তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮২
তানিশা সুলতানা
এই ভর সন্ধ্যাবেলায় গোসল করতে হয়েছে আদ্রিতাকে। এমনিতেই সকাল থেকে মাথা ঝিমঝিম করছে। ঠান্ডা লাগবে লাগবে ভাব। এখন এই অবেলায় গোসল করার ফলে নাক চুলকাচ্ছে। এবার ঠান্ডা লেগে যাবে।
অথচ জনাব কে দেখো। আদ্রিতার এত বড় ক্ষতি করেও নিশ্চিন্তে ল্যাপটপ ঘাটছে। অফিসে যাওয়া তো চাঙ্গে উঠেছে। সারাদিন কাউকে বসে থাকবে ল্যাপটপ ঘাটবে কানে হেডফোন গুজে কি জানি শুনবে আর আদ্রিতাকে জ্বালাবে। এটাই তো উনার রুটিন হয়ে গেছে।
টাওয়াল দাঁড়া চুল মুছতে মুছতে কক্ষ থেকে বের হতে নেয় আদ্রিতা।
আবরার বলে ওঠে
“পাখি কাম হেয়ার।
পা জোড়া থামে আদ্রিতার। দুই হাত কোমরে রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আবরারের মুখ পানে। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে
“আপনি একজন খারাপ মানুষ। আপনার কথা শোনা তো দূর আশেপাশে আসাও উচিত নয় আমার।
বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। আবরার দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে কিছু মুহুর্তে তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার যাওয়ার পানে। তারপর বিরবির করে বলে
” ইডিয়েট
“ম্যাম আমান স্যারকে রিজেক্ট করে আপনি ভুল করেছেন। রিভেঞ্জ নিতে হয় কাছাকাছি থেকে। শত্রুর আশে পাশে থাকলে তবেই তো তার ক্ষতি করা যায় তাই না?
আপনার উচিত ছিল আমান স্যারকে বিয়ে করে ওই বাড়িতে পার্মানেন্টলি ঢুকে যাওয়া। তারপর সুযোগ বুঝে রিভেঞ্জ নিয়ে নেওয়া।
ইশারার বলা কথাগুলো মন দিয়ে শুনে টিশা। এবং বুঝতে পারে মেয়েটা মিথ্যে বলেনি। গার্লফ্রেন্ডের জন্য বন্ধুকে ছাড়বে না আমান। তবে বউয়ের জন্য ছাড়তে বাধ্য। সংসার সুখে রাখার জন্য মানুষ বাবা মাকে ছেড়ে দেয় আর আমান সামান্য বন্ধুকে ছাড়তে পারবে না?
অভিয়েসলি পারবে।
ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে টিশা।
ইশারার উদ্দেশ্যে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তুমি বলছো আমি আমানকে বিয়ের প্রপোজাল দিবো? স্যরি বলবো সবকিছুর জন্য?
“অবশ্যই।
পসিবল হলে আজকেই বিয়ে করে ফেলুন।
“আচ্ছা
বলেই নিজের ফোনের ডায়াল কল ঘেটে আমানের নাম্বারটা বের করে। এবং তখনই কল দেয়।
আমান নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অফসেট হয়ে পড়েছে। রাস্তার পাশে হাঁটুরে বসে ঘাস চিবুচ্ছে। সিয়াম একবার আমানকে দেখছে তো আরেকবার ইশারার কথা শুনছে মন দিয়ে।
শত হোক বউটা তার। চিন্তাও শুধু তারই।
আহাদ বলে ওঠে
” আমান ভাই তুই চিন্তা করিস না। পাখি ছাড়াও মানুষ বাঁচে।
আমরা বরং দু তিনটা বাচ্চা দত্তক এনে দেবো তোকে। তাদের নিয়ে না হয় বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিস।
কটমট নয়নে আহাদের মুখপানে তাকায় আমান। ইচ্ছে তো করছে পায়ের জুতোটা খুলে আহাদের মুখপানে ফিক্কা দিতে। কিন্তু খালি পায়ে বাসায় যাবে কি করে,তাই জুতো ফিক্কা দিলো না।
সিয়াম বলে
“ইভান তুই আরেকটা পাদ মেরে ২ ঘণ্টার জন্য আহাদকে অজ্ঞান করে দে। হালা বেশি কথা বলে।
সঙ্গে সঙ্গে আহাদ দুই হাতে নাক চেপে ধরে।
কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে ওঠে
“ভাই আমি আর জীবনেও কথা বলব না। তবু এই অবিচার টা করিস না আমার সাথে।
তখনই আমানের কল বেজে ওঠে। চারজনই হকচকিয়ে ওঠে। একে অপরের উপরে পড়ে যায়। সবার নিচে পড়ে সিয়াম।
ভালোই ব্যথা পেয়েছে কোমরে।
দামড়া দামরা ছেলেদের ভর কে আর ও নিতে পারে?
