তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৯
তানিশা সুলতানা
অশ্লীল জিনিসে সকলেরই নজর বেশি। একবার ভুল করে তাকালে দ্বিতীয় বার ইচ্ছে করেই চোখ দুটো সেদিকে চলে যায়। এটা আদ্রিতার ক্ষেত্রে না কি সকলের ক্ষেত্রেই জানা নেই তার।
শুধু জানে এই মুহুর্তে দৃষ্টি সরাতে মন চাচ্ছে না। মন বলছে “দেখতে থাকো দেখতে থাকো। এমন দৃশ্য সচারাচর সামনে পড়বে না”
আর মস্তিষ্ক বলছে “ছিহহহ আদ্রিতা। তোর না বয়ফ্রেন্ড আছে? তুই না অন্য একজনকে ভালোবাসিস? তাহলে পরপুরুষের পানে নজর দিচ্ছিস কি করে? লজ্জা নেই তোর?”
আবরার তাসনিন নিজ কক্ষে ড্রেস চেঞ্জ করছে। শার্ট দীর্ঘক্ষণ আগেই খুলে ছুঁড়ে মেরেছে কোথাও একটা৷ আশেপাশে দৃষ্টি ফিরিয়ে শার্টের হদিস পাই নি আদ্রি। আর আর জিন্স খানাও এইমাত্র খুলে ফেললো। এখন তার পরনে ছোট্ট প্যান্ট। ধবধবে ফর্সা শরীর। কোথাও লোমের ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। বড় বড় চুল গুলো কপালে এসে পড়েছে। গোলাপি অধরে ভিমরুল কামড়েছে মনে হয় লাল লাল দেখাচ্ছে এবং একটু ফোলা ফোলা। ঠোঁট মেলে হাসতে সে জানে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চাপ দাঁড়িতে কন্ঠ নালির উঁচু জিনিসটা ঢেকে ফেলেছে। বুকের দুই পাশে দুটো কয়লা। তারপর তার একটু নিচে নাভিকুণ্ডল। ওয়ান টাইম এক খানা ব্যান্ডেজ লাগানো পেটের বা পাশে। গোটা গায়ে এবং পিঠে অনেক অনেক ছোট ছোট ক্ষত। যেনো ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলো। তখন বুলেটের আঘাত কিংবা ছ ড়ি লাঠির মা ই র পড়েছিলো সর্ব অঙ্গে।
আদ্রিতা ফ্যাল ফ্যাল নয়নে খানিকক্ষণ তাকিয়েই থাকে অনেকক্ষণ। অতঃপর বিরবির করে বলে
“একটা মানুষকে আদর করে হাতি ডাকি। তাই বলে তাকে হাতির মতোই দেখতে হতে হবে? এটার কোনো মানে হয়?
নির্লজ্জ আদ্রিতা নিজ দৃষ্টি টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে নেয় আবরারের পান হতে। মাথা খানা বের করে আনে দরজার হাতল থেকে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শরীরে জড়িয়ে রাখা ওড়না খানা মাথায় পেঁচিয়ে ভদ্র সভ্য মেয়ে হয়ে নেয়। অতঃপর মনে পড়ে এ্যানির কথা। তখন তো এ্যনিকে নামিয়ে দিয়েছিলো। দুষ্টুটা আবার কক্ষে ঢুকে পড়লো না তো? চিন্তিত আদ্রিতা পূণরায় এ্যনির খোঁজে কক্ষে উঁকি দিতে উদ্ধত হয়। তখনই নজর পড়ে ফ্লোরে। লুচু আদ্রিতার লুচু বিড়াল আরাম করে শুয়ে আবরারকে চেঞ্জ করতে দেখছে।
হতাশ আদ্রিতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বিরবির করে বলে
” না নিজে মানুষ হতে পারলাম আর না তোকে মানুষ করতে পারলাম। আমার মতো চরিত্রের গুণ কোথা থেকে পেলি রে সোনা?
