তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮৪
তানিশা সুলতানা
নভেম্বরের মাঝামাঝি। বাংলাদেশে এখন শীত পড়ে গিয়েছে। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের ওয়েদার নাতিশীতোষ্ণ। আতিয়া বেগম কিছুদিনের জন্য আহিল এবং অহনা কে নিয়ে বাংলাদেশে ঘুরতে গিয়েছে। আদ্রিতাকেও সাথে নিতে চেয়েছিলো তবে আবরার যেতে দেয় নি। ডিরেক্টলি মায়ের সামনে বলেছে “ওকে ছাড়া আমি দুইডা সেকেন্ডও থাকতে পারবো না”
এটা শুনে অবশ্যই সিয়াম একখানা কবিতা বলে ফেলেছে
“নির্লজ্জার জন্য নোবেল থাকলে
আবরার আব্বা পেতো
বউয়ের ফেমে পাগল হয়ে
পাগলা গারতে যেতো
মা ছেলে কাউকে মানে না
বলে অশ্লীল কথা
এই বেডার বাচ্চা হবে
তার নাম রাখবো অশ্লীলতা
ইভান বলে
” হালা তুই ই আবরারের বড় ছেলে। তোর নামই অশ্লীলতা।
ব্যাসস তখন থেকে সিয়ামে নাম অশ্লীলতার হয়ে গেলো। উঠতে বসতে খাইতে শুইতে এই নামে ডাকা হয়।
এমন কি ইশারাও তাই বলে ডাকে।।
দুঃখে সিয়ামের ইচ্ছে করে সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে চলে যেতে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বর্তমানে গোটা বিশ্বের সব থেকে সাকসেসফুল বিজনেসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন আবরার তাসনিন। পোশাকের পাশাপাশি পারফিউম শ্যাম্পু এবং সাবানের বিজনেসও শুরু করেছে। বলাবহুল সব বিজনেসেই দ্বিগুণ পরিমাণ লাভবান হচ্ছে। সুইজারল্যান্ড সিঙ্গাপুর এবং বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সব দেশেই তার কোম্পানির প্রোডাক্টের চাহিদা রয়েছে বেশ।
এসব জন্য আবরার আদ্রিতাকে ক্রেডিট দেয়। এইতো কিছুদিন আগে সুইজারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সব বিজনেসম্যানদের নিয়ে একটা পার্টিথ্রো অর্গানাইজ করেছিলো। সেখানে আবরার কে স্পিচ দিতে বলা হয়।
সে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে মৃদু হেসে বলে ওঠে
“আমার এই সাকসেস আমার বউয়ের জন্য। সে ছিল বলেই আমি পেরেছি। সে থাকলে কিছুই হতো না।
সেখানে উপস্থিত সকলের সহ গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে আবরারের এই কথাটা বড্ড বেশি ভালো লাগে। মুহূর্তে গোটা একটা জেনারেশন এর কাছে আবরার তাসনিন আইডল হয়ে ওঠে।
যেখানে পুরুষ মানুষ স্ত্রীর সাহায্যে সাকসেস হওয়ার পরেও ক্রেডিট দিতে ইতস্তুত বোধ করে।
সেখানে আবরার স্ত্রীর থেকে কোন প্রকার সাহায্য না পেয়েও গোটা ক্রেডিট তাকে দিয়ে দিচ্ছে।
আদ্রিতা নিজেও অবাক হয়।
সে কি করলো?
কোনদিন বিজনেসের ব্যাপারে কোন কথা বলে নি। সাহায্য তো দূরের কথা।
টিশা আমানের কান ভাঙানোর জন্য বলে
” তুমি তো সাথে ছিলে। তোমার কথা তো বললো না। সব ক্রেডিট বউয়ের?
আমান হেসে জবাব দেয়
“ক্রেডিট দিয়ে কি করবো? ও সাথে আছে এটাই তো অনেক।
ব্যাসস টিশা আর কোনো কথা বলার সাহস পায় না। চুপচাপ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়৷
তবে এসব শুনে ফেলে আদ্রিতা। তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সত্যিই তো আবরারকে গোটা ব্যাপারে সাহায্য করেছে চার বন্ধু। তাদের নামটা তো বলতে পারতো।
এভাবে সংসারে ভাঙ্গন ধরবে। আলাদা হয়ে যাবে সবাই। না না এমনটা হতে পারে না। আদ্রিতা তা হতে দিতে পারে না। আবরার ফিরলে আজকে এই বিষয় নিয়ে কথা বলতেই হবে।
গত কয়েকদিন যাবত ইশারার শরীর খারাপ। খাবার খেতে পারছে না। সর্বক্ষণ মাথা ঘোরায়। বেশি বেশি ঘুম পায়। মাছ দেখলেই বমি বমি লাগে
বিষয়টা সিয়াম খেয়াল করেছে। কিন্তু কিছু বলছে না।
তো আজকে অফিস থেকে ফিরে কক্ষে যেতেই দেখতে পায় প্রেগন্যান্সির কিট হাতে নিয়ে বসে আছে ইশারা। চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।
সিয়াম কপাল কুঁচকায়
” কি হয়েছে?
খুশি খুশি কেনো?
ইশারা দৌড়ে এসে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে আর বলে
“আমি প্রেগন্যান্ট।
সিয়াম কিছু মুহুর্ত স্তব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পরমুহূর্তে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। ইশারা ভয় পেয়ে সিয়ামকে ছেড়ে দেয়।
” এখন সবাই জেনে যাবপ আমি অশ্লীল কাজ কাম করেছি? সবাই আমাকে খ্রাপ ভাববে। এই মুখ আমি মানুষকে দেখাবো কি করে?
