তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৬ (২)

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৬ (২)
নীল মণি

ঠাস স স স……
দরজাটা এমন শব্দে বন্ধ করল জায়ন, যেন একরাশ ধ্বংস চাপা পড়ে গেল সেই আওয়াজের নিচে।
পরমুহূর্তে সে এক টানে তিয়াশাকে ছুঁড়ে দিল রুমের ডিভানে।
তারপর নিজের কোমরে এক হাত রেখে, আরেক হাত দিয়ে চুল টেনে, মাথা উঁচু করে চিৎকার করে উঠল–
“কেন কেন এটা করতে গেলি রোদ? হোয়াই হোয়াই?
তিয়াশা ভয়ে ফেটে পড়ল কান্নায়।
সে জানে, একটা ভয়ানক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে,

তার বুকের ভেতর হাহাকার উঠছে জায়ন ভাইকে এইরকম ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় দেখে।
সে সাহস সঞ্চয় করে ডিভান থেকে উঠে এল,
তার নরম, কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে জায়নের হাত ছুঁয়ে বলার চেষ্টা করল—
“জায়ন ভাই, আপনি আমার কথাটা…”
কিন্তু জায়ন আগুনের ঝাঁঝে সেই হাত ছিটকে সরিয়ে দিল তিয়াশার ওই ছোট্ট নরম হাতটা–
” ডোন্ট টাচ্ রোদ ডোন্ট টাচ্,একদম ছুবি না আমায়, তোর ওই হাত দিয়ে যেই হাত দিয়ে অন্য পুরুষের শরীর টাচ করে তাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিচ্ছিলিশ।”
জায়ন এর এই কঠিন কথায় যেন তিয়াশার চোঁখের চজলে পৃথিবী যেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে,
পানি গড়িয়েই যাচ্ছে —

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আপনি আমার কথা……..
জায়ন দাঁতে দাঁত চেপে থামিয়ে দিল তাকে, পাগলের মত উন্মাদ হয়ে গেছে সে , নিজেকে সামলাতেই পারছে না, তার হৃদয় এর প্রতিটা জায়গা খালি হয়ে আসছে, ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে আসছে —-
“একটা শব্দও না রোদ, একটাও না। আমি এখন কিছু শুনলে নিজেকে থামাতে পারবো না।”
তার চোখদুটো জ্বলছে, অথচ সেই আগুনের নিচে জমে উঠেছে জলের আস্তরণ,
হঠাৎ সে তিয়াশার দুই বাহু চেপে ধরল।
তীব্র রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল–

“জানিস রোদ, আমার মস্তিষ্ক বলছে তোদের দুজনকেই শেষ করে দিই, তোকে আর ওই কু**র বাচ্চা রে”
তিয়াশা শিউরে উঠল জায়ন এর কথায়, কি করে বোঝাবে এই পাগল লোকটাকে ,
সে তো শুনতেই চাইছে না। তার সামনে জায়ন এর এরকম অবস্থায় যে সে নিজেই মরতে চলেছে —-
কিন্তু কিছু বলল না, শুধু মাথা নিচু করে কান্না করে যাচ্ছে —
” দেখলি রোদ, তোর কান্না বাড়িয়ে দিলো আমার কথায় ওই কু***র বাচ্চার জন্য এত কান্না , কিন্তু আমি তোর জন্য শুধু এক পাগলা কু**** টিাত্র,
কিন্তু এই বা**র ফ**ঙ্কিং মনটা… এইটা মানছে না রোদ।
পারবো না তোকে মারতে। পারবো না তোকে ভুলে যেতে।
বল না রোদ, আমি কী দোষ করলাম? কেন ভালোবাসলি না আমায়?
বলেছিলাম তো তোকে কতটা ভালবাসি , একবার কেন ভাবলি না আমার কথা রোদ কেন কেন?”
জায়নের কণ্ঠস্বর কাঁপছিল, চোখে জমে থাকা কান্না