এ্যানির পা টেনে তাকে সরিয়ে দিতে চায়। বিরক্ত হয় বিড়ালটি। কেমন করে তাকায় আদ্রিতার পানে। হাত পা নাড়িয়ে ছোটাছুটি করে বোঝায় “সে দেখবে”
আদ্রিতা বোধহয় বুঝলো না তাই কোলে নিতে যায়। চালাক এ্যানি মালিকের হাতে খামচি কেটে ঢুকে পড়ে কক্ষে। আদ্রিতা ভেংচি কাটে। বিরবির করে বলে “তোকে সহ আমাকে একদিন নির্লজ্জ বেহায়া তকমা লাগিয়ে অউন্নত দেশ সুইজারল্যান্ড থেকে জুতো পেটা করে তাড়াবে আতিয়ার হাতির বাচ্চা ছেলে আবরার হাতি ওরফে গোলামের পুত৷ দেখে নিস তুই”
আদ্রিতা বেমালুম ভুলেই বসেছিলো সে আসলে কেনো এসেছিলো এই কক্ষের পানে। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মনে পড়ে। তারপর মনে পড়ে এ্যানিকে রেখে চলে গেলে বাঘ মামা বিড়াল মেরে দিবে। শুকনো ঢোক গিলে আদ্রি এবং পরপরই দরজায় টোকা দিয়ে বলে
“আসসালামু আলাইকুম বড় ভাইয়া। ভালো আছেন? আমি একটুখানি আপনার কক্ষে ঢুকতে চাচ্ছি। অনুমতি পেলে ঢুকবো।
ক্রিপা করিয়া ঢুকিবার অনুমতি প্রেসস করুন বাঘ মামা থুক্কু জাঁহাপনা।
ভেতর থেকে গম্ভীর স্বরে জবাব আসে
” এতোক্ষণ উঁকি ঝুঁকি মারার সময় পারমিশন নিয়ে ছিলে?
চুরি করতে গিয়ে চোর ধরা পড়লে যেমন পরিস্থিতি হয় আদ্রিতার অবস্থাও তেমন হয়েছে। উজ্জ্বল মুখ খানা পাংশুটে হয়ে গিয়েছে। “লোকটা তো এই দিকে তাকায়ও নি। তাহলে কি করে বুঝলো?”
বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলে একবার ভাবে এক দৌড়ে চলে যাবে। পরপরই মনে মনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার শখ জাগে। অগ্যতা ইনোসেন্ট ফেস করে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে কক্ষের ভেতর। কপালে ভাজ ফেলে আঁখিপল্লব ছোট ছোট করে নিরপরাধের সুরে জবাব দেয়
“আমি তো এসেছিলাম আপনার হাত দেখতে৷ আপনার ফুলো ফুলো বডি দেখতে নয়। আর উঁকি দিয়ে হাতই দেখছিলাম। অন্য কিছু নয়।
আমার চোখ খুবই ভালো।
আপনি যে নেংটু প্যান্ট পড়েছিলেন সেটা একদমই দেখে নি।
আদ্রিতার ভাষণ শুনতে শুনতে কাবাডের পানে এগোয় আবরার। শান্ত ভঙ্গিমায় কাবাড খুলে কালো রংয়ের টিশার্ট বের করে এবং পরপরই গায়ে জড়িয়ে নেয়। বিরক্ত হয় আদ্রিতা। আর একটু থাকতো খালি গায়ে। ফুলো ফুলো মার্সেল, ভাজ ভাজ বুক দেখতে দারুণ লাগে তার।
শাহরুখ খানের বডি দেখে কতোবার ক্রাশশ খেয়েছে। এবং শক্ত না নরম ছুঁয়ে দেখার সাধ পোষণ করে হৃদয়ে।
এ্যানি আবরারের পেছন পেছন ঘুরছে। সে যেদিকে যাচ্ছে সেও সেই দিকে যাচ্ছে। মনে মনে তারও ইচ্ছে জেগেছে আবরারের কোলে ওঠার। ছুঁয়ে দেওয়ার। নিজের লালন পালন করা বাচ্চাটির মনোভাব বুঝতে দুই সেকেন্ডও সময় লাগে না আদ্রিতার। সে বাঁকা হেসে আওড়ায়
” ওরেহহহ আমার এ্যানি। একটু লজ্জা সরম বাঁচিয়ে রাখ সোনা। মায়ের মতো হোসস না”
নিজের কথা শেষ করে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় তার ঠিক নাক বরাবর আবরার দাঁড়িয়ে আছে বুকে হাত গুঁজে।
আদ্রিতা মাথা উঁচু করে এক পলক তাকায় আবরারের পানে। পরপরই কেবলা হাসি দিয়ে বলে
“এখন তাহলে যাই ভাইয়া? অনেককক রাত হলো ঘুমবো।
“ডিস্টেন্স মেইনটেইন করে চলবে আমার থেকে। ফারদার আমার সামনে আসবে না।
