তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৯
তানিশা সুলতানা
কালকে আদ্রতার জন্মদিন। জন্মদিন নিয়ে প্রতিটা মানুষেরই আলাদা উৎসাহ থাকে। গোটা ৩৬৪ দিন মন খারাপ, দুঃখ, আক্ষেপ, আফসোস নিয়ে কাটালেও এই একটা দিনে তারা প্রাণ খুলে হাসার চেষ্টা করে। আদ্রিতাও সেই দলের একজন।
প্রতি বছর নিজের জন্মদিনে রাত ঠিক বারোটার সময়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ কেউ ছিলো না তার যে ঠিক বারোটায় হ্যাপি বার্থডে বলবে। বা একটা ছোট্ট কেক এনে তাকে দিবে৷
ওই বেলা গড়ালে মা শুকনো মুখে একটু “হ্যাপি বার্থডে আওড়াতো”
আর তিথি আপু তিহান ভাইয়া ছোটখাটো গিফট দিতো। এই যেমন একটা কলম বক্স, জ্যামেতি বক্স, টিভিন বক্স এই যাহহ।
আবার কখনো কখনো বাবা কল দিয়ে “বার্থডে উইশ করতো”
কিছু টাকা পাঠাতো। ব্যাসস আদ্রিতার জাঁকজমকপূর্ণ জন্মদিন এভাবেই কেটেছে সব সময়।
“আদ্রিতা কোথায় তুমি। রান্না করতে হবে তো।
মায়ের ডাকে ভাবনার জগত থেকে বের হয় আদ্রিতা। আসমানে জ্বল জ্বল করতে থাকে হাজারো তারাদের দিকে তাকিয়ে কখন যে চোখের কোণে অশ্রু কণা জমে গিয়েছে খেয়ালই করে নি৷
ডান হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে রুম থেকে বের হয় সে। বাড়িতে মা সে এবং আবরারের চার বন্ধু ছাড়া আর কেউ নেই।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিচেনে যেতেই দেখতে পায় সিয়াম কিছু একটা করছে লুকিয়ে লুকিয়ে। আদ্রিতা কপাল কুঁচকায়। ধীর গতিতে পা বাড়িয়ে এগিয়ে যায়। কান এগিয়ে শোনার চেষ্টা করে।
সিয়াম ফিসফিস করে কাউকে কলে বলছে
” ইশারা চলো মিট করি আমরা।
ওপাশ থেকে ইশারা কি বলে শোনা যায় না তবে আদ্রিতার পেছন থেকে তিন ইডিয়েট বলে ওঠে
“ইশারা মিট করিও না ভুলেও
সিয়ামের কিন্তু এনার্জি নেই। তার মেইন পয়েন্ট দুর্বল।
যে ভয়ে কিচেনে লুকিয়েছিলো সিয়াম সেই ভয়টাই দৌড়ে চলে এসেছে তার কাছে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সিয়াম৷ আদ্রিতা এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ায়।
আমান আবারও বলে ওঠে
” ডাক্তার দেখিয়েছি বুঝলে ইশারা?
ডাক্তার দুঃখে কানতে কানতে বললো “এই মেশিন এর তেল শেষ। আর চলবে না”
সিয়াম কল খানা কাটতে গিয়ে লাউন স্পিকারে দিয়ে ফেলে। ওপাশ থেকে ইশারা বলে
“তেল কিভাবে শেষ হলো?
উচ্চ স্বরে হেসে ওঠে ইভান আমান আর আহাদ।
হাসি নিয়ন্ত্রণে এনে আহাদ বলতে যায়
” আমি ডিটেইলস এ বলছ
বাকিটা শেষ করার আগেই সিয়াম কল কাটে। রাগী দৃষ্টিতে বন্ধুদের পানে তাকিয়ে কবিতার স্বরে বলে ওঠে
“বন্ধু নামে কলঙ্ক তোরা
আমারই ভাই কপাল পোরা
কোন দুঃখে পেয়েছিলাম তোদের
নষ্ট করে দিলি আমার পিরিতে স্বাদের।
আমান সিয়ামের পিঠ চাপকে বলে
” বাহহহ কি সুন্দর কবিতা।
আরও বলতে থাক শুনতে ভালো লাগছে।
সিয়াম বলে না। মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। বেচারা সব সময় ইশারার সামনে তার প্রেস্টিজ পান্চার হয়ে যায়। এই মুখ কি করে দেখাবে মেয়েটাকে?