চিৎকার করে উঠে ছেলেটা।
সবাই একে একে সিয়ামের ওপর থেকে সরে। আমান পকেট থেকে ফোন বের করতেই স্ক্রিনে ডাইনি লেখা ভেসে ওঠে। মানে টিশা কল করেছে।
“এ এ এ ভাই
ডাইনি কল করছে। ধরবো নাকি?
সিয়াম বলে
” উত্তেজনা কাকে বলে যদি জানতে চাও
আমান নামক জাত শালার মুখ পানে চাও
দিলো আমার কোমর ভেঙে
জাওরামানির ঠেলায়
বাঁদরের মতো বন্ধু পেয়েছিলাম
উত্তর বঙ্গের মেলায়
সিয়ামের এত সুন্দর কবিতা শুনে আজকে কেউ বাহবা দেয় না। সকলের নজর আমানের ফোনের দিকে। ইতোমধ্যেই আহাদ অতিরিক্ত মাতব্বরি করে কলখানা রিসিভ করে ফেলেছে। এবং লম্বা সালাম দিয়ে বলে ওঠে
“আসসালামু আলাইকুম টিশামনি। ভালো আছো নাকি?
টিশা বিরক্ত হলো বোধহয়।
ক্ষিপ্ত স্বরে বলে
“আমান কে কল দিন।
ইভান বলে
“আমান তো ওয়াশরুমে গেছে। কি দরকার আমাকে বলতে পারো। আমি ভালো ছেলে। এক অক্ষরও বাড়িয়ে বলবো না। যতটুকু বলতে বলবা আমি ততটুকুই বলব। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমাকে একবার বলেছিল তার মনের কথা আজ অব্দি কাউকে বলিনি। কথাগুলো পেটের মধ্যে থাকতে থাকতে বাচ্চা পয়দা করে ফেলেছে। তাও বলছি না।
টিশা বলে
“ওয়াশরুম কি করতে গেছে?
সিয়াম বলে ওঠে
“আমরা তো সাধারণত মুতু বা পটি করতে যাই। এখন আমান কি করতে গেছে তা তো বলতে পারিনা। তুমি বললে ওয়াশরুমের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে পারি হালা কি করছে।
” ও সবের দরকার নেই। আমি আমানকে বিয়ে করতে চাই। আজকে এবং এক্ষুনি
ইভান বলে
“কোনো ব্যাপার না
তুমি আমাদের বাসায় চলে আসো। আমরা বিয়ের ব্যবস্থা করছি।
আর হ্যাঁ আমানকে সারপ্রাইজ দিবো। তুমি চলে আসো।
বলেই কলখানা কেটে দেয়।
তারপর চার বন্ধু হাত মিলায়। এবারই তো হবে আসল মজা।
সুইজারল্যান্ডে কাজি পাওয়া খুবই কষ্টকর। তবুও অনেক খুঁজে একটা হুজুর টাইপের লোক ধরে নিয়ে এসেছে সিয়াম ইভান এবং আহাদ।
আপাতত ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই। টিশাকে সাজাচ্ছে আদ্রিতা এবং ইশারা।
আমানের সাজুগুজুর প্রয়োজন নেই। সে যে শার্টখানা পড়েছিলো সেই শার্ট পড়ে বসে আছে আবরারের পাশে। হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে তার।
এইতো গতকাল ফেসবুকের নিউজফিড ঘাটতে ঘাটতে একখানা নিউজ সামনে পড়ে।
জুনিয়র শাকিব নামক এক বিখ্যাত টিকটকারের গোপন অঙ্গ কেটে দিয়েছে তার বউ।
ছেলেটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাঁদছে। একটা দুষ্টু সাংবাদিকের ক্যামেরায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখা যায় কাটা স্থান। আমান সেটা জুম করে দেখেছে।
সুইজারল্যান্ড তেমন ঘটনা ঘটে নি কখনো। এবার আমানের সাথে যদি এমনটা হয়। তাহলে সব সাংবাদিক নিউজ চ্যানেলের তার পেছনে লেগে পড়বে। বাই এনি চান্স যদি জুনিয়র শাকিবের মতো কোন এক সাংবাদিকের ক্যামেরায় তারও গোপন অঙ্গের ফুটেজ বন্দি হয়ে যায়?