“আমি জানি আমি তোর যোগ্য না তোর আর আমার বয়সের অনেক ব্যবধান কিন্তু আমি তো এসব দেখি নি রোদ ? বুঝি ও নি নিজের থেকে ১২ বছর ছোট মেয়ের মায়ায় এরকম ভাবে জড়িয়ে যাব, কি করবো বল না ?
বলে দে আমায় ?
তুই যে আমার নেশা হয়ে গেছিস রোদ , তোর মায়ার নেশায় আসক্ত আমি , থাকবো কি করে ? বাঁচবো কি করে ?
আমি কেন হলাম না রোদ তোর ওই ভালবাসার পূরুষ, বল রোদ ?কেন আমি হলাম না তোর সেই প্রিয় পুরুষ রোদ?
কেন তুই বললি না — আমি শুধু তোমার?
সে দম নিতে পারছিল না, গলা ভারী হয়ে উঠছে,
যে জায়ন কে সবাই জানে সে কঠোর মানুষ,
আজ তিয়াশার সামনে দাঁড়িয়ে সে প্রথমবারের মতো তার ভিতরের দুর্বলতা নগ্ন করে দিল,দেখিয়ে দিল তার প্রাণপ্রিয় কিশোরীর সামনে সে কত দূর্বল ভেতর থেকে , কতোটা দূর্বল করে দিয়েছে তাকে। কোথায় গেলো তার সেই কথা ?
“তার রোদ তাকে ভালো না বাসলেও তাকে চাই ।”
কোথায় সেই আবরার জায়ন চৌধুরী?

তিয়াশার চোখ দিয়ে অঝোরে জল গড়িয়ে পড়ছে।
তার জায়ন ভাইয়ের চোখেও জল, এই দৃশ্য আর সহ্য করতে পারছে না সে।
কাঁপা কণ্ঠে সাহস করে বলল —
“প্লিজ… প্লিজ আমার কথাটা একবার…”
কিন্তু তার কথা শেষ হবার আগেই,
জায়ন হঠাৎ পাশে থাকা টেবিলের ওপর থেকে ফুলের কাচের বাসটা তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মারল দেয়ালে!
কাঁচ ভেঙে তীক্ষ্ণ শব্দে ছিটকে ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে…
ঘরজুড়ে থমকে গেল সময়।

তিয়াশা কেঁপে উঠল, তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল ভয়ে ও শোকে।
জায়ন নিজেই নিজের চুল মুঠো করে ধরে চিৎকার করে উঠল —
“ওহ্ আল্লাহ , ওহ আল্লাহ কেন দিলা এই কঠিন অসুখ আমায়?
যখন ও আমাকে চায় না, তখন কেন তার মুখটা এঁকে দিলা আমার মনে?
কেন বসালে এই পাষাণ মেয়েটাকে আমার হৃদয়ে?”
তার চোখের জলে ভিজে উঠছে গাল,
সে হুমড়ি খেয়ে এগিয়ে এল তিয়াশার দিকে।
তার ছোট্ট, কাঁপা দুটো হাত ধরে জায়ন ফুঁপিয়ে উঠল

“জান কি হতো তুই আমাকে একটু ভালবাসলে ?একটু বাসতি , একটু জান, তুই একটু দিয়ে দেখতি আমি আমার পুরোটায় তোকে জড়িয়ে রাখতাম।”
জায়ন বলতে বলতে ধীরে ধীরে তিয়াশার হাত ছেড়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল,
তার বুকফাটা কণ্ঠে আর্তি ভেসে এলো–
“কেন রোদ? ভালো না-ই বাসতিস… কিন্তু তোর মনে কেন আরেকজন পুরুষ জায়গা পেল? কেন আমি সেই পূরুষ না, তাকে?”
হঠাৎ বাইরের সাউন্ড বক্স থেকে গান ভেসে আসলো
জানলা ভেদ করে

