তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৬

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৬
তানিশা সুলতানা

এক টানা নয়দিন ঝুম বৃষ্টির পরে আজকে আসমানে রোদের দেখা মিলেছে। খাঁ খাঁ রোদ্দুরে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। আদ্রিতার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী আজকে। বনানী কবর স্থানে মায়ের কবর দেওয়া হয়েছিলো।
আদ্রিতা সকাল সকাল সেখানেই উপস্থিত হয়েছে। মায়ের কবরের পাশে কিছু মুহুর্ত বসে থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মনটা বড্ড খারাপ। মায়ের সাথে কাটানো কিছু মুহুর্তের কথা মনে পড়লেই বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। অসহ্য যন্ত্রণায় কলিজা হাঁস ফাঁস করে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে হয়। কক্সবাজার থেকে ফিরে এসেই আতিয়া বেগম এবং আদ্রিতা চৌধুরী বাড়িতে ফিরে গিয়েছে। বড় মা, মেঝো মা তারা বেশ খুশিই হয়েছিলো। বড় মা তো বলেই উঠলো

“কি রে আদ্রিতার তোর এ্যানি কোথায়?
আদ্রিতা মলিন হেসে জবাব দিয়েছিলো
” স্বপ্নের শহর সুইজারল্যান্ড আমার থেকে আমার এ্যানিকে কেড়ে নিয়েছে।
এটা নিয়ে বড় মা আফসোস করলেও কিছুক্ষণ।
এসব ভাবতে ভাবতেই বাসায় পৌঁছে যায় আদ্রিতা। জুতো জোড়া বাইরে রেখে ভেতরে ঢোকে। ড্রয়িং রুমে আলোচনা বসেছে। আবরারের বড় চাচ্চু মোতাহার এবং মেঝো চাচ্চু মোতালেব বাসায় এসেছে। তাদের স্ত্রী রাজিয়া এবং আছিয়া। বড়জনের এক ছেলে তুহিন এবং মেঝো জনের এক মেয়ে তিথি। সকলেই উপস্থিত।
আদ্রিতা একটু অবাকই হয় সবাইকে এক সাথে দেখে। সাধারণ এই বাড়িতে সকলে এক সাথে আলোচনা বা গল্প গুজব করে না। ব্যস্ত মানুষ কি না।
আদ্রিতাকে দেখে মোতালেব বলে ওঠে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ওই তো আদ্রিতা চলে এসেছে। এসো তোমারই অপেক্ষায় আছি।
আদ্রিতা একটু হাসার চেষ্টা করল এগিয়ে আসে। তিথির পাশে বসে। আশেপাশে আতিয়া বেগমকে দেখা যাচ্ছে না। কোথায় গেলো সে?
রাজিয়া বলে
“আদ্রিতা তোর কপাল খুলে গেছে। আবরার কল করে তোর কথা জানতে চেয়েছিলো।
আদ্রিতা ভ্রু কুঁচকায়। ওহহ হো এর জন্যই এখানে আলোচনা চলছে?
মোতালেব বলে
“জানতে চেয়েছিলো কি বলছো? আবরার তাসনিন প্রপোজাল দিয়েছে। তোমাদের বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলেছি আমরা।
আদ্রিতা একটু অবাক হয়ে বলে

” বিয়ে?
তিথি উৎফুল্ল স্বরে জবাব দেয়
“হ্যাঁ রে বিয়ে। আবরার ব্রো তোকে বিয়ে করবে। এই মাসের সাতাইশ তারিখে।
গোটা শহর লাইটিং করা হবে। অনেককক মানুষদের ইনভাইট করা হবে। আর সব থেকে বেশি ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে ব্রো ঠিকঠিক বিয়ের দিন বাংলাদেশে আসবে। প্রথমে তার প্রাইভেট প্লেনে বাংলাদেশে এয়ারপোর্টে নামবে। তারপর ফুল সাজানো হেলিকপ্টার নিয়ে বিয়ে করতে আসবে আমাদের বাড়িতে।
ভাবতে পারছিস? ইতিহাসে বোধহয় এটাই প্রথম বিয়ে হবে যে বর সুইজারল্যান্ড থেকে বিয়ে করতে আসবে আর ফুল সাজানো হেলিকপ্টার নিয়ে আসবে। এ’ম সো এক্সাইটেড।
আদ্রিতা স্পষ্ট স্বরে জবাব দেয়

” আমি তাকে বিয়ে করবো না। মানা করে দিও তাকে।
আছিয়া বলে ওঠে
“বেশি কথা বলিস না তুই। এমনিতে তো এতিম। বাবা নেই মা নেই। পড়ে আছিস আমাদের ঘাড়ে। এখন যখ
বাকিটা শেষ করার আগেই আতিয়া বেগম বলে ওঠে
“আপনাদের ঘাড়ে বসে খায় নি ও। ঠিক করে কথা বলুন। আর ও এতিম নয়। আমি আছি আদ্রিতার জন্য।
মোতালেব বুঝতে পারে আতিয়া রেগে গেছে। এই মুহুর্তে ওদের রাগানো যাবে না। একটু আগেই পাঁচ কোটি টাকা এসেছে তার ব্যাংক একাউন্টে। আদ্রিতাকে বিয়ের শপিং করানোর জন্য টাকা গুলে পাঠিয়েছে আবরার। বিয়ে শেষ হওয়া ওবদি কতো কোটি টাকা পাঠাবে তার কোনো হিসেব নেই। সেখানে থেকে কিছু টাকা মেরে দেওয়ারই প্ল্যানিং রয়েছে তার। এখন এদের রাগিয়ে দিয়ে টাকা গুলো হাত ছাড়া করার কোনো মানেই হয় না।
তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে উনি বলেন
“ভাবি আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো? ও সেভাবে বলেনি। এতদিন তো আবরার ওকে মেনে নেয় নি। এখন যখন মেনে নিচ্ছে তখন ত্যেঁড়ামি না করাই ভালো।
তুহিন বলে ওঠে