ইয়া আল্লাহ কি হবে তখন?
ভাবতে চিৎকার করে ওঠে আমান। আবরারের পা জোড়া জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে
“আব্বা আমি বিয়ে করব না। মাফ করে দাও আমায়
আবরার দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“সিনক্রেট করবি না আমান। পা ছেড়ে জায়গায় গিয়ে বস।
“আব্বা তুমি বুঝতে পারছো না। ওই ডাইনি আমার ভবিষ্যৎ কেটে দেবে। যেভাবে ওর বাপের
বিরক্ত হয় আবরার। কিছু বলবে তার আগেই সিয়াম বলে ওঠে
” যার নাই মাথা
তার নাই কেনো চিন্তা!
অকেজো মেশিন ফেলে দিতে হয়
সেটা হারানোর কেনো এতো ভয়?
বন্ধু তুই রিলাক্স থাক
আমি আছি পাশে
কুদরতি তেল দিয়ে
মালি
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার কঠিন দৃষ্টিতে তাকাই সিয়ামের মুখপানে। ব্যাস তার কবিতা আবৃতি বন্ধ হয়ে যায়।
আদ্রিতা এবং ইশারা টিশাকে নিয়ে চলে আসে।
ভালোই ভালোই তাদের বিয়েটা মিটে যায়।
হুজুরকে অনেকগুলো টাকা দিয়ে বিদায় করে আবরার।
এখন সবাই মিলে বসে গল্প করছে।
হঠাৎ করে ইশারা বলে ওঠে
“আদ্রিতা তোমার গলায় কি হইছে?
এমন লাল হয়ে আছে কেন?
সকলের দৃষ্টি পরে আদ্রিতার দিকে। সিয়াম মাথা এগিয়ে ভালো করে দেখতে যায়। আহাদ বলে
“হালা মা হয় আমাদের।
” তো? মা ব্যাথা পেলে দেখবো না?
লজ্জায় পড়ে যায় আদ্রিতা। কোনরকমে উঠে দৌড়ে নিজ কক্ষে চলে যায়।
ইভান বলে
“বুঝলাম না মা লজ্জা পেলো কেন?
আমান বলে
“বুঝলাম না ভাই।
লজ্জার কি আছে?
আবরার আহিলকে কোলে নিয়ে যেতে যেতে বলে
” তোদের সবার জন্য ফিডার কিনে আনবো আমি। ইডিয়েটের দল।
বাসর ঘরে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে আমান। আহারে আজকেই বোধহয় তার জীবনের শেষ দিন।
সিয়াম কিছু একটা আমানের হাতে দেয়। তারপর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে
“কাশফুল
ভালোবাসার নরম ছোঁয়ায় জীবন হোক সুখময়।
অল দ্যা বেস্ট ভাই।
আমান শুকনো ঢোক গিলে বলে
” সকালে যদি সব ঠিকঠাক থাকে আমি দুধ দিয়ে গোসল করবো ভাই।
দোয়া করিস আমার জন্য।
আহাদ ধাক্কা মেরে কক্ষে ঢুকিয়ে দেয় আমানকে। এবং বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
সালা অতিরিক্ত কথা বলে।
রাত বারোটা বাজে। আবরার এখনো বাসায় ফিরেনি। সেই যে সন্ধ্যার দিকে আহিরকে নিয়ে বেরিয়েছে। অহনা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ঘুম নেই আদ্রিতার চোখে। মানুষটা কোথায় গেল?
ড্রয়িং রুমের সোফার গালে হাত দিয়ে বসে আছি। ইতিমধ্যে কয়েকবার কলও করে ফেলেছে। কিন্তু সে কল রিসিভ করছে না। এটাই আদ্রিতার চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
১২:৪০ এর দিকে কলিং বেল বেজে ওঠে। আদ্রিতা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
দেখতে পায় জনাব এসেছে। বাচ্চাটা কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে। সে এক হাতে বাচ্চাটাকে আগলে রেখেছে। এবং অপর হাতে একটা গিফট বক্স।
সেটা আদ্রিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮১
“পাখি দিস ইস ফর ইউ।
আদ্রিতা সেটা হাতে নিয়ে বলে
” কি আছে এতে?
“নিজেই দেখে নাও।
