তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭০

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭০
তানিশা সুলতানা

আর কিছুক্ষণ পরেই বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বে আবরার এবং তার বন্ধুরা। সাদা রঙের শেরওয়ানতে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে আবরার তাসনিনকে। সিয়াম আমান আহাদ ইভান ওরাও আবরার তাসনিনের সাথে ম্যাচিং করে সাদা শার্ট এবং কালো ব্লেজার পড়েছে। সব গুলো বন্ধুকে রাজপুত্রের মতো দেখাচ্ছে। রগচটা গম্ভীর আবরার নিজের আসল রূপকে বিদায় জানিয়ে মৃদু হেসেছে। চার বন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছে “মাশাআল্লাহ তোদের সুন্দর দেখাচ্ছে”
আবেগপ্রবল হয়ে উঠেছিলো চার বন্ধু। তাদের কাছে গোটা দুনিয়া এক দিকে আর আবরার তাসনিন একদিকে। আবরারের একটু যত্ন আদর কিংবা ভালোবাসা ওদের খুশিকে দ্বীগুণ বাড়িয়ে দেয়।

সুইজারল্যান্ডের বাড়ি খানা বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন বিদেশি ফুলের সমাহার বাড়ি জুড়ে।
টিশা সহ অফিসের অনেক কলিগরা আবরার তাসনিনের বাড়িতে এসেছে। দাওয়াত করা হয়েছে তাদের। অবশ্য এসব সিয়ামের কারসাজি। টিশাকে দেখে আমান একটু বেশিই খুশি হলো যেনো।
কিছুদিন হলো মেয়েটার সাথে পরিচয় হয়েছে।এরই মধ্যে আমানের মনে বিশাল একটা জায়গা করে নিয়েছে। অকারনে মেয়েটার কথা ভাবতে ভালো লাগে সে আশেপাশে থাকলে মনের মধ্যে হাজারটা প্রজাপতি উড়তে থাকে।
এসবের কারণ আমানের জানা। সে ভালোবেসে ফেলেছে এই মেয়েটিকে। ঠিক যেমন করে আবরার তাসনিন পাগল হয়েছে আদ্রিতার জন্য ঠিক তেমন ভাবে আমানও পাগল হয়ে যাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সিয়াম তিশাকে দেখেই এগিয়ে আসে। তার দুষ্টু মনে আজকে একটা দুষ্টু ইচ্ছে উদয় হয়েছে। ইতিমধ্যেই আহাদ এবং ইভানের সঙ্গে ব্যাপার খানা শেয়ার করেছে।
সেই দুষ্টু ইচ্ছে খানাকে পূর্ণতা দিতেই একটা গোলাপ ফুল হাতে নেয় এবং টিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
টিশা ভ্রু কুচকে বলে
“কিছু বলবেন ভাইয়া?
সিয়াম অনবরত মাথা নেরে ফুল খানা টিশার দিকে এগিয়ে দিয়ে কবিতা সুরে বলে
“তোমার হাঁটু দেখে হয়েছি আমি ফিদা
তুমি কি হবে আমার ভালোবাসার খুধা?
রাখবো তোমায় অযত্নে গোবরে বেড়ে ওঠা পদ্মফুলের মতো
কবিতা শেষ করে উঠতে পারে না সিয়াম। কেনোনা ইতোমধ্যেই সেখানে আমান চলে এসেছে। সিয়ামের হাত থেকে ফুলখানা নিয়ে বলে ওঠে

“ওই শালা তুই না ইশারাকে পছন্দ করিস? তাহলে ওকে কেনো প্রপোজ করছিস?
সিয়াম ভ্রু কুচকে আমানের মুখপানে তাকায় এবং বলে
“বুঝলি আমান আমার মন হচ্ছে ছোটমোট একটা গোডাউন। এখানে অনেক মেয়ের জায়গা হয়। কেবল দুইটা মেয়েকে পছন্দ করছি। আরো ১০-১২ টা কে পছন্দ করে আমার মনে আঁটাতে পারবো। তোর এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
টিশা বলে
“আসলে ভাইয়া আমি প্রেম করবো না।
সিয়াম বলে
“কিন্তু আমি তো বিয়ে করব না।
আমান বলে
“দোস্ত মাফ চাই
“কিন্তু আমি তো মাপও করবো না।

ইতোমধ্যে আহাদ এবং ইভান এখানে চলে এসেছে। আহাদ টিশাকে বলে ওঠে
“তুমি কিন্তু ভীষণ কিউটি দেখতে। আমার যে কি ভালো লাগে তোমাকে।।
আমার সাথে টাইম পাস করবে?
ইভান বলে
“আমার সাথে প্রেম করতে পারো সমস্যা হবে না। প্রেমের মাঠে অনেক বার ছক্কা মেরেছি আমি৷ এক্সপার্ট আছি।
আমানের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। বন্ধুরা বুঝি এরকম হয়?
এদের নিয়ে যুদ্ধে যাওয়া যাবেনা।
টিশা সকলের উদ্দেশ্য করে বলেন
“ভাইয়া আমি শুধু কাজ করতে এসেছি এখানে আর কিছু ভাবছি না।
আমান বলে

