তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৫

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৫
নীল মণি

বাড়ির কর্তারা সবাই আজ অফিসে ,আর বাড়ির গিন্নিরা সবাই যে যার মত ব্যাগ পত্র গোছাতে ব্যস্ত । মেয়েরাও যে যার মত তাদের জিনিষ পত্র গুছিয়ে নিতে ব্যাস্ত।
আত্মীয় স্বজন মিলে সর্ব টোটাল 11 টা গাড়ি যাবে কাল চৌধুরী বাড়ি হইতে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে। অনেকে আবার বিয়ের আগের দিন।

আর সবার বন্ধুরা যাবে বিয়ের আগের দিন । শুধু মাত্র আরোহী যাবে কাল তিয়াশা দের সঙ্গে । তিয়াশার বাবা আরোহির বাবাকে বলায় সে পারমিশন দিয়ে দেয়।
এদিকে রায়ান ডাইনিং হলের সোফায় বসে টিভি দেখছিল সঙ্গে ছিল আকাশ ও , আকাশ তার ল্যাপটপ টা নিয়ে কি একটা যেন দেখছিল । হঠাৎ ই সদর দরজার কলিং বেলের আওয়াজ আসলো তাদের কানে।
আকাশ রায়ান কে ইশারা করল যেন দরজা টা খুলে দেয় । অমনি রায়ান আকাশ কে বলে উঠলো —
” আরে ভাইয়া তুমি গিয়ে খুলে দাও , এই একশন সিন ছেড়ে ওঠাই যাবে না ।”
রায়ান এর দৃষ্টি টিভিতেই রেখে কথা গুলো আকাশ কে বলল ।
আকাশ চ শব্দ করে , বসা থেকে উঠে দরজার দিকে পা বাড়াল।
দরজা খুলেই তার কানে আসল —

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আরে রাঙ্গা মূলো যে , তাই তো ভাবি দরজা খুলতে এত দেরি কেন হল ।”
আকাশের চোখে যেন দুপুরে কেউ ধুলো ছড়িয়ে দিল , তার সদর দরজায় নয় কেউ যেন তার মনের দরজার ঘন্টা বাজিয়ে উঠল , সমুদ্র নীল রঙ্গা গাউন পরিহিতা এই রমনী কে দেখে যেন আকাশের বুকে এই রমনী ঢেউ তুলে দিল,আকাশের এই হঠাৎ মনে জেগে ওঠা বসন্তের কথা ভেবেই এক গভীর জগৎ এ ভেসে যেতে
মনে মনে আওরালো — “জলপরী তোমায় আমার দুয়ারের করা কেন নাড়িয়ে দিতে হল? ”
” আরে এই যে রঙ্গামুলো ভিতরে কি আসতে পারি, না কি এইখানেই দাড়িয়ে থাকবো? এক দম যা তা । ”
আরোহীর এই তীব্র বচনে আকাশ এর ধ্যানের জগৎ থেকে বাস্তবের প্রাঙ্গণে প্রত্যাগমন ঘটলো —
” এই জে জলপরী, আমায় সব সময় রাঙ্গামূলো কেন বলো?”
আরোহী এবার রাগে ক্রোধে উৎকটভাবে উত্তেজিত হয়ে বলল —

” এই আপনি জলপরী কাকে বলছেন ? সরেন তো যত রাজ্যের আল ছাল প্যারা আমার সামনেই আসতে হয় ।
দরজার সামনে আরো ঘন্টা দাঁড়ায় থাকেন কিন্তু আমায় ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেবেন?””
তৎখনাৎ আকাশ এর টনক নড়ল যে তার জলপরী বাইরে দাঁড়িয়ে আছে ,একটু সংকোচ বোধ হয় আকাশ নিজের কান টায় একটু হাত দিয়ে বলে উঠলো —
” ও সরি সরি আসুন ভেতরে আসুন জলপরী।”
অমনি আরোহী গট গট করে ভেতরে চলে গেল —
আর যেতে যেতে আওরালো — ” শালার প্যারা।”
আকাশ বলে উঠল — ” উফফফ জলপরী এত গালি দেওয়া ভালো না কিন্তু।”
আরোহী আবার ও পেছন ফিরে মুখ ঘুরিয়ে আগে চলে গেল , আরোহীর দৃষ্টি রায়ান দিক পরতেই বলল —

” ভাই কেমন আছিস ?”
রায়ান অমনি বসা থেকে উঠে বলল —
” রুহী আপু যে , আলহামদুল্লিহ। তুমি কেমন আছো আপু?”
” জী ভাই আলহামদুল্লিহ , তোর রোদ আপু কইরে ? আর আন্টি রাও কোথায় রে?”
আবার ও আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে রায়ান কে বলল —
” নইলে এসব রাঙ্গমূলো দের প্যারা দেখতে হতো না ।”
আকাশ একটু মুচকি হেসে সোফায় বসতে বসতে বলল –
” তোমার কত সৌভাগ্য যে এতে গরমেও তুমি মূলো পাচ্ছো, তাও আবার রাঙা।”
এইবলে আকাশ হা হা হা করে হেসে উঠলো।
এদিকে রায়ান যার মাথায় কিছুই ঢুকছে না ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাচ্ছে কি হচ্ছে এখানে ?
আরোহী দু হাত কোমরে দিয়ে বলল -” অসহ্য বেটা ”

