ফেললো আদ্রিতা। এতো কাছে পেয়েও ধরে রাখতে পারলো না। এতোটা অনুন্নয় করেও আটকাতে পারলো না পাষাণ মানবটিকে।
“যতটা কষ্ট আমাকে দিচ্ছেন ঠিক ততটাই কষ্ট আপনাকে পেতে হবে আবরার।
অবহেলা অবহেলা খেলাটা আপনি শুরু করেছেন এবার শেষ করবো আমি।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থাকা ল্যান্ড করে। একে একে সকল যাত্রী নামতে শুরু করে। আবরার তাসনিন এর জন্য হেলিকপ্টার এসে দাঁড়িয়ে আছে অনেক আগে থেকেই। এয়ারপোর্টে লাগেজ চেকিং এর ঝামেলা নেই৷ প্লেন থেকে নেমে হেলিকপ্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আবরার। সিয়াম ক্লান্ত। সে হেলিকপ্টারে উঠে পড়েছে ইতোমধ্যেই।
আদ্রিতাকে নিয়ে ইমা বেগম প্লেন থেকে নামে৷ তার পেছনে আসছে আরিফ এবং তাদের দুটো সন্তান। ইমা বেগম তাকিয়ে থাকে আবরারের মুখ পানে। যেনো বোঝার চেষ্টা করছে পরবর্তী প্ল্যানিং। আদ্রিতাও এক পলক তাকিয়েছিলো। তবে কয়েক সেকেন্ডের জন্য। পরপরই নজর ফিরিয়ে হাতে থাকা সোনালী রংয়ের ঘড়ির পানে তাকায়।
কিছু একটা ভেবে খুলে ফেলে ঘড়িখানা। এবং ফেলে দেয় দূর অজানায়।
আবরার ব্যাপারটা খেয়াল করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
তখনই সাগর নামক এক বিমানবালা একটা লাগেজ এনে আবরারের হাতে দেয়।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫০
” স্যার এটাই ইমা চৌধুরীর লাগেজ। আই থিংক সব কিছু এখানেই রয়েছে।
আবরার গম্ভীর স্বরে তাকে চলে যেতে বলে। এবং নিজে উঠে পড়ে হেলিকপ্টারে।
বিকট শব্দ তুলে ঘুরতে থাকে হেলিকপ্টারে পাখা।