তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৩
নীল মণি
তিয়াশা আজ পরেছে এক ডার্ক গ্রীন রঙের টকটকে রেশমি শাড়ি, যার সারা গায়ে সোনালি জরির নিঁখুত কাজ। ফর্সা গায়ের রঙের সঙ্গে যেন শাড়ির সবুজের ঝলক আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে,চোখ জুড়িয়ে যায়। শাড়ির সঙ্গে মানানসই ব্লাউজটি কনুই ছুঁয়ে নেমে এসেছে, আর পেছনের দিকটা বেশ খোলা, যেখানে সূক্ষ্ম কারুকাজের নিদর্শন যেন নিঃশব্দে কথা বলে যাচ্ছে।
চুলগুলি পরিপাটি করে বাঁধা খোঁপায়, যার চারপাশে জড়ানো সাদা বেলি ফুলের মালা যার থেকে এক মিষ্টি ঘ্রাণ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। চোখে গাঢ় কাজল টানা ওই ডাগর ডাগর চোখ যেন কথা বলে নিঃশব্দে। ঠোঁটে হালকা ঝকঝকে লাল লিপস্টিক, যা তাঁর মুখের আদলকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
গলায়, হাতে আর কানে সবই ম্যাচিং সবুজ গয়না,নির্বচারে নয়, বরং সাজের সঙ্গে এক অপূর্ব ভারসাম্য রেখে। যেন রাজকীয় কিন্তু ভারী নয়, সৌন্দর্যের সীমায় থেকে পরিপূর্ণ।
তিয়াশাকে দেখে মনে হচ্ছে,সে আজ শুধুই সাজেনি, সে যেন নিজেই এক উৎসব। আর এই উৎসবের রঙ্গে কেউ একজন নিশ্চয়ই রং খেলে যাবে ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এদিকে অনন্যার পরণে অলিভ গ্রীন টিস্যু সিল্ক শাড়ি, সূক্ষ্ম সোনালি জরির কাজ। হাই নেক ফুল স্লিভ ব্লাউজ, পেছনে ডীপ কাট। স্লিক খোঁপায় জড়ানো বেলি ফুল, গাঢ় কাজল টানা চোখ আর বার্নট ডার্ক লিপস্টিকে তার রুচিশীল রূপ আরও নীরব অথচ নজরকাড়া। গলায় পাথরের সেট, হাত ভরা কাঁচের চুরি। অনন্যা যেন সৌম্য দীপ্তির অন্য নাম।
আরোহী গাঢ় বোটল সবুজ জর্জেট শাড়ি, মেটালিক বর্ডার। হাল্ফ স্লিভ ব্লাউজ, খোলা চুলে এক পাশে গুঁজে রাখা বেলি ফুল। ঠোঁটে দীপ্ত মেরুন লিপস্টিক, চোখে স্মোকি মেকআপ, কানে বড় দুল, নাকে ছোট্ট নোজপিন। তার উপস্থিতি ঝলমলে,একটুখানি খুনসুটি।
নেহার পরণে ডার্ক গ্রীন সিল্ক শাড়ি, সিলভার জরির নিখুঁত কাজ। খোলা পিঠের স্লিভ লেস ব্লাউজ, খোলা চুল । লাল লিপস্টিক, টানা কাজল,একরাশ স্টাইল।
সবারই সাজে একেকরকম সৌন্দর্য মেলে ধরেছে
কারও চোখে আত্মবিশ্বাস, কারও ভেতর নরম ছোঁয়া, কেউবা একরাশ উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু তিয়াশাকে দেখলে যেন একটু বেশিই চোখে পড়ে সে চাইলেও যেন নিজেকে লুকোতে পারে না।”
ধাসসস ………..
” বেবি তোরে দেখে ভাইয়া তো পুরাই মাটিতে লুটাপুঁটি খাইতাছে।”
তিয়াশার কানের কাছে বলেই আরোহী এক খুনসুঁটি হাসি দিলো ।
” লুটাপুঁটি না ছাই , হয়তো নেহা আপুর এত স্টাইল সাজে নিজেরে আর ঠিক রাখতে পারে নাই বুঝলি ।
” আরে না রে দেখ না কেমন ডাব ডাব করে তাকিয়ে আছে ।”
” এই তুই চুপ থাকবি সারাক্ষণ তোর শুধু ফাউ বকা।”
এদিকে অনন্যা তিয়াশা কে বলে উঠলো —
” আচ্ছা তিউ আপু ভাইয়া ওরকম পরে গেলো কেন?”
” যা গিয়ে জিগায় আয়।”
” ঠিক বলছো । দাঁড়াও নিচে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসি।”
এদিকে নেহা ভাবছে তার সাজা সার্থক তার ইউভি ভাই তার দিকেই তাঁকিয়ে আছে ।
কিন্তু সে তো নির্বোধ ইউভি যে তার হৃদয়হরণী হৃদয়পখী কে দেখছে সেটা কে বোঝাবে ।
” আরে ভাইয়া কি করো ওঠো মানসম্মান সব শেষ করে দেবা দেখি , এই ভাবে পড়ছো ওরা দেখলে ভাববে আমরা আদাইল্লা ব্যাটা।”
আকাশের কথায় জায়ন এর কোন ভাব প্রকাশ পাচ্ছে না , এক দৃষ্টিতে পরখ করে যাচ্ছে তার কিশোরী কে —
” এটা কি সাজ রে ইউভি ? এ তো আমার মরণের গভীর খাদ । শেষ রে আমি শেষ হে আল্লহ এতো কেন সাজ্জঝে
তোর বোন ? আমায় ধ্বংস করবে বলে ? ওরে আমি এমনি ই ধ্বংস হয়ে গেছি এবার থামতে বল রে।”
আকাশ আর ইউভি ভাবছে তারা নিজেদের চোখ সামলাবে না তাদের বড় ভাইয়া কে । তাদের কিশোরীরা ও যে তাদের ধ্বংস খেলা দেখাচ্ছে, সে কে বোঝাবে —
” ভাইয়া তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? ”
” সব দোষ তোর বোনের , আমায় পাবনায় ছেড়ে দিয়ে আয় নইলে আমার এই বেয়াদব মহিলা আমায় মেরে ফেলবে ।”
” bhaiya তুমি পরে গেলা কেন ? ব্যথা লাগে নাই তো?”
অনন্যার কথায় জায়ন কোন জবাব দিলো না , কিন্তু ইউভি ঠিক ই বললো —
” তোমরা যা জলবা দেখাইসো , ভাইয়া না পরে পারে ।”
” মানে ?”
” মানে কিছু না , সুন্দর লাগছিস অনু ।”
” থ্যাঙ্ক ইউ ইউভি ভাইয়া।” এই বলে অনু আবার ও তিয়াশা দের কাছে চলে গেলো ।
জায়ন ও উঠে দাঁড়ালো ।
” দেখ ভাই আমি আমার এই বেয়াদব হবু বউ রে এই ভাবে রূপের ঝলক দেখাতে দিতে চাই না , কেউ যেন না দেখে বিশেষ করে ওই অয়ন।”
এর মধ্যেই একটা কথা ভেসে আসলো
” ওয়াও তিয়াশা ইউ লুক সো বিউটিফুল, এন্ড অল গার্লস লুক বিউটিফুল ।”
ব্যাস অয়ন এর এই কথায় যেন জায়ন এর জলে পুড়ে গেল , সঙ্গে আকাশ আর ইউভি ও রেগে গেলো।
নয়ন ও বলে উঠল –
” আরোহী তোমাকে তো ফুলের কুরি লাগছে ।”
আকাশ এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না
চোয়াল শক্ত করে, দাঁত চেপে বলল–
” বড় ভাই তোমার মামুর ছোট পোলা কিন্তু আমার কাছে উদাম ক্যালানি খাবে বলে দিলাম ।”
ইউভি এদিক দিয়ে হেসে বলে –
” আরে আকাশ তোর ভাইয়া রে দেখে মনে হচ্ছে না উনি নিজেই এখন অয়ন ভাইয়া রে মার্ডার করতে চায় ।”
জায়ানের হাতের শিরাগুলো যেন ফুলে উঠেছে, চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে , চোখ জ্বলজ্বল করছে ক্ষিপ্রতায়।অয়ন এর দিক ইশারা করে সে রীতিমতো গর্জে উঠল –
” ইউভি এই কু***র বাচ্চা রে এইখান দিয়ে এক্ষুনি নিয়ে যা, নইলে ওর ফেস কাট চেঞ্জ করে দেবো। এসে থেকেই মাথা খাওয়া শুরু করেছে ।,”
এর মধ্যেই নেহা এসে ইউভির সামনে দারিয়ে বলে
” কেমন লাগছে ভাইয়া ?”
” নিজের বোনের মত লাগিস সব সময় তুই আমার কাছে,এখন বিদায় হ।”
ইউভির এই কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে নেহা বাইরে চলে যায়।
ইউভি হালকা বিরক্তিতে বলে ওঠে –
” এমনই পেরার শেষ নাই, আবার নতুন প্যারা ।”
আকাশ হেসে ওঠে ইউভির কথায় , কিন্তু জায়ানের চোখে সেই হাসি পড়ে না।
তার কণ্ঠে আবার বজ্রের মতো ধমক,
“ইউভি, আমি তোকে কী বলেছিলাম, সুনিসনি?”
এইবার ইউভি আর দেরি করে না, তৎক্ষণাৎ অয়ন আর নয়নকে কিছু একটা বলে ড্রয়িং রুম ছেড়ে বাইরের দিকে পা বাড়ায়।
তিয়াশার দিকে পা বাড়াল জায়ন , জায়ন এর পরণে ছিল গ্রীন কালারের পাঞ্জাবি আর হোয়াইট কালারের পায়জামা কৃত্রিম বডির উপড়ে পাঞ্জাবি আর এই হিরো মারকা চেহারায় যেন আরো বেশি ভালো লাগছে , তিয়াশা মনে মনে ভাবছে —
” আ হা তার আপু কি লাকী কি হ্যান্ডসাম বড়। কিন্তু উনি আমার দিকে কেন আসছে ? ”
এই প্রশ্নেই যেন তিয়াশার সারা শরীরে শিহরণ খেলে যায়।
হাত-পা ঠান্ডা, শ্বাস আটকে আসে। হৃদয়টুকু যেন থেমে গিয়েছে মুহূর্তের জন্য
” বোন তোরা বাইরে যা, এইখানে কি করছিস? ”
জায়ন এর এই উক্ত বাক্যে যেন আরোহী আর অনন্যা ঘাবড়ে গেলো, অনন্যা বলে উঠলো
” এই তো ভাইয়া কিছু না , যাচ্ছি এক্ষুনি ।”
কিন্তু তিয়াশা মনে মনে ভাবলো —
” যাক বাবা তারমানে আমি কিছু করিনি , আমায় কিছু বলতে আসেনি বাঁচা গেলো । ”
ব্যাস একটু খুশি হয়ে আরোহী অনন্যার সঙ্গে পা বাড়ালো তিয়াশা–
” রোদ।”
হয়ে গেল তিয়াশার তার আসায় কেউ এক সমুদ্র জল ঢেলে দিল । তাও আজ তাকে হারলে হবে কিছু বললে শুনিয়ে দেবো।
” তোকে কি যেতে বলেছি?”
“ম ম মানে?”
জায়ন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রাণ প্রিও কিশোরীর পানে —
” এই ভাবে কি দেখছেন ?”
তিয়াশার কথায় যেন জায়ন বাস্তবে ফিরে এলো –
” দেখছি তুই আর মানুষের মস্তিষ্ক কিকি ভাবে খারাপ করতে পারিস।”
” কেন আমি আবার কি করলাম।”
জায়ন একটু এগিয়ে এসে রাগি স্বরে বলল –
” কি পড়েছিস এটা ?”
তিয়াশা কোমড়ে হাত দিয়ে একটু মুচকি হাঁসি দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল –
” কেন দেখতে পারছেন না শাড়ি পড়েছি , অন্ধ নাকি বাবা?আপনি কি জানেন না এটা কে শাড়ি বলে?কাল নিজেই তো একটা গিফট করলেন।”
তিয়াশার এরকম বিদ্রুপ বাক্য যেন জায়ানের ক্রুদ্ধ সত্তাকে আরো রাগী করে তুললো। মুহূর্তেই চোখেমুখে রোষের ছায়া নেমে এলো, চোয়ালে দপদপ করতে লাগলো দমন করা ক্রোধ —
” হ্যাঁ অনেক কিছুইদেখতে তো পাচ্ছি তুই দেখাচ্ছিস আমি না দেখলে কে দেখবে?”
জায়ন এই কথা বলে নিজেই মনে মনে বলল-
“কিন্তু আমি তো চাই না আমার জিনিস অন্য কেউ দেখুক, কেউ দেখার আগে তার চোখ তুলে নিব।”
তিয়াশা একটু ভ্রু কুঁচকে মুখ বাকিয়ে বলল –
“হে আল্লাহ আমি কি দেখালাম।”
“রোদ একটা কথা শোন তুই যদি ভাবিস, তুই এইভাবে এই সাজে এই পড়ে মেহেন্দির ফাংশান এনজয় করবি, তাহলে ভুলে যা।”
রোদ এর কানের কাছে মুখ টা নিয়ে তার কথা এইভাবে জানিয়ে দিল রোদকে।
যেই মুহূর্তে জায়ন তার মুখটা তিয়াশার কানের একদম কাছে এনে গরম নিঃশ্বাস ফেলে, আর থেমে থেমে নিচু স্বরে কিছু বলে সেই মুহূর্তেই তিয়াশার শরীর যেন অদ্ভুত এক শিহরণে কেঁপে ওঠে। বুকের গভীরে কোথাও জমে থাকা না বলা অনুভূতিগুলো হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীর জুড়ে। অচেনা সেই উত্তাপে, তিয়াশার মন ও দেহ দুটোই যেন এক রহস্যময় আবেশে ঢেকে যায় বুঝে ওঠার আগেই অনুভব করে, এই মানুষটার একেকটা নিঃশ্বাস, একেকটা শব্দ যেন তাকে অচেনা কোনো আবেগের জালে বেঁধে ফেলছে, ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে। তাও নিজেকে সামলে বলে ওঠে
“আমি এইভাবে এই সাজে এই পড়েই জাবো হবু দুলাভাই আপনি বলার কে?”
এই মেয়ে কি ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে জায়ন এর, সে কি চেনে না সে কি জানে না জায়ন কে —-
” রোদ রাগাস না কিন্তু বলে দিলাম এর ফল ভালো হবে না।চেঞ্জ করে আয় এখনো বলছি ।”
“আপনার ফল আপনি খান ,আমার জেনে দরকার নেই।
বায়।”
এই বলে রোদ মুখ বাঁকিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তার আগেই
জায়ন হঠাৎ যেন আর এক মুহূর্তও সহ্য করতে না পেরে, জায়ান এক লাফে এগিয়ে এলো তিয়াশার দিকে।
তিয়াশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার কোমরের চারপাশে জায়ানের শক্ত হাত জড়িয়ে গেল।
এক মুহূর্তেই তাকে শূন্যে তুলে নিজের ডান কাঁধে এমনভাবে ঝুলিয়ে নিল, যেন ওজন বলতে কিছুই নেই।
তিয়াশার মাথা ঝুলে পড়লো জায়ানের পিঠের দিকে, লম্বা চুলগুলো হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে উড়ছে।
আর তার কোমর থেকে পা পর্যন্ত অংশটা ঝুলে রইলো জায়ানের বুক বরাবর সামনের দিকে পা দুটো হালকা দুলছে বাতাসে।
তার দুই হাত নিচের দিকে পড়ে আছে, আর মুখটা লজ্জা আর অভিমান মেশানো বিস্ময়ে লাল হয়ে উঠেছে।
” জায়ন ভাই প্লিজ নামান , কেউ দেখলে কি বলবে?”
জায়ন তিয়াশার কথায় পাত্তাও দিল না এগিয়ে গেল রুমের দিকে …..
জায়ান রুমের ভেতরে ঢুকেই পেছনের পায়ের ঠেলায় দরজাটা ধাক্কা মেরে বন্ধ করে দিল।
তার নিঃশ্বাস ভারি, চোখে একরোখা আগুন।
তিয়াশাকে কাঁধ থেকে নামিয়ে দেয়ালের গা ঘেঁষে দাঁড় করাল,হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরল দুদিকে, যেন কোনও পালানোর পথ নেই।
চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমার কথা শুনতে তোর কষ্ট হয়, বেয়াদব?”
তিয়াশার গলা কাঁপছে, শরীরও যেন শীতল হয়ে গেছে, সে কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল–
“আচ্ছা, শুনবো… প্লিজ ছাড়ুন।”
জায়ানের ঠোঁটে ঠাণ্ডা এক হাসি খেলে গেল, কিন্তু চোখে ছিলো কেবল আগুন।
সে ধীরে ধীরে তিয়াশার গলার কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে হ্যাস্কি স্বরে বলল,
“It’s too late, baby girl. যখন বলছিলাম তখন কি শুনছিলি? আমি কে তোর? আজ দেখাবো আমি কে তোর।”
তিয়াশার ঠোঁট কেঁপে উঠল, কিন্তু মুখ থেকে কোনও শব্দ বেরোলো না।
শব্দ আটকে গেল গলায় হৃদস্পন্দনের নিচে।
জায়ানের হাতের চাপে সে আরও কাছে চলে এল, গলায় তার নিঃশ্বাস ছুঁয়ে গেল।
জায়ান মুখ গুঁজে বলল–
“বল! আজ দেখাবো আমি তোর কে!”
তিয়াশার কণ্ঠে কাঁপন, গলার নিচে অসহায়তা–
“প্লিজ… ছাড়ুন … আমি শুনবো প্লিজ…”
কিন্তু জায়ান যেন আর নিজের মধ্যে নেই।
তার গলা ভারী হয়ে উঠল–
“তুই জানিস না তুই কী করিস আমার সঙ্গে।
বারবার তোকে যেতে বলেছি।তুই তো শুনিসনি! এখন কী করবো বল?”
এইবার, জেদে-অভিমানে দগ্ধ তিয়াশা নিজেকে জায়ানের শক্ত বাহু থেকে ছাড়িয়ে নিল এক ধাক্কায়।
তার চোখে অগ্নিশিখা, কণ্ঠে প্রতিধ্বনিময় চিৎকার,
“আপনি কী মনে করেন? আমি আপনার হাতের কাঠের পুতুল?চাইলেন তুললেন, চাইলেন থামালেন? আমি মানুষ, ভাইয়া! পুতুল নই!”
এই কথা যেন বিদ্যুৎ হয়ে আছড়ে পড়লো জায়ানের বুকের মধ্যে।
সে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে গেল, কিন্তু ঠোঁটের কোণে উঠে এলো ক্ষিপ্ততা।
কণ্ঠে বজ্র ধ্বনি
“রোদ! বেশি বাড়াবাড়ি করছিস!”
তিয়াশার চোখ বেয়ে নেমে এলো চুপচাপ অশ্রু।
তার কণ্ঠ ভাঙা, বুকে জমে থাকা যন্ত্রণা গলিয়ে বলল,
“কাল থেকে আপনি আমার আপুর স্বামী হবেন, তাই তো?তবু আজ এইসব বলছেন আপনি আমার কাছে? এই অধিকার কোথা থেকে পেলেন?”
জায়ান যেন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল।
সে চিত্কার করে উঠলো–
“রো——দ!!”
তিয়াশা একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল তার চোখে, তারপর রাগান্বিত সুরে বলল-
“চিৎকার করবেন না… জায়ন ভাই।”
চোখে জল, পায়ে ঝড়ের গতি–
সে ঘর ছেড়ে পালিয়ে গেল।
জায়ান স্থির র হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২২
হাতদুটো ঠান্ডা হয়ে গেছে, ঠোঁট জমে আসছে।
তার ঠোঁট থেকে এক নিঃশ্বাসে ভেসে এলো ফিসফিস করা কথা,
“পালাশ না রোদ , তুই চলে গেলে আমি মরে যাবো।”