” আর এই গাধা এসব প্যারা না দেখে । বলবি কোথায় তোর আপু ?”
রায়ান একটু ইয়ে ইয়ে করে বলল —
” রুহী আপু রোদ আপু উপরে যাও তুমি উপরে ।”
আরোহী গট গট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো
রায়ান এদিকে ইউভির দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে বলবে
ভাবছে —
তার আগেই আকাশ বলে উঠল —

” এত তাকাস না তোর একশন সিন দেখ ।”
এই বলে একটু মুচকি হাসি দিয়ে ল্যাপটপ টা ঊরুর উপড়ে রেখে নিজের কাজ করতে লাগল —
তিয়শা বসে আছে তার রুমের জানালার পাশে । জানালার ফাঁকে নিরাবেগ দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল, যেন বহুবর্ণ ভাবনার বিমূর্ত ক্যানভাসে মনের ভেতরের প্রশ্নগুলোর প্রতিচ্ছবি খুঁজে ফিরছে।বহু চিন্তার এক গভীর নির্জনতায় ডুবে থাকা সে মুহূর্তে সময় যেন স্থির হয়ে আছে , আর তার মনের গভির জগতের নিজস্ব সত্তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
এই এত সব গভীর ভাবনার মাঝেই নীরবতার আবরণ ছিঁড়ে এক কন্ঠস্বর ভেষে আসল —

” শালা বদজাত ব্যাডা আমারে কয় কিনা জলপরী। ওর জলপরী বলা ছুটাম , হা**মজাদা আমায় ১৫ মিনিট দার করায় রাখছে কত্ত বড় সাহস ।”
হাতের লাগেজে টা একটু ছুঁড়ে কোমরে হাত দিয়ে রাগে ক্ষোভে চোঁখ মুখ লাল করে বিরামহীন কথা চলেই যাচ্ছে আরোহীর।
এদিকে তিয়াশা আরোহী কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করেই ছুটে এসেছে আরোহীর কাছে ,ওর এই অবস্থা দেখে আরোহীর হাত ধরে,নিজেকে আর চুপ রাখতে না পেরে বলেই উঠল —
“আমার বেবি টার এরকম রাগের কারন কি জানতে পারি?”
আরোহী রাগে রাগে বলল —

” দোস্ত সব পোলা গুলোই কি এরকম ছ্যাচড়া হয় ?”
তখন তিয়াশার ও সকালের মুহুর্ত গুলো চোখের সামনে হানা দিল —
” শুধু কি ছ্যাচড়া , শালা নিজে ডেকে নিজে রাই বলবে জাও।”
” মেয়ে দেখলে হয় ডাক শুরু করবে জলপরী, বেবি।”
” নিজেই ইগনোর করবে আবার নিজের যখন ইচ্ছা হবে তখন কথা বলবে ।”
” দেখে শুধু দাঁত কেলাবে, মান সম্মান নাই।”
” আমার উপর আবার হুকুম চলাবে শা**লা বাঘের বাচ্চা।”
” শা**লা রাঙা মুলোর বাচ্চা ।”
দুজনে কোমর বেঁধে রাগ ঝেড়ে নিল ।
আরোহী এবার ভ্রু কুচকে রোদ কে জিজ্ঞেস করল —
” আচ্ছা দোস্ত তুই কার কথা বলছিস ?”
রোদ এবার নাক ফুলিয়ে বলল–

“কে আবার , আমার জীবনের এখন একটাই নতুন প্যারা আবরার জায়ন চৌধুরী। বাই দ্যা ওয়ে দোস্ত তুই কার উপর ক্ষেপেছিস ।”
আরোহী ও বলে উঠল —
” কে আবার ওই যে তোর ভাইয়া রাঙ্গা মূলো কোথাকার।”
ওহ —

” ইস আমার ভাইয়া টা তো সুন্দর , এরকম রাঙ্গা মূলো বলিস না । ”
” সুন্দর না ছাই একদম যা তা ।”
“আচ্ছা বেবিএদিকে আয় বোস , কে দিয়ে গেল তোকে ?”
” আরে ড্রাইভার আংকেল দিয়ে গেল ।”
আরোহী তিয়াশা কে জরিয়ে বলল
” দোস্ত আমরা এই কদিন একসঙ্গে থাকব ।”
তিয়াশাও ভীষন খুশী।
আরোহী ব্যাগ থেকে একটা মোবাইল বের করে চোখ মুখে এক যুদ্ধ জয়ের হাসি দিয়ে বলল —