তোমাকে আমার পছন্দ
আবরারকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আদ্রিতা বলে ওঠে
” আপনাকেও আমার পছন্দ না। আপনার সামনে আসার ইচ্ছেও নেই। জাস্ট মানবতার খাতিরে এসেছিলাম।
এরপর থেকে আর যেখানে সেখানে মানবতা দেখাতে আসবো না।
যতসব আজাইরা ঢং
মুখ বাঁকিয়ে মুহুর্তেই প্রস্থান করে আদ্রিতা। এ্যানি কি বুঝলো কে জানে সেও সুরসুর করে মালিকের পেছনে চলে যায়।
আবরারের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির দেখা মেললো বোধহয় এবং পরপরই সেটা মিলিয়ে যায়।
আতিয়া বেগম ছেলের সাথে ভালো মতো দুই দন্ড কথা বলতে পারে নি এখন পর্যন্ত। পারে নি বলতে আবরার তাকে সময় দিচ্ছে না। এই তো সকালে ঘুম থেকে উঠে ছেলের জন্য কফি করে এনেছিলো। কিন্তু কক্ষে প্রবেশ করে দেখে ছেলে নেই। গোটা বাড়িতে কোথাও নেই। মানে সে চলে গিয়েছে। হতাশ আতিয়া মন খারাপ করে কিচেনে ঢোকে রান্না করতে।
অহনা এবং তার বাচ্চা সোফায় বসে আছে। মা মেয়ের এক অসাধারণ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। অসুস্থ মা ঠিক করে বসতে পারছে না তবুও বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাসিমুখে এটা ওটা বলছে। আর অবুঝ শিশু হাসছে। আদ্রিতা খানিকক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।
তার জীবনে অনেক না পাওয়া রয়েছে। মন খারাপের অনেক গুলো কারণ আছে। কিন্তু কখনোই তার মন খারাপ হয় না। কখনো কান্না পায় না।
তেরো বছর বয়সে মা মা*রা গিয়েছে। মাকে কবরে শুয়িয়ে রেখে আসার তিন ঘন্টা বাদেই বাবার দ্বিতীয় বিয়ে কথা শোনে আদ্রিতা। জানতে পারে তার বাবা সিঙ্গাপুরে আরেকটা বিয়ে করেছে। হয়ত সেই খবর জানতে পেরেই মা পরলোক গমন করেছে। নাহলে ভালো মানুষ কখনো হঠাৎ করে মা*রা যেতে পারে?
মা হারা আদ্রিতার দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ ছিলো না। তাই সেদিন আদ্রিতার দাদা জোর করে তার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলো আতিয়া বেগম এর কাঁধে। কিসের একটা পেপারে সাইন করিয়ে সারাজীবনের জন্য আতিয়া বেগম এর সাথে বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো আদ্রিতাকে।
বলা বাহুল্য আতিয়া বেগম কখনোই দায়িত্ব হেলাফেলা করে নি। মায়ের মতো আগলে রেখেছে তাকে। চাওয়া পাওয়া সবটা পূরণ করেছে এবং এখনো করছে।
প্রতিমাসে বাবা নির্দিষ্ট এমাউন্ট টাকা পাঠায় আদ্রিতার একাউন্টে। কিন্তু আতিয়া বেগম সেই টাকা খরচ করতে দেয় না।
আদ্রিতা একটা ব্যাপার ভেবে দেখে। তার মা সব দায়িত্ব পালন করলেও তাকে বিয়ে দিচ্ছে না। কেনো?
এই তো একুশ বছর হয়ে গিয়েছে তার। কয়েক দিন পরে বাইশ হবে। বুড়ি হয়ে যাচ্ছে অথচ মা বিয়ের কথা ভাবছে না।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮
আদ্রিতা কপালে ভাজ ফেলে এগিয়ে যায়। অহনার পাশে বসে চিল্লায়ে বলে ওঠে
“মা তুমি আমার বিয়ে দিচ্ছো না কেনো? আমার যে বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে ভুলে গেছো?
তখনই আবরার আর সিয়াম বাড়িতে ঢুকলো এবং তারা সম্পূর্ণ কথা শুনেছে আদ্রিতার।