তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৯
তানিশা সুলতানা
ছটফটিয়ে ওঠে আদ্রিতা। চোখের কুর্নিশ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে। ওষ্ঠজোড়ায় অসহ্য ব্যাথা করছে। কে/টে গিয়েছে বোধহয়। নিঃশ্বাস নিতেও বড্ড কষ্ট হচ্ছে। লোকটা কি পণ করেছে তাকে মে/রে ফেলবে? নিজের হাত দুটোতেও শক্তি কমে গিয়েছে। কোনো মতেই আবরারের থেকে নিজেকে ছাড়াতে সক্ষম হচ্ছে না।
পিটপিট করে চোখ খুলতেই নজরে পড়ে আবরার তাসনিন এর লাল লাল বিলাই আঁখিপল্লব। বুকের ধক করে ওঠে তার। এমনিতেই লোকটার নরমাল দৃষ্টির মধ্যেই কিছু একটা রয়েছে যা প্রতি নিয়ত চুম্বকের মতো টানে আদ্রিতাকে। বর এই লাল লাল দৃষ্টির মধ্যে তো প্রচন্ড বাজে ড্রাগস রয়েছে।
আদ্রিতার মনে পড়ে সেই পুরনো বেপরোয়া আবরার তাসনিনকে। ও তো কিছুদিনের জন্য ভেবেই নিয়েছিলো আবরার বোধ হয় পরিবর্তন হয়ে গেছে। বেপরোয়া ভাবটা আর নেই। শান্ত নদীর পানির মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে। বলা বাহুল্য এই বেপরোয়া আবরারকে বড্ড মিস করছিলো আদ্রিতা। তবে এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে “শান্ত আবরারই তো ভালো ছিলো। বেপরোয়া আবরার বড্ড পাষাণ। ভীষণ নির্লজ্জ আর বাজে।”
বাইরে থেকে সিয়ামের কন্ঠস্বর ভেসে আসে। সে দরজায় টোকা দিতে দিতে বলছে
“আব্বা ঝাল কমেছে তোর?
আমি মিষ্টি এনেছি। দরজা খোল।
বিরক্ত আবরার ছেড়ে দেয় আদ্রিতার ওষ্ঠ। মেয়েটা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। হা করে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে।
আবরার সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” ডোন্ট ডিস্টার্ব সিয়াম। এ’ম বিজি নাও।
সিয়াম কি বুঝলো কে জানে। তবে কবিতার সুরে বলে
“আব্বা আমার বড্ড ব্যস্ত
খেলছে ফিরিতের হাডুডু
ও আমার প্রিয়তমা ইশারা
চলো আমরাও খেলি লুডু
চলে যায় সিয়াম। আবরার ফোঁস করে শ্বাস টেনে আদ্রিতার মুখ পানে তাকায়। নিচের ঠোঁটের বা পাশের কিছুটা অংশ কেটে গিয়েছে। সেখান থেকে র*ক্ত গড়াচ্ছে।
হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে র/ক্ত মুছে দেয় আবরার। তারপর আবার চুমু খাওয়ার উদ্দেশ্যে এগোতে নিলেই আদ্রিতা ভয়ানক স্বরে বলে ওঠে
” নাহহহ প্লিজজজ
আবরার ভ্রু কুচকে আদ্রিতাকে নিচে নামায়। দুই হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বলে
“কি না?
আদ্রিতা শুকনো ঢোক গিলে রিনরিনিয়ে বলে
” চুমু আর না।
“কারণ?
” ব্যাথা পাই।।
“সো হোয়াট?
আদ্রিতা কপাল কুঁচকে তাকায় আবরারের মুখ পানে।
আবরার তাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে
” লাভস মানেই পেইন।
বরের আদরে একটু ব্যাথা লাগেই।
সহ্য করে নিতে হয় পাখি।
বলতে বলতে আদ্রিতাকে বিছানায় ফেলে দেয় ঠাসস করে।
“আপনি এমন কেনো?
” এমনই আমি। সব মেনে নিবো কিন্তু রোমাঞ্চের সময় ঢং মানবো না। মুভি দেখতে দিয়েছিলাম না?
দেখেছিলে?
শিখেছো ওরা কিভাবে কোয়াপারেট করে?
আদ্রিতা জবাব দেয় না। আবরার বুঝে যায় বেয়াদবটা মুভি দেখে নি।।
তাই সে টি টেবিলের ওপরে থাকা ল্যাপটপ খানা বিছানায় আনে। দুই আগুলে কিবোর্ড চেপে ফিফটি শেডস অফ গ্রো মুভি খানা প্লে করে।
আদ্রিতা চলে যাবে বলে উঠে বসে। সঙ্গে সঙ্গে আবরার ধমক দিয়ে বলে
“এক পা নরলে সারা রাত ………..
ব্যাসস শুকনো ঢোক গিলে চুপচাপ বসে থাকে আদ্রিতা। মনে মনে হাজার খানা বকা দিতে থাকে বেয়াদব লোকটাকে।
আরজি নিয়ে আবরারের কক্ষে উপস্থিত হয়েছে তার চার বন্ধু। গভীর মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা আবরার বন্ধুদের দেখে ল্যাপটপের শাটার বন্ধ করে। দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে
“কি চাই?