” দেখ দোস্ত আম্মুর ফোন টা এই কদিনের জন্য আমায় দিসে , উফফফ কি খুশি হইসি যে দোস্ত । আব্বু আম্মু যেদিন যাবে সেদিন আবার নিয়ে নেবে কিন্তু এই ৪ দিন এই ফোন আমার আর তোর রাজত্বে দোস্ত।”
তিয়াশা অমনি ফোন টা আরোহীর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে চোখ মুখে এক উজ্জ্বল আলোকাভা ছড়িয়ে বলল —
” বেবি তুই এটা কি দেখালী, তোরে চুমা বেবি চুমা।”
দুজনে মিলে ফোন টা নিয়ে একটু ঘাটা চাটা করে,
আরোহী বলল –
” চল বৃষ্টি আপুর সঙ্গে দেখা করে আসি।”
“চল চল ”
দুজনেই বৃষ্টির রুমের দিকে পা বাড়াল……

সময় একটা বেজে দশ মিনিট, জায়ন অফিস রুমেই বসে ছিল ।জায়ন এর ফোনে হঠাৎ করে বন্ধুদের গ্রুপ হতে যৌথ সংলাপের কল এসেছে …….
সাগর আগেই বলে উঠল —
” কি মামা তৈরি তো , মনে তো তোর দুইটা লাড্ডু ফুট্টাসে তাই না ।”
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে পলাশ বলে উঠল —
” লাড্ডু দুইটা ফুটবে কেন ?”
নাজিম একিই চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বলল —
” এই সাগর কি বলিশ দুইটা লাড্ডু ফুটবে কেন ?

কি রে জায়ন আমার একটা ফুট তাসে না তোর দুইটা ফুটা যাচ্ছে । কেস কি?”
সাগরের এরকম বেফাঁস মার্কা কথা বার্তায় জায়ন এর
মেজাজ টা গরম হয়ে যাচ্ছে , তা তার দৃষ্টি থেকেই ষ্পষ্ট প্রকাশিত হোয়ে উঠছে ।
এই পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করে আহান বলে উঠল —
” আরে তোরাও না কথা ধরার আর লোক পেলি না, ওর বউ ই ওর কথায় পাত্তা দেয় না। আর তোরা এসব বলছিস।”
সাগর একটু খানি হেসে বলে উঠল —
” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো এমনি ই কি থেকে কি বলি, এসব বাদ দে যে কথা বলার জন্য সবাই কল এ জয়েন হয়েছিস সেটা জায়ন রে বল।
তখন নাজিম বলে উঠলো —

” হ্যাঁ রে জায়ন একচুয়ালী আমি না তোর বিয়েটা জয়েন করতে পারবো না ।
অবশ্য জায়ন এর এই বিয়ে নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই, সে নিজেই এই বিয়ের টানাপোড়ন থেকে মুক্তি পেতে চায় , কিন্তু কোন উপায় পাচ্ছে না ।সে খুঁজে চলেছে এক পরিত্রাণের আকাঙ্ক্ষী।
তবুও তার বন্ধুরা উপস্থিত থাকবেনা, এই বিষয় টা সে কি ভাবে মেনে নেবে তাই ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল —
” কেন ? কি সমস্যা।”
জায়ন এর কথায় যেন নাজিম নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বলল —
” আ আ আসলে জায়ন …..”
আহান নাজিম এর কথা শুনে বুঝল সে একটু অস্থিরতায় আছে । এই অস্থিরতা জায়ন ও টের পেয়েছে…. তাই সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করল —

” কি হয়েছে নাজিম? ”
এবার নাজিম একটু গলা খাকরি দিয়ে বলে উঠলো —
” আসলে জায়ন আমার বিদেশ থেকে চাকরির অফার এসেছে । তাই আমি তোর বিয়ের দিন জার্মান চলে যাচ্ছিস।”
বন্ধুর এত ভালো সংবাদের জন্য জায়ন একটু হেসে বলল —
” That’s very good bro congratulations, তো এত
ঘব্রাচ্ছিস কেন গাধা ।”
” না না এমনি ”
নাজিম একটু ম্লান হাদি দিয়ে উঠল ,, কিছুক্ষণ আরো খানিক ৫ বন্ধুর মধ্যে কথা হল , তারপর যে যার মত ব্যস্ত হয়ে গেল …..

এর মধ্যেই জায়ন এর অফিস রুমে ইউভি এসে উপস্থিত হল , ও জায়ন কে জিজ্ঞেস করল —
” ভাইয়া বাসায় কখন ফিরবে, বড় আম্মু তারাতারি ফিরতে বলেছে আজ । বিকালের আগে ।”
জায়ন চেয়ার থেকে উঠে থাইগ্লাস এর সামনের দিক দিয়ে বাইরের দৃষ্টি পরখ করে বলতে লাগল —
” মন তো চাচ্ছে এখন ই চলে যাই, খুব ক্রেভিং হচ্ছে বুঝলি? ”
ইউভি বলল হতবাক হয়ে —

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৪

” কিসের ভাইয়া।”
জায়ন এবার ইউভির দিকে দৃষ্টি রেখে বিদ্রূপমিশ্রীত কুটিল হাসি দিয়ে উত্তর দিল —
” আমার হবু ছোট্ট বউ টাকে খুব তারাতারি বড় করার জন্য । ”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here