তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৮
তানিশা সুলতানা
সেই দিন আবরার টনির বাড়ি পুরিয়ে দিলেও বেঁচে গিয়েছিলো সকলে। ছাঁদের পাশের সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়েছিলো। সাম্রাজ্য হারালেও জীবন নিয়ে বেঁচে আছে।
সুইজারল্যান্ডে জুরিখ নদীর পারে ছোট্ট একটা বাড়িতে থাকে তারা। টনি এখন মোটামুটি সুস্থ তবে আগের মতো আর শক্তি বা তেজ কিছুই নেই। টিশান নিজেদের বিজনেস দেখাশোনা করে। আর টিশা প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে উঠেছে। তাইতো আবরার তাসনিন এর অফিসে জব নিয়েছিলো। ভেবেছিল আবরারের চার বন্ধুর মধ্যে একজনকে পটিয়ে তাকে দিয়ে প্রতিশোধ নেবে। তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করবে। একা করে দেবে আবরারকে। সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। আমানও টিশার ফাঁদে পা দিয়েছিলো। কিন্তু লাস্ট মুহূর্তে সবটা নষ্ট করে দিলো। কি আছে ওই পাষাণ আবরারের মধ্যে? কেনো তাকে সবাই ছেড়ে যায় না?
এই যে আদ্রিতা নামের মেয়েটি তার সাথে তো আবরার কম অন্যায় করেনি। টর্চার থেকে শুরু করে ইনসাল্ট সব করেছে। তবুও বেহায়া মেয়েটা আবরারের পেছনে পড়ে আছে।
টিশার ইচ্ছে করে আদ্রিতার দুই গালে কষিয়ে কয়েকটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দিতে। কেনো তার এতো রাগ তার কারণ জানা নেই।
রাগে গজগজ করতে করতে বাসায় ঢুকে টিশা। ড্রয়িং রুমে ইমা বেগম বসে আছেন। বড্ড বিরক্ত তিনি। টনির সঙ্গে সুইজারল্যান্ড আসা তার ভুল ছিলো। স্বামী সন্তান নিয়ে ভালোই তো সুখে ছিলেন। মনের মতো একটা মানুষ পেয়েছিলো। তাকে উঠতে বললে উঠতো বসতে বললে বসতো।সেই মানুষটিকে ছেড়ে এসে জীবনের সবথেকে বড় ভুলটা করে ফেলেছে সে।
এখানে তাকে দু টাকারও দাম দেয় না কেউ। টনি তো কথাই বলে না। কাজের লোকের মতো পড়ে আছে।
ঈমা নিজের ভাবনার মাঝে খেয়াল করে টিশা প্রচন্ড রেগে ভিডিও ঢুকছে। রাগের তোপে ফর্সা মুখখানা লাল রং ধারণ করেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইমা ভেংচি কাটে। বিড়বিড় করে বলে
“ধিঙ্গি মেয়ে। জামা কাপড়ের ঠিক ঠিকানা নেই। ভাবখানা নেয় কি? দেখলেই মনে হয় চাপ কি সোজা করে দেই।
কিন্তু মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তিশার দিকে এগিয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে বলে
“কি হয়েছে তোমার? এতো রেগে আছো কেনো?
টিশা ভ্রু কুঁচকে ইমা বেগম এর দিকে কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে। তারপর চোখ মুখ স্বাভাবিক করে বলে
“এই যে আপনি পরিবার ছাড়া হলেন। আপনার সন্তানদের থেকে দূরে চলে আসলেন। এসব কার জন্য? আবরার তাসনিন এর জন্য। আপনার ইচ্ছে করে না প্রতিশোধ নিতে?