আমান গোমরা মুখে আবরারের পাশ ঘেষে বসে। সিয়াম আহাত ইভান আবরারের পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে পড়ে।
মুখ খুলে সিয়াম। কবিতার ভঙ্গিমায় বলে ওঠে
“বয়স গেছে ত্রিশ ছাড়িয়ে
যৌবন উঠেছে জেগে
মন থাকতে চায় না একলা ঘরে
একটা বউ লাগবে আমানের
আমান অনবরত মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করে। মানে তার বউ লাগবে।
সিয়াম ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে
“যদিও আমি জানি ওর বউ বেশিদিন টিকবে না।
আরে ভাই মেয়ে মানুষ হচ্ছে পুরুষের দেহ পাগল।
তাদের টাকা পয়সা দিয়ে ভরিয়ে রাখলেও থাকতে চাই না। শুধু……..
কিন্তু আমানের মেশিন তো দুর্বল। চলতে চলতে হঠাৎ থেমে যায়।
আমান দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“হ্যাঁ ঐদিন তুই আসছিলি আমার কাছে।
তারপর মেশিনের পাওয়ার দেখিয়ে দিছিলাম।
সিয়াম নাক মুখ কুচকে বলে
” ছিহহহ শালা
তোর কথায় ইদুর মরা গন্ধ আসছে। চুপ থাক
আহাদ বলে ওঠে
“তোরা একটু চুপ থাক। আমানকে বলতে দে।
আবরার পুনরায় ল্যাপটপের শাটার অন করে। তার বোঝা হয়ে গেছে বাঁদরের দল ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করতে আসছে শুধু।
আবরারকে কাজে মনোযোগী হতে দেখে সিয়াম আবার বলে ওঠে
“আমান একটা মেয়ে আছে দেখতে সুন্দরী। তিরিং বিরিং করে হাঁটে। ডাগর ডাগর চোখ। আবার বিজনেস উম্যান। বিয়ে করবি?
আমান উত্তেজিত হয়ে বলে
“কস কি মামা
নাম কি মেয়ের?
“সারমিন শীলা
“মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ নাম তো সুন্দর।
“দেখতেও সুন্দর। সব দিক থেকে পারফেক্ট। ভালো গাইতে পারে, ধিতাং ধিতাং নাচতে পারে, কবিতা বলতে পারে, ঠিকঠক করতে পারে। আবার তার পার্লারও আছে। ভালো সাজাতেও পারে। বগল থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত সবটা ফেসিয়াল করতে পারে ভাই।
আহাদ এবং ইভান গালে হাত দিয়ে সিয়ামের কথা শুনছে। আবরারও মনোযোগ দেয়।
আমান ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে
“এতো ভালো মেয়ে কি আমায় বিয়ে করবে? কোন দেশে থাকে সে?
“আলবাত বিয়ে করবে। আমার বন্ধু কি কম সুন্দর নাকি? খালি পাখিটা একটু ছোট। তাছাড়া এক্কেবারে হ্যান্ডসাম। কুদরতি তেল মাখিয়ে পাখিও বড় করে দিবোনি।
প্রশংসা শুনে আমান একটু লজ্জায় পেল।
দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলে
” যাহহহ কি যে বলিস।
আহাদ বলে উঠে
“বাই এনি চান্স তুই কি ক্রিম আপার কথা বলছিস?
“হ্যাঁ
আহাদ দিন দিন বুদ্ধিমান হয়ে যাচ্ছিস। যা ভাই তুমি তাড়াতাড়ি বিয়ে করায় দিবোনি।
আমান বলে
” শালা শয়তান
আর কোনো মেয়ে পেলি না? ওই বুইড়া
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার হেসে ওঠে। এক হাত চোখের উপর রেখে শব্দ করে হাসতে থাকে। চার বন্ধু হাঁ করে আবরারের মুখপানে তাকিয়ে থাকে। কি সুন্দর দেখায় তাকে হাসলে। এক্কেবারে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়।
আমানের ভীষণ রাগ হয়েছিলো কিন্তু আবরারের হাসি দেখে সব রাগ গলে পানি হয়ে যায়।
সে দুহাত বাড়িয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরে আবরারকে। সিয়াম ও নিজের জায়গা ছেড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। আহাদ এবং ইভানও যায়।
পাঁচ বন্ধু কতক্ষণ জড়িয়ে ছিলো জানা নেই।।
তবে যখন ইশারা চায়ের ট্রে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে তখনই তারা আলাদা হয়। আবারো নিজেদের জায়গায় এসে বসে।
ইশারা হেসে এগিয়ে আসে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭৮
“চা এনেছি সবার জন্য। আর ভাইয়া জন্য এনেছি ব্ল্যাক কফি।
ইশারা সবার আগে আবরারের দিকে কফির মগটা এগিয়ে দেয়। আবরার সেটা হাতে নিতে বলে
“একটা কাজ করতে পারবে ইশারা?
“অবশ্যই পারবো। আপনি শুধু একবার বলুন।
” টিশা নামের একটা মেয়েকে আমান পছন্দ করে। ওই মেয়েটার বাড়িতে যেতে হবে তোমায়।
আমান সাথে সাথে বলে ওঠে
“আমি ওই কাল নাগিনীকে বিয়ে করতে চাই না। নতুন মেয়ে খোঁজ আমার জন্য।
আবরার কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বলে
“ওই মেয়েটাকেই তোর বিয়ে করতে হবে।