তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ২৯

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ২৯
ইরিন নাজ

স্ত*ব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। ইশা একধারে ন্যা*কা কা*ন্না কেঁ*দে যাচ্ছে। এবার মুখ খুললেন মিসেস বন্যা। আরশি কে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন,
— এই যে মেয়ে তোমার বাবা মা কি জানে তুমি এভাবে আমার ছেলের সাথে বিয়ে করেছো?
নত ম*স্ত*ক নাড়িয়ে না বো*ঝা*লো আরশি। মিসেস বন্যা একটা শ্বাস ফেলে বললেন,
— তোমার বাবা মা কে এখানে আসতে বলো….
বাবা মায়ের কথা বলায় বুক টা ভা*র হয়ে আসলো আরশির। তবুও মৃদু স্বরে বললো,

— আমার বাবা নেই। মা অ*সুস্থ।
অবাক হলেন মিসেস বন্যা। উনি কিছু বলবেন তার আগেই মিসেস মনা মুখ বা*কি*য়ে বললো,
— আপা আপনার ছেলে এ কেমন মেয়ে কে বিয়ে করলো? না আছে রূপ, না আছে বাপ আর না আছে বংশ পরিচয়। মা ও নাকি অ*সুস্থ। এই মেয়ে কে আপনি কিভাবে মেনে নিতে পারেন? কোথায় আবরার বাবার মতো হীরের টু*ক*রো ছেলে আর কোথায় এই ক*য়*লার মতো মেয়ে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভীষণ রা*গ হলো আরশির। তাকে যা বলার বলুক কিন্তু তার বাবা, বংশ পরিচয় কেনো টে*নে আনবে? তবুও দ*ম ধরে দাঁড়িয়ে রইলো সে। আরশি চুপ রইলেও আবরার চুপ রইলো না। আরশির হাত শ*ক্ত করে মু*ঠো*য় পুরে মিসেস মনা কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আপনার কাছে ও কালো হোক, কুৎ*সি*ত হোক কিন্তু আমার কাছে ও সুন্দর। আমার মায়ের পর আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরতম নারী। কিন্তু আপনার চোখে সেই সৌন্দর্য ধ*রা পড়বে না মামী। কারণ সেই সৌন্দর্য দেখার মতো মা*ন*সি*কতা আপনার নেই তা আপনার কথাতেই বুঝেছি। আমার বাবা মা আমাকে কারোর গায়ের রং, বংশ পরিচয় দেখে ভালোবাসা, সম্মান করা শেখায় নি। আজ ও যেই পরিস্থিতিতে আছে সেই পরিস্থিতিতে ওকে সৃষ্টিকর্তা ই ফেলেছেন। ওর সাথে যা হয়েছে তা আমাদের সাথেও তো হতে পারতো।

আপনি ওর ত্রু*টি গুলো দেখেছেন তবে ওর গুনগুলো দেখেন নি। এতগুলো বছর ধরে এই সমাজের সাথে যু*দ্ধ করে টি*কে থাকা মেয়ে ও। কিশোরী বয়সে ও নিজের বাবা কে হা*রি*য়েছে। চাচা বাড়ি কে*ড়ে নিয়ে রাস্তায় ছু*ড়ে ফে*লে দিয়েছিলো ওকে আর ওর অ*সুস্থ মা কে। কিন্তু ও থেমে থাকে নি। আজ এতগুলো বছর ধরে একা ল*ড়ে গেছে, এতদূর এসেছে। বাবা ছাড়া একটা মেয়ের জীবন কেমন হতে পারে তা বো*ঝার ক্ষ*ম*তা হয়তো আমাদের নেই।

আপনার কাছে ও কয়লার মতো হলেও আমার কাছে ও যেকোনো মূল্যবান রত্নের চেয়েও অধিক মূল্যবান। যাই হোক আমি কাউকে আর কিছু বোঝাতে চাই না। সবাই শুধু এতটুকু জেনে রাখুন ও আমার ওয়াইফ, মিসেস আবরার। আর আমার ওয়াইফ কে যদি কেউ অ*প*মা*ন করে তবে আমিও ছেড়ে কথা বলবো না। ও কেমন তা আমাকেই বুঝতে দিন। আমার যেখানে ওকে নিয়ে কোনো স*ম*স্যা নেই সেখানে অন্য কেউ এই বিষয়ে মাথা না ঘা*মা*লেই খুশি হবো।

এক দৃষ্টিতে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। চোখ ছ*ল*ছ*ল করছে তার। সে কখনোই ভাবে নি তার জীবনে এমন কেউ কখনো আসবে। যে তাকে এতোটা সম্মান করবে, তাকে বুঝবে, তার ঢা*ল হবে। অন্যদিকে আবরারের কথাগুলো শুনে অ*প*মা*নবোধ করলেন মিসেস মনা। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে মিসেস বন্যা কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— দেখেছেন আপা মেয়ে টা কিভাবে আবরার কে ব*শ করেছে? আবরার এর আগে কখনো আমার সাথে এভাবে কথা বলেনি আর আজ? সব এই মেয়ের জন্য হয়েছে।
কপাল কুঁ*চ*কা*লো আবরার। মনে মনে ভাবলো সে এতক্ষন কাকে কি বললো? তার কোনো কথা কি মিসেস মনার এক কান দিয়েও ঢু*কে নি নাকি? মিসেস মনা কে আর কিছু বলার রুচি হলো না আবরারের। মিসেস বন্যা এবার গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— তুমি কিন্তু একটু বেশিই বলছো মনা। ভু*লে যেও না তোমার স্বামী আর আমিও কিন্তু একসময় এমন পরিস্থিতিতে ছিলাম। আর আমার কাছে কারোর গায়ের রং ম্যাটার করে না। যা ম্যাটার করে তা হলো চরিত্র।
মাথা নিচু করে নিলেন মিসেস মনা। চেয়েও আর কিছু বলতে পারলেন না। আর মিস্টার ইরফান এখনো চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছেন। মিসেস বন্যা এবার ইশার কাছে গেলেন। মিসেস বন্যা কে নিজের দিকে আসতে দেখে আবারও ন্যা*কা কা*ন্না শুরু করলো ইশা। এতক্ষন যাও আশা ছিলো মিসেস বন্যার কথা শোনার পর এখন সে আশা ও খুঁজে পাচ্ছে না ইশা। এখন অ*শ্রু ই একমাত্র অ*স্ত্র। যদি মিসেস বন্যা কে মানানো যায়! ইশা মিসেস বন্যা কে জড়িয়ে ধরে ফুঁ*পা*তে ফুঁ*পা*তে বললো,

— ফুপ্পি আবরার কে বলো না আমার সাথে এমন টা না করতে। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। আমার সাথে ও অনেক ভালো থাকবে। এই মেয়ে ওর যোগ্য না। ফুপ্পি বলো না আবরার কে ও যেনো আমাকে বিয়ে করে। বলো না ফুপ্পি….
মিসেস বন্যা ইশার মাথায় হাত রেখে বললেন,

— আমাকে ক্ষ*মা করে দাও ইশা মা। আমি ভু*ল করেছি আবরারের মতামত ছাড়া তোমার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করে। আমার এই ভু*লের কারণে তোমাকে ক*ষ্ট পেতে হচ্ছে। কিন্তু এখন যে আমার কিছুই করার নেই ইশা। আবরার ওই মেয়ে কে বিয়ে করেছে। তুমি, আমি না মানতে চাইলেও সত্য এটাই। আর ভালোবাসা ছাড়া কি সংসার টে*কে? তুমি আবরার কে ভালোবাসলেও আবরার যে তোমাকে ভালোবাসে না। ওরা একে অপর কে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। আমি কি করে ওদের সম্পর্ক ভে*ঙে তোমার সাথে সম্পর্ক গ*ড়*তে পারি? তুমি অনেক ভালো মেয়ে ইশা। তুমি অনেক ভালো ছেলে পাবে। তুমি….

আর কিছু বলতে পারলেন না মিসেস বন্যা। তার পূর্বেই ধা*ক্কা মেরে মিসেস বন্যা কে দূরে সরিয়ে দিলো ইশা। মিসেস বন্যার কথায় গা জ্ব*ল*ছে তার। মাথা গ*র*ম হয়ে গেছে। ইশার ধা*ক্কা*র কারণে ছি*ট*কে আবরারের গায়ে গিয়ে পড়লেন মিসেস বন্যা। মা কে জড়িয়ে নিলো আবরার। রা*গে থ*র*থ*র করে কাঁ*পতে লাগলো সে। মিস্টার আব্বাস ও চোখ মুখ লাল করে শ*ক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আবরার ইশা কে কিছু বলতে চাইলেও তার হাত চে*পে ধরে চোখের ইশারায় থামিয়ে দিলেন মিসেস বন্যা। কিন্তু থামলো না ইশা। রা*গে চি*ৎ*কার করে বললো,

— ভালো মাই ফুট। আমার মাথা খা*রা*প হয়েছিলো যে তোমার মতো মহিলা কে এতো সম্মান দেখাচ্ছিলাম, এতো তেল দিচ্ছিলাম। যাই করছিলাম সব আবরারের জন্য করছিলাম। এতো করে বুঝালাম আবরার কে আমি ভালোবাসি তাও তোমরা মা ছেলে আমার ভালোবাসা বুঝলে না। যেহেতু আবরার আমাকে বিয়েই করছে না তাহলে এসব নাটকের কোনো মানেই হয়…

