তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮১

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮১
তানিশা সুলতানা

ইশারা টনির বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বাড়ির মেইন দরজা খোলা ছিলো বলে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না।
ড্রয়িং রুমে টনি এবং তার স্ত্রী বসে ছিলো।
ইশারা কিভাবে ঢুকতে দেখে বলে ওঠে
“এই মেয়ে কে তুমি? এভাবে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লে কেনো?
ইশারা শুকনো ঠোক গিলে। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে সামনে এগোয়।
ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি ঝুলিয়ে বলে ওঠে

“আমি ইশারা ম্যামের সাথে দেখা করতে এসেছি। তার সাথে ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে।
টনির বউ বলে ওঠে
“হ্যাঁ সেটা বুঝলাম কিন্তু তুমি কে? আগে পরিচয় দাও।
ইশারা এগিয়ে এসে অনুমতি ছাড়াই টনির পাশে বসে পড়ে।
তারপর গলগল করে বলতে শুরু করে
“আমি আবরার তাসনিন এর অফিসে আগে জব করতাম। ভীষণ খারাপ মানুষ তিনি। বিনা নোটিশে আমাকে কোম্পানি থেকে বের করে দিয়েছিলো। তার উপর আমার অনেক রাগ জমে আছে। প্রতিশোধ নিতে চাই আমি।
আর একমাত্র টিশা ম্যামই আমায় হেল্প করতে পারে।
টিশা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আসলে সে ইশারার কথাগুলো শুনতে পেয়েছে। এমন কাউকেই তো সে খুজছিলো। এতদিন নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হয়েছে। তাকে হেল্প করার মত কেউ নেই, এমন একটাই মনোভাবনা তৈরি হয়েছিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তবে এই মুহূর্তে আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। কেউ তো একজন আছে যে তাকে সবকিছুতে হেল্প করবে।
টিশাকে দেখে ইশারা দাঁড়িয়ে পড়ে। একগাল হেসে দৌড়ে টিশার সামনে যায়।
“ম্যাম আমি আপনাকে চিনি। ওই যে সেদিন আমান ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করলেন না আপনাদের পেছনেই ছিলাম আমি। সব কথা শুনেছি। আমি আপনাকে হেল্প করতে চাই। আবরার তাসনিনের পতন দেখতে চাই।
প্লিজ ম্যাম আপনি আমাকে আপনার সাথে নিন।
টিশা ইশারার পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক পলক দেখে নেয়।
তারপর বলে
“চলো বাইরে গিয়ে কথা বলি।
সিয়াম আমান আহাদ এবং ইভান ইশারার বলা সবগুলো কথা শুনতে পেয়েছে। ফোনে কানেক্ট রয়েছে তারা।
আমান বলে ওঠে

“ভাই সব তো প্ল্যান মতো এগোচ্ছে। এমন চলতে থাকলে এই ডাইনিকেই তো আমার বিয়ে করতে হবে। কি হবে আমার? জীবনটা বরবাদ
সিয়াম আমানকে শান্তনা দেয়ার ভঙ্গিমায় কবিতা আবৃত্তি করে
“ভয় কেনো পাও প্রণের বন্ধুু
সঙ্গে আছি তোমার
বাসর ঘরে মেশিন কাজ না করলে
বড় দুঃখ হবে আমার
তাই তো আমি কুদরতি তেল কিনবো তাড়াতাড়ি
তোমার মেশিন ভালো হবে কথা দিতে পারি।
আহাদ এবং ইভান হাত তালি দেয়। বাহবা দিয়ে বলে
” বন্ধু তুই একজন সত্যি কারের কবি। তোর কবিতায় রয়েছে সাহিত্যের বিশাল বিশাল শব্দ। এক্সট্রিম লেভেলের প্রতিভা তোর। তোর প্রতিভার কাছে কাজী নজরুল ইসলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাইকেল মধুসূদন দত্ত জসীমউদ্দীন সবাই ফেল।

এই যুগে সাহিত্যের কদর থাকলে
বাংলাদেশ সরকার কিডনি বিক্রি করে হলেও তোকে নোবেল দিতো।
সিয়াম নিজের চুল গুলো ঠিকঠাক করে। যেন এখনই তার জন্য নোবেল নিয়ে কেউ এগিয়ে আসছে।
এসব দেখে গা পিত্তি জ্বলে উঠে আমানের। সে মুখ বাঁকিয়ে বলে
“জুতা দিয়ে নোবেল বানানো হতো। ও সেটাই ডিজার্ভ করে।
সিয়াম ঘোর প্রতিবাদের সুরে কিছু বলতে চায়। তাকে থামিয়ে আমান বলে
“ভাই একটু গভীরে চিন্তা কর

ধর এই ডাইনিকে আমি বিয়ে করলাম। বাসরও হলো। তারপর আমি ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে উঠে যদি দেখি আমার মেশিন নাই।
শালি কেটে বিক্রি করে দিয়েছে।
তখন কি হবে আমার?
সিয়াম আহাদ এবং ইভান উচ্চস্বরে হেসে ওঠে।
তখনই দেখা যায় ইশারা এবং তিশা বাইরে আসছে। ওরা হাসি থামিয়ে সোজা হয়ে বসে।
ঝড় এদিকেই দৌড়ে আসছে। যখন তখন মাথার উপর দিয়ে বয়ে যাবে। চুল দুই একটা থাকলেও থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।

