তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৭

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৭
তানিশা সুলতানা

“আমার সাথে প্রেম করতে হলে তোমার বন্ধুদের ছাড়তে হবে। বিশেষ করে আবরার তাসনিনকে।।
তিশার মুখে এমন কথা শুনে আশ্চর্য হয় আমান। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওর মুখ পানে। কি বলছে মেয়েটা? ১৫ বছরের বন্ধুত্ব। পরিবার আত্মীয়-স্বজন কাছের মানুষ সবাই যখন অবহেলায় অনাদরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো। দিনশেষে একটাবার কল করে “কেমন আছো” জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করতো না। সে মুহূর্তে আমানের পাশে দাঁড়িয়েছিলো আবরার। এক প্রকার রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বাড়িতে জায়গা দিয়েছে। ভালোবেসে বন্ধুত্বের মর্যাদা দিয়েছে। নিজের বিজনেসের পার্টনারশিপ করেছে। সেই মানুষটাকে ছেড়ে দেবে? তাও একটা মেয়ের জন্য?
হাসি পায় আমানের। নিজের হাসিটাকে কন্ট্রোল করতে না পেরে উচ্চস্বরে হেসে। হাতে থাকা ফুলগুলো অন্যদিকে। টিশা কপালের ভাজ ফেলে আমানের হাসি দেখতে থাকে।

এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে
“বোকার মত হাসছো কেনো?
হাসি থামিয়ে মুখটাকে গম্ভীর করে আমান বলে ওঠে
“আমাকে যদি আজরাইল এসে বলে আবরার কে ছেড়ে দাও না হলে আমি তোমার জান কবজ করে নিবো। আমি স্বেচ্ছায় মৃ*ত্যুকে গ্রহণ করবো তবুও আবরারকে ছাড়বো না।
টিশা শক্ত গলায় বলে
“আবরার আবরার করে নিজের জীবনটাকে তো শেষ করে দিচ্ছো। কি পাচ্ছো তুমি? আবরার তাসনিন গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করছে। তার বিজনেস বলে বলে বড় হচ্ছে। এখানে কি তোমার অবদান নেই? আবরার কি একাই নিজের বিজনেসটা দাঁড় করিয়েছিলো? করেনি তো। তুমি ইভান সিয়াম আহাদ সবারই ক্রেডিট রয়েছে। কিন্তু তোমাদের নাম কোথায়? কজন মানুষ চিনে তোমাদের?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবরার তাসনিন টিস্যুর মতো ইউজ করছে তোমাদের।
আমান হাসে।
আসমান পানে তাকিয়ে বলে ওঠে
“পরিবারের কাছে বড় হয়েছো। বাবা মায়ের ভালোবাসা পেয়েছো তাই কখনো বুঝতে পারো না একাকিত্বের কষ্ট। দিনশেষে যদি কেউ তোমাকে জিজ্ঞেস না করে “কেমন আছো” তাহলে বুঝতে জীবনটা ঠিক কত কঠিন।
আমার এই ছোট্ট জীবনে কিছু পাইনি জানো। শুধু একটা জিনিসই পেয়েছি। যেটা আমার সব অপূর্ণ চাওয়াকে পূর্ণ করে দিয়েছে। সেটা হলো আবরার।
এই যে তুমি বললে না আবরার আমাদের টিস্যুর মত ইউজ করছে। এটা ভুল
আবরার আমাদের বটগাছ। তার ছায়া ভীষণ সুন্দর জীবন কাটাচ্ছি। এসব টাকা-পয়সা নাম যশ খ্যাতি দিয়ে কি করবো?

আমাদের শুধু আবরার হলেই চলে।
প্রচন্ড রেগে যায় টিশা। দুই হাতে টেবিলে আঘাত করে দাঁড়িয়ে পড়ে। চিৎকার করে বলে
“তোমার এই মুখটা আমাকে আর কখনো দেখাবে না।
আমানও সেম স্বরে বলে
“তুমিও কখনো তোমার এই মুখটা নিয়ে আমার সামনে আসবে না। না হলে একটা থাপ্পড় মেরে চেহারার নকশা পাল্টে দেবো।
খারাপ মেয়ে। আসছে আমার বন্ধুর নামে বদনাম করতে। এখানে যদি সিয়াম থাকতো না দুজনে মিলে তোর জিভ কে*টে জুরিখ নদীতে ভাসিয়ে দিতাম।
বলে আমান উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে। টিশা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আমানের চলে যাওয়া দেখে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। সে তো অন্য কিছু প্ল্যানিং করেছিলো। মাথামোটা আমান সবটা নষ্ট করে দিলো।

মনিটরের সামনে বসে গভীর মনোযোগে কিবোর্ডে আঙুল চালাচ্ছে আবরার। নতুন একটা জামার ডিজাইন করছে। বড় বড় চুল গুলো এলোমেলো চোখে চিকন প্রেমের চশমা। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা চেপে ধরে রেখেছে। অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। আদ্রিতা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবরারের মুখপানে।
তার কোলে ছোট্ট আহিল। অহনা আহিলকে তার কোলে দিয়ে রান্নাবান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনিতে তো আদ্রিতার বাচ্চা ভীষণ পছন্দের আর আহিল গোল গুলো ছোট্ট পুতুল। ধবধবে ফর্সা মাথা চুলগুলো সোনালী রঙ। কি যে কিউট দেখায় তাকে। গাল গুলো এক্কেবারে রসগোল্লার মতো। আদ্রিতা তো চুমু খেতে খেতে গালটাকে লাল করে ফেলেছে।
“পাখি কাম হেয়ার

আবরারের গম্ভীর স্বরের ডাকে আদ্রিতা চমকায়। কি করে বুঝলে লোকটা? আহিল তো একটু শব্দ করেনি।
আদ্রিতার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আবরার বলে ওঠে
“তোমার উপস্থিতি আমি বুঝতে পারি। তুমি শরীরের অদ্ভুত একটা স্মেল আছে। যেটা আমাকে পাগল করে তোলে।
আদ্রিতা মুখ বাঁকিয়ে এগিয়ে আসে। আবরারের সামনে দাঁড়াতেই আহিল ফোকলা দাঁতে খিলখিল করে হেসে ওঠে। হাত বাড়িয়ে দেয় কোলে যাওয়ার জন্য। আবরার ভ্রু কুঁচকায়। সে কখনোই আহিল কে কোলে নেয়নি। তাও বাচ্চাটা তাকে চিনলো কি করে?

“দেখেছেন ও আপনার করে যেতে চাচ্ছে। একটু কোলে নিলে কি হয়?
আবরার মনিটরে চলতে থাকা ভিডিওটি পজ করে। তারপর আহিল কে কোলে তুলে দেয়। অদ্ভুতভাবে তার বুকের ভেতরটা শীতলতায় ছেয়ে যায়। ইচ্ছে করে টুস করে চুমু খেয়ে নিতে বাচ্চাটা নরম গালে। নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখে না আবরার। ঠোঁট দাবিয়ে চুমু খায়। বাচ্চাটা যেন আরো মজা পেলো। সেও দুহাতে চেপে ধরে আবরারের দুই গাল। যেনো সেও চুমু খেতে চাচ্ছে।
আহিলের কান্ড দেখে আদ্রিতা খিলখিল করে হেসে ওঠে। গোলুমোলু বাচ্চাটাকে আবরারের এক পায়ের উপর দিয়ে সেও কোলের মধ্যে জায়গা করে নেয়। আবরারের গলা জড়িয়ে ধরে নিজের গালটাও এগিয়ে দেয় আদ্রিতা। আবদারের স্বরে বলে

“আমার চুমু কোথায়?
আবরার তার অবাধ্য হাতখানা ঢুকিয়ে দেয় আদ্রিতার শাড়ি ভেদ করে। স্পর্শকাতর জায়গায় হাত রেখে শব্দ করে চুমু খায় কপালে।
আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে। অদ্ভুত এক শিহরণ শরীর জ্বালিয়ে উঠছে। রিনরিনিয়ে বলে
“কি করছেন? বাবু আছে না এখানে?
আবরার আদ্রিতার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে
“সে বুঝবে না।
শুধু তুমি একটু নড়াচড়া কম করো তাহলেই হবে।

মনে মনে কঠিন কিছু গালি আওড়ায় আদ্রিতা। এই অসভ্য লোকটা কোনদিনও মানুষ হবে না।
হঠাৎ করে আবরারের কক্ষে ডান পাশের দেওয়ালে সুন্দর একখানা গিটার ঝুলানো দেখতে পায়।
মুহূর্তে আদ্রিতা পূণরায় আবরার জুড়ে দেয়।
“আবরার আমাকে একটা গান শুনাবেন?
বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছে। প্লিজজ?
আবরার নিজের হাতখানা সরিয়ে নেয়। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে আদ্রিতা। আহিলকে বিছানার মাঝখানে বসিয়ে দেয়। আদ্রিতাও গিয়ে আহিলের পাশে বসে। আবরার দেয়াল থেকে গিটার নিয়ে এসে ওদের পাশে বসে।।
টুংটাং আওয়াজ তুলে চোখ দুটো বন্ধ করে মিষ্টি স্বরে গেয়ে ওঠে

” আমি হবো রাত আর
তুই হবি চাঁদ
জোছনায় ঘর আমাদের।
তুই হলে রোদ আমি
রংধনু হই
ছিলো সে শহর আমাদের
ভুলে যেতাম কোলাহল
বুঝে নিতাম সবই বল
ছিলো রোজের চলাচল আমাদের
আমি হবো রাত আর তুই হবি চাঁদ
জোছনায় ঘর আমাদের।

কি সুন্দর মুহুর্ত। আহিল শুয়ে পড়েছে। মুখের মধ্যে দুই হাত পুরে মায়া মায়া নয়নে আবরারের মুখ পানে তাকিয়ে গান শুনছে মনোযোগ দিয়ে। আদ্রিতা আবরারের বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে আঁখি পল্লব বন্ধ করে গান শুনছে।
আতিয়া বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এমন মুহুর্তেের শাক্ষ্যি হচ্ছেন।
চোখ দুটো ভিজে ওঠে ওনার।।
এমনই তো চেয়েছিলেন তিনি।
তার রাজপুত্রের সুন্দর একটা জীবন।।
হঠাৎ আবরারের গান থামে। পেছন ঘুরে বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৬

“আম্মু দাঁড়িয়ে আছো কেনো? এসো না।
আমার গান শুনবে।
আতিয়া বেগম মৃদু হেসে চোখের পানি মুছে নেয়। তারপর এগিয়ে গিয়ে ছেলের পাশে বসে।
আবরার আবার গাইতে শুরু করে।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here