ইমা মৃদু হেসে জবাব দেয়
“সব আমার জন্য। আমি না চাইলে এসব কিছুই হতো না। সব ভুল আমার। অতি লোভে তাঁতি নষ্ট বাংলা একটা প্রবাদ আছে। আমার হয়েছে সে অবস্থা।
ইমা বেগমের কথা শুনে টিশার রাগ তরতর করে বেড়ে যায়। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ইমা বেগমকে।
চিৎকার করে বলে
“এই খারাপ মহিলা তুই এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি।
তোকে এক মুহূর্ত এখানে দেখলে খু/ন করে ফেলবো আমি।
ফ্লোরে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় ইমা। দুই হাতের কনুইতে প্রচন্ড ব্যথা পায়। মৃদু স্বরে আর্তনাদ করে ওঠে।
কোন মতে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে নিজ কক্ষে ঢুকে পড়ে। দরজা আটকে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। নিজের বাচ্চা দুটোর মুখটা বড্ড মনে পড়ছে। কোথায় আছে ওরা? কি করছে? মায়ের কথা কি ভুলে গেছে? মায়ের জন্য কাঁদে ওরা?
সাধারণত ভাত মাছ সব বাঙালি খাবারগুলো ইগনোর করে আবরার। শেষবার কবে ভাত খেয়েছিলো মনে নেই। আজকে খাবার টেবিল ভর্তি বাঙালি খাবার সাজানো। সাদা চালের ভাত, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, সরষে ইলিশ, ইলিশ মাছের পাতুরি, বোয়াল মাছ ভুনা, ডিম ওয়ালা টেংরা মাছ আলু বেগুন দিয়ে ঝোল, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, কালো জিরে ভর্তা, লাল মরিচ ভর্তা, চেপা শুটকি ভর্তা, বেগুন ভর্তা, আলু ভর্তা, আর টাকি মাছ ভর্তা।
সিয়াম, আমান, ইভান, আহাদ ইতোমধ্যে নিজেদের চেয়ার দখল করে বসে পড়েছে।
সিয়াম তো কবিতার সুরে বলেই ফেলে
” বহুদিন হলো খাই না ভালো খাবার
আহনা আপু তুমি এসো আবার
আমাদের বাড়িতে করে দিও রান্না
ভালোবেসে ডাকবো তোমায় ভজো হরি মান্না
অহনা মৃদু হেসে সিয়াম এর প্লেটে ভাত বেরে দেয়। ইশারা এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। সে অহনার সাথে রান্নার সাহায্য করেছে। মূলত যত ভর্তা আইটেম আছে সবই ইশারার বানানো।
সকলেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। হাজার খানা প্রশংসার বুলি আওড়াচ্ছে। আবরার শুধু চুপচাপ বসে আছে। আসলে সে বুঝতে পারছে না কি খাবে।
আদ্রিতা আহির কে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে। বাচ্চাটি ঘুমোবে। তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা মাত্র।
হঠাৎ করে আদ্রিতা খেয়াল করে আবরার খাচ্ছে না। সে এগিয়ে গিয়ে বলে
“কি ব্যাপার লাট সাহেব খাচ্ছেন না কেনো?
বাঙালি খাবার মুখে রুচে না বুঝি?
খানিকটা মজার স্বরে বলে আদ্রিতা। আবরার চোখ পাকিয়ে তাকায়। তাতে থোরাই কেয়ার করলো আদ্রিতা।।
আমান বলে
“ভালো খাবার ভালো মানুষের মুখে রুচে না মা।
তাকে বরং একটু আলু সিদ্ধ করে দাও। সাথে একটু একটু চিকেন ভাজা।
বিশ্বাস করো মা ওই সব ঘাস পাতা খেতে খেতে নাড়ি ভুঁড়িতে জং ধরে গেছিলো। বহু বছর পরে এমন ভালো ভালো খাবার পেয়ে মনটা খুশি হয়ে গেলো।
অহনা বলে
“ভাইয়া ম্যাশ পটেটো বানিয়ে দেবো?
