তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬১
তানিশা সুলতানা
ভোরের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় আদ্রিতার। পিটপিট করে চোখ খুলতেই নিজেকে বেলকনিতে আবিষ্কার করে। এই তো রেলিং এ মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে বসে বসে ঘুমচ্ছিলো। আদ্রিতার যতদূর মনে পড়ছে তার সাথে আবরার ছিলো। গান শোনাচ্ছিলো তাকে। গান শুনতে শুনতে কখন জানি চোখ লেগে গিয়েছিলো বুঝতেই পারে নি সে।
আদ্রিতা হামি তুলে উঠে দাঁড়ায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে আবরারকে খোঁজে। কোথায় গেলো সে? আর গেলোই যখন আদ্রিতাকে ডেকে তুললো না কেনো? হিরোদের মতো কোলে করে খাটে শুয়িয়ে দিতেও তো পারতো।
মুখ বাঁকায় আদ্রিতা। চুল গুলো হাত খোঁপা করতে করতে ওয়াশরুমে ঢোকে। চটজলদি ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে। নিশ্চয় মা একা একা কিচেনে রয়েছে।
আদ্রিতার ভাবনাই সত্যি হলো৷ আতিয়া বেগম ময়দার ড্রো বানাচ্ছে।
“গুড মর্নিং মা।
” কি যে করিস তুই। এতো দেরি করলি কেনো?
আদ্রিতা সবজি হাতে নিয়ে জবাব দেয়
“তোমার ছেলে বার্থডে সারপ্রাইজ দিয়েছিলো। তাই দেরি হয়ে গেলো।।
আতিয়া মলিন হাসে
” ছেলেটা তোকে ভীষণ ভালোবাসে। তা তোকে যে কাজ দিয়েছিলাম?
“মা আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। তার সঙ্গে চলে যাবো। তোমার ছেলে এখানে থাকবে না। সে নিজেকে বদলাবেও না। যেমন তেমনই থাকবে।
একটা হাতি জন্ম দিয়েছো তুমি। সারাক্ষণ শুধু হম্বিতম্বি করবে আর ধমকাবে। এতো রাগ কোথা থেকে আসে তার?
“তুই এবার ভালোবাসা দিয়ে রাগ কমিয়ে দিস।
লাজুক হাসে আদ্রিতা। মনে মনে বলে
” তোমার হাতি ছেলের রাগ কমাতে গেলে আমাকে চুমু খেয়েই আধমরা করে ফেলবে। বেপরোয়া একটা
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শুধুমাত্র আদ্রিতার জন্য বাংলাদেশে আসে নি আবরার। তার পার্সোনাল কাজও ছিলো। তাসিন ফ্যাশন হাউজ এর একটা শাখা বাংলাদেশে খুলতে চাচ্ছে। আবরারের স্বপ্ন গোটা পৃথিবী চিনবে তাকে। গোটা পৃথিবীতে রাজত্ব করবে সে এবং তার কোম্পানি।
তারপর জন্য জায়গা কিনে ফেলেছে অনেক আগেই। সেখানে বিল্ডিংও উঠেছে।
আজকেই কাজের সমাপ্তি হবে।
আবরার আমান আহাদ এবং ইভান সেই বিল্ডিং এর সামনে থাকা একটা রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে। সকলের সামনেই কফি রাখা বাট কেউ হাতে নিচ্ছে না।
বাংলাদেশের সব থেকে বড় ব্যান্ড যা এই মুহুর্তে মার্কেট দখল করে আছে। সেই ব্যান্ডের মালিকও আবরারের সামনে বসে আছে। সে টনির শালা।
ইতোমধ্যেই জেনেছে আবরার টনির সঙ্গে ঠিক কি কি করেছে।
“তো মিস্টার আবরার তাসনিন। আপনি যা করেছেন তা কি ঠিক করেছেন?