অদ্ভুত এক আবরার তাসনিনকে চিনে আদ্রিতা। এই পাষাণ পুরুষের কোমল মিষ্টি সুমধুর কন্ঠস্বর শুনেছে সে। বিশাল দেহীর উল/ঙ্গ দেহ খানাও দেখেনো।
অন্য রকম দেখায় তাকে। তাদের একান্তের মুহূর্তে দৃশ্য অন্যরকম।
আবরারের ফিসফিস করে বলা কথাগুলো একটু বেশিই আদুরে শোনায়। আবার বেপরোয়া ভঙ্গিমায় অশ্লীল কথাগুলো অন্যরকম শোনায়।
গোটা দুনিয়াটা তাকে চেনে
কিন্তু আদ্রিতা যে রূপে চেনে সেই রূপে কেউ চেনে না। কেউ কখনো জানতেও পারেনা আবরারও দুর্বল। সেও ভয় পায়। অন্তরঙ্গ মুহুর্তে হাজারবার জিজ্ঞেস করে ” তুমি ঠিক আছো তো?”
এই মুহুর্তে আবরারের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে আদ্রিতা।
মানুষটা রেগে গিয়েছে। মূলত তার রাগ কমানোর জন্যই এভাবে লেপ্টে থাকা।
তার রেগে যাওয়ার কারণ হচ্ছে

গভীর আলিঙ্গন এবং মিষ্টি যন্ত্রণার মাঝে নরম আদ্রিতা সহ্য করতে না পেরে ছেড়ে দিতে বলে।
প্রথমবার আবরার রিয়েক্ট করে না। দ্বিতীয় বারও কিছু বলে না। কিন্তু তৃতীয় বার বলতেই ছেড়ে দেয় আদ্রিতাকে।।
খুলে ফেলা শাড়ি আদ্রিতার গায়ে ছুঁড়ে মেরে নিজেও গায়ে শার্ট জড়িয়ে নেয়।।
তারপর কানে হেডফোন গুঁজে বসে পড়ে ল্যাপটপ নিয়ে।
আদ্রিতা মূলত অসহায় নয়নে কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে আবরারের মুখ পানে। তারপর শাড়ি দ্বারা কোনরকম নিজেকে গুছিয়ে আবরারের পাশে বসে। তার পিঠে মাথা রেখে আদুরে স্বরে বলে

“আমি তো ওই
স্যরি ভুল হয়ে গেছে
আপনি রাগ করিয়েন না প্লিজ।
আবরার ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ল্যাপটপের কিবোর্ডে দুই আঙ্গুল দ্বারা টাইপ করতে করতে জবাব দেয়
“রাগ করিনি।
কাজ করব। ডিস্টার্ব করিও না
আদ্রিতা উঁকি মেরে আবরারের মুখ খানা দেখে নেয়। রেগে লাল হয়ে আছে তবুও বলছে রাগ করিনি।
আসলেই ব্যাটা মানুষ ন্যাকামিতে সেরা। আড়ালে মুখ বাঁকায় আদ্রিতা।
তারপর বলেন
“আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। না মানে আর ডিস্টার্ব করবো না আপনি শুরু করুন।
আবরার দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে বলে
“কি শুরু করব?

আদ্রিতা কি জবাব দেবে বুঝতে পারে না। বেডা বুঝতে পারছে না কি শুরু করবে?
“যাও গিয়ে দেখো আম্মু অহনা আহিল কি করছে।
আমাকে কাজ করতে দাও
আদ্রিতা আবরারের সামনে থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে ফেলে। তাকে ধাক্কা দিয়ে শুয়িয়ে দিয়ে শার্টের বোতাম খুলে ফেলে। তারপর উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে নিজেও শুয়ে পড়ে।
” কি হচ্ছে এসব আদ্রিতা?
কাজ করছি না আমি?
আদ্রিতা নাক ফুলিয়ে বলে
“আদ্রিতা কেনো বললেন? পাখি বলুন।
” মুড নেই

“ছাড়বো না। যতক্ষণ পাখি না বলবেন ছাড়াছাড়ি নেই
” একটু আদর করতে গেলে মরেই যাচ্ছো এমন বিহেভ করো।
যেনো আমি খেয়ে ফেলছি তোমায়।
এখন আবার ঢং করছো কেনো?
আদ্রিতা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে
“আর ঢং করবো না। প্লিজজ রাগ কমান।
আবরার জবাব দেয় না। আদ্রিতা মাথা তুলে তাকায় জনাব এর গোমড়া মুখ পানে। তারপর চট করে চুমু খেয়ে নেয় গোলাপি অধরে।
একটা চুমু দিতে গিয়েই যেনো ফেঁসে গেলো আদ্রিতা। আরও খেতে ইচ্ছে করছে। কি আর করার? আরও চার পাঁচটা খেয়ে নেয়। তারপর যখনই সরে আসতে যাবে আবরার তাকে বিছানায় শুয়িয়ে ওপরে উঠে পড়ে।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮০

” শুরুটা তুমি করলে
শেষটা তবে আমিই করি?
অসহায় আদ্রিতা আর কি বলবে?
সম্মতি জানানো ছাড়া উপায় আছে?
“একবার ভালোবাসি পাখি বলে বলুন। তারপর যা খুশি তাই করুন।
” উমমম আজকে ভালোবাসি বলে নয় বেসে দেখাবো। এমন ভালো বাসবো যে বলতে বাধ্য হবে আবরার তাসনিন আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here