আবরার নিজের প্লেটে অল্প ভাত নিতে নিতে বলে
“নো নিড। আই উইল ম্যানেজ।
সিয়াম বলে ওঠে
“ভাই এটা বিজনেস ডিল নয় যে তুই ম্যানেজ করবি। এটা হচ্ছে খাবার। মুখে পড়ে ঢপা ঢপ খেতে হবে।
আবরার সিয়ামের কথায় মনোযোগ দেয় না। এক টুকরো ইলিশ মাছ নিয়ে সেটা খাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কাঁটা বেছে উঠতে পারে না। একটা মাছের এত কাটা কেমনে থাকে? এটাই তো বুঝতে পারছে না আবরার।
বিরক্ত হয় সে।
চোখ মুখ কুঁচকে বলে ওঠে
“আম্মু কাটা বেছে দাও।
আতিয়া বেগম কিচেনে ছিলেন। আবরারের ডাক শুনে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে দৌড়ে চলে আসেন।
খুবই যত্ন করে কাটা বেছে দেন।
আদ্রিতা বলে ওঠে
“মাম্মাস বয়
একটু লঙ্কা বাটা খেয়ে দেখুন ভীষণ মজা।
অহনা বলে
“না না। এইটা ভাইয়া খেতে পারবে না। ঝালে এলার্জি আছে ওর।
আহাদ বলে
“হ্যাঁ হ্যাঁ এটা ছেড়ে দিক। মা তুমি বরং অন্য কিছু খেতে বলো।
আদ্রিতা বলে
“কি আর বলবো
যে খেতে পারে না তাকে কি আর খাওয়ানো যায়? ঠিক আছে
মা তুমি বরং আরেক টুকরো মাছের কাঁটা ছাড়িয়ে দাও।
আবরার আদ্রিতার মুখ পানে তাকিয়ে একটুখানি লঙ্কা বাটা প্লেটে তুলে নেয়। তারপর ভাতের সঙ্গে মেখে মুখে পুরে।।
প্রচন্ড ঝালে চোখ দুটো লাল হয়ে ওঠে। কান দিয়ে যেনো গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে। আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে। আতিয়া বেগম দৌড়ে কিনেচে চলে যায় মিষ্টি আনতে।।
আবরার দুবার মুখে পুরেই প্লেটে হাত ধুঁয়ে ফেলে। তারপর বড় বড় পা ফেলে নিজ কক্ষে চলে যায়।
অহনা আদ্রিতার কোল থেকে আহিরকে নিয়ে নেয়। তারপর বলে
” জলদি মিষ্টি নিয়ে রুমে যাও।
সিয়াম মুখ ফঁসকে বলে ওঠে
“মিষ্টি নিতে হবে না। শুধু মা গেলেই
বাকিটা শেষ করার আগেই ইশারা সিয়াম এর মুখ চেপে ধরে। আমান বিরক্ত স্বরে বলে ওঠে
” খ্রাপ সিয়াম।
মেশিন বুঝি চলাচল শুরু করে দিয়েছে? নরেচরে?
আহাদ বলে
“আরেহহ না। নরলে চরলে ইশারা কি আর এখানে থাকতো। কুদরতি তেল লাগবে সিয়াম এর।
ইশারা বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। সিয়াম বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৭
” তোরা একদিন করে তোদের বউকে আমায় দিস। নরেচরে না কি আর তেল লাগবে না কি দেখিয়ে দিবোনি।।
আতিয়া বেগম মিষ্টি নিয়ে চলে আসে। আদ্রিতা তার হাত থেকে মিষ্টির প্লেট নিয়ে দৌড়ে আবরারের কক্ষের পানে যায়। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই এক জোড়া শক্তপোক্ত হাত জড়িয়ে ধরে আদ্রিতার কোমর। দরজা আটকে দরজার সঙ্গেই চেপে ধরে তাকে। হাত থেকে মিষ্টির প্লেট পড়ে যায়।
আবরার দুই হাতে শূন্যে তুলে ফেলে আদ্রিতাকে। নিজের মুখোমুখি করে ওষ্ঠজোড়া দখল করে নিজের ওষ্ঠের ভাজে।