কথা শেষ করার আগেই সশব্দে একটা থা*প্প*ড় পড়লো ইশার গালে। ইশা গালে হাত দিয়ে ছ*ল*ছ*ল চোখে তাকালো নিজের বাবার দিকে। কারণ থা*প্প*ড় টা তার বাবা ইরফান চৌধুরী দিয়েছে। ইরফান চৌধুরী মেয়ে কে তো*য়া*ক্কা না করে বোনের সামনে গিয়ে নত কণ্ঠে বললেন,
— আপা ক্ষ*মা করে দিও। আমার মেয়ে কে হয়তো আমি সুশিক্ষা দিতে পারি নি। তাই আজ আমার মেয়ের কাছে তোমাকে অ*প*মা*নিত হতে হলো। আমি আসি।

কথাটা বলে আর দাঁড়ালেন না ইরফান চৌধুরী। মেয়ের হাত ধরে টা*ন*তে টা*ন*তে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। মিসেস মনা রা*গী চোখে একবার আরশির দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন স্বামীর পিছনে। মিসেস বন্যা ব্য*থি*ত নয়নে ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। আবরার মিসেস বন্যা কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— ইটস ওকে মা। তুমি ক*ষ্ট পেয়ো না। আর আমাকেও ক্ষ*মা করে দাও। আমি চাই নি তোমার মতামত ছাড়া এভাবে বিয়ে করতে কিন্তু বা*ধ্য হয়েছি।
মিসেস বন্যা আবরারের পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,

— না রে বাবা ভু*ল আমার দ্বারা হয়েছে। মানুষ চিনতে ভু*ল করেছি আমি। অনেক বড় ভু*ল হয়েছে আমার।
মিসেস বন্যার কথায় আবরার বুঝলো তার মা ভীষণ ক*ষ্ট পেয়েছে ইশার ব্যবহারে। তাই সে আব্বাস আহমেদ আর আহি কে চোখের ইশারায় কিছু বুঝাতেই তারা এগিয়ে আসলো। আহি মা কে ঝা*প্টে ধরে অ*ভি*মানী কণ্ঠে বললো,
— এটা কোনো কথা মা? আমার আর কিছুক্ষন পর বিয়ে আর তুমি এভাবে মুখ ফু*লি*য়ে আছো? এখন কি আমি কা*ন্না শুরু করবো? তোমাকে এভাবে দেখে কিন্তু আমার কা*ন্না পাচ্ছে।
আব্বাস আহমেদ ম*স্ক*রা করে বললেন,

— ঠিকই বলেছো আহি মামুনি। এখন তো আমারও কাঁ*দ*তে ইচ্ছা করছে। চলো আমরা বাপ বেটি মিলে কাঁ*দ*তে বসি।
মিসেস বন্যা আবরারের বুক থেকে মাথা সরিয়ে আব্বাস আহমেদের দিকে চোখ রা*ঙি*য়ে তাকালেন। আব্বাস আহমেদ ভ*য় পাওয়ার অভিনয় করে বললেন,
— দেখেছো তোমরা আমার মিসেস আবার নিজের আগের রূপে ফিরে এসেছে। কিভাবে আমাকে চোখ রা*ঙা*চ্ছে? আজ আমি একজন নি*রী*হ ভালো বর বলে বউ কে চোখ রা*ঙা*ই না।

সবাই হেসে উঠলো আব্বাস আহমেদের কথায়। মিসেস বন্যা ও আলতো হাসলেন। ভীষণ প্রশান্তি অনুভব করলেন তিনি। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করলেন এতো ভালো স্বামী, সন্তান দেয়ার জন্য। এর মাঝেই নিচ থেকে খবর আসলো রাদিফরা চলে এসেছে। ব্য*স্ত হয়ে উঠলেন মিসেস বন্যা। তখন আব্বাস আহমেদ বলে উঠলেন,

— বন্যা আবরার আরশির কিন্তু ধর্ম মতে বিয়ে হয়নি। আহি আর রাদিফের সাথে ওদের ও বিয়ে হবে।
কপালে ভা*জ পড়লো মিসেস বন্যার। তিনি এখন এতো দ্রুত আরশির জন্য বিয়ের পোশাক, গহনা কিভাবে জো*গা*ড় করবেন? যতোই হোক আরশি এখন তার একমাত্র ছেলের বউ। কি করবেন ভাবতে লাগলেন তিনি।

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ২৮

(আস্সালামুআলাইকুম। সবাই রেসপন্স করবেন। আমি ভীষণ ব্য*স্ত ছিলাম। তাই এতো লে*ট হলো। ইনশাআল্লাহ এরপর থেকে আর এতো লে*ট করবো না। চেষ্টা করবো যতোটা দ্রুত সম্ভব দেয়ার। আজকের পর্ব চে*ক করা হয়নি। তাই ভু*ল-ত্রু*টি হয়ে থাকলে ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই। ধন্যবাদ।)

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ৩০