তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮৫
তানিশা সুলতানা
ইশারা নিজের ভাই বাবা কেউ প্রেগনেন্সির খবরটা জানায়। এবং তারা সুইজারল্যান্ড আসবে ইশারাকে দেখতে। এই নিউজটা জানার পর থেকে আবরারের মাথা গরম। সে কিছুতেই আদ্রিতার সাথে আসিফ আদনানের দেখা হতে দেবে না। এবং ব্যাপারটা কাউকে জানতেই দেবে না। কিছু মুহূর্তের মধ্যেই চিন্তাভাবনা করে ফেলে এই সুযোগে মালদ্বীপ থেকে ঘুরে আসা যাক। আসিফ আদনান বাংলাদেশে ফিরলে তবেই তারা আবার সুইজারল্যান্ড ব্যাক করবে। প্ল্যানিং অনুযায়ী দুটো টিকিট বুক করে ফেলে। এইতো সন্ধ্যা সাতটার ফ্লাইটে তারা মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। নিজের শোরুম থেকে কিছু ড্রেসও সিলেক্ট করে ফেলে আদ্রিতার জন্য।
সিয়াম গোল গোল নয়নে আবরারকে দেখছে। বেডা মনে মনে কিছু একটা পাকাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছে। আসিফ আদনান আসবে আর আবরার তাসনিন চুপচাপ বসে থাকবে এটা হতে পারে?
কখনোই না।
টিশা কিচেনের দায়িত্ব নিয়েছে। সকলের জন্য বাংলাদেশী স্টাইলে বিরিয়ানি রান্না করছে। এটা নিয়েও বেশ চিন্তিত ছিলাম। আমান শালার বউ কি আজকে বিরিয়ানিতে বিশ টিশ মিশিয়ে সবাইকে এক চাপা মেরে দেবে? দিতেও পারে। পৃথিবীতে ভয়ংকর প্রাণী হচ্ছে নারী জাতি। তাদের হাঁটু ভর্তি দুষ্টু বুদ্ধি। কবি সিয়ামনন্দ্রনাথ বহু আগেই এক খানা কবিতা লিখে ফেলেছে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“নারীর ফেমে পড়ে ভাই
করিও না ভুল
বিবাহের পরে বুঝবে মজা
কেঁদেও পাবে না কুল
কেনো যে আমান বিশ্বাস করলো? অবশ্য করবে নাইবা কেন? সিয়াম তো এই কবিতা আগে শোনায় নি ওকে।
তবে যাই হোক এখন থেকে সাবধানে থাকতে হবে। সেই সাথে বাকিদেরও সাবধান করে দিতে হবে।
এসব ভাবনার মাঝেই সিয়াম খেয়াল করে আবরার নেই। এই তো এখানে বসে ছিলো। কোথায় চলে গেল?
এখন আবার একে খুঁজতে হবে। নজরে নজরে রাখতে হবে।
টিশার রান্না করা বিরিয়ানির পাতিল থেকে কিছু টা বিরিয়ানি লুকিয়ে নিয়ে যায় সিয়াম। বাড়ির সামনে একটা বিড়াল বসেছিল। সামনের বাড়িতে থাকে বিড়ালটা। প্রায় প্রায় এখানে আসে। সিয়ামর বিরিয়ানি টুকু বিড়ালের সামনে দেয়। বিড়ালটা খুশি মনে বিরিয়ানি খেতে থাকে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে এটা খাওয়ার পারেও বিড়ালটা বেঁচে আছে। মরে নি। তার মানে বিশ মেশায় নি। যাকক খ্রাপ হলেও ভালো আছে মেয়েটা।
আদ্রিতা সকলের সাথে বসে গল্প করছে। গল্পের মূল আকর্ষণ হচ্ছে ইশারা এবং তার অনাগত বাচ্চা। কি নাম রাখা হবে? ছেলে হবে না মেয়ে হবে? কার মতো দেখতে হবে? ইত্যাদি নানান রকমের আলোচনা।
সেই আলোচনায় সামিল হয়েছে টিশাও। সে অবশ্য কিছু বলছে না তবে চুপচাপ সকলের আলোচনা শুনছে।
আমান সিয়াম ইভান আহাদ চার জন একজন আরেকজনের ওপর হাত পা তুলে আধশোয়া হয়ে আছে।
তখনই সেখানে আবরার চলে আসে। তাকে দেখে সিয়াম বলে ওঠে
“আর এক ঘণ্টা পরে আমার শালা সুইজারল্যান্ড আসবে। আব্বা তোর কোনো বক্তব্য আছে?
আবরার শান্ত নজরে তাকায় সিয়ামের মুখ পানে। জবাব দেয় না। আদ্রিতা বলে ওঠে
” এ বাবা আপনি এখনো বসে আছেন কেনো ভাইয়া?
তাকে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যাবেন না?
আমান বলে
“চল আবরার আমরা গিয়ে নিয়ে আসি।
আবরার বলে
” পাখি রুমে চলো
তোমার সাথে কথা আছে।
আমান আহাদ ইভান সিয়াম এক সাথে বলে ওঠে
“কথার আরেক নাম কি রোমাঞ্চ?
তোমার কি ফেম ফেম পাচ্ছে আব্বা?
আদ্রিতা লজ্জা পেয়ে যায়। ইশারা এবং টিশা হেসে ফেলে। আবরার গম্ভীর স্বরে বলে
“দ্যাটস নন অফ ইউর বিজনেস
সিয়াম গান গেয়ে ওঠে
“পাশের বাড়ির চেংড়া পোলা প্রেম করিতে চায়। ইংরেজ ভাষায় রুমে ডাকে চোখের ইশারায়।
মা গানটা ধরো। আমরা তাল মেলাচ্ছি
আদ্রিতা বড় বড় পা ফেলে এই কক্ষ থেকে চলে যায়। তার পেছন পেছন আবরার ও চলে যায়।
নিজেদের কক্ষে প্রবেশ করতেই আদ্রিতা রাগান্বিত স্বরে বলে
“কি সমস্যা আপনার?
আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেনো?
আবরার ড্রেসিং টেবিলের ওপরে থাকা ফোন এবং প্রয়োজনীয় জিনিস হাতে তুলতে বলে
“প্রশ্ন করিও না।
আমার সঙ্গে চলো
তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে
ব্যাস আর কোনো কথা নয়। আদ্রিতার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায়। বাসায় যে জামাটা পড়া ছিল সেটা পড়েই ছুটতে থাকে আবরারের এর পিছু। গাড়ি করে যেতে থাকে ওরা।
এয়ারপোর্ট এর কাছাকাছি আসতেই আদ্রিতা জিজ্ঞেস করে
“কোথায় যাচ্ছি আমরা বলাই যাবে না?
এবারে আবরার জবাব দেয়।
“মালদ্বীপ যাচ্ছি।
আদ্রিতার কপালে ভাজ পড়ে।
“মানে বাড়িতে পড়া জামা পড়ে আমি মালদ্বীপ যাবো?
” হ্যাঁ তো
আবরারের সহজ স্বাভাবিক জবাবে রাগ হয় আদ্রিতার। বিরবির করে বলে
“নিজে যাচ্ছে সাহেব সেজে আমাকে নিচ্ছে পাগলের মতো। পাষাণ হাতি একটা
আবরার শুনতে পায় কথা গুলো। সে গাড়ি থামিয়ে সিটবেল্ট খুলতে খুলতে জবাব দেয়
” সাহেব তো তোমারই।
আর পাগলটাও আমারই
সে যে রূপেই থাকুক আমি সেই রূপেই ভালোবাসি। এন্ড আমার কাছে সেই রূপেই অপ্সরা।
আদ্রিতার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। বুকের ভেতরে সুখ সুখ অনুভব করে। এক জীবনে এর থেকে বেশি কি আর কি চাওয়ার থাকতে পারে? সুখী হতে আর কি লাগে?
কিচ্ছু না।
আবরারের হাত ধরে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করে আদ্রিতা। পুলিশরা হেসে কথা বলতে থাকে লোকটার সাথে। কিছু সংখ্যক লোক ছবি তুলতে যায়। আবরার গম্ভীর স্বরে জবাব দেয়
“আমার ওয়াইফ স্যোশাল মিডিয়ায় একটিভ নয়। তার পিকচার যেনো কোথাও দেখা না যায়।
ব্যাসস আর কেউ পিক তোলার সাহস করে না।
প্লেনে ভিআইপি সিটে বসে দুজন। আর কিছুক্ষণের মধ্যে প্লেন উড়াল দিবে। আদ্রিতার হাসি পায়। লোকটা জেলাসির ঠেলায় তাকে নিয়ে মালদ্বীপ যাচ্ছে ভালোই বুঝতে পারছে সে।
” হোয়াট হ্যাপেন?
আদ্রিতাকে হাসতে দেখে আবরার বলে ওঠে।
আদ্রিতা আবরারের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বলে
“আসিফ আদনান আসছে বলে জেলাস হয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমায়। সব বুঝতে পারি।
আবরার ফোনে মনোযোগ দিয়ে বলে
“সেখানে সমুদ্র আছে। ইচ্ছে হয়েছে সমুদ্রের মধ্যে রোমাঞ্চ করবো।
আদ্রিতার মুখ টা চুপসে যায়। বেয়াদব অশ্লীল খারাপ হাসি। তার সাথে কথা বলাই বেকার।।
মালদ্বীপ পানির রাজ্য। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। এয়ারপোর্ট থেকেও পানি দেখা যায়। প্লেন ল্যান্ড করতেই আদ্রিতা অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে। নীল নীল পানি দেখতে কি সুন্দর লাগছে।
কিছু মুহুর্তের মধ্যেই একটা হোটেলে চলে যায় তারা।
আদ্রিতা তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে আবরারের কাছে বায়না ধরে এখনই ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। আবরারও মানা করে না। নিজেও ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে পড়ে।।
বিশাল একটা সমুদ্র। যতদূর দৃষ্টি যাচ্ছে শুধু স্বচ্ছ নীল পানি দেখা যাচ্ছে।
একটা বোর্ডও রাখা আছে সেখানে। আবরার আদ্রিতাকে নিয়ে সেই বোর্ডে উঠে পড়ে।
সমুদ্রের মাঝখানে চলে যায় তারা। সেখানে পানি নেই। দুই পাশে পানি মাঝখানে খানিকটা জায়গা পানিহীন।।
সেখানেই নেমে পড়ে দুজন। এবং আবরার বোর্ড চালককে বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮৪
” দুই ঘন্টা পরে এসে আমাদের নিয়ে যাইয়েন।।
ছেলেটা মাথা নেরে সম্মতি প্রকাশ করে এবং তখুনি বোর্ড ঘুরিয়ে চলে যায়।
আদ্রিতা ভ্রু কুচকে বলে
“আমরা দুজন এখানে কি করবো?
আবরার শার্টেট হাতা গোটাতে গোটাতে জবাব দেয়
“যেটা করলে বেবি হবে।