“তুমি যাও তিশা ওরা পাগল।
টিশা মাথা নিতে চলে যায়। সিয়াম কবিতা সুরে বলে
“প্রেমে পড়ে বন্ধু আমার হয়েছে ছাগল
প্রাণ প্রিয় বন্ধুদের বলছে পাগল
আল্লাহ এসবের বিচার করবে
তোর কপাল থেকে বউ উঠিয়ে নিবে।
সিয়ামের কবিতায় সায় জানায় ইভান এবং আহাদ।
” তোরা যা শুরু করেছিস তাতে বিয়ে হবে না। শিওর থাক।
সিয়াম কিছু বলার প্রস্তুতি নেয় তখুনি আবরার তাসনিন নেমে আসে। একদম রাজার মতো দেখাচ্ছে তাকে। টিশা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আবরারের মুখ পানে। ব্যাপার খানা সিয়াম খেয়াল করে।
“ঘু ঘু তুমি ফেলো ফাঁদ
সিয়াম তোমায় করে দিবে বরবাদ

বাড়ির সামনে থাকা বড়সর মাঠে দুইটা হেলিকপ্টার রাখা। হেলিকপ্টার খানা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বেশ সুন্দর করে।
একটাতে লেখা হয়েছে “আবরার আদ্রিতা”

“এমন বিয়ে বাপের জন্মে দেখি নি”
“চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে বিয়ে করছে”
“বাড়িটা দেখেছো? যেনো রাজপ্রাসাদ”
“আদ্রিতা নামক মেয়েটি বড্ড কপাল নিয়ে জন্মেছিলো”
“আরেকক আরিফের মেয়েকে তো তার বর বিয়ের পরে ফেলে চলে গিয়েছিলো। ৮ বছর পরে আবার গোটা শহর জানিয়ে বিয়ে করছে”
এরকম হাজার খানা কথা কানে আসছে আদ্রিতার। বিয়ে বাড়ি মানেই হাজারো মানুষের ভিড় আর হাজার খানা কথা।
আরিফ তার ছেলে মেয়ে নিয়ে আদ্রিতার বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছে। কেনো জানি মানুষটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আদ্রিতার।
কয়েকবার ইগনোর করেছে। কিন্তু এখন আর ইগনোর করতে পারছে না।
পার্লারের মেয়েরা চলে এসেছে আদ্রিতাকে সাজাতে।
আরিফ এসেছে আদ্রিতার সঙ্গে কথা বলতে।
বড্ড মায়া মাখানো স্বরে বলে

“আদ্রিতা একটু কথা বলো আমার সাথে। এখুনি চলে যেতে হবে আমায়।
আদ্রিতা এসে বাবার সামনে দাঁড়ায়।
বাবাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বলে ওঠে
” একটাই তো জীবন বাবা। তুমি কি পারতে না আমাকে সুন্দর একটা জীবন দিতে? পারতে না আমাকে আর মাকে ভালো রাখতে? কেনো আমার জীবনটা এমন নরমময় করে দিয়েছিলে? কেনো পরকীয়ায় জড়িয়েছিলে?
কি পেয়েছো জীবনে? না পারলে সন্তানের কাছে সুপারম্যান হতে আর না পারলে কারো ভালো স্বামী হতে।
তুমি ঘুমাও কিভাবে? নিজের করা কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হও না? নিঃশ্বাস আটকে আসে না তোমার?
আরিফ মাথা নিচু করে ফেলে। সত্যিই সে ব্যর্থ। মেয়ের প্রশ্নের জবাব নেই তার কাছে।
আদ্রিতা আবারও বলে

“আমি তোমাকে ঘৃণা করি বাবা। ভীষণ ঘৃণা করি।
আল্লাহ যেনো আমাদের আর দেখা না করায়। তোমার মুখটা আর কোনোদিনও দেখতে চাই না আমি।
আরিফ নিঃশব্দে বেরিয়ে যায় কক্ষ থেকে। আদ্রিতার ইচ্ছে করে চিৎকার করে কাঁদতে।
কিন্তু সে কাঁদে না৷ অস্বস্তিতে বুকের ভেতরটা হাঁসফাঁস করছে। এই মুহূর্তে কলিজা খানা শান্ত করা প্রয়োজন। আর কলিজা শান্ত হবে আবরার তাসনিন এর কন্ঠস্বর শুনলে।
তাই চট করেই ফোন খানা হাতে নেয় এবং কল করে আবরার তাসনিন এর হোয়াটসঅ্যাপ এ। আবরার হেলিকপ্টারে উঠবে হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় দাঁড়িয়ে পড়ে।
রিসিভ করে কানে তুলতেই শুনতে পায় আদ্রিতার অশান্ত কন্ঠস্বর

” আবরার একবার ভালোবাসি বলবেন প্লিজজ?
“বলতেই হবে?
” হ্যাঁ
প্লিজজ বলুন। বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছে। কলিজা কাঁপছে। বুকের ভেতরটায় হাঁসফাঁস করছে। আপনি ভালোবাসি না বললে শান্তি পাবো না। দেখুন পার্লারের মেয়েরা এসে বসে আছে। আমি সাজুগুজু করতে পারছি না৷ খালি কান্না পাচ্ছে।
আবরার বোধহয় একটু হাসার চেষ্টা করলো।
“আই লাভ ইউ
আদ্রিতা শুনতে পেয়েছে তবুও বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৯

” কি বললেন শুনতে পাই নি৷
আবরার এবার চিৎকার করে বলে ওঠে
“মিসেস আদ্রিতা তাসনিন তোমাকে ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি। এই পৃথিবীকে যতটা ভালোবাসা ঘিরে রাখে তার থেকেও বেশি ভালোবাসি। চাঁদ রাতকে যতটা ভালোবাসে তার থেকে হাজার গুণ বেশি ভালোবাসি তোমায়।
তোমাকে ছাড়া আমি মরে যাবো।
বুঝতে পেরেছো তুমি?

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭১