তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬০

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬০
তানিশা সুলতানা

রাগে হাত পা কাঁপছে টনির। ফুল সাজানো খাটে বসে আছে দাঁতে দাঁত চেপে। হাতে ফোন৷ সুইজারল্যান্ড থেকে তার বউ হাজারবার কল করে যাচ্ছে। মেয়ে ভয়েস মেসেজ পাঠাচ্ছে। কিন্তু তাদের মেসেজের উত্তর দিচ্ছে না। দিবে কি করে? কিভাবে বলবে “আমি আবার বিয়ে করেছি?”
ইমা বেশ মুডেই আছে। আপাতত ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলের ক্লিপ খুলছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। যেনো মনে রং লেগেছে। টনির ইমাকেও বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে ঘাড় ধরে রুম থেকে বের করে দিতে। কিন্তু শয়তান ছেলে গুলো বাইরে থেকে দরজা লক করে চলে গেছে। টনি বিরবির করে বলে

“ওদের আমি ছাড়বো না। একেকটাকে নরক দেখিয়ে ছাড়বো।
ইমার নজর পড়ে টনির দিকে। তার থতমত মুখ খানা দেখে বলে
“কি ব্যাপার মিস্টার টনি এত আপসেট দেখাচ্ছে যে?
টনি ইমার দিকে না তাকিয়ে জবাব দেয়
“তুমি ঘাড়ে জুটলে আপসেট হবো না?
ইমা বাঁকা হাসে এবং বলে
“ভালোই হলো এত টাকা পয়সা আপনার। একটা বউ খেয়ে শেষ করতে পারত না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

টনি জবাব দেয় না। মূল এই মহিলার সাথে কথা বাড়াতে চাচ্ছে না। ঠান্ডা মাথায় প্ল্যানিং সাজাতে হবে। তার জন্য ঘুম প্রয়োজন। মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে। ঘুমলে রিলাক্স লাগবে তারওপর আবার কাল সকাল সাতটার ফ্ল্যাইটে সুইজারল্যান্ড এ যাবে। আবরার এবং তার বন্ধুদের যা করার সুইজারল্যান্ড গিয়েই করবে। জীবনটা শেষ করে দেবে ওদের। এসব ভাবতে ভাবতেই খাটের মাঝখানে উঠে পড়ে সে। বালিশে মাথা রাখবে ঠিক তখনই খাট ভেঙে পড়ে যায়।
সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে যায় ঘটনা৷ কোমরে বেশ ব্যথা পায় টনি। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
ইমা বড় বড় চোখ করে তাকায়। কি হলো এটা?
সে এগিয়ে যায়। টনির দিকে হাত বাড়িয়ে বলে

” এ বাবা কিভাবে পড়লেন?
টনি ইমার হাত ধরে না। বরং একা একাই উঠে পড়ে। সে বুঝেও যায় এসব সিয়ামদের কারসাজি।
এই দৃশ্য খানা ল্যাপটপের স্কিনে দেখে চার বন্ধু হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে থাকে।
যাক প্ল্যানিং সাকসেসফুল।
সিয়াম বলে
“বাসর রাতে ভাঙিলো খাট
পড়িলো বর দুড়ুম করে
বউ বলে উঠলো ” কি হলো তোমার”
পড়িলে কি করে?
এমন প্রশ্ন শুনিয়া বর
হাসিলো লাজুক হাসি

জবাব দিলো “বউ গো এটা পাওয়ারের কারসাজি”
এমন কথা শুনিয়া বউ পাইয়া গেলো লজ্জা
বরের টাকে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো “চলো ফ্লোরেই করি ফুলসজ্জা”
সিয়ামের এমন সুন্দর কবিতা শুনে আহাদ বলে
“ভাই তোর প্রতিভা তুই ফুটিয়ে তুলিস না। নাড়িভুড়ির মধ্যে লুকিয়ে রাখ।
জুতোর বড়ই দাম। নোবেল বানাতে সমস্যা হবে আমাদের।
আমান বলে ওঠে
” আহাদ সত্যি কথা বলিস না। সিয়াম কষ্ট পাবে।

চোখ দুটো ছলছল করছে আদ্রিতার। কলিজা কাঁপছে। গলা শুকিয়ে আসছে। হাসফাস লাগছে। মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে আসছে। নিজের ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছে না।
বিশাল মনিটরের স্কিনে কার্টিন চলছে। সেখানে দেখাচ্ছে একটা কালো রংয়ের গাড়ি চলে যাচ্ছে। গাড়ির পেছনে একটা সাদা দৌড়াচ্ছে। তার পেছনে একটা ছেলে। ছেলেটা গাড়ি ধরে ফেললো। আর বিড়ালটা এলোমেলো দৌড়াতে থাকলো। একটা সময় বড় একটা গাড়ি আসলো বিড়ালটিকে ধাক্কা দিলো। ছিঁড়কে পড়লো বিড়ালটা। গাড়ি ধরে রাখা ছেলেটাও গাড়ি ছেড়ে দিলো। সেও গড়িয়ে পড়লো রাস্তায়।