রাত এগারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট। আজকে সারাদিনে আবরার তাসনিনকে দেখে নি আদ্রিতা। কোথায় গেছে জানা নেই। সিয়াম আমান আহাদ ইভান ওরা তো সারাদিন বাড়িতেই ছিলো। ছিলো না শুধু ওই একটা মানুষ। মা তার পছন্দের সব খাবার রান্না করে অপেক্ষা করছিলো। অবশ্যই এখনো অপেক্ষা করছে। তবে আদ্রিতা জানে সে আসবে না। তার কাছে ইমোশন, টাইমিং, ভালোবাসা এসবের কোনো ভ্যালু নেই। বড্ড পাষাণ এবং হার্টলেস মানুষ কি না?
এসব ভাবতে ভাবতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় আদ্রিতা। আজকে আসমানে চাঁদ নেই। রাস্তায় থাকা ল্যামপোস্ট গুলোও জ্বলছে না। যেনো তারাও আজকে চাঁদের মতো লুকিয়ে পড়েছে। অমাবস্যা নেমেছে তাদের জীবনেও।
আদ্রিতা ঘুটঘুটে কালো রংয়ের আসমান পানে তাকিয়ে বিরবির করে বলে ওঠে
“ওহে চাঁদ
আমার ব্যক্তিগত চাঁদকে বলে দিও
আমি তাকে অসম্ভব ভালোবাসি৷ সে যেনো আমায় ভুলে না যায়। মনের কোণে কিংবা জীবনের শেষ পৃষ্ঠার এক লাইনে যত্নে সাজিয়ে রাখে।
আমি আগাছার ন্যায় সেই এক কোণায় অতি সুন্দর ফুল হয়ে তার বুক পকেটে থেকে যাবে অবহেলা সহ্য করে।
তখনই একটা শব্দ হয়। কিসের শব্দ? আদ্রিতা আসমান থেকে দৃষ্টি ফেরায়। আশেপাশে তাকিয়ে শব্দের উৎস খুঁজতে থাকে। তখনই চারিপাশে লাইট জ্বলে ওঠে। উহু লাইট নয়৷ মিটিমিটি তারা। এবং বিশাল বড় সাইজের একটা বাঁকা চাঁদ। আসমানে ভেসে উঠেছে ইংরেজি বর্ণ দিয়ে সাজানো লেখাটি “Happy Birthday pakhi”
আদ্রিতা আশ্চর্য হয়। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে তখনই আরেকটি চমক দেখতে পায়। ব্যালকনি থেকে কিছুটা দূরে বিশাল সাইজের মনিটরে ভেসে উঠছে আদ্রিতার ছোট থেকে বড় হওয়ার ফটো গুলো
1 months
2 Months
3 Months
মানে জন্ম থেকে বেড়া ওঠা ওবদি সকল মাসের ফটো। মিউজিক বেজে ওঠে
“তুহিতো জান্নাত মেরা
তুহি মেরা জুনু
তুহি তো মান্নাত মেরা
তুহি রুকা সুকু
তুহি আখিওকো ঠান্ডাক
তুহি দিল কিয়া দোস্তাক
ওর কুস না জানু মে
বাসস ইতনা হি জানু
এখানেই শেষ নয়। হঠাৎ করে আদ্রিতার সামনে আসে আবরার। হাঁটু মুরে বসে পড়ে। হাতে লাল রংয়ের একটা বক্স
তাতে ডায়মন্ডের রিং
সেটা আদ্রিতার পানে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে
” ভালোবাসা কাকে বলে আমি জানি না। বাট যদি ভালো থাকার নাম ভালোবাসা হয় তাহলে আমি তোমাকে প্রতি মুহুর্তে ভালোবাসি।
“পাখি আই লাভ ইউ।
আদ্রিতা ঠিকঠাক শুনতে পেলো না বোধহয়। আবরার তাকে আই লাভ ইউ বললো? না কি ভুল শুনলো?
আদ্রিতা মায়া মায়া নয়নে তাকিয়ে থাকে আবরারের মুখ পানে। মানে সে আবার শুনতে চায় আবরার ঠিক কি বললো।
” ক..কি বললেন?
আবরার দাঁড়িয়ে পড়ে। বক্স থেকে রিং খুলে আদ্রিতার হাতে পড়িয়ে দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে। ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলে
“বলেছি
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৮
You Will be Intimate with me?
ইউ আর লুকিং সো হট
আই ক্যান নট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।
আদ্রিতা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দেয় আবরারকে। চোখ পাকিয়ে বলে
” অসভ্য নির্লজ্জ বেহায়া হাতি কোথাকার।
প্রপোজটাও ঠিকঠাক করতে জানে না।
আই হেইট ইউ।