“হামে পুছো ক্যায়া হোতা হে ,
বিনা দিল কে জিয়ে জানা ।
বহাত আই গ্যাই ইয়াদে,
মগর ইস বার তুম হি আনা……
আল্লাহ তা’আলা ও হয়তো ওদের ক্ষত তে আরো কিছু
ক্ষত যুক্ত করতে চায় নয়তো বিয়ে বাড়ীতে হঠাৎ এই গান কেন বাজবে…..
জায়ন এর কান্নার স্বরে তিয়াশার বুকে কেউ ছুরি
চালিয়ে যাচ্ছে —
তিয়াশা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল…

কি করছে তিয়াশার জায়ন ভাই , তিয়াশা কি দেখছে ? এই মানুষ টাকে তো অচেনা লাগছে
এই কি তার সেই গর্বিত, স্থিরচোখের জায়ন ভাই?
এ কেমন ছিন্নভিন্ন পুরুষ, যে পা জড়িয়ে অসহায় ভবে জরিয়ে আছে ,
একটা কিছু হাহাকার করে উঠল।
চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে উঠল সে—
“হে আল্লাহ্, অনেক কিছু চেয়েছি তোমার কাছে…
কিন্তু এবার একটা দোয়া প্লিজ, এই মানুষটাকে আমার কাছ থেকে কখনো সরিও না… আমি পাগল হয়ে যাব…”
” জায়ন ভাই প্লীজ আমার কথাটা শুনুন একবার, আপনি ভুল ভাবছেন ।প্লীজ এরকম ভাবে কষ্ট দিয়েন না, প্লীজ অয়ন ভাইয়ার কোন দোষ….

এই ‘অয়ন’ নামটাই যেন আগুন ঢেলে দিল জায়নের মাথায়।
সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, তারপর হাত বাড়িয়ে তিয়াশার ছোট্ট মুখের চোয়ালটা চেপে ধরল,
তার চোখদুটো জ্বলছে, রাগে শরীর কাঁপছে।
“নিজের প্রেমিক কে বাঁচানোর জন্য এখন আমাকে ভুল প্রমাণ করছিস মিথ্যে বলছিস , না চাইতেও বার বার ভেসে আসছে চোঁখের সামনে তোদের মিউচ্যুয়াল প্রপোজাল কি করে ভুলে জাবো তিয়াশা রোদ চৌধূরী?
ঠিক আছে ,তুই আমার হলি না , হতে হবে না ।
কিন্তু আমিও কাউকে তোর হতে দেবো না ।
তোর আমাকে চাই না ঠিক আছে চাইতে হবে না , কিন্তু অন্য কোন পুরুষ কে তোর আসে পাশে ও ঘেঁষতে দেবনা মিস তিয়াশা ।”

তিয়াশার কোন পুরুষ কে চায় না , সে শুধু তার জায়ন ভাই কে চায় শুধু তার জায়ন ভাই —
কেন তার জায়ন ভাইয়ের মুখে তিয়াশা শুনতে চাইছে না , সে তার জায়ন ভাইয়ের রোদ হয়ে থাকতে চায় । কিন্ত এই লোক তো কিছু শুনতেই চাইছে না।
আর ঠিক তখনই জায়নের মুখে সেই শব্দ গুলো
কানে আসলো —
শব্দ নয়, যেন বিষ…

“From today, Tiyasha Rod Chowdhury…
I hate you more than anything…
But I also love you—desperately.
I won’t come in front of you again…
But I’ll make sure you realize what you’ve lost.
তোর নেশায় আসক্ত হয়েছি আমি ,
এবার আমার ঘৃণায় তোকে আসক্ত করবো
মিস তিয়াশা।
তিয়াশা যেন দম নিতে ভুলে গেল।
তাকে শ্বাসরুদ্ধ করছে এই কথাগুলো।
মাথা ঘুরছে, বুক কাঁপছে।
“জায়ন ভাই…” –কাঁপা গলায় ডাকল সে।
জায়ন এবার তার দিকে ফিরে কাঁপা কণ্ঠে বলল—

“একটা কথা শুধু তোর মুখ থেকে হ্যাঁ বা না জানতে চাই তোর কাছ থেকে , শুধু হ্যাঁ বা না —-”
” বৃষ্টি কি কারো সঙ্গে পালিয়েছে ? সত্যি করে বলবি । কোন মিথ্যে শুনতে চাই না। ”
তিয়াশা যেন ঘোর থেকে জেগে উঠল।
বৃষ্টির কথা তো সে ভুলেই গিয়েছিল…
জায়নের কণ্ঠে সেই নাম শুনে আরেকটা ঝটকা খেলো সে।
কিছু না বলে, আস্তে আস্তে মাথা নাড়ল —
হ্যাঁ।
” তুই যে বৃষ্টিকে হেল্প করেছিস এটা যেন আমাদের পড়িবার না জানে হয়তো নিতে পারবেনা”
তিয়াশা চমকে উঠলো জায়ন এর কথায় —

” এই মানুষ টা কি বলছে সে চায় না আমার পড়িবার আমায় দোষারোপ করুক হে আল্লাহ, কেন এই মানুষ
টার থেকে দুরে সরাচ্ছ?”
“NOW GET OUT!”
তার গর্জনে ঘর কেঁপে উঠল।
তিয়াশা দাঁড়িয়ে রইল।
পা যেন চলছিল না…
“জায়ন ভাই…”
“I SAID, GET OUT!!”
তবু তিয়াশা না নড়ায়, জায়ন এগিয়ে এল,
তার হাত ধরে টেনে বের করে দিতে দিতে বলল–
“তোর মুখটাও দেখতে চাই না আর।

” আরে বলবি তো এখনি কেন যেতে হবে ? আর এত আঘাত কোথা থেকে পেলি আব্বু ?”
সুনিতা বেগম অয়নের অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছে , তার ছেলেটার এ কি হলো , কি করে হলো —
” আমি এত কথা শুনতে চাইছি না? তোমরা যাবে নইলে আমি একাই চলে যাব ।”
অয়নের এই কথায় রহমত সাহেব বললেন —
” কালকে বৃষ্টির বিয়ে আজ কি করে যাব ?
নয়ন তুই একটু ড্রেসিং করে মলম লাগিয়ে দে ।”
সুনিতা বেগামের দিকে তাকিয়ে রহমত সাহেব বললেন

” তুমি একটু বরফ নিয়ে আসো তাড়াতাড়ি।”
” জী এক্ষুনি যাচ্ছি ।”
“আমার কিচ্ছু চাই না , আমি জাষ্ট এই মুহুর্তে ঢাকা ফেরত যেতে চাই ।”
অয়নের চিৎকার এ যেন পুরো ঘর কেঁপে উঠলো ,
সে নিজেও বুঝতে পারছে না যে তার জায়ন ভাই এরকম করে কেন মারল ? এটা তো কোন স্বাভাবিক আঘাত করা নয় , এতো ঈর্ষার আঘাত । কিন্তু এই ঈর্ষা কেন ? কেনই বা জানের হুমকি ? কেন কেন?
অয়ন এর ওই চিৎকার এ সুনিতা বেগম ওখানেই থেমে গেছিল ।
” আচ্ছা ফিরে যাব , নয়ন গাড়ি বের কর ।”
” জী আব্বু ”
” তোর ফুপি কে বলে আসি ।”
অয়ন বলল – ” কাউকে জানাতে হবে না, তুমি শুধু এখান থেকে চলো আব্বু প্লীজ।”
ওনারা জানে না হঠাৎ অয়ন এরকম কেন করছে ,
ছেলের জেদের বসে সব গুছিয়ে রওনা দিলেন ওনারা।

এদিকে ধীরে ধীরে সবাই জেনে গেলো বৃষ্টিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না , সবাই বৃষ্টি কে খুঁজছে কিন্তু না বৃষ্টি কোথাও নেই —-
মেহজাবীন বেগম এর চোঁখে জল —
” কোথায় মেয়ে টা, ও ইউভি বল না কোথায় আমার বড় আম্মু ? কোথায় গেল মেয়ে টা ।”
প্রান্তিক সাহেব চিন্তায় বারবার এদিক ওদিক করছে —
এদিকে হঠাৎ করে এই আনন্দময় উৎসব আলা বাড়িতে হঠাৎ করে চিন্তার ছায়া নেমে এসেছে —
কি হয়ে গেল , সব কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।
” একটা মেয়ে বাসা থেকে উধাও হয়ে গেলো, আর এতগুলো লোক বাসায় কিছুই জানতে পারলো না ।
কোথায় ছিলে তোমরা ?”

তাহসান সাহেব এর চিৎকার এ পুরো চৌধূরী পড়িবার কেঁপে উঠলো । সুরাইয়া বেগম ভয়ে কাপছে , কারন তাঁর উপরেই দায়িত্ব ছিল বেশি বৃষ্টি কে দেখে রাখার কিন্তু হঠাৎ কি হয়ে গেল।
এদিকে রূহেনা বেগম কেঁদে কেঁদে বলে উঠলো
” আমার মেয়ে টা কোথায় গেল আপা।”
মেহজাবীন বেগম নিজের চোঁখের জল মুছতে মুছতে রুহেনা বেগম জড়িয়ে বললেন —
” কিছু হবে না বড় আম্মুর বইন ।”
ইউভি,অনন্যা, আরোহী, রায়ান , মারিয়া , রিক , নেহা,
তাদের পড়িবার বাকি সব মেহমান , সাগর, আহান , পলাশ তাদের স্ত্রী সবার মুখেই এক চিন্তার ছাপ
কিন্তু জায়ন কোথায় ? কারো সেই দিকে খেয়াল নেই।
এদিকে মেয়ের চিন্তায় প্রণয় সাহেব সারা রাঙ্গামাটি হয়তো খুঁজে বেড়াচ্ছে আকাশ কে সঙ্গে নিয়ে ।

এদিকে আরোহী দৌড়ে উঠল দোতলায়—
কখন থেকে তিয়াশা কে খুঁজছে সে।
তাকে তো জানাতে হবে বৃষ্টি আপুকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না —
অনন্যা বলেছিল, “তিয়াশা আপু উপরে গেছে,”
সেই কথায় ছুটে এল আরোহী।
দরজার চেপে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল,
আর ভেতরে ঢুকেই তার শ্বাস যেন বন্ধ হয়ে এল।
ঘরের এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছে তিয়াশা।
চোখ মুখে কান্নার দাগ, দম বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে।
পড়নের থ্রি-পিসের ওড়নাটা মেঝেতে ছিটিয়ে আছে,
চুল এলোমেলো, চোখ দুটো যেন লাল হয়ে গেছে।
“তিয়াশা।” — আরোহী ছুটে গেল তার কাছে।
“কি হয়েছে বেবি? বৃষ্টি আপুকেখুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তুই জানিস? ”
তিয়াশা মুখ তুলে তাকাল না,

শুধু একটা ঝড় যেন বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো তার কণ্ঠে।
সে হঠাৎ আরোহীকে জড়িয়ে ধরল…
আর সেই কোলের ভেতর কান্নায় চিৎকার করে উঠল—
“সব শেষ হয়ে গেল রে রুহী…
আমি শেষ হয়ে গেলাম।
ভীষণ কষ্ট হচ্ছে রে, বুক ফেটে যাচ্ছে!
মানুষটা আমায় ভুল বুঝলো রে…
ভুল বুঝল আমায় রুহী…
পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেললাম তাকে আমি…”
আরোহী স্তব্ধ।
তার প্রাণের বান্ধবী,
আজ সে যেন একটা ভাঙা পুতুল —
আরোহী কেঁপে উঠল ভিতর থেকে।

হঠাৎ কান্না করতে করতে রূহেনা বেগম মেহজাবীন বেগম এর কোলে নেতিয়ে পড়ল —
মেহজাবীন বেগম হঠাৎ বুঝেই চিৎকার করে উঠল —
” মেজো, ও মেজো চোঁখ খোল বইন ।”
সবার নজর সেই দিকে ছুটে গেল —
” আম্মু —–
ইউভি চিৎকার ছুটে গেলো সেই দিকে , বাকি সবাই গেল ।
আয়েশা বেগম চিৎকার করছে —
” ভাবি চোঁখ খোলো, ভাবি —-
” আম্মু আম্মু চোঁখ খোলো আম্মু —
ইউভি ও চিতকার করছে ,
আশরাফ খান ছুটে এসে রূহেনা বেগম কে দেখে বলল –

” ইউভি জলদি গাড়ি বের কর , ভাবি কে হসপিটাল নিতে হবে ইমিডিয়েটলি।”
আশরাফ এর কথায় সবার মাথায় যেন বজ্রপাত ঘটলো–
ইউভি তাড়াতাড়ি চলে গেলো গাড়ি বের করতে
প্রান্তিক সাহেব চিৎকার করে উঠলেন —
” জায়ন কোথায়?”
প্রান্তিক সাহেব এর চিৎকারে আহান বলে উঠল —
” আংকেল জায়ন উপরে রুমে আছে ।”
প্রান্তিক সাহেব রাগে ক্ষোভে আবারো বলে উঠলো–
“বাসায় এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে আসে রুমে কি করছে?”
চিৎকার করে উঠলো আবারো —

” আংকেল আমি যাচ্ছি ডেকে নিয়ে আসছি।”
আহান এই বলে এক মুহূর্ত দেরি করলো না ছুটলো
উপরে , পেছন পেছন সাগর ও গেলো —-
জায়নের রুমে ঢুকেই আহানের বুক কেঁপে উঠল।
এ কী অবস্থা?
বিছানার চাদর মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, ঘরের এদিকে-ওদিকে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কাঁচের টুকরো।
পুরো রুমটা সিগারেটের ধোঁয়ায় ভারী হয়ে আছে–ঘন, বিষণ্ন এক স্তব্ধতা যেন জমে আছে বাতাসে।
ডিভানের এক কোণে জায়ন অচেতন ভঙ্গিতে পড়ে আছে।
তার পায়ের নিচে জমে থাকা লালচে রক্ত,
মুখটা ফ্যাকাশে, চোখ হালকা খোলা —

তবু তার গালের পাশ দিয়ে শুকনো কান্নার দাগ এখনো স্পষ্ট।
সাগর আর আহান একসঙ্গে দৌড়ে গেল ওর কাছে।
“এই জায়ন,কি হয়েছে দোস্ত?
কি হাল করেছিস নিজের?” — সাগর কাঁপা গলায় বলল, সাগর তার কাঁধ ঝাঁকাতে লাগল কাঁপা কণ্ঠে।
জায়নের ঠোঁট সামান্য কেঁপে উঠল,
তার মুখে ভাঙা কণ্ঠে মাত্র একটা বাক্য—
“ও আমাকে চাইলো না রে…
একটুও না…
কি হতো, রে আহান, যদি একটু ভালোবাসত?
একটু শুধু চাইত আমাকে…”

এই বলে সে নিস্তেজভাবে ঢলে পড়ল ডিভানের গায়ে,
মনে হলো সমস্ত শরীরের শক্তিটুকু যেন শেষ হয়ে গেছে।
“জায়ন, জায়ন,” — আহান ও সাগর একসাথে চিৎকার করে উঠল,
তাদের গলায় আতঙ্ক, ভয় সব মিশে গেছে।
হঠাৎ আহানের চোখ পড়ল পাশের টেবিলে রাখা ছোট্ট একটা ওষুধের শিশির দিকে—
Sleeping Pills.

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৬

চোখ বড় হয়ে গেল তার।
এক ঝটকায় ছুটে গিয়ে জায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল–
জায়ন এর পালস ছুতেই,
আহান চিৎকার করে উঠলো…
“সাগর…..গাড়ি বের কর! এখনই..”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here