” বাবা ঠিক বলেছে। আদ্রিতা নিজের বরকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে কি সমস্যা তোর?
না কি আসিফ আদনানের প্রেমে পড়ে গেছিস? তাকে বিয়ে করতে চাস?
আদ্রিতা আশ্চর্য হয়ে বলে ওঠে
“আমি ওনাকে নিয়ে এসব ভাবি নি কখনো।
” না ভাবলে বিয়ে করে নে।
আদ্রিতা জবাব না দিয়ে নিজের কক্ষে চলে যায়। রাজিয়া বিরক্ত স্বরে বলে
“এর ভাব দেখতে পারবো না আমি। ওর থেকে অনুমতি নেওয়ারই বা কি আছে?
শোনো ভাবি হয় আদ্রিতাকে বিয়ে করতে বলো। নাহয় তোমরা আলাদা বাসা নিয়ে নাও।
আতিয়া বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

আদ্রিতা দরজা বন্ধ করে খানিকক্ষণ দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু দিন যাবত কলেজেও আসিফ এবং তাকে নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ব্রেকিং নিউজ হয়ে গিয়েছে ” আবরার তাসনিন এর প্রাক্তন ওয়াইফ এবার আসিফ আদনানের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। খুব শীঘ্রই তারা বিয়ের পিরিতে বসবে”
আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টা চালায়। সব রাগ জমা হয় আবরার তাসনিনের ওপর। খুব করে তার সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে। চারটে কথা শুনিয়ে দিতে পারলেই শান্তি লাগবে। সেটা ভেবে
কল করে আবরার তাসনিনের হোয়াটসঅ্যাপে। প্রথমবার রিং হতেই কল খানা রিসিভ হয়। ওপাশ থেকে ভেসে আসে সিয়ামের মিষ্টি কন্ঠস্বর

“আসসালামু আলাইকুম আম্মু। ভালো আছো? আমি তোমার ছেলে সিয়াম বলছি। চিনতে পেরেছো?
আদ্রিতা মনে মনে সালাম ফেরায় এবং কঠিন স্বরে বলে
“আপনার বন্ধু কোথায়? তাকে কল দিন।
ওপাশ থেকে আমান বলে ওঠে
“আমাদের বন্ধু ফার্মেসিতে গেছে। সামনে বিয়ে তো ওই একটু
বাকিটা শেষ হওয়ার আগেই আহাদ আমানের মাথায় চাটি মারে। এবং বলে
“শালা এটা আমাদের মা হয় ভুলে গেছিস।
আমান ইনোসেন্ট স্বরক বলে
“আজিব আমি ভুলবো কেনো? সত্যিই আব্বা ফার্মেসিতে গেছে। স্যাভলন, ব্যান্ডেজ, হাবিজাবি আনতে।
আদ্রিতা বলে

” উনি আসলে কল করতে বলবেন। কথা আছে।
সিয়াম কবিতার স্বরে বলে
“বলবে কথা আম্মা আমার
গুনধর আব্বার সাথে
করবে তারা রোমান্টিক আলাপ
দুইদিন পরে বাসর বলে
আমি সিয়াম ভালা মানুষ
পাতবো না কোনো আঁড়ি
আমান একটা জাত শালা
সে মানবে না কেনো বারণ তারই
আদ্রিতা কবিতা খানা শুনেই কল কাটে।

রাত বারোটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। আদ্রিতার ফোন খানা বেজে চলেছে বেশ কিছুক্ষণ যাবত। ইচ্ছে করেই সে রিসিভ করছে না। আবরার তাসনিন একটু বুঝুক অপেক্ষায় থাকতে কেমন লাগে।
তবে এখন একটা মেসেজ এসেছে
” পিক আপ দ্যা কল
আদারওয়াচ আই উইল ইট ইউ।
শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা। চট করেই কল রিসিভ করে।
“শুনুন আবরার তাসনিন আপনি যা চাইবেন তাই হবে না। কি নাটক শুরু করেছেন আপনি? এতো নাটক কিভাবে করতে পারেন? আপনার নাটক দেখার সময় নেই আমার।
কোনো বিয়ে টিয়ে হচ্ছে না। আমি আপনা
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার বলে

” হোয়াট ইজ বিয়ে?
আদ্রিতা অবাক হয়ে বলে
“মানে বিয়ে কি সেটা আপনি জানেন না?
আবরার ফোঁস করে শ্বাস টানে। বালিশে মাথা রেখে বলে
” উহু
জানাও।
“দেখুন আবরার ফাজলামো করছি না আমি। আপনি সোজা কথা শুনুন আমি বিয়ে করবো না আপনাকে। আপনার ওপর থেকে মন উঠে গেছে আমার। আমিও মানুষ। পুতুল নই।
” ওহহ হো পাখি
তুমি চাইলেও আমার। না চাইলেও আমার। তুমি চাইলেও বিয়ে হবে না চাইলেও বিয়ে হবে। সো প্লিজজ স্টপ দিস ড্রামা।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৫

“হুমম সেটাই। আপনার হাতের পুতুল আমি।
” পাখি লিসেন টু মি।
তোমাকে রেখে সুইজারল্যান্ড ব্যাক করেছি তোমারই জন্য।
তুমি চেয়েছিলে কোনো ঝামেলা না হোক। হ্যাপি লাইফ চাই তোমার।
আমি সেটাই করেছি।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৭