আপনি বোধহয় জানেন না সুইজারল্যান্ড এ আবরার কোম্পানিতে আগুন লেগেছে৷ জ্বলে গ
তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আবরার বলে ওঠে
” দুটো ব্যাপারে আবরার তাসনিন ভীষণ প্রসেসিভ। ওয়ান আদ্রিতা চৌধুরী। টু তাসিন ফ্যাশন হাউস। এই দুটো জায়গায় যারা হাত দিবে বা দেওয়ার চেষ্টা করবে তাদের শেষ করে দিবো আমি।
লোকটা ভীষণ মজা পেলো বোধহয়। ঠোঁটের কোণে কুটিল হাসি জমিয়ে বলে
“ওয়াও তাই?
বাট এই দুটো জায়গাই যে হাত দেওয়া হবে। অলরেডি তাসিন ফ্যাশন হাউজ জ্বলছে। এবার আদ্রিতা
বাকিটা শেষ করতে পারে না সে
” ছুঁয়ে দেখা।
জাস্ট তার দিকে তাকিয়ে দেখ। দুনিয়া দেখার সাধ মিটে যাবে।
আবরার তাসনিন বড্ড হিংস্র বাজ পাখির চেয়েও হিংস্র শুধু তার পাখির ব্যাপারে।
সী ইজ মাই মাইন।
চলে যায় আবরার। তাকে অনুসরণ করে পেছন পেছন যেতে থাকে চার বন্ধু।
“আবরার জানোয়ারটা আমাদের স্বপ্নের ফ্যাশন হাউজ জ্বালিয়ে দিলো।
সিয়ামের চোখে টলমল করছে পানি। যখন তখন গড়িয়ে পড়বে।
আবরার তার কাঁধে হাত রাখে।
“সুইজারল্যান্ড ব্যাক করবো আমরা।
” মাকে সঙ্গে নিবি?
আমানের প্রশ্নের জবাব দেয় না আবরার। নিজের বাইকে উঠে হেলমেট মাথায় পড়ে নেয়। তারপর চলে যায় নিজ গন্তব্যে।
ওরা চার বন্ধুও গাড়িতে চেপে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
আদ্রিতার বরাবরের ইচ্ছে ছিলো স্লিভলেস ব্লাউজ এর সাথে লাল রংয়ের পাতলা শাড়ি পড়বে৷ দুই হাত ভর্তি লাল চুড়ি থাকবে, কানে ইয়া বড় ইয়ারিং, ভাড়ি মেকাপ আর ঠোঁটে টকটকে লাল রংয়ের লিপস্টিক। রুম খানাও বেশ সাজানো থাকবে। বিভিন্ন রংয়ের ক্যান্ডেল, তার সাথে তরতাজা গোলাপ এবং রজনীগন্ধা ফুলের কম্বিনেশনে সাজাবে। আজকে আদ্রিতার স্বপ্ন পূরণ এর দিন। ঠিক যেভাবে সে সাজাতে চেয়েছে কক্ষ ঠিক সেভাবেই সাজিয়ে দিয়েছে সিয়াম আমান আহাদ এবং ইভান।
এই মুহুর্তে সুন্দর রুম খানায় দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতা। রুমের মাঝখানে রয়েছে ছোট টি-টেবিল। তার ওপরে লাল রংয়ের কেক। পাশেই চাকু। আবরার আসলে কেক কাটতে বলেছে সিয়াম।
রুমে হালকা ভলিউম এ গান বাজবে।
“যদি মনটা চুরি করি
তোমার মন আকাশে উড়ি
তবে দেবে কি দেবে কি ওই পরানে ঠাঁই
যদি তোমার হাতটা ধরি
আর কথার মাথায় পড়ি
তবে তুমি কি
হবে কি
আমার পুরোটাই”
গান খানা বড্ড পছন্দের আদ্রিতার। গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাতে মেলাতে চট করেই নিজের মনের মতো করে সেজে নেয় সে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই নিজে দেখতে থাকে বারংবার আর মিটমিট করে হাসতে থাকে। আর বিরবির করে বলে
“আবরার আজকে আমাকে দেখে বলবে
“পাখি ইউ আর লুকিং সো হট।
আই কেন নট কন্ট্রোল মাই সেলফ।”
তখনই খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হয়। আদ্রিতা চমকায়। আবরার আসবে সে জানতো কিন্তু এখনই আসবে জানতো না। তার জন্যই চমকেছে।
কিন্তু আবরারকে দেখে চমক গুলো বেড়ে যায়। কেনোনা মহারাজা পানজাবি পড়েছে।
এই প্রথমবার তাকে পানজাবিতে দেখলো আদ্রিতা। ফর্সা বর্ণের আবরারের গায়ে কালো পানজাবিটা ফুটে উঠেছে। চুল গুলো জেল দিয়ে সেটআপ করা। পানজাবির হাতা কনুই ওবদি গোটানো। ফর্সা হাতের কবজিতে কালো রংয়ের ওয়াচ ঝুলছে। হাতে এক গুচ্ছো লাল গোলাপ। চোখ দুটো আদ্রিতার পানে আবদ্ধ। ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে লোকটা। আদ্রিতা দৃষ্টি ফেরায় না। নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে থাকে তার মুখ পানে। আজকে এতো অদ্ভুত সুন্দর লাগছে কেনো তাকে? কেনো নজর ফেরানো যাচ্ছে না?
আবরার আদ্রিতাড সামনে এসে দাঁড়ায়। ফুল গুলো তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে
“আদ্রিতা
ইউ উইল বি দ্যা মাদার্স অফ মাই চাইল্ড?
ধ্যান ভাঙে আদ্রিতার। নরেচরে কপাল কুঁচকায়। লোকটা তাকে মা হওয়ার প্রপোজাল দিচ্ছে? মানে বাচ্চা চাইছে?
লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে ওঠে আদ্রিতার। মাথা নিচু করে হাঁসফাঁস করতে থাকে।
তার থেকে জবাব না পেয়ে আবরার পূণরায় বলে
” একটা ছোট্ট এ্যানি গিফট করবে আমায়? জানি তোমার বয়স কম। বাট আই নিড এ লিটল প্রিন্সেস।
আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে বলে
“আ..বরার ওই
আবরার ফুল গুলো ফেলে দিয়ে আদ্রিতার কোমর জড়িয়ে ধরে। তারপর ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে ফিসফিস করে বলে
” ওই হ্যাঁ না আসলে
এসব বলে কিছু হবে না। আমার বেবি লাগবে মানে লাগবে।
আদ্রিতা নিজের ঠোঁটের ওপর থেকে আবরারের হাত সরিয়ে দেয়। এবং দুই হাতে লম্বা হাতির গলা জড়িয়ে বলে
“মিস্টার হাতি
আমারও বেবি চাই।
ওই হ্যাঁ না আসলে এসবের মানেই হচ্ছে সম্মতি।
মেয়ে মানুষের লজ্জা বেশি। বুক ফাঁটে তো মুখ ফোঁটে না। বুঝে নিতে হয়।
আবরার কপাল কুঁচকে বলে
” ইউ মিন টু সে তুমি অলওয়েজ ইন্টিমেন্ট হওয়ার জন্য রেডি থাকো?
আদ্রিতা দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় আবরারের মুখ পানে। ইচ্ছে করে লোকটার দাঁত গুলো ভেঙে দিতে। নির্লজ্জ বেহায়া কোথাকার।
আদ্রিতাকে রাগ করতে দেখে আবরার হাত ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। তারপর বলে
“ওকেহহ
কিছু বলছি না আর।
তারপর কোলে তুলে নেয় আদ্রিতাকে।
কপালে চুমু খেয়ে বলে
“ইউ আর লুকিং সো হট।
আদ্রিতা জবাব দেয় না। মুখ লুকায় আবরারের বুকে।
তাকে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় আবরার।
লাইট বন্ধ করে ক্যান্ডেল গুলো জ্বালিয়ে দেয়। সাউন্ড বক্সের গান চেঞ্জ করে
“হালকা হাওয়ার মতো চাইছি এসো এখন
করছে তোমায় দেখে অল্প বেইমানি মন
লিখবো তোমার হাতে এ আমি আমার মরণ”
এই গানটা চালিয়ে দেয়।
তারপর দুজন ডুবে যায় ভালোবাসার অতল গভীরে।
অনেক কথা হয় দুজনার। তার মধ্যে মনে দাগ কেটে যায় আবরারের আকুল স্বরে বলা এই কথা গুলো।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬০
“এখানেই শান্তি মেলে আমার।
আমার জান
আমার পাখি
আই লাভ ইউ সো মাচ।