ইয়া আল্লাহ দঁড়ি ফেলুন আমি চাঁদে উঠে যাই।
নাহলে মাটি ফাঁকা করুন আমি ঢুকে পড়ি।
বিরক্ত ইশারা সিয়ামের চুল টেনে দেয়।
“হাদারাম একটা
তুই যে একটা মেয়ের সঙ্গে এক ঘরে থাকিস তাতেই মানুষ বুঝে যায় তুই অশ্লীল।
আজকে থেকে তুই আর আমার সাথে থাকবি না।
আমাদের রুম আলাদা।
বলেই ইশারা চলে যায়। সিয়াম কপালে হাত দিয়ে বসে পড়ে
” ওহে আমার বধু
তুমিই আমার কদু
হইও না রাগে ঠেলায় লাল
তাহলে পড়বে আমার পিঠে তাল
আমি সিয়াম সরল মানুষ
ভালোর বন্ধু ভালো
লেবুর রস নিয়ে তুমি
করিও না মুখ কালো
ইশারা আবার ফিরে আসে। সিয়ামের গালে হাত দিয়ে বলে
“লেবুর রস কি?
” না মানে যেটা দিয়ে তুমি প্রেগন্যান্ট হলে।
এখন আমার মানসম্মান খেয়ে তুমি চলে যেয়ো না।
থাকবো কিভাবে আমি?
“হালা আমি সত্যিই থাকবো না।
বেয়াদব পাগল একটা
আদ্রিতার মন খারাপ। ইশারা প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো অথচ সে এখনো প্রেগন্যান্ট হতে পারলো না। প্রতি রাতে আবরার পিল খাইয়ে দেয় তাকে। কিছু বললে বলবে “তুমি এখনো ছোট। আর একটু বড় হও”
সে কোনো বুঝতে চায় না? আদ্রিতা বড় হয়ে গেছে?
ইশারার প্রেগন্যান্ট এর কথা শুনে মা কতো খুশি হলো। আমান ভাই মিষ্টি কিনে গোটা শহরে বিলালো। ইভান আহাদ ইশারার জন্য গিফট আনলো। অহনা সেখান থেকেই অনলাইনে গিফট কিনে পাঠিয়ে দিলো ইশারার কাছে।
শুধু আদ্রিতাই গিফট দিতে পারলো না। কেনোনা আবরার ফেরে নি এখনো। সে আসলে তবেই তাকে নিয়ে বেরুবে এবং গিফট কিনবে।
অপেক্ষা করতে করতে আবরার বাসায় ফিরলো রাত বারোটায়। হাতে বড় গিফট বক্স। এবং তার পেছনেও দুটো ছেলে গিফট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আদ্রিতা ড্রয়িং রুমেই ছিলো। আবরারকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়ে। বড় বড় পা ফেলে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে
“কোথায় ছিলেন?
কতোবার কল করেছি?
ইরেসপন্সবল। বাড়ির কথা মনে থাকে?
আবরার গম্ভীর স্বরে বলে
” সাট আপ পাখি
বেশি কথা বলো তুমি।
অভিমানের পাল্লা ভাড়ি হয় আদ্রিতার। ঠোঁট বাঁকিয়ে কক্ষে চলে যেতে নেয়। পেছন থেকে আবরার বলে ওঠে
“ইশারাকে গিফট দিয়ে তারপর যাও।
” আমি গিফট কিনি নি।
“তোর হাজব্যান্ড কিনেছে।
আদ্রিতা মুখ বাঁকিয়ে আবরারের হাতের গিফট বক্স নেয়। এবং ইশারার কক্ষের দিকে এগোয়।
আবরার ছেলে দুটোর হাত থেকে গিফট বক্স নিয়ে তাদের টাকা দিয়ে বিদেয় করে। তারপর দরজা আটকে সেও এগোয় সিয়ামদের কক্ষের দিকে।
আমান আহাদ ইভান তিন জনই সিয়ামের পা ধরে ঝুলে আছে। কিভাবে বউকে প্রেগন্যান্ট করলো তার রেসিপি জানতে চাচ্ছে।
ইশারা কানে হেডফোন গুঁজে ফোন দেখছে। ওদের কথা শোনা মানেই বিপদ। কি থেকে কি বলবে আল্লাহ মালুম।
” ভাই তোরা ইউটিউব থেকে রেসিপি দেখ। আমাকে ক্ষমা কর।
আমান বলে
“নাহহহহহ
জলজ্যান্ত ভাই থাকতে ইউটিউব কেনো দেখবো? তুই ভাই শুরু কর। প্রথমে কি করতে হয়?
তখনই আবরার আদ্রিতা চলে আসে।
” কি নিয়ে কথা হচ্ছে?
আহাদ হেসে বলে
“মা সিয়াম রেসিপি বলছে না।
” কিসের রেসিপি?
আমান বলে
“লেবুর রসের।
আদ্রিতা বুঝতে না পারলেও আবরার বুঝে যায়।
সে গম্ভীর স্বরে বলে
” তোরা কি ভালো হবি না?
ইভান বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮৩
“পৌরসুদিন ভালো হবো।
আবরার সেদিনকে কান না দিয়ে ইশারার সামনে গিফট বক্স নামায়।
তারপর বলে
” এ’ম সো হ্যাপি
কনগ্যাচুলেশন
আদ্রিতা মুখ বাঁকিয়ে বলে
“খুশি হলপ মানুষ হাসে।।
জানেন না বোধহয়?