তারপর মৃত বিড়ালটিকে কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকলো।
এমন দৃশ্য দেখে আদ্রিতা ঠিক বুঝতে পেরেছে এই ঘটনা খানা বাস্তবে ঘটেছে। তার সাথেই ঘটেছে। তার এ্যনি আর নেই। সিয়াম ভাই তার জন্য নিজের জীবনের পরোয়া করে নি।
আদ্রিতা দুই হাতে মুখ ঠেকে ডুকরে কেঁদে ওঠে৷
“আবরার আপনি আমার এ্যানিকে বাঁচাতে পারলেন না? আপনার না এতো ক্ষমতা? আপনি না এতো বড় মানুষ?
তাহলে সামান্য একটা বাচ্চাকে বাঁচাতে পারলেন না?
আমি তো নিশ্চিন্তে দিন পারছি। ভাবছি আমার এ্যানি সুইজারল্যান্ড এ ঠিকঠাক আছে। আমি আপনার গেলেই তাকে দেখতে পারবো। ছুঁতে পারবো।
আবরার আদ্রিতার পাশে বসে পড়ে হাঁটু মুরে। হাত রাখে আদ্রিতার কাঁধে।

” ডোন্ট ক্রাই পাখি
ডিজগাস্টিং লাগে আমার।
আদ্রিতা চোখের পানি মুছে নেয় হাতের উল্টো পিঠে। তাকায় আবরারের মুখ পানে। ইচ্ছে করে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখতে। কিন্তু সেটা করে না। বরং সুন্দর পুরুষালি হাত খানা আঁকড়ে ধরে আবদারের স্বরে বলে
“ঠিক আছে কাঁদবো না। শুধু একবার বলুন আমাকে চাই আপনার?
আদ্রিতার হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে আবরার জবাব দেয়
” ইয়েস
তোমার জন্যই
বাকিটা শেষ করার আগেই আদ্রিতা বলে
“তাহলে সব ছেড়ে দিন। আমার হয়ে থাকুন শুধু। ভীষণ সাধারণ হয়ে।

আমাদের ছোট্ট একটা ঘর হোক। সেখানে বিলাসিতা থাকবে না, অঢেল টাকা থাকবে না, কোনো শত্রু থাকবে না।
বাংলাদেশের কোনো এক প্রান্তের ক্ষুদ্র একটা শহরে ছোট বাড়ি বানাবো। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো অল্প কিছু একটা রোজগার করে এনে দিবেন আমায়। ডাল ভাত রান্না করে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো আমি৷
আদ্রিতা জবাবের আশায় উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আবরার কোনো জবাব দেয় না। আদ্রিতা আরও একটু শক্ত করে চেপে ধরে আবরারের হাত। পূণরায় বলে
“আমার হয়ে থাকুন না আবরার। খুব সাধারণ হয়ে বাঁচবো আমরা। পড়ন্ত বিকেলে আপনার হাত ধরে কিছুটা পথ হাঁটবো৷ ছুটির দিনে আপনার সঙ্গে গোটা শহর ঘুরে বেড়াবো। রাস্তার ধারে আগাছায় বেড়ে ওঠা সাধারণ ফুল আমার হাতে দিয়ে বলবেন ভালোবাসি।

ব্যাসস আর কিচ্ছু চাই না আমার।
আদ্রিতার কথায় একটু হাসে আবরার। আদ্রিতা থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর দুই হাত আদ্রিতার দুই গালে রেখে কপালে চুমু খেয়ে উদাস স্বরে জবাব দেয়
“তোমার মতো থাকতে আমি খুব চাই
আমার মতো থাকাটা আমার দুর্ভাগ্য।
আবরারের কঠিন কথা বুঝতে পারে না আদ্রিতা। শুধু এই টুকু বুঝতে পারে “আবরার থাকবে না। তাকে বেঁধে রাখতে পারবে না”

“থাকবেন না আমার সাথে?
“আমি বেপরোয়া ঘোড়া পাখি।
তুমি সংসারের বাধনে বাঁধতে পারবে না আমায়।
আর আমার থেকে মুক্তিও পাবে না।
” আপনার অনেক শত্রু আবরার। টনি ছাড়বে বা আপনাকে। আমার বাবাও ছাড়বে না।
প্রসঙ্গ পাল্টে আবরার বলে
“পাখি একটা গান শুনবে?
ইউ নো হোয়াট কলেজ লাইফে অনেক গান গাইতাম। গিটার বাজিয়ে বন্ধুদের আড্ডা জমাতাম।
ওয়েট এ্যা মিনিট গিটার নিয়ে আসছি। তোমায় গান শোনাবো।
আবরার চলে যায়। নিজের রুমে গিয়ে আলমারি থেকে পুরোনো গিটার খুঁজে বের করে। এবং সেটা নিয়ে ফিরে আসে আদ্রিতার কাছে।
পাশে বসে গিটারের সুর তোলে। অনেক দিন চর্চা করা হয় না তবুও ভালোই সুর তুলতে পারে। সেই সাথে ঠোঁট মিলিয়ে গাইতে থাকে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৯

” আজ এক নাম না কোনো পাখি
ডাক দিলে ঠোঁটে নিয়ে খরকুটো
আজ এলো কোন অজানা বিকেল
টান দিলো গোধুলি এক মুঠো
তুমি যাবে কি?
বলে যাবে কি? দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬১